সাক্ষাৎকার-পোশাক শিল্পের স্বার্থেই মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক চাই by সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : আবু হেনা মুহিব সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি। পড়াশোনা করেছেন হিসাব বিজ্ঞানে। উদ্যোক্তা জীবনের শুরু ১৯৯২ সালে। বর্তমানে তিনি ওনাস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই গ্রুপের আওতায় রয়েছে ৭টি তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান।


এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে ৭ হাজার শ্রমিক। এর আগে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদে নির্বাচিত সদস্য ছিলেন ৬ বার। ব্যবসায়ের পাশাপাশি ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে

সমকাল :রফতানিমুখী তৈরি পোশাকের সার্বিক পরিস্থিতি এখন কেমন?
মহিউদ্দিন : বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব দিন দিন বাড়ছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির ওঠানামা বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে। এ কারণে অর্থনীতির বৈশ্বিক সংকটে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশের রফতানি বাণিজ্য পড়তি প্রবণতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত অর্থবছর যেখানে ৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দিয়ে শেষ হয়েছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের মতো। বিশেষ করে ৮০ শতাংশ রফতানি আয়ের তৈরি পোশাক খাতের ওভেন ও নিট দুই খাতেই প্রবৃদ্ধি কমছে। গত কয়েক মাস ধরে মাসিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। অভ্যন্তরীণ অনেক কারণ থাকলেও আমাদের পণ্যের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ অবস্থা দাঁড়িয়েছে।
সমকাল : মৌলিক পণ্য রফতানিকারক হিসেবে আগের বিশ্বমন্দা থেকে বাংলাদেশ সুবিধা পেয়েছিল। এবারের মন্দার চিত্র বিপরীত হওয়ার কারণ কী?
মহিউদ্দিন :গত মন্দার তুলনায় চলতি মন্দার ব্যাপকতা অনেক বেশি। সে সময় পশ্চিমা কিছু দেশ আক্রান্ত হয়েছিল। এবার গোটা উন্নত বিশ্ব মন্দার শিকার। বিশেষ করে আমাদের প্রধান রফতানি বাজার ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ অনেক দেশ দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সংকটে নাকাল। কাঁচামালের আন্তর্জাতিক বাজারে চলছে ওঠানামার খেলা। কখনও ব্যাপক বেড়ে গিয়ে সংকট তৈরি করছে। আবার কখনও কমে গিয়েও সংকট তৈরি করছে। আর শুরুতে বাংলাদেশ লোয়ার এন্ডের বা কম দামের পণ্য তৈরি করলেও এখন মধ্যম এবং উঁচুমানের পোশাকও রফতানি করছে। ফলে মন্দায় ক্রেতার ব্যয় সংকোচন হলে বাংলাদেশের পণ্যও এ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। সেদিক থেকেও গত মন্দা থেকে ভাবনাটা এবার ভিন্ন। তাছাড়া পরিমাণে কম আদেশ এবং একই পণ্য ভিন্ন ভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করার মতো বেশ কিছু কৌশল নিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা।
সমকাল :তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকার এ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে রফতানি বাড়াতে বিজিএমইএ কী কী উদ্যোগ নিচ্ছে?
মহিউদ্দিন : তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার পশ্চিমা বিশ্বের বাজার পরিস্থিতির প্রতি আমরা সার্বক্ষণিক লক্ষ্য রাখছি। পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের মান ও স্টাইলে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি বিকল্প বাজার সন্ধানে কাজ করছি আমরা। যেমন_ রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকোসহ লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে নতুন বাজার সম্প্রসারণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এ কাজে কিছু সাফল্যও আমরা পেয়েছি। ভারতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা কাজে লাগিয়ে রফতানি পুরোদমে এগিয়ে চললে বড় একটা সুবিধা পাওয়া যাবে আশা করি।
সমকাল : এই মুহূর্তে তৈরি পোশাক খাত আর কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন?
