আ মা র এ ভা রে স্ট অ ভি যা ন-তারপর উঠতে উঠতে... by ওয়াসফিয়া নাজরীন
২৬ মে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি ছিলেন তাঁর এভারেস্ট অভিযানে। পাঠকদের সেই অভিযানের কথা শোনাচ্ছেন তিনি। আজ ছাপা হলো এর প্রথম পর্ব—
২৬ মার্চ ২০১২। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসেই শুরু হয়েছিল আমার এভারেস্ট অভিযান। এর ঠিক এক বছর আগে অনলাইনে আমরা ঘোষণা করেছিলাম বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট কর্মসূচির কথা। সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বত চূড়ায় উঠে পৃথিবীর কাছে নিজের দেশকে তুলে ধরার জন্য শুরু করেছি এই কর্মসূচি।
নেপালের লুকলা থেকে শুরু হয় অভিযান। হাঁটা দিই বেসক্যাম্পের দিকে। তেনজিং নোরগে আর এডমন্ড হিলারি যে পথে জয় করেছিলেন এভারেস্ট, সেই দক্ষিণ দিক দিয়েই আমরা পরিচালনা করি আমাদের অভিযান। এ মৌসুমটা এভারেস্ট যেন হয়ে উঠেছিল নির্মম। মারা গেছেন কমপক্ষে ১৫ জন। আহতের সংখ্যা আরও বেশি। পথে পথে দেখেছি নিথর দেহ। ১৯৯৬ সালের পর এ বছরই এভারেস্ট অভিযানে মৃতের হার বেশি। তাই তো ২৬ মে এভারেস্টের চূড়ায় উঠে ফিরে আসার পর বেঁচে থাকার অনুভূতিটা প্রবলভাবেই অনুভব করি। যেন পুনর্জন্ম
হলো।
এভারেস্টের বেসক্যাম্পে এসে পৌঁছাই ৮ এপ্রিল। আমার সঙ্গে ছিল লাল-সবুজের দুটি পতাকা। আট হাতেরও বেশি দৈর্ঘ্যের পতাকাটা দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। চারজনে ধরে এটা বেসক্যাম্পের একটা খুঁটির ডগায় উড়িয়ে দিলাম। এবার এটাই ছিল বেসক্যাম্পে সবচেয়ে বড় পতাকা। আকারে বড় হওয়ায় পতাকা যখন উড়ত, তখন বেশ শব্দ হতো। অন্য পর্বতারোহীরা রাতে পতাকার সেই শব্দের কথা প্রায়ই বলতেন। পতাকার শব্দের সঙ্গে ছিল তুষারধসের শব্দ। আমি একে ঘুমপাড়ানি গান বলি। এখনো রাতে সেই সব শব্দের কথা ভেবে, তবেই ঘুমাই। দ্বিতীয় পতাকাটা ছিল ছোট। সেটা উড়িয়েছিলাম পর্বত শিখরে। পর্বতারোহণে একটা কথা আছে, ‘ওপরে ওঠো নিচে ঘুমাও’। মানে যে উচ্চতায় ওঠা হবে, তার থেকে কম উচ্চতায় রাতে ঘুমানো উচিত। এ ছাড়া উচ্চতা, কম তাপমাত্রা আর ওই পরিবেশে শরীরকে খাপ খাওয়ানো (অ্যাকলেমাটাইজেশন) যায় না। অ্যাকলেমাটাইজেশনের জন্য বারবার পর্বতে ওঠানামা করতে হয়। বেসক্যাম্প থেকে এই রোটেশন শুরু করি।
