নতুন একটি পদ সৃষ্টি করুন তাঁর জন্য!-তিনি কেন তোরণমন্ত্রী হলেন না

নৌপরিবহনমন্ত্রীকে শুক্রবার সৈয়দপুরে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে যদিও কোনো নদী নেই, নৌবন্দরও নেই, সমুদ্রবন্দরের তো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু তিনি যে পরিবহন খাতের নেতা। তাহলে স্থানীয় পরিবহন খাতের নেতারা তাঁর সংবর্ধনার আয়োজন করবেন না কেন? তাতে অবশ্য কারও আপত্তি থাকার কথা নয়।


মন্ত্রী সংবর্ধনা পাবেন না তো কে পাবেন? কিন্তু যখন দেখা যায় তাঁর জন্য ১০ কিলোমিটার রাস্তায় ৮৪টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে, চোখ কপালে না উঠে পারে না। শুধু তা-ই নয়, শতাধিক মোটরসাইকেল ও ৫০০ গাড়ির সমন্বিত শোভাযাত্রার আয়োজনও ছিল। তা তো হতেই হবে, তিনি যে মোটর শ্রমিকনেতা। তো তাঁর জন্য মোটর-বহর না থাকলে চলবে কেন? কাহিনির এখানেই শেষ নয়। পৌরসভার ২০ জন কাউন্সিলর তাঁকে একটি সোনার চেইন উপহার দিয়েছেন। আজকাল সোনার বাজারদর এত চড়া যে এর চেয়ে হূদয়গ্রাহী উপহার আর কী হতে পারে! তা ছাড়া নৈশভোজ তো ছিলই। সেই সুবাদে ৫০০ জনের খাওয়ার আয়োজনও করা হয়।
আমরা জানি না, তোরণের সংখ্যা সম্পর্কে মন্ত্রী মহোদয় অবগত ছিলেন কি না। কিন্তু না জানলেও ক্ষতি নেই। তিনি আসবেন, তাই প্রতি কিলোমিটারে যে আট-নয়টি করে তোরণ নির্মিত হয়েছে, সে তো দেশের মানুষের স্বার্থেই। ভেবে দেখুন, প্রতিটি তোরণের পেছনে যদি হাজার পাঁচেক টাকা খরচ হয়ে থাকে তাহলে সব মিলিয়ে প্রায় সোয়া চার লাখ টাকার কাজ করে স্থানীয় সাজঘর ব্যবসায়ী ও কিছু মজুরের অন্নসংস্থান হয়েছে। এই দুর্দিনে মন্ত্রীদের রাজকীয় সংবর্ধনা না হলে ওদের দুপয়সা আয়ের সংস্থান হবে কীভাবে? ধন্য মন্ত্রী! ধন্য তাঁর তল্পিবাহকেরা!
প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনার এসব মাজেজা বোঝেন না। তিনি জাঁকজমক পরিহার করতে বলেন। একবার এক সভামঞ্চে তাঁর জন্য সিংহাসনসম বিকট আকারের গদির চেয়ার তিনি সরিয়ে দিয়ে বলেন, সবার মতো সাধারণ চেয়ারই তাঁর পছন্দ! এসব নীতিবাক্য মানতে গেলে মন্ত্রীদের অসাধারণত্বের প্রকাশ ঘটবে কী করে? তাই বিজ্ঞ নৌপরিবহনমন্ত্রী হয়তো বুঝেশুনেই রাজকীয় সংবর্ধনা খোশমেজাজে গ্রহণ করেছেন।
আমরা মনেপ্রাণে কামনা করি, তাঁর পদোন্নতি হোক। তাঁকে তোরণমন্ত্রী পদে অভিষিক্ত করা হোক। এ জন্য মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই নামে একটি নতুন পদ সৃষ্টি করতে পারে!

No comments

Powered by Blogger.