সৌরবিদ্যুৎ-সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে চাই মান নিয়ন্ত্রণ by মুশফিকুর রহমান
ভারতের গুজরাট রাজ্যের পাটান জেলার মরুভূমিতে গত ১৯ এপ্রিলে উদ্বোধন করা হলো পৃথিবীর বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র। সারি সারি ফটোভোল্টাইক সেল সম্মিলিতভাবে এই সৌরপার্ক থেকে ঘণ্টায় ২১৪ মেগাওয়াট পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে গ্রিডলাইনে সরবরাহ করবে।
পূর্ণ ক্ষমতায় স্থাপনা সম্পূর্ণ হলে গুজরাট সৌরপার্কেও উৎপাদন দাঁড়াবে ঘণ্টায় ৬০০ মেগাওয়াট। চীনের গোলমাড সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের রেকর্ডধারী হিসেবে এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম হয়ে গেল। গুজরাট সৌরপার্ক স্থাপনে জায়গা লেগেছে প্রায় তিন হাজার একর। কিছুদিন আগে ভারতের রিলায়েন্স পাওয়ার কোম্পানি প্রায় ১৬০ বিলিয়ন রুপি ব্যয়ে ৪০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে রাজস্থানের মরুভূমি অঞ্চল পোখরানে। ভারতের টার্গেট ২০২২ সাল নাগাদ ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সৌরশক্তি থেকে উৎপাদন করা।
বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ১৫৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা সহায়তায় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় পাঁচ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ সম্প্রতি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের জন্য জায়গা লাগবে প্রায় ২০ একর এবং ব্যয় হবে ১৯২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। দেশে পতিত জমি দুর্লভ হওয়ায় বড় আকারের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া কঠিন। তা ছাড়া ‘বুড়ো আঙুলের’ নিয়মে জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণে যেখানে ব্যয় হয় প্রতি মেগাওয়াট ক্ষমতার জন্য প্রায় এক মিলিয়ন ডলার, সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য খরচ সে তুলনায় যথেষ্ট বেশি। তবু বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। সরকারি সংস্থা ‘ইডকল’ এ ক্ষেত্রে সহজশর্তে ঋণ এবং বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ছোট আকারের ‘সোলার হোম সিস্টেমস’ বিপণনে রেকর্ড করেছে। ইডকলকে সহায়তা করছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, আইডিবি, জিইএফ, জিআইজেড, সিডা এবং কেএফডব্লিউ। ২০০৩ থেকে শুরু করে ৩০টি সহযোগী সংস্থাকে নিয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ১৪ লাখ সোলার হোম সিস্টেমস স্থাপন করেছে ইডকল। সম্মিলিতভাবে এসব বিপণনকৃত সোলার হোম সিস্টেমগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৬৫ মেগাওয়াট পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তি। মূলত প্রচলিত বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা থেকে দূরবর্তী গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থালি ব্যবহারকারীদের সোলার হোম সিস্টেমের প্রধান গ্রাহক হিসেবে টার্গেট করা হয়েছিল। ইডকল ২০১৪ সাল নাগাদ দেশে আড়াই কোটি সোলার হোম সিস্টেম বিপণনের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে। সূর্যের আলো থেকে সর্বোচ্চ ৫০ ওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদনের সোলার সিস্টেমই ইডকল প্রধান বিপণন পণ্য হিসেবে ছড়িয়ে দিয়েছে। এই ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে চারটি ছয় ওয়াট ক্ষমতার অ্যানার্জি বাল্ব জ্বালানো, ১৭-১৮ ইঞ্চি পর্দার একটি সাদা-কালো টেলিভিশন চালানো এবং একটি মোবাইল ফোন চার্জার ব্যবহার করা যায় বলে ৫০ ওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম সহজে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ৫০ ওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেমের মূল্য প্রায় ৩০ হাজার ৮০০ টাকা হলেও ইডকল ক্রেতাকে সরবরাহ করছে চার হাজার ২০০ টাকা ডাউন পেমেন্টে। ইডকলের সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে গ্রাহক ক্ষুদ্রঋণের কিস্তিতে ধীরে ধীরে অবশিষ্ট মূল্য পরিশোধ করছে। প্রতিটি ৫০ ওয়াটের সোলার সিস্টেম বিপণনের সহযোগী সংস্থা ইডকলের কাছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা অনুদান পায়। ৫০ ওয়াটের সোলার সিস্টেম ছাড়াও ৪০ ওয়াট থেকে শুরু করে ১৩০ ওয়াট ক্ষমতার সোলার হোম সিস্টেমও গ্রামীণ গ্রাহকদের সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
সম্প্রতি শহরাঞ্চলে গ্রিডলাইন থেকে বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে আবশ্যিক শর্ত হিসেবে চাহিদার ৩ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারের জন্য ছাদে সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপন করার বিধি চালু হয়েছে। ২০১০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের ছাদে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ কিলোওয়াট/ঘণ্টা উৎপাদন ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপন করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ছাদেও সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম বসানো হয়েছে। মূলত প্রচলিত বিদ্যুতের ওপর চাপ কমাতে সহযোগী ব্যবস্থা হিসেবেই ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ পেতে যেসব যন্ত্র ও উপাদান দরকার, তার মাত্র ১৫ শতাংশ দেশে উৎপাদিত হয়। আমদানিনির্ভরতার কারণে সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেমের মূল্য এখনো বেশি। বিশেষ করে সিস্টেমের অংশ ব্যাটারির মূল্য ও গুণগত মান নিয়ে গ্রাহক অসন্তোষ প্রবল। তা ছাড়া দেশে এখন অবধি সৌরবিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সেক্টরের কাজকর্ম সমন্বয়, তদারকি ও মান নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ফলে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো যে পণ্য আমদানি, উৎপাদন ও বিপণন করছে, তার কোনো মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে ভবনের ছাদে বাধ্যতামূলক সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপনে অসাধু তৎপরতা বাড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একাংশের সঙ্গে অসাধু যোগসাজশে মানহীন সস্তা সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপনা বাড়লেও সেগুলোর স্থায়িত্ব ও লক্ষ্য পূরণ আদৌ হচ্ছে কি না, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নেই। অপরদিকে বাধ্যতামূলক শর্ত পূরণের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘সুপারিশ’-এর প্রতিষ্ঠান যে সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম সরবরাহ করছে, তা আদৌ মানসম্মত কি না তা বোঝার কোনো ব্যবস্থাও নেই। দেশে উৎপাদিত বা বিদেশ থেকে আমদানি করা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয়বহুল সিস্টেম কোনো স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী যাচাই করা হবে, সে সম্পর্কে কোনো বিধি বা কাঠামো অনুপস্থিত। দেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনসামগ্রীর মান যাচাই করার গ্রহণযোগ্য পরীক্ষাগারও গড়ে ওঠেনি, যেখানে সেগুলো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায়। এ বিষয়গুলোর প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যবসায়ী, গবেষকেরা বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা করছেন। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিপণন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং গবেষকেরা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনসামগ্রীর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন ও মান নিশ্চিত করা গেলে সামগ্রিকভাবে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার সম্প্রসারণের সুযোগ বাড়বে বলেই মনে করছেন। সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা সম্প্রতি ‘সৌরশক্তি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি অ্যাসোসিয়েশন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন যে সরকার ‘টেকসই এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি এজেন্সি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হবে, সব ধরনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানো কার্যক্রম সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ করা।
ড. মুশফিকুর রহমান—খনি প্রকৌশলী। জ্বালানি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক।
বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ১৫৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা সহায়তায় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় পাঁচ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ সম্প্রতি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের জন্য জায়গা লাগবে প্রায় ২০ একর এবং ব্যয় হবে ১৯২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। দেশে পতিত জমি দুর্লভ হওয়ায় বড় আকারের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া কঠিন। তা ছাড়া ‘বুড়ো আঙুলের’ নিয়মে জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণে যেখানে ব্যয় হয় প্রতি মেগাওয়াট ক্ষমতার জন্য প্রায় এক মিলিয়ন ডলার, সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য খরচ সে তুলনায় যথেষ্ট বেশি। তবু বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। সরকারি সংস্থা ‘ইডকল’ এ ক্ষেত্রে সহজশর্তে ঋণ এবং বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ছোট আকারের ‘সোলার হোম সিস্টেমস’ বিপণনে রেকর্ড করেছে। ইডকলকে সহায়তা করছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, আইডিবি, জিইএফ, জিআইজেড, সিডা এবং কেএফডব্লিউ। ২০০৩ থেকে শুরু করে ৩০টি সহযোগী সংস্থাকে নিয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ১৪ লাখ সোলার হোম সিস্টেমস স্থাপন করেছে ইডকল। সম্মিলিতভাবে এসব বিপণনকৃত সোলার হোম সিস্টেমগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৬৫ মেগাওয়াট পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তি। মূলত প্রচলিত বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা থেকে দূরবর্তী গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থালি ব্যবহারকারীদের সোলার হোম সিস্টেমের প্রধান গ্রাহক হিসেবে টার্গেট করা হয়েছিল। ইডকল ২০১৪ সাল নাগাদ দেশে আড়াই কোটি সোলার হোম সিস্টেম বিপণনের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে। সূর্যের