ওষুধের বাজারে অরাজকতাঃ প্রশাসনের নাকে তেল কানে তুলো
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের মতো ওষুধের বাজারেও দেখা দিয়েছে অতিমুনাফার অসুখ। সরবরাহে কোনো ঘাটতি না থাকলেও বিক্রেতারা এমনকি দ্বিগুণ দাম আদায় করছেন ক্রেতাদের কাছ থেকে। ওষুধের প্যাকেটে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা থাকলেও তা মানছে না ফার্মেসি মালিকরা।
এদিকে দেশের ভেতরে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের নকল ওষুধ। পাশাপাশি সীমান্তের ওপার থেকে চোরাচালান হয়ে আসছে ওষুধ নামের নকল পণ্য। বর্তমানে নানা জাতের ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব। আসল ওষুধের পাশাপাশি সেগুলোও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ওষুধের বাজার ক্ষেত্রবিশেষে মুদি দোকানের বৈশিষ্ট্য পেয়েছে। রীতিমতো দামদস্তুর করে কিনতে হচ্ছে। অর্থাত্ একটি ওষুধ বিভিন্ন দামে বিক্রি করছেন দোকানিরা। বাজারের এই অরাজকতা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় রোগীরা রীতিমত জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, সাধারণ রোগের কম মূল্যের ওষুধ থেকে শুরু করে দুরারোগ্য অসুখ-বিসুখের বেশি দামের ওষুধে পর্যন্ত এই চড়া দাম আদায় প্রায় বৈধতার পর্যায়ে চলে এসেছে। ১২ টাকার ওষুধ ক্ষেত্রবিশেষে বিক্রি হচ্ছে ১৬ থেকে ২০ টাকায়, ৩০ টাকার সিরাপ ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, গত জানুয়ারিতে ১০০ মিলিলিটারের এক বোতল সিরাপ বিক্রি হতো ৩৫ টাকায়। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অথচ বোতলের গায়ে লেখা ছিল খুচরা মূল্য ৩০ টাকা। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ভেজাল ও নকল ওষুধের পাশাপাশি এবার মুনাফাখোর ওষুধ বিক্রেতারা ওষুধের মোড়কে বা লেভেলের লেখাও জাল করছে। খুচরা মূল্য মুছে ইচ্ছেমতো দাম লিখে বিক্রি করছেন অনেকেই। এভাবে বেশি দাম রাখার সপক্ষে তারা একটি ঠুনকো ছুতোও খাড়া করেছেন। বলা হচ্ছে, কোম্পানি সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু একাধিক কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, সরবরাহ ঠিকই আছে। যদি সরবরাহ কমেও যায় তাহলেও ওষুধের মতো জরুরি পণ্য ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার কোনো বৈধতা নেই। যদি তাই হয়, তাহলে সরবরাহ কমবেশির প্রশ্নে ওষুধের বাজারও কাঁচাবাজারের সমতুল্য হয়ে যায়।
দেশে নকল ওষুধ তৈরি ও বিক্রির বিষয়টি এখন আর কোনো নতুন ঘটনা নয়। ওষুধ বিক্রেতারাও একথা স্বীকার করেন। দোকানভেদে দামের পার্থক্য সম্পর্কে অনেকে বলেন, যারা কম দামে ওষুধ বিক্রি করেন তাদের ওষুধ নকল। প্রধানত নকল ওষুধ আমদানি করা হয় ভারত থেকে। তবে বেশিরভাগ আসে চোরাই পথে। কাজেই এগুলো বিক্রি করার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট দর অনুসরণ করার প্রশ্নই অবান্তর। অভিযোগ আছে, বৈধ-অবৈধ, খাঁটি-নকল ওষুধের আমদানির খোঁজ-খবর রাখে না সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন। ফলে স্বভাবতই দাম নিয়ে অরাজকতা দিন দিন বাড়ছেই। কিন্তু সরকারের টনক নড়ছে না। খুচরা দাম নিশ্চিত করাসহ ওষুধের বাজারে মূল্যমানের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের। অথচ মাঠ পর্যায়ে এই অধিদফতরটি পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। অভিযোগ আছে, বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা যে কায়দায় পণ্যের সরবরাহ বন্ধ রেখে চাহিদা বাড়িয়ে বাজার চড়ায়, ওষুধের ক্ষেত্রেও এই কায়দা অনুসরণ করা হয়। দফায় দফায় ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ার এটাও একটি কারণ। এসব বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যে জানে না, এমন নয়। বছরের পর বছর অবৈধভাবে ও অকারণে দাম বাড়ানো, নকল ওষুধ তৈরি ও আমদানি নিয়ে বিস্তর প্রামাণ্য অভিযোগের পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কানে তুলো আর নাকে তেল দিয়ে বাজারে অরাজকতা তৈরির সুযোগ করে দেয়। এ ব্যাপারে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন, ওষুধ প্রশাসনে নতুন লোকজন নিয়োগ করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এরই মধ্যে বিভিন্ন জটিল রোগের ‘মহৌষধ’ উত্পাদনকারী অর্ধশত ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করলেও এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিষাক্ত, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ নিয়ন্ত্রণেও সাফল্য শূন্যের কোঠায় বলা যায়। এছাড়া প্রশাসনের অভ্যন্তরে একটি শক্তিশালী অসাধুচক্র সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই বাজারে দেখা দিয়েছে অরাজতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ ওষুধের অবাধ বেচাকেনা। অথচ এর যে কোনো একটির উপস্থিতিই একটি দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে চরম হুমকিস্বরূপ। এ অবস্থায় জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির ভিত্তি কতটা মজবুত তা সহজেই আঁচ করা যায়। এই সর্বনাশ ঠেকাতে কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির কোনোই বিকল্প নেই।
