সাহসী লড়াইয়ের দিন by মির্জা তাজুল ইসলাম
১৯৬৬ সালের ৭ জুন পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব-মোনায়েম তেজগাঁও, টঙ্গী, আদমজী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগ করলে শ্রমিক মনু মিয়াসহ বেশ কয়েকজন শহীদ হন। একই সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বাঙালির মুক্তি সনদ হিসেবে ৬ দফা গৃহীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
স্বৈরশাসক আইয়ুব হুমকি দিয়ে বলেছিল, যে-ই ৬ দফার পক্ষে বলবে সেখানেই অস্ত্রের ভাষায় এর জবাব দেওয়া হবে। ১৯৬৬ সালের মার্চে ঢাকায় মুসলিম লীগের জনসভায় আইয়ুবের হুঙ্কারের ধরন ছিল বেত্রাহত পশুর ঘেউ ঘেউয়ের চেয়েও কর্কশ। শুধু আইয়ুব বা মুসলিম লীগই নয়, পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক দলই ৬ দফা, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের তীব্র সমালোচনা শুরু করে। মুসলিম লীগের চেয়েও কয়েক কদম আগে বেড়ে ওই সময় জামায়াতে ইসলামী প্রগতির চিরশত্রু হিসেবে তাদের একই চরিত্র প্রকাশ করে বলতে থাকে, পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে ভারতীয় আগ্রাসনের শিকারের বস্তু বানিয়ে পাকিস্তানের অস্তিত্বের ওপর হুমকি হিসেবে ৬ দফা প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি হলো বিচ্ছিন্নতার লক্ষ্যে প্রণীত কর্মসূচি। অথচ কী আশ্চর্য! পাকিস্তানের তথাকথিত দেশপ্রেমিকরা একবারের জন্য বলেননি বা অনুভব করেননি যে, ৬ দফা প্রণয়নের মাত্র কয়েক মাস আগে ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ই চোখের পলকে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সম্পূর্ণ রূপে অরক্ষিতভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু ওই সময়ও অরক্ষিত প্রদেশটির ওপর ভারতীয় আগ্রাসন হয়নি। তাই পূর্ববাংলার মানুষের প্রকৃত মুক্তির জন্যই বাস্তবতার আলোকে ৬ দফা প্রণীত হয় এবং এ অঞ্চলের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছেই ৬ দফা দ্রুত প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়।
১৯৬৬ সালের ২৩ মার্চ পাইওনিয়ার প্রেস ঢাকা থেকে 'আমাদের বাঁচার অধিকার' শীর্ষক প্রচারপত্রে ৬ দফার চমৎকার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। তা ছাড়া তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে প্রিন্টার্স লাইনে আবদুল মমিনের নামে অনেক প্রচার পুস্তিকায় বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা কর্মসূচি আমাদের বাঁচার অধিকারসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকাশ, সর্বোপরি দৈনিক ইত্তেফাক, ৬ দফা, শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের পক্ষে মানিক মিয়ার নেতৃত্বে নির্ভীক সাংবাদিকতায় নিবেদিত হয় এবং বিরামহীন কলমযুদ্ধ শুরু করে। ছাত্রলীগ ইকবাল হককে (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হল) কন্ট্রোল রুমের মতো বানিয়ে ৬ দফার পক্ষে প্রচারণা চালাতে থাকে। আওয়ামী লীগের পুরানা পল্টন অফিস এবং ৩২ নম্বরের বাড়িটি গোয়েন্দা নজরদারিতে চলে যায়। শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগ নেতারা বারবার কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। ওই সময় তিনি অন্তত ১২ বার গ্রেফতার হন এবং জামিনে বেরিয়ে আসেন। সর্বশেষ ৮ মে গ্রেফতার হয়ে আর জামিন পাননি। