জনজীবন-ধানের মূল্য, কৃষকের কল্যাণ ও খাদ্য নিরাপত্তা by মাহবুব হোসেন
কৃষির আয় সার্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। পকেটে বা টেঁকে অর্থ থাকলেই কৃষকরা অন্য পণ্য কেনে। নির্মাণ কাজে ব্যয় করে। তারা অভ্যন্তরীণ বাজার বড় করায় অবদান রাখে। বিশ্ববাজারে মন্দা থাকার কারণে রফতানিমুখী শিল্পে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি না থাকার পরও যে এ বছর শিল্প খাতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি, তার পেছনে সম্ভবত গত কয়েকটি মৌসুম
কৃষকের হাতে বাড়তি অর্থ আসার বিষয়টি কাজ করেছে। আমাদের শিল্পপণ্যের দেশীয় বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং তার পেছনে কৃষকের উন্নতি অবশ্যই ভূমিকা রাখছে। এটাও লক্ষণীয়, কৃষিপণ্যের জন্য আগের তুলনায় বেশি দাম দিতে ভোক্তারা রাজি থাকছে। তারা বাজারে চাল বা সবজির চড়া দামে হতাশা
ব্যক্ত করে
বোরো ধান ওঠার পর ধান-চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতির হারেও লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে। দরিদ্র এবং নির্দিষ্ট আয়ের স্বল্প ও মধ্যবিত্ত বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য এ পরিস্থিতি সন্তোষের। বিশেষ করে দরিদ্রদের জন্য সময়টি ভালো যাচ্ছে। তাদের দৈনন্দিন ব্যয়ের বেশিরভাগ চাল কেনার জন্য চলে যায়। এ চিত্র চাষিদের জন্য কি নিরুৎসাহজনক? কৃষিতে, বিশেষ করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদে কোনো ক্ষতির শঙ্কা কি সৃষ্টি হয়েছে?
২০০৭-০৮ সালের কথা আমরা স্মরণ করতে পারি। তখন বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। বাংলাদেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়ে। এ চিত্রের অবশ্য আরেকটি দিক হচ্ছে, টানা চার বছর ধরেই আমন ও বোরো মৌসুমে বাংলাদেশের ধানের ফলন ভালো হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এ দেশে ঝড়-বন্যা-খরার কারণে ফসলের তেমন বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। এ বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে বোরো চালের ফলন হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ টন থেকে ২ কোটি টনের মতো। চূড়ান্ত হিসাব করা হলে প্রকৃত পরিমাণ বলা যাবে। তবে হিসাবে যা-ই আসুক, এত পরিমাণ চাল এক মৌসুমে অতীতে উৎপাদন হয়নি। এ চালের একটি অংশ বাজারে এসেছে। একটি অংশ রয়ে গেছে কৃষকের গোলায়। পাইকারি ব্যবসায়ী এবং চালকল মালিকদের কাছেও ভালো পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে। পরপর কয়েকটি মৌসুমে ভালো দাম এবং ২০১১ সালে আশাতীত দাম পাওয়ার পর এবারে বাজার সে তুলনায় কিছুটা পড়তি। ২০১১ সালের প্রথম দিকে ধানের দাম প্রতি মণ ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। এ পরিমাণ উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় দ্বিগুণ। এ চিত্র স্বাভাবিক নয়। মাত্র ৮-১০ বছর আগেও বলা হতো যে বাংলাদেশে কৃষির উন্নতি হচ্ছে কিন্তু কৃষকের নয়। বাজারে কৃষিপণ্যের মূল্য ভালো, কিন্তু তার সুফল কৃষক পায় না। ২০০৭ সালের দিকে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে থাকে। পরপর কয়েকটি মৌসুম খোদ কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য ভালো দাম পেতে শুরু করে। বিশ্ববাজারেও এ সময়ে দাম ভালো ছিল। জ্বালানি তেলের চড়া মূল্যের কারণে