১৬ এপ্রিল ছিল পূজার দিন। শেরপারা এভারেস্টকে ঈশ্বরজ্ঞান করেন। সেই পাহাড়ে জুতা পরে ওঠা হচ্ছে, পাহাড়কে বিরক্ত করা হচ্ছে—এসবের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা আর নিরাপদে এভারেস্ট চূড়ায় ওঠা ও ফিরে আসার জন্যই শেরপারা করেন এই পূজা। যার প্রস্তুতি চলে কয়েক দিন আগে। পাথর এনে বেসক্যাম্পের ঢালে সমতল একটা জায়গা তৈরি করা হয়, তারপর সেখানে একটি বেদি বানানো হয়। পূজার দিন পর্বতারোহীদের সব জিনিসপত্র বেদিতে রেখে পূজা করা হয়। শেরপাদের এই পূজার আগের দিন দালাই লামার একটা বার্তা আসে আমার মোবাইল ফোনে। আমার অভিযানের জন্য তিনি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই অভিযানে আমার সঙ্গে ছিলেন শেরপা সরদার নিমা গ্যালজে, এবার নিয়ে নয়বার এভারেস্ট জয় করেছেন। বয়স মাত্র ২৯। সঙ্গে আরেকজন শেরপা পাঁচবার এভারেস্ট সামিট করা সাংগে। তবে পরে অসুস্থ হওয়ায় সাংগে ফিরে যান। তাঁর জায়গায় যোগ দেন ২৩ বছর বয়সী দা কুসাং শেরপা। এবার নিয়ে পর পর তিনবার উঠেছেন এভারেস্টে। যে কোম্পানি আমাদের অভিযানের আয়োজক, সেই এক্সপিডিশন হিমালয়ার স্বত্বাধিকারী দাওয়া গ্যালজেং শেরপা বেসক্যাম্পে থেকে আমাদের নির্দেশনা দিতেন আর রেডিওতে যোগাযোগ রাখতেন। আমি যেহেতু একা, তাই এভারেস্ট অভিযানের সরকারি ফি ভাগাভাগি করি একই কোম্পানির মাধ্যমে যাওয়া লেবাননি দুই পর্বতারোহীর সঙ্গে। এতে খরচটা কম হয়। কিন্তু তাঁদের একজন রাফি (৩৫) হূদেরাগে আক্রান্ত হন। তাঁকে উদ্ধার করে কাঠমান্ডু নিয়ে ওপেন হার্ট সার্জারি করতে হয়। তাঁর সহযাত্রী পর্বতারোহী স্যাম পরে মানসিক দুর্বলতা কাটাতে পারেননি, তিনি ফিরে যান।
বেসক্যাম্প থেকে ক্যাম্প-১, ২ ও ৩-এ ওঠানামা শুরু হয় ধীরে ধীরে। পাঁচ হাজার ৯৪৩ মিটার উঁচু ক্যাম্প-১-এ থাকি পরের দিন ৬ হাজার ৪৫০ মিটারের ক্যাম্প-২-এ যাই। আবার নেমে আসি। ২১ এপ্রিল বরফের ফাটলে পড়ে যান এক শেরপা। সেই ফাটল পার হওয়ার সময় আমি দেখেছি বরফের চাঙরের কোনায় রক্ত, চুল লেগে আছে। উদ্ধারকারী দল এসে পরে তাঁর মৃতদেহ তুলে আনে। তাঁর মাথা দেহ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। এই প্রথম আমি মৃত্যু দেখলাম।
২৬ এপ্রিল ইচ্ছা ছিল বাড়তি অক্সিজেন ছাড়া ক্যাম্প-৩ ছুঁয়ে আসব। অর্ধেক গিয়ে দেখি, রশি বসানো হয়নি। এ সময়টায় সাংগে বলছিলেন, তাঁর মাথাব্যথা করছে।
মজার ব্যাপার হলো কুম্ভু আইসফল দিয়ে নামার সময় দেখতাম আগের পথটা নেই। বরফধস, তুষারধসের কারণে ভিডিও গেমের মতো রাস্তা বারবার বদলে যায়। হিমবাহের ফাটল পেরোনোর জন্য মই বিছানো থাকে। এর পাশে ঢিলে রশির সঙ্গে আমরা সেফটি হুক লাগিয়ে নিই। তার পরও ফাটল পার হওয়ার সময় বুক কাঁপে। যেখানে দুটি মই জোড়া লাগে, সেখানে বুটের ক্র্যাম্পুন ঠিকমতো বসে না। ওই জায়গাটা বেশ বিপজ্জনক।