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে বিরোধী দলের গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ৬ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। গোলটেবিল ভেঙে যায়। তাই পূর্ববাংলায় এসে ৬ দফার পক্ষে আওয়ামী লীগের ঝটিকা সফর ৬ দফার পক্ষে শেখ মুজিবের ব্যাপক গণসংযোগ এবং অতিদ্রুত বাঙালির প্রাণের দাবি হিসেবে সুস্পষ্ট সাড়া দেখেই ভীত স্বৈরশাসক বারবার তাকে গ্রেফতার করতে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই ৬ দফার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি যুক্ত হয়ে যায়। ঐতিহাসিক ৭ জুন পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করা হয়। টানটান উত্তেজনা ছাত্র-শ্রমিক জনতার ইস্পাতদৃঢ় অবস্থান। ৭ জুন হরতাল। তেজগাঁওয়ে রুহুল আমিন ভঁূইয়ার নেতৃত্বে শ্রমিকদের সাহসী বেপরোয়া ভূমিকা। ছাত্রলীগের জানবাজ লড়াই, সব শ্রেণী-পেশার জনগণের সক্রিয়তায় সফল হরতাল। নূরে আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তেজগাঁওয়ে মনু মিয়ার লাশ ছিনিয়ে আনা, বেপরোয়া নেতাকর্মীদের থানা ঘেরাও, আটকদের মুক্ত করার এক সফল সাহসী লড়াই ৭ জুন।
১৯৬৬ সালের ২৩ মার্চ পাইওনিয়ার প্রেস ঢাকা থেকে 'আমাদের বাঁচার অধিকার' শীর্ষক প্রচারপত্রে ৬ দফার চমৎকার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। তা ছাড়া তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে প্রিন্টার্স লাইনে আবদুল মমিনের নামে অনেক প্রচার পুস্তিকায় বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা কর্মসূচি আমাদের বাঁচার অধিকারসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকাশ, সর্বোপরি দৈনিক ইত্তেফাক, ৬ দফা, শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের পক্ষে মানিক মিয়ার নেতৃত্বে নির্ভীক সাংবাদিকতায় নিবেদিত হয় এবং বিরামহীন কলমযুদ্ধ শুরু করে। ছাত্রলীগ ইকবাল হককে (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হল) কন্ট্রোল রুমের মতো বানিয়ে ৬ দফার পক্ষে প্রচারণা চালাতে থাকে। আওয়ামী লীগের পুরানা পল্টন অফিস এবং ৩২ নম্বরের বাড়িটি গোয়েন্দা নজরদারিতে চলে যায়। শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগ নেতারা বারবার কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। ওই সময় তিনি অন্তত ১২ বার গ্রেফতার হন এবং জামিনে বেরিয়ে আসেন। সর্বশেষ ৮ মে গ্রেফতার হয়ে আর জামিন পাননি। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে বিরোধী দলের গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ৬ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। গোলটেবিল ভেঙে যায়। তাই পূর্ববাংলায় এসে ৬ দফার পক্ষে আওয়ামী লীগের ঝটিকা সফর ৬ দফার পক্ষে শেখ মুজিবের ব্যাপক গণসংযোগ এবং অতিদ্রুত বাঙালির প্রাণের দাবি হিসেবে সুস্পষ্ট সাড়া দেখেই ভীত স্বৈরশাসক বারবার তাকে গ্রেফতার করতে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই ৬ দফার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি যুক্ত হয়ে যায়। ঐতিহাসিক ৭ জুন পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করা হয়। টানটান উত্তেজনা ছাত্র-শ্রমিক জনতার ইস্পাতদৃঢ় অবস্থান। ৭ জুন হরতাল। তেজগাঁওয়ে রুহুল আমিন ভঁূইয়ার নেতৃত্বে শ্রমিকদের সাহসী বেপরোয়া ভূমিকা। ছাত্রলীগের জানবাজ লড়াই, সব শ্রেণী-পেশার জনগণের সক্রিয়তায় সফল হরতাল। নূরে আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তেজগাঁওয়ে মনু মিয়ার লাশ ছিনিয়ে আনা, বেপরোয়া নেতাকর্মীদের থানা ঘেরাও, আটকদের মুক্ত করার এক সফল সাহসী লড়াই ৭ জুন।
No comments