মাদক চোরাচালান
সর্বনাশা বিস্তার রোধ করতেই হবে মাদকের অপব্যবহার এবং মাদক-সংশ্লিষ্ট অপরাধ এতটাই বেড়ে গেছে যে সমাজ ক্রমেই পঙ্গু হয়ে পড়ছে। শুধু দেশের ভেতরে নয়, দেশের বাইরেও বাংলাদেশের মাদক ব্যবহারসংক্রান্ত দুর্নামটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে সতর্কও করা হয়েছে।
কিন্তু আমাদের অতিরিক্ত রাজনীতি-সচেতন সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ কিংবা রাষ্ট্রনায়কদের এ ব্যাপারে কোনো দুর্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। যাদের এসব নিয়ন্ত্রণ করার কথা সেই অধিদপ্তর, সীমান্ত প্রহরায় থাকা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোও যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে কি না, সে বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বরং এসব বাহিনীর দপ্তরের অনেকেরই কোনো না কোনোভাবে মাদকের অবৈধ কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ফলে মাদক প্রবেশ, মাদক বিক্রি ও গ্রহণ- সবই অবাধ হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে দেশ হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রাও। কারণ এর প্রায় পুরোটাই আসে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে। গতকাল (২৬ জুন) কালের কণ্ঠে 'মাদক ও বৈদেশিক মুদ্রা চোরাচালান একাকার' শিরোনামে এ ব্যাপারে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আর কেবল প্রহরার দুর্বলতা নয়, আইন ও আইন প্রয়োগের দুর্বলতাও এ ক্ষেত্রে ব্যাপক। একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, গত ছয় বছরে দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে এক লাখ ১৮ হাজার ১৭৫টি মামলা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, কেবল চলতি বছরেই ৪৮ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে গেছে। এখনো চলতি বছরের ছয় মাস পেরোয়নি, এমন অবস্থা চলতে থাকলে বাকি ছয় মাসে বাদবাকি আসামিরাও নিশ্চয়ই খালাস পেয়ে যাবে। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে এ দেশে মাদকের সর্বগ্রাসী বিস্তার থামাবে কে?
বলার অপেক্ষা রাখে না, মাদক ব্যবসার সঙ্গে বিপুল অর্থ জড়িত। সবজি বিক্রেতা, ফুটপাতের ব্যবসায়ী থেকে মাদক ব্যবসার কল্যাণে অনেকেই এখন রাজধানী ঢাকায় বহু বাড়ি-গাড়ির মালিক বনে গেছে। অনেক প্রভাবশালী বিত্তবান পেছনে থেকে মাদক ব্যবসার কলকাঠি নাড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর খুব কম লোকেরই সাধ্য আছে তাদের চ্যালেঞ্জ করার। তাই অবৈধ অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়াটাকেই হয়তো অনেকে বুদ্ধিমানের কাজ হিসেবে বিবেচনা করে। সম্প্রতি পুলিশের ওপর মাদক ব্যবসায়ীদের একাধিক হামলার ঘটনাও সেই সত্যকেই তুলে ধরে। অন্যদিকে মাদক বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধেরও বিস্তার ঘটতে থাকে, যা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে তাকালেই বোঝা যায়। কারণ মাদকাসক্তরা তাদের আসক্তি মেটাতে অর্থের জন্য প্রায় উন্মাদ হয়ে যায়। আর এই সুযোগে বিত্তবান অপরাধীরা সামান্য অর্থের বিনিময়ে তাদের খুন-খারাবিসহ নানা ধরনের অপরাধকর্মে ব্যবহার করে।
দেশে মাদকসেবীদের একটি বড় অংশ উঠতি বয়সের কিশোর-তরুণ বা যুবক, যাদের সঠিক বিকাশের ওপর নির্ভর করে দেশের ভবিষ্যৎ। রাষ্ট্রের কর্ণধারদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে। কেবল বছরের পর বছর উৎস না জেনে কালো টাকা সাদা করতে দিলে পেছনের কলকাঠি নাড়া প্রভাবশালীরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে। রাজনীতিবিদদের কথা ও কাজে সংগতি চাই এবং সর্বোপরি দেশে সুশাসন চাই। মাদকের ধ্বংসাত্মক থাবা চাই না।
No comments