বায়োডিজেল তৈরিতে খাদ্যশস্যের ব্যবহার হতে থাকায় উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর খাদ্যের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ে। উন্নত দেশগুলো তাদের উদ্বৃত্ত খাদ্যের একটি অংশ আমাদের মতো দেশে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করত। কিন্তু বায়োডিজেল উৎপাদনের প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবহারের কারণে এ খাদ্যশস্যের বিকল্প বাজার তৈরি হওয়ায় দরিদ্র দেশগুলো সমস্যায় পড়ে।
তবে এখন খাদ্যশস্যের বিশ্ববাজার ২০০৭ সালের তুলনায় অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল এবং এর প্রভাব আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারেও পড়ছে। দেশে চালের মূল্য কম থাকার আরেকটি কারণ হচ্ছে গত বছরের মাঝামাঝি সরকারের প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল আমদানি। বাজার চড়ে গেলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী কষ্ট পাবে, এ শঙ্কা থেকে সরকার নিজের মজুদ বাড়ানোর জন্য চাল আমদানি করে। ঠিক ওই সময়েই বোরোর বাম্পার ফলনের ধান কৃষকের ঘরে ওঠে। এর প্রভাব পড়ে বাজারে। কৃষকরা ভেবেছিল আগের বছরের মতো না হলেও মণপ্রতি ৭০০-৮০০ টাকা দাম মিলবে। কিন্তু তাদের আশাহত হতে হয়। সামনে রয়েছে আমন মৌসুম। এ কারণে বোরো মৌসুমের পরপরই মজুদ থেকে ধান-চাল বাজারে ছেড়ে দিতে হয়। আমনের ফলনও গত মৌসুমে ভালো হয়। এভাবে বাজারে সরবরাহ বাড়ে এবং ফল হিসেবে চালের বাজার স্থিতিশীল থাকে। মোটামুটি এক বছর ধরেই এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এখন উৎপাদন ব্যয়ের দিকে তাকানো যেতে পারে। গত বছর সরকার সার-ডিজেলের মূল্য একাধিকবার বাড়িয়েছে। কৃষি মজুরিও বাড়তির দিকে। ফলে প্রতি মণ ধান উৎপাদনে ব্যয় পড়ছে ৬০০-৬৫০ টাকা। বোরো ওঠার পর বাজারদরও মোটামুটি একই রকম। ফলে কৃষকের মার্জিন বা লাভ তেমন থাকছে না। স্বভাবতই তারা হতাশ। ধান-চাল বিক্রি করে পরিবারের কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার যে অর্থ পাওয়ার আশা তারা করছিল সেটা আসেনি। এর প্রভাব কিন্তু অর্থনীতির অন্যান্য শাখায়ও পড়ে। কারণ দেশে কৃষকের সংখ্যা অনেক এবং তাদের হাতে বাড়তি অর্থ থাকলে সেটা শিল্পজাত পণ্য কেনায় ব্যয় হয়।
আমাদের দেশে চাল হচ্ছে প্রধান খাদ্য এবং কৃষকের জন্য প্রধান কৃষিপণ্য। এ পণ্যের দামের ব্যবস্থাপনা প্রকৃতপক্ষে সূক্ষষ্ট সুতার ওপর দিয়ে চলার মতো। একদিকে গরিব ভোক্তা_ যাদের সংখ্যা অনেক, তাদের জন্য সহনীয় মূল্য বজায় রাখা; পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক কৃষকের জন্য উৎপাদন বাড়ানোর প্রণোদনা সৃষ্টি_ দুয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। একটু এদিক-ওদিক হলেই বিপদ দেখা দিতে পারে। অবস্থা দাঁড়ায় দাঁড়িপাল্লার মতো_ কখনও কৃষক (বিশেষত বড় কৃষক) ভালো দাম পেয়ে খুশি হয়, আবার কখনও ভোক্তাদের জন্য বাজার থাকে সন্তোষজনক। যেমনটি আমরা এখন দেখছি। দ্রব্যমূল্য নিয়ে ক্ষোভ-উদ্বেগ রয়েছে মানুষের মধ্যে। কিন্তু চালের বাজারের চিত্র ভিন্ন।
