এবিসি রেডিও-প্রথম আলো জবস ‘হতে চাই পেতে চাই’-রেভিটে সৃজনশীলতার বিকল্প নেই

এবিসি রেডিওর স্টুডিওতে প্রথম আলো জবস ‘হতে চাই পেতে চাই’ অনুষ্ঠানে ১৯ জুন এসেছিলেন ইনক্রাক্স স্কুল অব ডিজাইনের ম্যানেজিং পার্টনার, ব্রিক কনসালট্যান্ট স্থপতি অনিন্দ্য পণ্ডিত। তিনি কথা বলেছেন কথাবন্ধু ব্রতির সঙ্গে। বিল্ডিং ডিজাইন সফটওয়্যার রেভিট আর্কিটেকচারবিষয়ক পড়াশোনা, কোর্স ও এ পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি


কথাবন্ধু: রেভিট আর্কিটেকচার বিষয়টি সম্পর্কে কিছু বলুন। রেভিট বলতে কী বোঝায়?
অনিন্দ্য পণ্ডিত: রেভিট আর্কিটেকচার মূলত একটি সফটওয়্যার। এটি বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত একটি সফটওয়্যার। রেভিট শব্দটি এসেছে রিভাইসের REV এবং ইনস্ট্যান্টলি থেকে IT। দুটো মিলিয়ে হচ্ছে রেভিট। মূলত যাঁরা বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত কাজ করেন, তাঁদের সহযোগিতা করার জন্য এই সফটওয়্যারটি তৈরি করা হয়েছে। অটোক্যাড নামেও একটি সফটওয়্যার রয়েছে। এর নির্মাতা কোম্পানির নাম হচ্ছে অটোডেস্ক। অটোডেস্কেরই আরেকটি উন্নতমানের সফটওয়্যার হচ্ছে রেভিট আর্কিটেকচার। এই সফটওয়্যার দিয়ে চাইলে এক মাসের প্রজেক্ট এক দিনে সম্পন্ন করা যায়।
কথাবন্ধু: রেভিট আর্কিটেকচারের মূল বিষয়গুলো কী?
অনিন্দ্য পণ্ডিত: বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে যে সফটওয়্যারগুলো রয়েছে তার মধ্যে রেভিট আর্কিটেকচার নতুন কিছু কাজ ও ধারণা (আইডিয়া) দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আর সেই আইডিয়াটা হচ্ছে বিম (BIM)। বিম হচ্ছে বিল্ডিং ইনফরমেশন মডেলিং। একজন স্থপতিকে কিছু তৈরি করার আগে একটি নকশা বা মডেল তৈরি করতে হয়। তখন ওই নকশা থেকেই বিল্ডিংয়ের যাবতীয় তথ্য পাওয়া যায়। সুতরাং বিল্ডিংয়ের ব্যবস্থাপনা, তথ্য ও প্রজেক্টের বিন্যাস সহজেই সম্ভব হয় রেভিট আর্কিটেকচার সফটওয়্যায়ের সহায়তায়। এতে দলগতভাবেও কাজ করতে সুবিধা হয়।
কথাবন্ধু: আমাদের এক ফেসবুক বন্ধু শাওন জানতে চেয়েছে, এই সফটওয়্যার দিয়ে রিয়েলিস্টিক ভিউ ও ইন্টেরিয়র ভিউ তৈরি করা যায় কি না।
অনিন্দ্য পণ্ডিত: অবশ্যই তৈরি করা যায়। রিয়েলিস্টিক ভিউ তৈরি করার জন্য আমরা সাধারণত থ্রিডি ম্যাক্স ব্যবহার করি। রেভিটে আপনি হয়তো থ্রিডি ম্যাক্সের মতো আউটপুট পাবেন না। রেভিট আর্কিটেকচার বিল্ডিং সম্পর্কিত, তবু আপনি প্রায় ৯৫ ভাগ পর্যন্ত একটি রিয়েলিস্টিক ভিউ তৈরি করতে পারবেন। রেভিট সফটওয়্যার দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই অনেক কাজ সম্পন্ন করা যায়। বেশি সুবিধা পাওয়ার জন্য রেভিট আর্কিটেকচারই এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কথাবন্ধু: একজন শিক্ষার্থী এই বিষয়টিকে পেশা হিসেবে নিতে চাইলে তাকে কোন বিষয়ে পড়ালেখা করতে হবে?
অনিন্দ্য পণ্ডিত: স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনা করতে হলে অবশ্যই এইচএসসি পাস করে আসতে হবে। আর পেশাগত উন্নতির জন্য অনুশীলন ও কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। বিজ্ঞান বিভাগ থেকেই আর্কিটেকচারে আসতে হবে। আঁকার হাত ভালো থাকতে হবে। এ ছাড়া একটু সৃজনশীল চিন্তাভাবনা থাকলে সেটা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অন্যান্য বিষয়ে পড়াশোনা করেও অনেকে রেভিট আর্কিটেকচার শিখছে। কাজও করছে। এ পেশায় সৃজনশীলতার আনন্দ যেমন আছে তেমনি আছে প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জও।