কুম্ভু আইসফলের (হিমবাহের এক পাশ বা হিমপ্রপাত) কাছেই ২১ এপ্রিল দেখা হয় বাংলাদেশের দুই পর্বতারোহী এম এ মুহিত আর নিশাত মজুমদারের সঙ্গে। এর আগে বেসক্যাম্পেও বেশ কবার দেখা হয় তাঁদের সঙ্গে। নিশাত আমাকে কিছু আমসত্ত্ব, চকোলেট দেন; আমি তাঁকে চা খাওয়াই।
২৮ এপ্রিল আমি বুঝতে পারি আমার জিহ্বা পুড়ে গেছে। কোনো কিছুই খেতে পারি না। তরল জিনিসও গিলতে হয় বেশ কষ্ট করে। সাত-আট দিন এ সমস্যা ছিল। বেসক্যাম্পে ফিরে আসি ১ মে। এখানে এসে বুঝতে পারি, আমার কুম্ভু কফ হয়েছে। মানে প্রচণ্ড কাশি, দম বন্ধ হওয়ার মতো। বেসক্যাম্পেরও নিচে গোরাক সেপে নেমে যাই। ২ মে সাংগে চলে যান, তাঁর অবস্থার অবনতি হচ্ছিল ক্রমাগত। যোগ দেন দা কুসাং। ৪ ও ৫ মে আবার উঠে যাই ক্যাম্প-২-এ। পুরো পথটা আইস অ্যাকস দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে যেতে হয়। এ যাত্রাতেই পড়েছিলাম তুষারঝড়ের মধ্যে। হোয়াইট আউট তখন সেখানে। এ সময়ে মনে হয় সমানে সাদা কী যেন নড়ছে, অনেকটা মরীচিকার মতো। ৬ মে ক্যাম্প-২-এ থাকি। এটা ছিল আমাদের দ্বিতীয় রোটেশন।
৯ মে আবার ফিরে এলাম বেসক্যাম্পে। এখানকার পরিবেশই বলে দিচ্ছে সামিট মৌসুম শুরু হচ্ছে। মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই। একটু নিচুতে থাকার জন্য ডিম্বোসে যাই। পরের দিনও থাকি। দুই ধাপ নিচে লোভুসেতেও থাকি। ১৪ মে আবার উঠি বেসক্যাম্পে। যখন উঠছিলাম, তখন অনেক দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল বেসক্যাম্পে বাংলাদেশের সেই বড় পতাকাটা উড়ছে। জায়গাটাকে আমার মনে হচ্ছিল, হোম—মাই সুইট হোম। এই শান্তির নীড়ে যাব, ওখান থেকে শুরু হবে এভারেস্ট চূড়ার দিকে যাত্রা।
বাকি অংশ পরের সংখ্যায়
নেপালের লুকলা থেকে শুরু হয় অভিযান। হাঁটা দিই বেসক্যাম্পের দিকে। তেনজিং নোরগে আর এডমন্ড হিলারি যে পথে জয় করেছিলেন এভারেস্ট, সেই দক্ষিণ দিক দিয়েই আমরা পরিচালনা করি আমাদের অভিযান। এ মৌসুমটা এভারেস্ট যেন হয়ে উঠেছিল নির্মম। মারা গেছেন কমপক্ষে ১৫ জন। আহতের সংখ্যা আরও বেশি। পথে পথে দেখেছি নিথর দেহ। ১৯৯৬ সালের পর এ বছরই এভারেস্ট অভিযানে মৃতের হার বেশি। তাই তো ২৬ মে এভারেস্টের চূড়ায় উঠে ফিরে আসার পর বেঁচে থাকার অনুভূতিটা প্রবলভাবেই অনুভব করি। যেন পুনর্জন্ম
হলো।
এভারেস্টের বেসক্যাম্পে এসে পৌঁছাই ৮ এপ্রিল। আমার সঙ্গে ছিল লাল-সবুজের দুটি পতাকা। আট হাতেরও বেশি দৈর্ঘ্যের পতাকাটা দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। চারজনে ধরে এটা বেসক্যাম্পের একটা খুঁটির ডগায় উড়িয়ে দিলাম। এবার এটাই ছিল বেসক্যাম্পে সবচেয়ে বড় পতাকা। আকারে বড় হওয়ায় পতাকা যখন উড়ত, তখন বেশ শব্দ হতো। অন্য পর্বতারোহীরা রাতে পতাকার সেই শব্দের কথা প্রায়ই বলতেন। পতাকার শব্দের সঙ্গে ছিল তুষারধসের শব্দ। আমি একে ঘুমপাড়ানি গান বলি। এখনো রাতে সেই সব শব্দের কথা ভেবে, তবেই ঘুমাই। দ্বিতীয় পতাকাটা ছিল ছোট। সেটা উড়িয়েছিলাম পর্বত শিখরে। পর্বতারোহণে একটা কথা আছে, ‘ওপরে ওঠো নিচে ঘুমাও’। মানে যে উচ্চতায় ওঠা হবে, তার থেকে কম উচ্চতায় রাতে ঘুমানো উচিত। এ ছাড়া উচ্চতা, কম তাপমাত্রা আর ওই পরিবেশে শরীরকে খাপ খাওয়ানো (অ্যাকলেমাটাইজেশন) যায় না। অ্যাকলেমাটাইজেশনের জন্য বারবার পর্বতে ওঠানামা করতে হয়। বেসক্যাম্প থেকে এই রোটেশন শুরু করি।
১৬ এপ্রিল ছিল পূজার দিন। শেরপারা এভারেস্টকে ঈশ্বরজ্ঞান করেন। সেই পাহাড়ে জুতা পরে ওঠা হচ্ছে, পাহাড়কে বিরক্ত করা হচ্ছে—এসবের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা আর নিরাপদে এভারেস্ট চূড়ায় ওঠা ও ফিরে আসার জন্যই শেরপারা করেন এই পূজা। যার প্রস্তুতি চলে কয়েক দিন আগে। পাথর এনে বেসক্যাম্পের ঢালে সমতল একটা জায়গা তৈরি করা হয়, তারপর সেখানে একটি বেদি বানানো হয়। পূজার দিন পর্বতারোহীদের সব জিনিসপত্র বেদিতে রেখে পূজা করা হয়। শেরপাদের এই পূজার আগের দিন দালাই লামার একটা বার্তা আসে আমার মোবাইল ফোনে। আমার অভিযানের জন্য তিনি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই অভিযানে আমার সঙ্গে ছিলেন শেরপা সরদার নিমা গ্যালজে, এবার নিয়ে নয়বার এভারেস্ট জয় করেছেন। বয়স মাত্র ২৯। সঙ্গে আরেকজন শেরপা পাঁচবার এভারেস্ট সামিট করা সাংগে। তবে পরে অসুস্থ হওয়ায় সাংগে ফিরে যান। তাঁর জায়গায় যোগ দেন ২৩ বছর বয়সী দা কুসাং শেরপা। এবার নিয়ে পর পর তিনবার উঠেছেন এভারেস্টে। যে কোম্পানি আমাদের অভিযানের আয়োজক, সেই এক্সপিডিশন হিমালয়ার স্বত্বাধিকারী দাওয়া গ্যালজেং শেরপা বেসক্যাম্পে থেকে আমাদের নির্দেশনা দিতেন আর রেডিওতে যোগাযোগ রাখতেন। আমি যেহেতু একা, তাই এভারেস্ট অভিযানের সরকারি ফি ভাগাভাগি করি একই কোম্পানির মাধ্যমে যাওয়া লেবাননি দুই পর্বতারোহীর সঙ্গে। এতে খরচটা কম হয়। কিন্তু তাঁদের একজন রাফি (৩৫) হূদেরাগে আক্রান্ত হন। তাঁকে উদ্ধার করে কাঠমান্ডু নিয়ে ওপেন হার্ট সার্জারি করতে হয়। তাঁর সহযাত্রী পর্বতারোহী স্যাম পরে মানসিক দুর্বলতা কাটাতে পারেননি, তিনি ফিরে যান।
বেসক্যাম্প থেকে ক্যাম্প-১, ২ ও ৩-এ ওঠানামা শুরু হয় ধীরে ধীরে। পাঁচ হাজার ৯৪৩ মিটার উঁচু ক্যাম্প-১-এ থাকি পরের দিন ৬ হাজার ৪৫০ মিটারের ক্যাম্প-২-এ যাই। আবার নেমে আসি। ২১ এপ্রিল বরফের ফাটলে পড়ে যান এক শেরপা। সেই ফাটল পার হওয়ার সময় আমি দেখেছি বরফের চাঙরের কোনায় রক্ত, চুল লেগে আছে। উদ্ধারকারী দল এসে পরে তাঁর মৃতদেহ তুলে আনে। তাঁর মাথা দেহ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। এই প্রথম আমি মৃত্যু দেখলাম।