আমাদের কৃষি কাঠামোতে দেখা যায় প্রচুর পরিমাণ জমি রয়েছে এমন কৃষকের সংখ্যা কম। কেউ কেউ হয়তো কৃষি জমি বাড়াতে চান, কিন্তু কেনার মতো জমি মেলে না। মিললেও একই এলাকায় মেলে না। এর বাইরে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বর্গাচাষি। শহরে বসবাস করে এমন অনেকে তাদের জমি বর্গা দিয়ে দিচ্ছেন। বর্গাচাষিদের কাছে ধানের মূল্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয় না। কারণ তাদের যা উৎপাদন তার একটি অংশ দিতে হয় মালিককে, একটি অংশ যায় উৎপাদন ব্যয় খাতে। বাকিটা রাখে নিজের খোরাকির জন্য। কৃষি উপকরণের দাম বাড়লে তাদের ওপরে যে বোঝা চাপে সেটা সরাসরি। তাদের উৎপাদন বেশি পড়ে। তবে উপকরণের দাম বেশি বেড়ে গেলেও বর্গা জমির মালিকের কিছু আসে যায় না।
অন্যদিকে, প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষি পরিবারে জমির গড় পরিমাণ সাড়ে সাত বিঘার কম। তাদের আবার তিন ভাগের দুই ভাগের জমি ৩ বিঘার কম। তারাই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক। সারা বছরের খোরাকি জমি থেকে তাদের আসে না। বাজারের ওপর নির্ভরতা থাকে। এ কারণে খাদ্যের বাজার যেন সহনশীল থাকে, সেটা কৃষকদের এ অংশ চায়। একই সঙ্গে আরও একটি বিষয় খেয়ালে রাখা দরকার। প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে কিন্তু এখন বছরে একটা নয়, বরং দুটি উচ্চফলনশীল জাতের ধান কৃষক ঘরে তুলতে পারে। এখন প্রতি বিঘায় তারা ৩৫-৪০ মণ ধান পায়। যাদের এক বিঘা জমি আছে তাদের বছরের খোরাকি নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হয় না। এ কারণে বাজারের উদ্বৃত্ত নিয়ে আসা কৃষকের সংখ্যা বেড়েছে। চালের দাম ভালো থাকলে তারা খুশি থাকে। অন্য ফসল উৎপাদনেও কৃষকদের আগ্রহ এখন বাড়ছে। সবজি যত উৎপাদন হয় তার প্রায় সবটা বাজারে আসে। এ পণ্যেও এখন ভালো দাম মিলছে। তবে ধানের সঙ্গে সবজির পার্থক্য আছে_ কৃষকের নিজের জন্য যথেষ্ট চালের দরকার হয়। এখন যা কৃষিচিত্র তাতে ধান-চালের দাম কমে গেলে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন হয় মধ্য ও বড় কৃষক।
এখন আসি খাদ্য নিরাপত্তা প্রসঙ্গে। দেশের ৩০ শতাংশ লোকের বাস দারিদ্র্যসীমার নিচে। তাদের যা আয় তাতে মৌলিক চাহিদার সামান্যই পূরণ হয়। এর মধ্যে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে তারা এবং চাল থাকে অপরিহার্যের তালিকায়। যখন বাজারে চালের দাম বাড়ে, অন্য পণ্য কেনা কমিয়ে দেয়। সবজি-ডালের ভাগে কম পড়ে। সন্তানের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটলে সেটা মেনে নেয়। পোশাক কম কেনে কিংবা নিম্নমানেরটা কেনে। নতুন বাড়ি নির্মাণ কিংবা পুরনো বাড়িঘর সংস্কারে ব্যয় কম করে কিংবা করে না। পরপর দুই মৌসুম ধানের দাম কম থাকায় এ সমস্যা কিছুটা হলেও তারা অনুভব করছে।
সচ্ছল কৃষক এবং গ্রামের ধনবান জনগোষ্ঠী বুঝে গেছে যে কৃষিতে আয় বেশি পরিমাণে বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ সীমিত। সে জন্য তারা অকৃষি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ খুঁজতে থাকে।
খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন থাকে নিম্ন আয়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী, কৃষি দিনমজুর, শহরের শ্রমিক, পরিবহন কর্মী ও ছোট ব্যবসায়ী। তাদের আয় সীমিত, কিন্তু ব্যয়ের প্রধান অংশ যায় চালের পেছনে। এ বছরে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা চিত্র ভালো থাকার কথা। তবে দীর্ঘমেয়াদে বিষয়টি উদ্বেগের। বিশেষ করে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে খাদ্যের মজুদ বাড়িয়ে চলা সহজ নয়। কৃষক কতটা উৎপাদন বাড়াতে পারবে, যাতে বাজার স্বাভাবিক রাখা যায়?
