দীপা’পা, যেখানেই থাকো ভালো থেকো

দীপা হক। আধুনিক প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর এক শিল্পী। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৭—তরুণ শিল্পীদের সংগঠন ঢাকা পেইন্টার্সের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।দেশে ও দেশের বাইরে চিত্রকলা বিষয়ে অধ্যয়ন আর চিত্র প্রদর্শনী করে জীবনপঞ্জির তালিকা দীর্ঘথেকে দীর্ঘতর করছিলেন; কিন্তু মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ে পরাজিত হলেন। চলে গেলেন অকালে।


বন্ধুরা আজও তাঁকে মনে করেন। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে জয়ী আরেক শিল্পী মাসুদ কাজী লিখেছেন দীপা হককে নিয়ে। ১ জুলাই দীপা হকের জন্মদিন উপলক্ষে এ লেখা

রওশন হক দীপা। আমার প্রিয় দীপা’পা। শিল্পী দীপা হক। ওঁর সঙ্গে আমার পরিচয়হয় ১৯৮৪ সালে। পরিচয়ের প্রথম দিন থেকেই ওঁকে আমার খুব ভালো লেগে যায়।ভালো লাগার মতোই একজন মানুষ। যেমন দেখতে সুন্দর, আকর্ষণীয় এক মানুষ, তেমনি তাঁর কাজের দক্ষতাও অসাধারণ আর উন্নত মানের পরিচয় দিত।
দীপা’পার সঙ্গে আমার পরিচয়ের সুযোগ ঘটে আমার স্বামী শিল্পী কাজী রকিবের সৌজন্যে। কাজী রকিব ও দীপা’পা সহপাঠী ছিল। ওঁরা একে অপরের সঙ্গে দীর্ঘ ২৭ বছরের বন্ধুত্ব বজায় রেখেছিল। কাজী রকিবের বউ হিসেবেই নয়, আমার সঙ্গে দীপা’পার বন্ধুত্বও একই রকমের হয়েছিল।
আমার এই ভালো লাগার মানুষটির যে কী হলো! ১৯৯৭ সালের দিকে দীপা’পা একদিন হঠাৎ আমাদের দুজনকে টেলিফোনে ওঁর অসুখের খবরটা জানিয়েছিল। আমরা এই খবর পেয়ে ওঁর বাসায় ছুটে গিয়েছিলাম। দীপা’পার স্বামী কায়সার ভাইও বিষয়টা নিয়ে আমাদের সঙ্গে মানসিকভাবে ভাগাভাগি করল। একে একে দীপা’পার সব ভাইবোনও।
তারপর দেশে-বিদেশে অনেক চিকিৎসকের কাছে ছোটাছুটি শুরু হলো। বড় বড় চিকিৎসকও দেখানো হলো। মনে হচ্ছিল ভালোই চিকিৎসা চলছিল। বিদেশেই সার্জারি করানো হলো। কেমোথেরাপিগুলো ঢাকায় দেওয়া হলো। কেমোথেরাপির সময়গুলোতে ওঁর অনেক কষ্ট হয়েছিল। আমি জানি, কেমোথেরাপির পরের দিন থেকেই শরীরের ভেতর কী যন্ত্রণার উদ্বেগ হয়—কারণ, অল্প কিছুদিন আগে আমিও এই কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্যে ভ্রমণ করে ফিরে এসেছি স্বাভাবিক জীবনে। সৃষ্টিকর্তার কাছে তাই আমি খুবই কৃতজ্ঞ।
দীপা’পার সময়ে এই চিকিৎসাপদ্ধতি ছিল অনেক কষ্টের। এই কষ্টের মধ্যেও দীপা’পা বিভিন্ন রকমের বই খুঁজে খুঁজে পড়ত। ক্যানসারের কত ধরনের উন্নত চিকিৎসার গবেষণা চলছে, এই সব বই পড়ে পড়ে ওঁ আমাদের শোনাত। আমার খুব মনে পড়ে—দীপা’পা আমাদের দুজনকে ওঁর দুই পাশে বিছানায় আমাদের দুই হাত চেপে ধরে বসে থাকত। তখন একটা কথা আমাদের দীপা’পা বলেছিল, ‘তোরা একদিন দেখবি, এই চিকিৎসা এত উন্নত হবে, শুধু ট্যাবলেট খেলেই কেমোথেরাপির কাজ হয়ে যাবে।’
দীপা’পার সময়ে যদি এই উন্নত চিকিৎসাপদ্ধতি থাকত, তাহলে হয়তো আমরা এই ভালো মানুষটিকে, গুণী শিল্পীকে হারাতাম না।
১ জুলাই ওঁর জন্মদিন। ‘দীপা’পা—তুমি যেখানেই থাকো, খুব ভালো থেকো।’

No comments

Powered by Blogger.