মহিউদ্দিন : বহির্বাণিজ্যের কথা বাদ দিলেও অভ্যন্তরীণভাবে অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, ভূমি সংকট এবং উচ্চ হারের ব্যাংক সুদ দেশের রফতানিমুখী শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণে সুদের হার সবচেয়ে বেশি। বিশ্ববাজারে মন্দা আর অভ্যন্তরীণ এতগুলো মৌলিক সমস্যা নিয়ে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা মুশকিল।
সমকাল :কিন্তু এটাও তো ঠিক যে, বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা শ্রমের সুবিধাটাও তো কেবল বাংলাদেশেরই রয়েছে...।
মহিউদ্দিন : দেখুন, সস্তা শ্রমের দোহাই দিয়ে এতগুলো রিস ফ্যাক্টরকে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। আর আমাদের দক্ষ শ্রমিকের অভাবে মেশিনারিজের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বৈশ্বিক সক্ষমতায় আমরা পিছিয়ে পড়ছি। চীনের রফতানি আদেশ শিফট হয়ে বাংলাদেশে না এসে শ্রীলংকা, এমনকি টার্কিসহ পশ্চিমা বিশ্বে যাচ্ছে এ কারণেই। ক্রেতারা এখন পণ্যের মান, স্বল্প সময়ে আদেশ দেওয়া পণ্য বুঝে পাওয়া এসব বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। যেখানে আমাদের অনেক ঘাটতি রয়েছে।
সমকাল : আশুলিয়ায় শ্রম অসন্তোষ এবং কোথাও কোথাও নাশকতার ঘটনায় আপনারা কয়েকদিন কারখানা বন্ধ রেখেছিলেন। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কী করণীয়?
মহিউদ্দিন : আশুলিয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাসহ গোটা পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সরকার কাজ করছে। ইতিমধ্যে একটা কমিটির ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এ কমিটি পুরো বিষয় খতিয়ে দেখবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা এবং একটা স্থায়ী সমাধানের সুপারিশ করবে তারা। আমরা সরকারের এসব উদ্যোগের প্রতি শতভাগ আস্থা রাখছি। আমরা মনে করি, মালিক-শ্রমিক একে অন্যের পরিপূরক। শ্রমিকের মধ্যে ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশই ভালো। তারা এ শিল্পের কল্যাণ চান। কোনো দাবি-দাওয়া থাকলে সরকার এবং দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোলা আছে। কিন্তু ভাংচুরের পর সমাধান কঠিন হয়ে যায়। আমরা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি ব্যবসা করার জন্য। কারখানা বন্ধ রাখার জন্য নয়। একান্ত অসহায় পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। আবার খোলার কারণ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে আমাদের শতভাগ আস্থা আছে।
সমকাল : শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যা ও আশুলিয়ার ঘটনায় 'মেইড ইন বাংলাদেশ' ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি-না?
মহিউদ্দিন : তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে কঠিন প্রতিযোগিতা করেই বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় প্রধান রফতানিকারক দেশ। সারাবিশ্বে এখন 'মেইড ইন বাংলাদেশ' ব্র্যান্ড ছড়িয়ে পড়েছে। জার্মানির ম্যাকেঞ্জিসহ আন্তর্জাতিক অনেক গবেষণা সংস্থা এ খাতে বাংলাদেশের অকল্পনীয় সম্ভাবনার কথা বলেছে। সুতরাং দু'একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আমাদের ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়ে যাবে না। তবে শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যাকাণ্ডসহ যে কোনো হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই আমরা। আমরা যে কোনো হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
সমকাল : প্রভাবশালী কয়েকজন বিদেশি রাষ্ট্রদূত এ বিষয়টি নিয়ে অনেক কথা বলছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের পোশাক হুমকির মুখে পড়তে পারে। 'ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন' নামে বাংলাদেশে বিরোধী ধারণা ইউরোপজুড়েও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
মহিউদ্দিন : আমিনুল হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাষ্ট্রদূতদের উদ্বেগ একতরফা। আমিনুল হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আমরা সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছি। সরকারও এ বিষয়ে আন্তরিক এবং এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। সরকারের পুলিশ বিভাগই প্রথম তার মৃতদেহ খুঁজে বের করেছে। আমি বিশ্বাস করি, সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক। অচিরেই এর রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হবে। এ জন্য কিন্তু ঢালাওভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলা যায় না। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত এবং পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অনেক ভালো। এখানে মসজিদে হামলা নেই। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নেই। দু'একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার এবং আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি কি-না। সরকার যা করছে আমি তাতে আমরা আস্থাশীল। তবে আমিনুলকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রদূতদের আগ্রহ অনেক বেশি। একই সময়ে আশুলিয়ায় একটি কারখানার একজন ম্যানেজারও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূতরা একটি কথাও বলেননি। আমরা খুশি হতাম, তারা যদি এ বিষয়ে কথা বলতেন। আমিনুল হত্যা এবং আশুলিয়া ঘটনা নিয়ে সরকার কাজ করছে। ঢালাওভাবে মানবাধিকার কিংবা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যতটা খারাপ বলা হচ্ছে, আসলে পরিস্থিতি ততটা খারাপ নয়।
সমকাল : বাংলাদেশি ব্র্যান্ড হুমকির মুখে পড়বে_ এমন ধারণা কতটুকু বাস্তবসম্মত?