আগেই বলেছি, ধানের দাম কম থাকলে লোকসান বা কম লাভ কৃষকের। আগামী বছর তারা কি এর দ্বারা প্রভাবিত হবে এবং ধান চাষের জমি কমিয়ে দেবে? আমার ধারণা, যেহেতু ধান ব্যতিরেকে অন্য ফসলে ভালো লাভ থাকে, এ কারণে কিছু কৃষক ধান চাষের বিকল্প ভাবতে পারে। তাদের মধ্যে মাঝারি কৃষকই বেশি। তবে দলে দলে কৃষক বিকল্প পথে যাবে বলে মনে হয় না। এর একটি কারণ সবজির বাজার এখনও বিশাল নয়। অনেক কৃষক সবজি চাষের দিকে ঝুঁকলে দাম পড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে কৃষকের বিকল্প তেমন থাকে না। এ সময়েই আমন ধানের চাষ করতে হয়। ধানের বাইরে কেবল পাট চাষের সুযোগ থাকে। তাদের সামনে বিকল্প হতে পারে আগামী বোরো মৌসুমে। সে সময়ে সবজি ও ডালের চাষ করা যায়। যদি আগামী আমন মৌসুমেও ধান-চালের দাম কম থাকে তবে আরও কিছু কৃষক বিকল্প পথে চলতে আগ্রহী হতে পারে। তবে তাদের সংখ্যাও খুব বেশি হবে না।
আরও একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। প্রবাসীদের আয় এবং ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার কারণে এক সময়ের দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতেও ধান ধরে রাখার ক্ষমতা বেড়েছে। সামনের আমন মৌসুমে যদি ফলনে কিছু সমস্যা হয় তাহলে বোরোর মজুদ থেকে তারা বাজারে ছাড়বে এবং লাভবান হবে। তবে এখন পর্যন্ত যা খাদ্য মজুদ দেশে রয়েছে তাতে আগামী কয়েক মাসেও চালের বাজার অস্থির হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাছাড়া অন্য ফসল এবং অকৃষি খাত থেকে অনেক কৃষক পরিবার এখন ভালো আয় করছে। ধানের দাম কম থাকলেও এ সূত্র থেকে পুষিয়ে নিতে পারছে।
কিন্তু সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কৃষকের দিকটা অবশ্যই দেখতে হবে। দেশের ৪৫ শতাংশ পরিবার কৃষির ওপরেই জীবিকার জন্য নির্ভর করে। এটাও মনে রাখতে হবে, কৃষির আয় সার্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। পকেটে বা টেঁকে অর্থ থাকলেই কৃষকরা অন্য পণ্য কেনে। নির্মাণ কাজে ব্যয় করে। তারা অভ্যন্তরীণ বাজার বড় করায় অবদান রাখে। বিশ্ববাজারে মন্দা থাকার কারণে রফতানিমুখী শিল্পে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি না থাকার পরও যে এ বছর শিল্প খাতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি, তার পেছনে সম্ভবত গত কয়েকটি মৌসুম কৃষকের হাতে বাড়তি অর্থ আসার বিষয়টি কাজ করেছে। আমাদের শিল্পপণ্যের দেশীয় বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং তার পেছনে কৃষকের উন্নতি অবশ্যই ভূমিকা রাখছে।
এটাও লক্ষণীয়, কৃষিপণ্যের জন্য আগের তুলনায় বেশি দাম দিতে ভোক্তারা রাজি থাকছে। তারা বাজারে চাল বা সবজির চড়া দামে হতাশা ব্যক্ত করে। তারপরও সেটা কেনার সামর্থ্য কিন্তু বাড়ছে। ধান-চাল বা সবজির দাম খুব পড়ে গেলে কৃষকের দুর্দশা বাড়ে এবং সে খবর সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে নিয়মিত আসে। দেশে তিন ভাগের এক ভাগ লোক খুব গরিব। কিন্তু তাদের স্বার্থের কথা ভেবে কৃষিপণ্যের দাম কতটা কমিয়ে রাখতে হবে, এ প্রশ্ন নিয়মিত উঠছে। বিশেষ করে শহরের ভোক্তাদের সুবিধা দিতে গিয়ে কৃষিপণ্যের দাম কৃত্রিমভাবে কম রাখা কতটা যথাযথ সে প্রশ্ন আলোচিত হয় বিভিন্ন মহলে। কৃষককে বঞ্চিত করে অন্যদের সুবিধা দেওয়ার অবস্থানের প্রতি সমর্থন কিন্তু আগের চেয়ে অনেক কম।
