সাইবার অপরাধ-রুখব কী করে? by তৌহিদা শিরোপা

‘ফেসবুকে আগে অনেককে দেখতাম সাইবার অপরাধের শিকার হতে। যখন নিজে হলাম, বুঝতে পারলাম এটি মানসিকভাবে কতটা বিপর্যস্ত করে তোলে। কেউ আমার ফেসবুকের ছবি ব্যবহার করে আরেকটা ভুয়া প্রোফাইল খোলে। সেখানে অশ্লীল ছবি এবং বিভিন্ন পর্নোসাইটের লিংকও দিয়ে দেয়।


এ পরিস্থিতিতে মনের অবস্থা কী হয়, সেটি বুঝিয়ে বলতে পারব না। অনেকেই ভুল বুঝেছে আমাকে। ভেবেছে, আমি মনে হয় এমনই। তবে ফেসবুকের নিয়মানুসারে রিপোর্ট করতে থাকি। আর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিই। আজ পর্যন্ত নতুন করে তা চালু করিনি। মন থেকে সেই সাহসটা পাই না। শুধু মনে হয়, আমারই কোনো বন্ধু তো এই কাজ করেছে। কেননা, আমার বন্ধুর তালিকায় অপরিচিত তো কেউ ছিল না। এ ঘটনায় আমি শুধু সামাজিক যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি তা নয়, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসের জায়গাটাও কেমন যেন নড়বড়ে হয়ে গেছে। এই অভিযোগ কোথায় করব। কাকে বলব, আমি জানি না।’ ঢাকার একটি মেডিকেল কলেজের একজন ছাত্রীর কথা এগুলো। তাঁর মতো অনেক মেয়েই প্রতিনিয়ত এ রকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বাদ যাচ্ছেন না তারকা খ্যাতিসম্পন্ন মেয়েরাও। শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নয়, মুঠোফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেটের নানা অপব্যবহারে মেয়েরা এর শিকার হচ্ছেন। ‘একবার নয়, বারবার ফেসবুকে আমার ছবি ব্যবহার করে কয়েকটি ভুয়া প্রোফাইল খোলা হয়। অনেকবার রিপোর্ট করে সেসব বন্ধ করেছি। এখনো মনে হয় দু-একটি ভুয়া প্রোফাইল থাকতে পারে। এটি অনেক বিড়ম্বনার। আমার ব্যক্তিগত তথ্যের জায়গায় আজেবাজে কথা লেখা থাকে। বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে এ জন্য।’ বলেন একটি বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এ ছাড়া সম্প্রতি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় এক স্কুলছাত্রীর জীবনেও নেমে আসে এ ধরনের অপরাধের ভয়াবহতা। মেয়েটিকে তার প্রেমিক ও ছয় সহযোগী মিলে ধর্ষণ করে এবং মুঠোফোনে ভিডিওচিত্র ধারণ করে। পরে সেই ভিডিও সিডি আকারে বাজারে ছড়িয়ে দেয় প্রেমিকটি। জানা যায়, প্রেমের সম্পর্কে অবনতি ঘটায় ছেলেটি প্রতিহিংসাবশত কাজটি করেছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মেয়েটির বাবা মামলা করলেও মূল আসামি এখনো ধরা পড়েনি।

সাইবার অপরাধের প্রতিরোধ কী, বিশেষজ্ঞরা কী বলেন
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সহায়তার জন্য সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) অধীনে বাংলাদেশ কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিডি-সিএসআইআরটি) গঠন করা হয়েছে। এর ওয়েবসাইটও চালু হয়েছে। সেখানে যেকোনো ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার হলে আপনি জানাতে পারবেন। পরবর্তী সময়ে সমস্যা অনুযায়ী পরামর্শ দেবেন বিডি-সিএসআইআরটি কর্তৃপক্ষ। কথা হলো বিডি-সিএসআইআরটির সভাপতি ও বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন ও যথাযথ পরামর্শ দিয়ে থাকি। প্রায় এক মাস হলো এটি চালু হয়েছে। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমরা ভিকটিমের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করেই তাকে সহায়তা করি। এই যেমন কিছুদিন আগে একটি মেয়ে জানায়, তার প্রেমিক তার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে। তখন আমরা পরামর্শ দিই, তার জন্য দুটি দিক আছে। প্রথমত, মেয়েটি চাইলে আইনের শরণাপন্ন হতে পারে। দ্বিতীয়ত, ইন্টারনেট থেকে সেসব ছবি ও ভিডিও আমরা মুছে ফেলতে পারি। দ্বিতীয়টি সে বেছে নিয়েছে। কেননা, আমরা অপরাধী চিহ্নিত করতে পারি না। কিংবা যে অপরাধী, সরাসরি তার বিরুদ্ধেও কিছু বলার বা করার এখতিয়ার আমাদের নেই। কিন্তু এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য আগে থেকে সবাইকে সচেতন করা এবং বিপদে পড়লে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করাই আমাদের মূল কাজ।’
বিডি-সিএসআইআরটিতে কোনো সমস্যা জানানোর ওয়েব ঠিকানা হলো: www.csirt.gov.bd। সেখানে বিস্তারিত তথ্য পাবেন।
ফোন নম্বর: ০২-৭১৬২২৭৭ বর্ধিত ৪৪৪ ফ্যাক্স: ০২-৯৫৫৬৬৭৭
ই-মেইলেও আপনার সমস্যা জানাতে পারেন: contact@csirt.gov.bd
তাহলে সাইবার অপরাধী কি নাগালের বাইরেই থেকে যাবে? অপরাধীর শাস্তি কি হবে না? এ বিষয় শনাক্ত করবে কারা এবং তাদের কি কোনো বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সাইবার অপরাধীকে শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু আইনের কারণে শেষ পর্যন্ত তারা শাস্তি পায় না। হয়রানির শিকার কোনো নারী অভিযোগ করলে বা কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান জানালে, তৎক্ষণাত ব্যবস্থা নিই। কিন্তু আইনের ফাঁকফোকর থাকায় অপরাধী পার পেয়ে যায়।’

No comments

Powered by Blogger.