কথাবন্ধু: বাংলাদেশের কোথায় কোথায় এ বিষয়ে পড়ালেখার সুযোগ আছে?
অনিন্দ্য পণ্ডিত: বর্তমানে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে রেভিট আর্কিটেকচার কোর্সটি রয়েছে। এখানে আমিই রেভিট নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি। সাউথইস্টে আলাদা একটি কোর্স হিসেবেই এটি করানো হচ্ছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো এটিকে কোর্স কারিকুলামের মধ্যে আনা হয়নি। এ ছাড়া আমাদের ইনক্রাক্স স্কুল অব ডিজাইন নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে আমরা রেভিটের ওপর কোর্স করাচ্ছি। তবে এখানে অবশ্যই আর্কিটেকচার কিংবা বিল্ডিং রিলেটেড যোগ্যতা রয়েছে এমন শিক্ষার্থীদেরই আসতে হবে। অটোডেস্কের বিল্ডিং সম্পর্কিত যে সফটওয়্যারগুলো রয়েছে তাতে সবাই কাজ করে স্বচ্ছন্দ বোধ করছে। আগের সফটওয়্যারগুলোর চেয়ে রেভিট অনেক উন্নতমানের। রেভিট যেকোনো প্রকল্প দ্রুত সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিবেশন করে।
শ্রোতাবন্ধু আরিফ (খুদেবার্তা থেকে): এই সফটওয়্যার দিয়ে বিল্ডিংয়ের কস্ট ইস্টিমেশন করা যায় কি?
অনিন্দ্য পণ্ডিত: অবশ্যই করা যায় এবং তা সুন্দরভাবেই করা যায়। এ ছাড়া রেভিট আর্কিটেকচার স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অনেক কাজ করে দেয়। রেভিটের মাধ্যমে একটি বিল্ডিং তৈরিতে কয়টি ইট লাগবে তাও আপনি চাইলে বের করতে পারবেন।
কথাবন্ধু: বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এটি একটি বহুল ব্যবহূত মাধ্যম, কিন্তু বাংলাদেশে এর ব্যবহার এত কম কেন?
অনিন্দ্য পণ্ডিত: বাংলাদেশে রেভিট সফটওয়্যারের ব্যবহার কিছুটা কম। এই সফটওয়্যার সম্পর্কে অনেকেই জানে না। এর সঙ্গে আবার অনেকে পরিচিতও না। একটি সফটওয়্যার বাজারে এলে সে ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্যও কাজ করতে হয়। বর্তমানে রেভিট আর্কিটেকচার সেদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে অনেকেই কম দামের নকল ও পাইরেটস সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। তবে নকল সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কাজ করতে সমস্যাও হচ্ছে। বাংলাদেশে এ সফটওয়্যারের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। পাইরেটস সফটওয়্যার সবখানেই পাওয়া যায়। তবে অরিজিনাল সফটওয়্যার কিনতে চাইলে অটোডেস্কের কাছ থেকেই কিনতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররাও এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করছেন।
কথাবন্ধু: আমাদের এক ফেসবুক বন্ধু শম্পা জানতে চেয়েছে, এখন অনেক ধরনের সফটওয়্যারের কাজ আউটসোর্সিং করা যায়, এই সফটওয়্যারেও এই সুযোগ আছে কি না।
অনিন্দ্য পণ্ডিত: অবশ্যই ভালো সুযোগ রয়েছে। অনেকে এ ক্ষেত্রে কাজও করছে। বাংলাদেশে রেভিট আর্কিটেকচারে দক্ষ লোক খুবই কম রয়েছে। সেজন্য এ শাখায় রেভিট এক্সপার্ট (দক্ষ) দরকার আছে। বর্তমানে আমাদের দেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আউটসোর্সিং নিয়ে কাজ করছে। তারা অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসেও কাজ করছে। ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও কাজের সুযোগ রয়েছে।
শ্রোতাবন্ধু হিমেল (খুদেবার্তা থেকে): ইনক্রাক্স স্কুল অব ডিজাইনে যোগাযোগের ঠিকানা জানতে চাই।
যোগাযোগের ঠিকানা: ইনক্রাক্স স্কুল অব ডিজাইন, ১৫২/২/কে, গ্রিনরোড, ঢাকা-১২০৫।
গ্রন্থনা: সুদীপ দে

No comments

Powered by Blogger.