ড. মাহবুব হোসেন : কৃষি বিশেষজ্ঞ এবং প্রধান নির্বাহী, ব্র্যাক
ব্যক্ত করে
বোরো ধান ওঠার পর ধান-চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতির হারেও লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে। দরিদ্র এবং নির্দিষ্ট আয়ের স্বল্প ও মধ্যবিত্ত বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য এ পরিস্থিতি সন্তোষের। বিশেষ করে দরিদ্রদের জন্য সময়টি ভালো যাচ্ছে। তাদের দৈনন্দিন ব্যয়ের বেশিরভাগ চাল কেনার জন্য চলে যায়। এ চিত্র চাষিদের জন্য কি নিরুৎসাহজনক? কৃষিতে, বিশেষ করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদে কোনো ক্ষতির শঙ্কা কি সৃষ্টি হয়েছে?
২০০৭-০৮ সালের কথা আমরা স্মরণ করতে পারি। তখন বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। বাংলাদেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়ে। এ চিত্রের অবশ্য আরেকটি দিক হচ্ছে, টানা চার বছর ধরেই আমন ও বোরো মৌসুমে বাংলাদেশের ধানের ফলন ভালো হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এ দেশে ঝড়-বন্যা-খরার কারণে ফসলের তেমন বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। এ বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে বোরো চালের ফলন হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ টন থেকে ২ কোটি টনের মতো। চূড়ান্ত হিসাব করা হলে প্রকৃত পরিমাণ বলা যাবে। তবে হিসাবে যা-ই আসুক, এত পরিমাণ চাল এক মৌসুমে অতীতে উৎপাদন হয়নি। এ চালের একটি অংশ বাজারে এসেছে। একটি অংশ রয়ে গেছে কৃষকের গোলায়। পাইকারি ব্যবসায়ী এবং চালকল মালিকদের কাছেও ভালো পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে। পরপর কয়েকটি মৌসুমে ভালো দাম এবং ২০১১ সালে আশাতীত দাম পাওয়ার পর এবারে বাজার সে তুলনায় কিছুটা পড়তি। ২০১১ সালের প্রথম দিকে ধানের দাম প্রতি মণ ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। এ পরিমাণ উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় দ্বিগুণ। এ চিত্র স্বাভাবিক নয়। মাত্র ৮-১০ বছর আগেও বলা হতো যে বাংলাদেশে কৃষির উন্নতি হচ্ছে কিন্তু কৃষকের নয়। বাজারে কৃষিপণ্যের মূল্য ভালো, কিন্তু তার সুফল কৃষক পায় না। ২০০৭ সালের দিকে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে থাকে। পরপর কয়েকটি মৌসুম খোদ কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য ভালো দাম পেতে শুরু করে। বিশ্ববাজারেও এ সময়ে দাম ভালো ছিল। জ্বালানি তেলের চড়া মূল্যের কারণে বায়োডিজেল তৈরিতে খাদ্যশস্যের ব্যবহার হতে থাকায় উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর খাদ্যের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ে। উন্নত দেশগুলো তাদের উদ্বৃত্ত খাদ্যের একটি অংশ আমাদের মতো দেশে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করত। কিন্তু বায়োডিজেল উৎপাদনের প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবহারের কারণে এ খাদ্যশস্যের বিকল্প বাজার তৈরি হওয়ায় দরিদ্র দেশগুলো সমস্যায় পড়ে।
