আবার ঠোঙা ও পাটের ব্যাগ ফিরে আসুক-শত্রু পলিথিন

পরিবেশদূষণের কারণে যে পলিথিন একসময় পরিত্যাজ্য ঘোষণা করা হয়েছিল, দোর্দণ্ড প্রতাপে তার ফিরে আসায় সচেতন নাগরিকমাত্রই উদ্বিগ্ন। পলিথিন জনস্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি পরিবেশদূষণেও এর জুড়ি নেই। এটিকে মানবজীবনের শত্রু হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়।


তুলনায় পাটের ব্যাগ বা কাগজের ঠোঙাকে বিবেচনা করা হয় বন্ধু হিসেবে। আমরা কি বন্ধুকে দূরে সরিয়ে শত্রুকে আলিঙ্গন করব? যদি সেটি না করি, এখনই পলিথিন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি আইন পাস হয়। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে ঢাকা এবং মার্চ থেকে সারা দেশে নির্দিষ্ট মাত্রার পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় এ আইনের পক্ষে ব্যাপক জনমত গড়ে উঠেছিল। বলা যায়, জনগণের চাপেই সরকার আইনটি করতে বাধ্য হয়। প্রথম দিকে আইনটি প্রয়োগেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রয়াস ছিল প্রশংসনীয়। পলিথিন বন্ধ করায় পাটের তৈরি ব্যাগ ও কাগজের ঠোঙার চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এতে মুমূর্ষুপ্রায় পাটকলগুলো বাঁচিয়ে রাখার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে যে কাজে লাগানো যায়নি, অধুনা পলিথিনের প্রাদুর্ভাবই তার প্রমাণ।
দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশে কোনো আইনের প্রয়োগই স্থায়ী হয় না। সময়ের ব্যবধানে সবকিছু আগের মতো চলতে থাকে। পলিথিন নিষিদ্ধকরণ আইনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পাড়ার মুদি দোকান থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে এখন দেদার বিক্রি হচ্ছে পলিথিন। অথচ এখনো আইনত পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার বেআইনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও জানা নেই। মহানগরের পয়ঃপ্রণালীগুলো প্রায় বন্ধ কিংবা বুড়িগঙ্গার তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণও পলিথিন।
পরিবেশ রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। পলিথিন যে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি, সে কথা সবাইকে বোঝাতে হবে। এ ক্ষেত্রে গুটিকয় দোকানে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে লাভ হবে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব অবৈধ পলিথিন কারখানা আছে, সেগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। শত্রু পলিথিনের স্থলে আসুন বন্ধু কাগজের ঠোঙা ও পাটের ব্যাগকে স্বাগত জানাই। তাতে দেশের পরিবেশ ও অর্থনীতি দুটোই চাঙা হবে।

No comments

Powered by Blogger.