জ্বালানি খাতের উন্নতির দেখা নেইঃ তৈরি পোশাক শিল্প হুমকির মুখে
দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে আশার আলো ক্রমেই কমে আসছে। অব্যবস্থাপনা, শ্রমিক অসন্তোষ প্রভৃতিকে ছাপিয়ে জ্বালানি সঙ্কটই এখন প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠেছে। এই সঙ্কট শুধু তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টদেরই উদ্বিগ্ন করছে না, বিদেশি ক্রেতারাও এর বাইরে থাকতে পারছেন না।
তারা রফতানি আদেশের নিশ্চয়তা লাভের জন্য বাংলাদেশের জ্বালানি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেছেন। এ খাতে দ্রুত উন্নতি ঘটাতে না পারলে তাদের অর্ডার বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা এখন বাস্তব হয়ে উঠেছে। গতকালের আমার দেশ-এ এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের বিপদ আঁচ করা মোটেই কঠিন নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। আর ওয়ালমার্ট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে মোট রফতানি পোশাকের ৩০ শতাংশের ক্রেতা। ওয়ালমার্ট ছাড়াও কোচ, এইচ অ্যান্ড এম জাতীয় কোম্পানিগুলোই বাংলাদেশের সিংহভাগ তৈরি পোশাকের ক্রেতা। এ ধরনের ১১টি প্রতিষ্ঠানের বায়ার্স ফোরাম সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে নিজেদের উদ্বেগ ও পরামর্শের কথা তুলে ধরেছে। সেখানে তারা ব্যবসায়ের নিশ্চয়তার জন্য তৈরি পোশাক শিল্পে ধারাবাহিক উত্পাদন নিশ্চিত রাখার ওপর জোর দিয়েছেন। বিশেষভাবে জ্বালানি পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন ও শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি গুরুত্ব পেয়েছে তাদের চিঠিতে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ছাড়া বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে জ্বালানি সঙ্কটই যে প্রধান হয়ে উঠেছে, এতে কারও সন্দেহ প্রকাশের অবকাশ নেই।
গত ৯ মাসে পোশাক শিল্পে বারবার রফতানি আদেশ বাতিলের কারণ ছিল বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা। এখন পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। কিন্তু সৃষ্ট সুযোগের সদ্ব্যবহারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সামনে জ্বালানি ঘাটতি বড় বাঁধা হয়ে উঠেছে। পোশাক শিল্পে দৈনিক বিদ্যুত্ চাহিদা ৬২০ মেগাওয়াট হলেও এর প্রায় ৪৫ ভাগ সরবরাহই পাওয়া যায় না। দিনে ৬/৭ ঘণ্টা লোডশেডিং মোকাবিলায় জেনারেটর চালাতে গিয়ে কমপক্ষে ৪০ ভাগ বাড়তি খরচ গুনতে হয় পোশাক শিল্প মালিকদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এজন্য বছরে প্রায় ২১ কোটি লিটার ডিজেল ব্যবহারে ১৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। জ্বালানি সঙ্কট মোকাবিলায় সরকার উদ্ভাবিত গ্যাস ও বিদ্যুত্ রেশনিং থেকেও পরিস্থিতি উন্নতির দেখা মিলছে না। বিশ্বমন্দা ও জ্বালানি সঙ্কটে গত এক বছরে প্রায় দেড়শ’রও বেশি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসেই রফতানি হ্রাস পেয়েছে দশমিক ৮০ শতাংশ। পরের মাসে শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়লেও সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় কমে যায় ২৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। প্রায় প্রতি মাসেই আয় কমেছে। জুলাই-ডিসেম্বরে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। এখন বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা কাটতে শুরু করলেও মূলত জ্বালানি সঙ্কটের কারণেই তৈরি পোশাক শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানো অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।
আমাদের জ্বালানি খাতে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থাশীল না হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। অর্ডার অনুযায়ী সময়মত পণ্য পাওয়া যাবে কি-না তার নিশ্চয়তা তারা দেখছে না। এখানকার উদ্যোক্তা-রফতানিকারকদের পক্ষেও তেমন নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বিদেশি ক্রেতারা স্বাভাবিক কারণেই বিকল্প বাজার খুঁজতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা, ভারত, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো তাদের আকৃষ্ট করছে। এ অবস্থায় বিদ্যুত্ নিয়ে সরকারের আশ্বাস ও বিকল্প ঘোষণা কোনো কাজে আসবে মনে হয় না। জ্বালানি পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি ঘটাতে না পারলে সামনে রফতানি আদেশ প্রত্যাহারের ঝুঁকি মেনে নেয়ার মতো আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এরপরও সরকারের বোধোদয় ঘটার মতো এখনও কিছুই দেখা যাচ্ছে না। গ্যাস, বিদ্যুত্ রেশনিং থেকে যে আশানুরূপ কিছু পাওয়া যাবে না সেটা এর মধ্যেই জানা হয়ে গেছে। তারপরও মন্ত্রী মহোদয়রা যে দিবাস্বপ্নে বিভোর, সেটা বোঝা যায় গত সোমবার প্রভাবশালী বাণিজ্যমন্ত্রীর কথায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে তিনি বিশ্বের অর্থনীতি যখন বিপর্যয়ের মুখে তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে গদগদ হয়েছেন। দেশের জ্বালানি খাত নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার পেছনে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের এ ধরনের মনোভাব উড়িয়ে দেয়া যায় না। সরকারের সামগ্রিক ভূমিকাও তেমনটাই প্রমাণ করে। মহাজোট সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পরও এমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না, যাতে জ্বালানি পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়। ফলে