তবে এখন খাদ্যশস্যের বিশ্ববাজার ২০০৭ সালের তুলনায় অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল এবং এর প্রভাব আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারেও পড়ছে। দেশে চালের মূল্য কম থাকার আরেকটি কারণ হচ্ছে গত বছরের মাঝামাঝি সরকারের প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল আমদানি। বাজার চড়ে গেলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী কষ্ট পাবে, এ শঙ্কা থেকে সরকার নিজের মজুদ বাড়ানোর জন্য চাল আমদানি করে। ঠিক ওই সময়েই বোরোর বাম্পার ফলনের ধান কৃষকের ঘরে ওঠে। এর প্রভাব পড়ে বাজারে। কৃষকরা ভেবেছিল আগের বছরের মতো না হলেও মণপ্রতি ৭০০-৮০০ টাকা দাম মিলবে। কিন্তু তাদের আশাহত হতে হয়। সামনে রয়েছে আমন মৌসুম। এ কারণে বোরো মৌসুমের পরপরই মজুদ থেকে ধান-চাল বাজারে ছেড়ে দিতে হয়। আমনের ফলনও গত মৌসুমে ভালো হয়। এভাবে বাজারে সরবরাহ বাড়ে এবং ফল হিসেবে চালের বাজার স্থিতিশীল থাকে। মোটামুটি এক বছর ধরেই এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এখন উৎপাদন ব্যয়ের দিকে তাকানো যেতে পারে। গত বছর সরকার সার-ডিজেলের মূল্য একাধিকবার বাড়িয়েছে। কৃষি মজুরিও বাড়তির দিকে। ফলে প্রতি মণ ধান উৎপাদনে ব্যয় পড়ছে ৬০০-৬৫০ টাকা। বোরো ওঠার পর বাজারদরও মোটামুটি একই রকম। ফলে কৃষকের মার্জিন বা লাভ তেমন থাকছে না। স্বভাবতই তারা হতাশ। ধান-চাল বিক্রি করে পরিবারের কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার যে অর্থ পাওয়ার আশা তারা করছিল সেটা আসেনি। এর প্রভাব কিন্তু অর্থনীতির অন্যান্য শাখায়ও পড়ে। কারণ দেশে কৃষকের সংখ্যা অনেক এবং তাদের হাতে বাড়তি অর্থ থাকলে সেটা শিল্পজাত পণ্য কেনায় ব্যয় হয়।
আমাদের দেশে চাল হচ্ছে প্রধান খাদ্য এবং কৃষকের জন্য প্রধান কৃষিপণ্য। এ পণ্যের দামের ব্যবস্থাপনা প্রকৃতপক্ষে সূক্ষষ্ট সুতার ওপর দিয়ে চলার মতো। একদিকে গরিব ভোক্তা_ যাদের সংখ্যা অনেক, তাদের জন্য সহনীয় মূল্য বজায় রাখা; পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক কৃষকের জন্য উৎপাদন বাড়ানোর প্রণোদনা সৃষ্টি_ দুয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। একটু এদিক-ওদিক হলেই বিপদ দেখা দিতে পারে। অবস্থা দাঁড়ায় দাঁড়িপাল্লার মতো_ কখনও কৃষক (বিশেষত বড় কৃষক) ভালো দাম পেয়ে খুশি হয়, আবার কখনও ভোক্তাদের জন্য বাজার থাকে সন্তোষজনক। যেমনটি আমরা এখন দেখছি। দ্রব্যমূল্য নিয়ে ক্ষোভ-উদ্বেগ রয়েছে মানুষের মধ্যে। কিন্তু চালের বাজারের চিত্র ভিন্ন।
আমাদের কৃষি কাঠামোতে দেখা যায় প্রচুর পরিমাণ জমি রয়েছে এমন কৃষকের সংখ্যা কম। কেউ কেউ হয়তো কৃষি জমি বাড়াতে চান, কিন্তু কেনার মতো জমি মেলে না। মিললেও একই এলাকায় মেলে না। এর বাইরে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বর্গাচাষি। শহরে বসবাস করে এমন অনেকে তাদের জমি বর্গা দিয়ে দিচ্ছেন। বর্গাচাষিদের কাছে ধানের মূল্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয় না। কারণ তাদের যা উৎপাদন তার একটি অংশ দিতে হয় মালিককে, একটি অংশ যায় উৎপাদন ব্যয় খাতে। বাকিটা রাখে নিজের খোরাকির জন্য। কৃষি উপকরণের দাম বাড়লে তাদের ওপরে যে বোঝা চাপে সেটা সরাসরি। তাদের উৎপাদন বেশি পড়ে। তবে উপকরণের দাম বেশি বেড়ে গেলেও বর্গা জমির মালিকের কিছু আসে যায় না।