আলো থেকে সর্বোচ্চ ৫০ ওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদনের সোলার সিস্টেমই ইডকল প্রধান বিপণন পণ্য হিসেবে ছড়িয়ে দিয়েছে। এই ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে চারটি ছয় ওয়াট ক্ষমতার অ্যানার্জি বাল্ব জ্বালানো, ১৭-১৮ ইঞ্চি পর্দার একটি সাদা-কালো টেলিভিশন চালানো এবং একটি মোবাইল ফোন চার্জার ব্যবহার করা যায় বলে ৫০ ওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম সহজে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ৫০ ওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেমের মূল্য প্রায় ৩০ হাজার ৮০০ টাকা হলেও ইডকল ক্রেতাকে সরবরাহ করছে চার হাজার ২০০ টাকা ডাউন পেমেন্টে। ইডকলের সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে গ্রাহক ক্ষুদ্রঋণের কিস্তিতে ধীরে ধীরে অবশিষ্ট মূল্য পরিশোধ করছে। প্রতিটি ৫০ ওয়াটের সোলার সিস্টেম বিপণনের সহযোগী সংস্থা ইডকলের কাছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা অনুদান পায়। ৫০ ওয়াটের সোলার সিস্টেম ছাড়াও ৪০ ওয়াট থেকে শুরু করে ১৩০ ওয়াট ক্ষমতার সোলার হোম সিস্টেমও গ্রামীণ গ্রাহকদের সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
সম্প্রতি শহরাঞ্চলে গ্রিডলাইন থেকে বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে আবশ্যিক শর্ত হিসেবে চাহিদার ৩ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারের জন্য ছাদে সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপন করার বিধি চালু হয়েছে। ২০১০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের ছাদে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ কিলোওয়াট/ঘণ্টা উৎপাদন ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপন করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ছাদেও সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম বসানো হয়েছে। মূলত প্রচলিত বিদ্যুতের ওপর চাপ কমাতে সহযোগী ব্যবস্থা হিসেবেই ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ পেতে যেসব যন্ত্র ও উপাদান দরকার, তার মাত্র ১৫ শতাংশ দেশে উৎপাদিত হয়। আমদানিনির্ভরতার কারণে সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেমের মূল্য এখনো বেশি। বিশেষ করে সিস্টেমের অংশ ব্যাটারির মূল্য ও গুণগত মান নিয়ে গ্রাহক অসন্তোষ প্রবল। তা ছাড়া দেশে এখন অবধি সৌরবিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সেক্টরের কাজকর্ম সমন্বয়, তদারকি ও মান নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ফলে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো যে পণ্য আমদানি, উৎপাদন ও বিপণন করছে, তার কোনো মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে ভবনের ছাদে বাধ্যতামূলক সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপনে অসাধু তৎপরতা বাড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একাংশের সঙ্গে অসাধু যোগসাজশে মানহীন সস্তা সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপনা বাড়লেও সেগুলোর স্থায়িত্ব ও লক্ষ্য পূরণ আদৌ হচ্ছে কি না, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নেই। অপরদিকে বাধ্যতামূলক শর্ত পূরণের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘সুপারিশ’-এর প্রতিষ্ঠান যে সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম সরবরাহ করছে, তা আদৌ মানসম্মত কি না তা বোঝার কোনো ব্যবস্থাও নেই। দেশে উৎপাদিত বা বিদেশ থেকে আমদানি করা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয়বহুল সিস্টেম কোনো স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী যাচাই করা হবে, সে সম্পর্কে কোনো বিধি বা কাঠামো অনুপস্থিত। দেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনসামগ্রীর মান যাচাই করার গ্রহণযোগ্য পরীক্ষাগারও গড়ে ওঠেনি, যেখানে সেগুলো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায়। এ বিষয়গুলোর প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যবসায়ী, গবেষকেরা বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা করছেন। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিপণন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং গবেষকেরা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনসামগ্রীর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন ও মান নিশ্চিত করা গেলে সামগ্রিকভাবে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার সম্প্রসারণের সুযোগ বাড়বে বলেই মনে করছেন। সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা সম্প্রতি ‘সৌরশক্তি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি অ্যাসোসিয়েশন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন যে সরকার ‘টেকসই এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি এজেন্সি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হবে, সব ধরনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানো কার্যক্রম সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ করা।
ড. মুশফিকুর রহমান—খনি প্রকৌশলী। জ্বালানি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক।
No comments