হঠাৎ চমকে দিলেন আমির খান

আরে! এ কী করলেন আমির খান? হামেশাই তো আমরা ছোটপর্দায় রিয়েলিটি শো দেখছি। কিন্তু আমির খানের নতুন রিয়েলিটি শো প্রচলিত শো থেকে একেবারেই আলাদা। বলিউড তারকাদের ছোটপর্দায় রিয়েলিটি শো নতুন কিছু নয়। অমিতাভ, শাহরুখ, সালমানদের মতো মহাতারকারাসহ অনেকেই এ পথে হেঁটেছেন।


কিন্তু আমির খান এলেন তাঁর ছবির মতোই নতুনত্ব আর নতুন বৈশিষ্ট্যের মাত্রা যোগ করে। ৬ মে রোববার ভারতের স্টার টিভি নেটওয়ার্কে দর্শক তাঁকে প্রথম দেখল ‘সত্যমেব জয়তে’ নামের এ রিয়েলিটি শোতে। সংস্কৃত ভাষায় বললে ‘সত্যের জয়’। এটি প্রতি রোববারের নিয়মিত অনুষ্ঠান।
আমির কেন এ বদলে দেওয়ার কারিগরের ভূমিকায় এলেন? কী প্রয়োজন ছিল এমন কঠিন দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার? আমির নিজেই সে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘আমি ফিল্মি জগতের মানুষ হলেও এর ভেতর আপনাদের মতোই আছে একজন সাধারণ হিন্দুস্তানির জীবন। আপনাদের মতোই দেশের সংবাদপত্র পড়া, টিভি সংবাদ দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার মধ্য দিয়ে আমারও মনে অনেক বিষয় দাগ কেটে যায়। একদিকে দেশের উন্নতির শিখর ছোঁয়ার খবরগুলো শুনে যেমন খুশি হই, অন্যদিকে সমাজের এমন কিছু সত্য আছে, যা আমি দেখতে চাই না। চোখ মেলে পেরেশান হই, উদাস হয়ে পড়ি। কখনো কখনো ভাবি—গান্ধী, নেহরু, বোস, মৌলানা আজাদ যদি জীবিত থাকতেন, তাঁরা কী জবাব দিতেন? স্বাধীনতার সংগ্রাম করতে করতে তাঁরা কি এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন? দেশের এমন কিছু সমস্যা যার সমাধানে আমার, আপনার, সমাজের সবার ভূমিকার জন্য অপেক্ষায় আছে, প্রতীক্ষা করছে। আমিও এ সমাজের এক হিস্যা। এ জন্যই আপনাদের কাছে এসেছি। কিছু শুনতে চাই, কিছু বলতে চাই, প্রতিটি সত্যকে বের করে আনতে চাই, যা হিন্দুস্তানিদের জীবনের কষ্টের চাওয়া। আমি কাউকে দোষ দিতে চাই না, অপমান করতে চাই না। কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেও চাই না। কেননা, আমার কোনো বিপদের দায় আমারই বা কোনো না কোনোভাবে আমাদের সবারই। হাঙ্গামা তৈরি করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আমার চেষ্টা এ চেহারা বদলে দেওয়ার, যা আমার বুকে সঠিক নয় তা আপনার বুকে হয়তো সঠিক, আগুন যেখানেই থাকুক কিন্তু সে আগুন জ্বালাতে হবেই।’
আমির খুব সচেতনভাবেই সেট নির্মাণের ব্যয়বহুল, জৌলুশ ও জাঁকজমক এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু তার বিষয়বস্তু আর উপস্থাপনা সবকিছু ছাপিয়ে অনেক ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছে। প্রথম পর্বে তিনি এমন একটি বিষয় তুলে ধরলেন, যা দর্শক পুরো অনুষ্ঠান চোখ মুছতে মুছতে দেখেছে। ভারতজুড়ে কন্যাশিশুর ভ্রূণ হত্যার মতো এক ভয়ানক পাপাচার জেঁকে বসেছে। নিখুঁত গবেষণায় বের করে এনেছেন এ সামাজিক ব্যাধির চিত্র। জন্মের আগে বা পরে কন্যাসন্তানকে নিষ্ঠুরতায় বা খুব ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা, পরিবারে মেয়েদের প্রতি মারাত্মক অবহেলা, নির্যাতনের মতো কলঙ্ক আজকের আধুনিক, বিশ্বপরাশক্তি হিসেবে জেগে ওঠা ভারতের বাস্তবতা। চেরাগের নিচের সেই অন্ধকার। তিনি প্রতিটি ঘটনা বিশ্লেষণ করেছেন সত্য প্রমাণ দিয়ে। যেমন, সামাজিক বিশ্বাস বা ধারণা, কন্যাশিশুর ভ্রূণ হত্যা গ্রামেই বেশি ঘটে থাকে। তিনি প্রমাণ দিলেন, শহুরে উচ্চশিক্ষিত ভদ্র সমাজের চিন্তা থেকেই এটার উৎপত্তি। দিল্লি, চণ্ডীগড়, মুম্বাইয়ের মতো বড় বড় শহরের মানুষ এটা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত শহরেই বেশি। এর সূত্র ধরেই সারা ভারতে মহামারির মতো ছড়িয়েছে। হিসাব পাওয়া গেল তিন কোটি কন্যাশিশুর ভ্রূণ হত্যার! দ্বিতীয় পর্বে দর্শক একইভাবে পেয়েছে শিশু যৌন নির্যাতনের ভয়ংকর চিত্র। ভারতের দিনবদলের নতুন কারিগর, সমাজবদলের লড়াকু আমিরকে সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছে। তাঁর কাজের প্রভাব বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোতেও পড়ুক। এগুলো আমাদেরও সমস্যা। জয়তু আমির। সফল হোক তোমার সত্যের জয় আন্দোলন।
 শওকত আলী

No comments

Powered by Blogger.