অন্যদিকে, প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষি পরিবারে জমির গড় পরিমাণ সাড়ে সাত বিঘার কম। তাদের আবার তিন ভাগের দুই ভাগের জমি ৩ বিঘার কম। তারাই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক। সারা বছরের খোরাকি জমি থেকে তাদের আসে না। বাজারের ওপর নির্ভরতা থাকে। এ কারণে খাদ্যের বাজার যেন সহনশীল থাকে, সেটা কৃষকদের এ অংশ চায়। একই সঙ্গে আরও একটি বিষয় খেয়ালে রাখা দরকার। প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে কিন্তু এখন বছরে একটা নয়, বরং দুটি উচ্চফলনশীল জাতের ধান কৃষক ঘরে তুলতে পারে। এখন প্রতি বিঘায় তারা ৩৫-৪০ মণ ধান পায়। যাদের এক বিঘা জমি আছে তাদের বছরের খোরাকি নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হয় না। এ কারণে বাজারের উদ্বৃত্ত নিয়ে আসা কৃষকের সংখ্যা বেড়েছে। চালের দাম ভালো থাকলে তারা খুশি থাকে। অন্য ফসল উৎপাদনেও কৃষকদের আগ্রহ এখন বাড়ছে। সবজি যত উৎপাদন হয় তার প্রায় সবটা বাজারে আসে। এ পণ্যেও এখন ভালো দাম মিলছে। তবে ধানের সঙ্গে সবজির পার্থক্য আছে_ কৃষকের নিজের জন্য যথেষ্ট চালের দরকার হয়। এখন যা কৃষিচিত্র তাতে ধান-চালের দাম কমে গেলে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন হয় মধ্য ও বড় কৃষক।
এখন আসি খাদ্য নিরাপত্তা প্রসঙ্গে। দেশের ৩০ শতাংশ লোকের বাস দারিদ্র্যসীমার নিচে। তাদের যা আয় তাতে মৌলিক চাহিদার সামান্যই পূরণ হয়। এর মধ্যে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে তারা এবং চাল থাকে অপরিহার্যের তালিকায়। যখন বাজারে চালের দাম বাড়ে, অন্য পণ্য কেনা কমিয়ে দেয়। সবজি-ডালের ভাগে কম পড়ে। সন্তানের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটলে সেটা মেনে নেয়। পোশাক কম কেনে কিংবা নিম্নমানেরটা কেনে। নতুন বাড়ি নির্মাণ কিংবা পুরনো বাড়িঘর সংস্কারে ব্যয় কম করে কিংবা করে না। পরপর দুই মৌসুম ধানের দাম কম থাকায় এ সমস্যা কিছুটা হলেও তারা অনুভব করছে।
সচ্ছল কৃষক এবং গ্রামের ধনবান জনগোষ্ঠী বুঝে গেছে যে কৃষিতে আয় বেশি পরিমাণে বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ সীমিত। সে জন্য তারা অকৃষি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ খুঁজতে থাকে।
খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন থাকে নিম্ন আয়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী, কৃষি দিনমজুর, শহরের শ্রমিক, পরিবহন কর্মী ও ছোট ব্যবসায়ী। তাদের আয় সীমিত, কিন্তু ব্যয়ের প্রধান অংশ যায় চালের পেছনে। এ বছরে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা চিত্র ভালো থাকার কথা। তবে দীর্ঘমেয়াদে বিষয়টি উদ্বেগের। বিশেষ করে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে খাদ্যের মজুদ বাড়িয়ে চলা সহজ নয়। কৃষক কতটা উৎপাদন বাড়াতে পারবে, যাতে বাজার স্বাভাবিক রাখা যায়?