২৬ এপ্রিল ইচ্ছা ছিল বাড়তি অক্সিজেন ছাড়া ক্যাম্প-৩ ছুঁয়ে আসব। অর্ধেক গিয়ে দেখি, রশি বসানো হয়নি। এ সময়টায় সাংগে বলছিলেন, তাঁর মাথাব্যথা করছে।
মজার ব্যাপার হলো কুম্ভু আইসফল দিয়ে নামার সময় দেখতাম আগের পথটা নেই। বরফধস, তুষারধসের কারণে ভিডিও গেমের মতো রাস্তা বারবার বদলে যায়। হিমবাহের ফাটল পেরোনোর জন্য মই বিছানো থাকে। এর পাশে ঢিলে রশির সঙ্গে আমরা সেফটি হুক লাগিয়ে নিই। তার পরও ফাটল পার হওয়ার সময় বুক কাঁপে। যেখানে দুটি মই জোড়া লাগে, সেখানে বুটের ক্র্যাম্পুন ঠিকমতো বসে না। ওই জায়গাটা বেশ বিপজ্জনক।
কুম্ভু আইসফলের (হিমবাহের এক পাশ বা হিমপ্রপাত) কাছেই ২১ এপ্রিল দেখা হয় বাংলাদেশের দুই পর্বতারোহী এম এ মুহিত আর নিশাত মজুমদারের সঙ্গে। এর আগে বেসক্যাম্পেও বেশ কবার দেখা হয় তাঁদের সঙ্গে। নিশাত আমাকে কিছু আমসত্ত্ব, চকোলেট দেন; আমি তাঁকে চা খাওয়াই।
২৮ এপ্রিল আমি বুঝতে পারি আমার জিহ্বা পুড়ে গেছে। কোনো কিছুই খেতে পারি না। তরল জিনিসও গিলতে হয় বেশ কষ্ট করে। সাত-আট দিন এ সমস্যা ছিল। বেসক্যাম্পে ফিরে আসি ১ মে। এখানে এসে বুঝতে পারি, আমার কুম্ভু কফ হয়েছে। মানে প্রচণ্ড কাশি, দম বন্ধ হওয়ার মতো। বেসক্যাম্পেরও নিচে গোরাক সেপে নেমে যাই। ২ মে সাংগে চলে যান, তাঁর অবস্থার অবনতি হচ্ছিল ক্রমাগত। যোগ দেন দা কুসাং। ৪ ও ৫ মে আবার উঠে যাই ক্যাম্প-২-এ। পুরো পথটা আইস অ্যাকস দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে যেতে হয়। এ যাত্রাতেই পড়েছিলাম তুষারঝড়ের মধ্যে। হোয়াইট আউট তখন সেখানে। এ সময়ে মনে হয় সমানে সাদা কী যেন নড়ছে, অনেকটা মরীচিকার মতো। ৬ মে ক্যাম্প-২-এ থাকি। এটা ছিল আমাদের দ্বিতীয় রোটেশন।
৯ মে আবার ফিরে এলাম বেসক্যাম্পে। এখানকার পরিবেশই বলে দিচ্ছে সামিট মৌসুম শুরু হচ্ছে। মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই। একটু নিচুতে থাকার জন্য ডিম্বোসে যাই। পরের দিনও থাকি। দুই ধাপ নিচে লোভুসেতেও থাকি। ১৪ মে আবার উঠি বেসক্যাম্পে। যখন উঠছিলাম, তখন অনেক দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল বেসক্যাম্পে বাংলাদেশের সেই বড় পতাকাটা উড়ছে। জায়গাটাকে আমার মনে হচ্ছিল, হোম—মাই সুইট হোম। এই শান্তির নীড়ে যাব, ওখান থেকে শুরু হবে এভারেস্ট চূড়ার দিকে যাত্রা।
বাকি অংশ পরের সংখ্যায়
No comments