চিকিৎসার নামে প্রতারণা-আধুনিক যুগে মধ্যযুগীয় যন্ত্রণা
সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে বর্তমান যুগেও চটকদারি বিজ্ঞাপনের আড়ালে চিকিৎসার নামে একদল ঠগ-বাটপাড় প্রতারণার ফাঁদ পেতে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছে। খানকায়ে চিশতিয়া, দর্শনে মুক্তি, দরবারে সুফি, দরবারে নূরানিসহ হরেক নামের সর্বরোগহর কেন্দ্র খুলে এরা প্রকাশ্যেই মানুষ প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে গত সোমবার সমকালের রাজধানী পাতায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, রাজধানীর অলিগলিতে এ ধরনের চিকিৎসা কেন্দ্র খুলে সর্বরোগহর ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞাপন আকারে এসব ঘোষণা পত্রিকায়ও প্রকাশ পেয়ে থাকে। আর ঝাড়ফুঁক ও তুকতাকে বিশ্বাসী অনেক সরলপ্রাণ মানুষ এদের এসব চটকদারি বিজ্ঞাপনে অধিক হারে আকর্ষিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত ডিগ্রিধারী কোনো চিকিৎসকের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায় না। এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভেষজ উপাদানে তৈরি এক প্রকার বড়ি বা মিশ্রণ সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু এসব ওষুধের গুণাগুণ আদৌ পরীক্ষা করা হয় না। ফলে এসব ওষুধ খেয়ে রোগীদের আরোগ্যলাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই থাকে বেশি। অথচ এভাবে ওষুধ তৈরি ও বিক্রি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু আইন যারা রক্ষা করবেন ও তা পালিত হয়েছে কি-না দেখবেন, তাদের এতে যেন কোনো হেলদোল নেই। তা না হলে রাজধানীর সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, ফকিরাপুল, গুলিস্তান, নবাবপুর, সিদ্দিকবাজার, পল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, মগবাজার, রামপুরা, কল্যাণপুর, এলিফ্যান্ট রোডসহ আরও কয়েকটি স্থানে হরেক রকমের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রকাশ্যে সুফিবাবা, কেবলা বাবা, গুরু সাধক, গুরুজি সর্পসম্রাট বিশেষণে ভূষিত ব্যক্তিবর্গ এই বেআইনি ও মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবসা চালাচ্ছে কী করে? সাধারণ মানুষের অন্ধবিশ্বাসকে পুঁজি করেই এ ধরনের ব্যবসা চলতে পারছে। তাই এর বিরুদ্ধে পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে সরকারের বিধিবদ্ধ সংস্থাকে এ ধরনের ঠগবাজি বন্ধ করার আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই এসব ব্যবসা করার দুঃসাহস আর কেউ দেখাতে যাবে না। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষপাতী। কারণ চিকিৎসার নামে ঠগবাজি জঘন্য অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
No comments