আগেই বলেছি, ধানের দাম কম থাকলে লোকসান বা কম লাভ কৃষকের। আগামী বছর তারা কি এর দ্বারা প্রভাবিত হবে এবং ধান চাষের জমি কমিয়ে দেবে? আমার ধারণা, যেহেতু ধান ব্যতিরেকে অন্য ফসলে ভালো লাভ থাকে, এ কারণে কিছু কৃষক ধান চাষের বিকল্প ভাবতে পারে। তাদের মধ্যে মাঝারি কৃষকই বেশি। তবে দলে দলে কৃষক বিকল্প পথে যাবে বলে মনে হয় না। এর একটি কারণ সবজির বাজার এখনও বিশাল নয়। অনেক কৃষক সবজি চাষের দিকে ঝুঁকলে দাম পড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে কৃষকের বিকল্প তেমন থাকে না। এ সময়েই আমন ধানের চাষ করতে হয়। ধানের বাইরে কেবল পাট চাষের সুযোগ থাকে। তাদের সামনে বিকল্প হতে পারে আগামী বোরো মৌসুমে। সে সময়ে সবজি ও ডালের চাষ করা যায়। যদি আগামী আমন মৌসুমেও ধান-চালের দাম কম থাকে তবে আরও কিছু কৃষক বিকল্প পথে চলতে আগ্রহী হতে পারে। তবে তাদের সংখ্যাও খুব বেশি হবে না।
আরও একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। প্রবাসীদের আয় এবং ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার কারণে এক সময়ের দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতেও ধান ধরে রাখার ক্ষমতা বেড়েছে। সামনের আমন মৌসুমে যদি ফলনে কিছু সমস্যা হয় তাহলে বোরোর মজুদ থেকে তারা বাজারে ছাড়বে এবং লাভবান হবে। তবে এখন পর্যন্ত যা খাদ্য মজুদ দেশে রয়েছে তাতে আগামী কয়েক মাসেও চালের বাজার অস্থির হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাছাড়া অন্য ফসল এবং অকৃষি খাত থেকে অনেক কৃষক পরিবার এখন ভালো আয় করছে। ধানের দাম কম থাকলেও এ সূত্র থেকে পুষিয়ে নিতে পারছে।
কিন্তু সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কৃষকের দিকটা অবশ্যই দেখতে হবে। দেশের ৪৫ শতাংশ পরিবার কৃষির ওপরেই জীবিকার জন্য নির্ভর করে। এটাও মনে রাখতে হবে, কৃষির আয় সার্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। পকেটে বা টেঁকে অর্থ থাকলেই কৃষকরা অন্য পণ্য কেনে। নির্মাণ কাজে ব্যয় করে। তারা অভ্যন্তরীণ বাজার বড় করায় অবদান রাখে। বিশ্ববাজারে মন্দা থাকার কারণে রফতানিমুখী শিল্পে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি না থাকার পরও যে এ বছর শিল্প খাতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি, তার পেছনে সম্ভবত গত কয়েকটি মৌসুম কৃষকের হাতে বাড়তি অর্থ আসার বিষয়টি কাজ করেছে। আমাদের শিল্পপণ্যের দেশীয় বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং তার পেছনে কৃষকের উন্নতি অবশ্যই ভূমিকা রাখছে।
এটাও লক্ষণীয়, কৃষিপণ্যের জন্য আগের তুলনায় বেশি দাম দিতে ভোক্তারা রাজি থাকছে। তারা বাজারে চাল বা সবজির চড়া দামে হতাশা ব্যক্ত করে। তারপরও সেটা কেনার সামর্থ্য কিন্তু বাড়ছে। ধান-চাল বা সবজির দাম খুব পড়ে গেলে কৃষকের দুর্দশা বাড়ে এবং সে খবর সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে নিয়মিত আসে। দেশে তিন ভাগের এক ভাগ লোক খুব গরিব। কিন্তু তাদের স্বার্থের কথা ভেবে কৃষিপণ্যের দাম কতটা কমিয়ে রাখতে হবে, এ প্রশ্ন নিয়মিত উঠছে। বিশেষ করে শহরের ভোক্তাদের সুবিধা দিতে গিয়ে কৃষিপণ্যের দাম কৃত্রিমভাবে কম রাখা কতটা যথাযথ সে প্রশ্ন আলোচিত হয় বিভিন্ন মহলে। কৃষককে বঞ্চিত করে অন্যদের সুবিধা দেওয়ার অবস্থানের প্রতি সমর্থন কিন্তু আগের চেয়ে অনেক কম।
ড. মাহবুব হোসেন : কৃষি বিশেষজ্ঞ এবং প্রধান নির্বাহী, ব্র্যাক
No comments