মহিউদ্দিন : বাংলাদেশ একটা ছোট দেশ। যাদের কাঁচামাল নেই, অবকাঠামো নেই, বলতে গেলে কিছু নেই এ রকম দুর্বল অবস্থান নিয়ে কিছু সাহসী উদ্যোক্তা সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে পোশাক খাতের বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় প্রধান রফতানিকারক দেশ_ এটা অনেকে সহজে মেনে নিতে পারে না। এর মধ্যে দেশের কিছু পরশ্রীকাতর লোক আছে। তাদের সহযোগিতায় প্রতিযোগীরা পোশাক খাতে অস্থির করতে এবং অপপ্রচারের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করছে। সমস্যা হচ্ছে আমরা গরিব দেশ। আমরা সব অপপ্রচারের প্রতিবাদ করতে পারি না। এ কারণে এখানে অনেকে এসে অনেক কথা বলে যান। চীনে কয়েক বছর আগে তিয়েন আনমেন স্কয়ারে বড় ধরনের হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তখন চীন ছিল ক্রেতাদের অগ্রাধিকার দেশ। তবে সমস্যা হচ্ছে অনেক বড় দেশ যেটা করতে পারে আমরা সেটা করতে পারি না। আমি মনে করি না আমিনুল কিংবা আশুলিয়ার ঘটনা আমাদের পোশাক খাতের জন্য বড় কোনো হুমকি।
সমকাল : যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ দুই রাষ্ট্রদূতই বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, কারখানা শতভাগ কমপ্লায়েন্ট হলে তাদের দেশের ক্রেতারা আরও বেশি দরে পোশাক কিনতে প্রস্তুত। আপনারা এ বিষয়ে কী ভাবছেন?
মহিউদ্দিন : আসলে কারও কথায় পণ্যের দর বাড়া কিংবা কমা নির্ভর করে না। মজিনা সাহেব যদি কোনো ক্রেতাকে নির্দেশ দেন কারও কাছ থেকে পোশাক কিনতে, ক্রেতা কিন্তু কিনবেন না। ক্রেতারা তাদের প্রতিযোগিতামূলক দরেই পোশাক কিনবেন। বিক্রেতাও প্রতিযোগিতামূলক দরে বিক্রি করবে। এটা দুই পক্ষের উইন উইন সিচুয়েশনের ব্যাপার। ক্রেতারা আসেন, দর-মান যাচাই করেই পণ্য কেনেন। এটা চ্যারিটি নয়। ব্যবসা ব্যবসাই। প্রতিযোগিতা করেই ব্যবসায় টিকে থাকতে হয়। ব্যবসার ভাষায়ই কথা বলতে হয়। ক্রেতা যদি একই মানের পোশাক অন্য কোথাও পান সেখানে তিনি চলে যাবেন। এটাই ব্যবসার রীতি। আন্তর্জাতিক সংস্থা ব্যুরো ভেরিতাস, এসজিএস, আইটিএসের মতো সংস্থা আমাদের কমপ্লায়েন্স নিয়ে সার্টিফিকেট দিয়েছে বলে ক্রেতারা আমাদের পোশাকের প্রতি আগ্রহী। এর মধ্যে বেশি কিংবা কম দরের বালাই নেই।
এ প্রেক্ষাপট আরেকটু বলি, ১৯৯৫ সালে সিনেটর হারকিনস মার্কিন সিনেটে বলেছিলেন, বাংলাদেশে পোশাক খাতে শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়। আমাদের পণ্য যেন না নেয় তারা। আমরা শুধু শিশু শ্রমিক বাদই দিইনি, তাদের পুনর্বাসন করেছি। তখন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আমাদের কোটা বাড়িয়ে দেবেন তারা। কিন্তু তারা তা করেননি। কোটা বাড়িয়েছে তুরস্কের। ইইউ স্বল্পোন্নত দেশ না হওয়া সত্ত্বেও পকিস্তানকে সুবিধা দিয়েছে। অথচ এ কারণে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারি সেটা তারা বিবেচনা করেননি। সুতরাং এসব কথায় আমি আতঙ্কিত নই।
সমকাল : যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লবিং করছে বাংলাদেশ। এটা কি আরেক দফা হোঁচট খেল?