শুধু পোশাক শিল্পই নয়, সামগ্রিক অর্থনীতিই যে হুমকির মুখে এটা ক্রমেই সাধারণ মানুষও নিজেদের বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে টের পেতে শুরু করেছে। অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে আর্থ-সামাজিক বিষয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে দেরি করা হলে শুধু সরকারকেই নয়, দেশবাসীকেও এর মাসুল গুনতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। আর ওয়ালমার্ট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে মোট রফতানি পোশাকের ৩০ শতাংশের ক্রেতা। ওয়ালমার্ট ছাড়াও কোচ, এইচ অ্যান্ড এম জাতীয় কোম্পানিগুলোই বাংলাদেশের সিংহভাগ তৈরি পোশাকের ক্রেতা। এ ধরনের ১১টি প্রতিষ্ঠানের বায়ার্স ফোরাম সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে নিজেদের উদ্বেগ ও পরামর্শের কথা তুলে ধরেছে। সেখানে তারা ব্যবসায়ের নিশ্চয়তার জন্য তৈরি পোশাক শিল্পে ধারাবাহিক উত্পাদন নিশ্চিত রাখার ওপর জোর দিয়েছেন। বিশেষভাবে জ্বালানি পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন ও শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি গুরুত্ব পেয়েছে তাদের চিঠিতে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ছাড়া বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে জ্বালানি সঙ্কটই যে প্রধান হয়ে উঠেছে, এতে কারও সন্দেহ প্রকাশের অবকাশ নেই।
গত ৯ মাসে পোশাক শিল্পে বারবার রফতানি আদেশ বাতিলের কারণ ছিল বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা। এখন পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। কিন্তু সৃষ্ট সুযোগের সদ্ব্যবহারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সামনে জ্বালানি ঘাটতি বড় বাঁধা হয়ে উঠেছে। পোশাক শিল্পে দৈনিক বিদ্যুত্ চাহিদা ৬২০ মেগাওয়াট হলেও এর প্রায় ৪৫ ভাগ সরবরাহই পাওয়া যায় না। দিনে ৬/৭ ঘণ্টা লোডশেডিং মোকাবিলায় জেনারেটর চালাতে গিয়ে কমপক্ষে ৪০ ভাগ বাড়তি খরচ গুনতে হয় পোশাক শিল্প মালিকদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এজন্য বছরে প্রায় ২১ কোটি লিটার ডিজেল ব্যবহারে ১৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। জ্বালানি সঙ্কট মোকাবিলায় সরকার উদ্ভাবিত গ্যাস ও বিদ্যুত্ রেশনিং থেকেও পরিস্থিতি উন্নতির দেখা মিলছে না। বিশ্বমন্দা ও জ্বালানি সঙ্কটে গত এক বছরে প্রায় দেড়শ’রও বেশি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসেই রফতানি হ্রাস পেয়েছে দশমিক ৮০ শতাংশ। পরের মাসে শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়লেও সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় কমে যায় ২৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। প্রায় প্রতি মাসেই আয় কমেছে। জুলাই-ডিসেম্বরে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। এখন বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা কাটতে শুরু করলেও মূলত জ্বালানি সঙ্কটের কারণেই তৈরি পোশাক শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানো অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।
আমাদের জ্বালানি খাতে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থাশীল না হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। অর্ডার অনুযায়ী সময়মত পণ্য পাওয়া যাবে কি-না তার নিশ্চয়তা তারা দেখছে না। এখানকার উদ্যোক্তা-রফতানিকারকদের পক্ষেও তেমন নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বিদেশি ক্রেতারা স্বাভাবিক কারণেই বিকল্প বাজার খুঁজতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা, ভারত, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো তাদের আকৃষ্ট করছে। এ অবস্থায় বিদ্যুত্ নিয়ে সরকারের আশ্বাস ও বিকল্প ঘোষণা কোনো কাজে আসবে মনে হয় না। জ্বালানি পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি ঘটাতে না পারলে সামনে রফতানি আদেশ প্রত্যাহারের ঝুঁকি মেনে নেয়ার মতো আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এরপরও সরকারের বোধোদয় ঘটার মতো এখনও কিছুই দেখা যাচ্ছে না। গ্যাস, বিদ্যুত্ রেশনিং থেকে যে আশানুরূপ কিছু পাওয়া যাবে না সেটা এর মধ্যেই জানা হয়ে গেছে। তারপরও মন্ত্রী মহোদয়রা যে দিবাস্বপ্নে বিভোর, সেটা বোঝা যায় গত সোমবার প্রভাবশালী বাণিজ্যমন্ত্রীর কথায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে তিনি বিশ্বের অর্থনীতি যখন বিপর্যয়ের মুখে তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে গদগদ হয়েছেন। দেশের জ্বালানি খাত নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার পেছনে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের এ ধরনের মনোভাব উড়িয়ে দেয়া যায় না। সরকারের সামগ্রিক ভূমিকাও তেমনটাই প্রমাণ করে। মহাজোট সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পরও এমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না, যাতে জ্বালানি পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়। ফলে শুধু পোশাক শিল্পই নয়, সামগ্রিক অর্থনীতিই যে হুমকির মুখে এটা ক্রমেই সাধারণ মানুষও নিজেদের বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে টের পেতে শুরু করেছে। অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে আর্থ-সামাজিক বিষয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে দেরি করা হলে শুধু সরকারকেই নয়, দেশবাসীকেও এর মাসুল গুনতে হবে।
No comments