জানা গেছে, সাধারণ রোগের কম মূল্যের ওষুধ থেকে শুরু করে দুরারোগ্য অসুখ-বিসুখের বেশি দামের ওষুধে পর্যন্ত এই চড়া দাম আদায় প্রায় বৈধতার পর্যায়ে চলে এসেছে। ১২ টাকার ওষুধ ক্ষেত্রবিশেষে বিক্রি হচ্ছে ১৬ থেকে ২০ টাকায়, ৩০ টাকার সিরাপ ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, গত জানুয়ারিতে ১০০ মিলিলিটারের এক বোতল সিরাপ বিক্রি হতো ৩৫ টাকায়। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অথচ বোতলের গায়ে লেখা ছিল খুচরা মূল্য ৩০ টাকা। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ভেজাল ও নকল ওষুধের পাশাপাশি এবার মুনাফাখোর ওষুধ বিক্রেতারা ওষুধের মোড়কে বা লেভেলের লেখাও জাল করছে। খুচরা মূল্য মুছে ইচ্ছেমতো দাম লিখে বিক্রি করছেন অনেকেই। এভাবে বেশি দাম রাখার সপক্ষে তারা একটি ঠুনকো ছুতোও খাড়া করেছেন। বলা হচ্ছে, কোম্পানি সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু একাধিক কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, সরবরাহ ঠিকই আছে। যদি সরবরাহ কমেও যায় তাহলেও ওষুধের মতো জরুরি পণ্য ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার কোনো বৈধতা নেই। যদি তাই হয়, তাহলে সরবরাহ কমবেশির প্রশ্নে ওষুধের বাজারও কাঁচাবাজারের সমতুল্য হয়ে যায়।
দেশে নকল ওষুধ তৈরি ও বিক্রির বিষয়টি এখন আর কোনো নতুন ঘটনা নয়। ওষুধ বিক্রেতারাও একথা স্বীকার করেন। দোকানভেদে দামের পার্থক্য সম্পর্কে অনেকে বলেন, যারা কম দামে ওষুধ বিক্রি করেন তাদের ওষুধ নকল। প্রধানত নকল ওষুধ আমদানি করা হয় ভারত থেকে। তবে বেশিরভাগ আসে চোরাই পথে। কাজেই এগুলো বিক্রি করার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট দর অনুসরণ করার প্রশ্নই অবান্তর। অভিযোগ আছে, বৈধ-অবৈধ, খাঁটি-নকল ওষুধের আমদানির খোঁজ-খবর রাখে না সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন। ফলে স্বভাবতই দাম নিয়ে অরাজকতা দিন দিন বাড়ছেই। কিন্তু সরকারের টনক নড়ছে না। খুচরা দাম নিশ্চিত করাসহ ওষুধের বাজারে মূল্যমানের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের। অথচ মাঠ পর্যায়ে এই অধিদফতরটি পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। অভিযোগ আছে, বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা যে কায়দায় পণ্যের সরবরাহ বন্ধ রেখে চাহিদা বাড়িয়ে বাজার চড়ায়, ওষুধের ক্ষেত্রেও এই কায়দা অনুসরণ করা হয়। দফায় দফায় ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ার এটাও একটি কারণ। এসব বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যে জানে না, এমন নয়। বছরের পর বছর অবৈধভাবে ও অকারণে দাম বাড়ানো, নকল ওষুধ তৈরি ও আমদানি নিয়ে বিস্তর প্রামাণ্য অভিযোগের পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কানে তুলো আর নাকে তেল দিয়ে বাজারে অরাজকতা তৈরির সুযোগ করে দেয়। এ ব্যাপারে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন, ওষুধ প্রশাসনে নতুন লোকজন নিয়োগ করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এরই মধ্যে বিভিন্ন জটিল রোগের ‘মহৌষধ’ উত্পাদনকারী অর্ধশত ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করলেও এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিষাক্ত, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ নিয়ন্ত্রণেও সাফল্য শূন্যের কোঠায় বলা যায়। এছাড়া প্রশাসনের অভ্যন্তরে একটি শক্তিশালী অসাধুচক্র সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই বাজারে দেখা দিয়েছে অরাজতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ ওষুধের অবাধ বেচাকেনা। অথচ এর যে কোনো একটির উপস্থিতিই একটি দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে চরম হুমকিস্বরূপ। এ অবস্থায় জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির ভিত্তি কতটা মজবুত তা সহজেই আঁচ করা যায়। এই সর্বনাশ ঠেকাতে কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির কোনোই বিকল্প নেই।
No comments