মহিউদ্দিন : হ্যাঁ, দীর্ঘদিন ধরে লবিং করছে। তবে এ ব্যাপারে আমি খুব বেশি আশাবাদী নই। এটা আসলে তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। তাদের দেশের রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবি্লউটিও) নিয়ম অনুযায়ী স্বল্পোন্নত অন্যান্য দেশ (এলডিসি) যুক্তরাষ্ট্রের রফতানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পেলেও বাংলাদেশ এ সুবিধা পাচ্ছে না। নামসর্বস্ব কিছু পণ্যে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পেলেও প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক ও চিংড়ি রফতানি হচ্ছে অন্যান্য উন্নত দেশের মতো নিয়মিত প্রায় ২০ শতাংশ হারে শুল্ক দিয়েই। নানা অজুহাতে এখনও তারা দিচ্ছে না। একটার পর একটা চুক্তির কথা বলে যাচ্ছে তারা। এখন অপরাপর ধনী দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নিয়মিত শুল্ক কোনো কোনো ক্ষেত্রে দিয়েই আমাদের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে। অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, জাপান ও ভারত আমাদের এ সুবিধা দিয়েছে।
সমকাল : আপনি মাঝে মধ্যে পোশাক খাত মিডিয়ার অপপ্রচারের শিকার বলে থাকেন। এটা কেন?
মহিউদ্দিন : বিদেশি মিডিয়ার কথা বাদ দিলেও দেশের দু'একট মিডিয়ার প্রতি এখনও আমার এ অভিযোগ আছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট আমাদের বুঝতে হবে। গঠনমূলক সমালোচনায় আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সেখান থেকে আমরা শোধরাব। কিন্তু গড়ে একপেশে ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে এ খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে কোনো কোনো মিডিয়া। বলা হয়, আমরা বছরে দু'বার গাড়ির মডেল বদলাই। বিদেশ সফর করি। শুধু এসব কথাই বলা হচ্ছে। কিন্তু আড়াই হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সৎ উদ্যোক্তারা যে টিকতে পারলেন না_ এসব খবর ওই সব মিডিয়া লিখছে না। আমি তো ২০০২ সালের কেনা গাড়িতেই এখনও চলি। কেউ নিয়মিত শুল্ক দিয়ে গাড়ি কিনতে পারলে সমস্যা কোথায়?
সমকাল : পোশাক খাতে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আপনারা আপত্তি করছেন কেন?
মহিউদ্দিন : আমরা বিদেশি বিনিয়োগে আপত্তি করছি না। তবে কথা হচ্ছে, এ খাতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ এলে একটা অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। আমাদের ব্যাংক সুদের হার ১৮ থেকে ২০ শতাংশ। বিদেশিরা তাদের দেশের ব্যাংক থেকে ৫ শতাংশ হারে ঋণ পায়। ফলে তাদের সঙ্গে একটা অসম প্রতিযোগিতা হবে, যা এ খাতকে অস্থির করবে। এ ছাড়া গত ৩০ বছরে অনেক ক্ষতি মেনে নিয়ে আমরা শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন করেছি। সুতরাং আমরা এ খাতের পশ্চাৎ সংযোগ খাতে বিনিয়োগ চাই।
সমকাল : সাক্ষাৎকার প্রদান করার জন্য ধন্যবাদ।
মহিউদ্দিন : সমকাল পাঠকদেরও ধন্যবাদ।
 

No comments

Powered by Blogger.