সবিশেষ-অদম্য সম্ভাবনা by মো. সাইফুল্লাহ ও রুবেল হাবীব
একদল তরুণ প্রাণ। ১২ ডিসেম্বর প্রথম আলো কার্যালয়ে তারা পা রেখেছিল ‘অদম্য মেধাবী’ পরিচয়ে। তাতেও কি পরিচয়টা পূর্ণতা পেল? মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ভ্যানচালকের ছেলে মো. রাসেল কবির, কুপির কেরোসিন ফুরিয়ে যাওয়ার ভয়ে যার রাতের পড়াটা দীর্ঘায়িত হতো না—তার কথা কি বলা হলো? কিংবা মাত্র দেড় বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে যে কৃপেশ চন্দ্র দাস কখনো টিউশনি করে, কখনো দিনমজুরের কাজ করে, কখনো বা রিকশা চালিয়ে
এখন পড়ালেখায় ভালো অবস্থানে আছে—তার কথা? যেখানে একেকজনের জীবনটাই একেকটা গল্প, এতগুলো গল্পের একটা মাত্র নাম খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য। সেখানে ‘অদম্য মেধাবী’ বিশেষণটাই মোটামুটি জুতসই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধিরা যে অদম্য মেধাবীদের খোঁজ পেয়েছেন, এখন পর্যন্ত তাদের সংখ্যা দুইশর বেশি। প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংকের সৌজন্যে তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে মাসিক বৃত্তি। আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা দিতেই ১২ ডিসেম্বর প্রথম আলো কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাদের। ‘আপনাদের সঙ্গে একটা সুন্দর সকাল কাটাতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। আপনাদের কাছে আমরা যা শিখেছি, যা শিখছি, তা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আপনারা এসেছেন, আমরা কৃতজ্ঞ।’ এমনিভাবে মেধাবীদের স্বাগত জানান প্রথম আলো ট্রাস্ট এবং সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আজিজ খান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরও একজন অদম্য—মুসা ইব্রাহীম। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই মনে মনে বলি, আমি হব অদম্য। আমাকে পারতেই হবে—নিজের ভেতর এই জিদটা থাকতে হবে। ইচ্ছাটা কখনো মেরে ফেলবেন না।’ মুসা ইব্রাহীমের সাহস জোগানো কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিল সাতক্ষীরার লিমন হোসেন। মাধ্যমিক পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস পাওয়া লিমনের স্বপ্ন, বড় হয়ে আইনজীবী হবে। দুই বছর বয়সে বাবা মারা গেছেন। চার বোন, দুই ভাই আর মাকে নিয়ে অভাবের সংসারে কী করে লিমন এত ভালো ফল করল—জানতে চাইলে লিমন খুব বেশি কিছু বলতে চায় না। দৃষ্টি যখন দিগন্তে, তখন পেছন ফিরে তাকানোর সময় কোথায়!
তাই বলে নিজেদের অতীতের কষ্টের কথা যে একেবারেই ভুলে যাবে, তা নয়। কষ্টের দিনগুলোই যে তাদের ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হতে সাহায্য করবে, সে প্রতিজ্ঞাই শোনা গেল সুন্দরপুর গ্রামের লাইজু খাতুনের কণ্ঠে। লাইজুর বাবা পঙ্গু, একমাত্র ভাই দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। শিক্ষকদের সাহায্যে মাধ্যমিকে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে লাইজু। সে বলে, ‘প্রথম আলো ট্রাস্টের সহায়তায় আমি এখন বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। স্বপ্ন দেখছি, একসময় আমিও দরিদ্র মেধাবীদের সাহায্য করব।’ একই প্রত্যাশার কথা বলেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ‘আজকে যে মেধাবীরা এত কষ্ট করে এই অবস্থানে এসেছে, নিজেদের কষ্টের কথা মনে রেখে এরাই এক দিন দেশ গড়বে। এরাই তো দেশের ভবিষ্যৎ। আজকে তাদের কাছে আসতে পেরে, তাদের কথা শুনতে পেরে আমি আলোড়িত।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের সামনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বললেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কাগজিপাড়া গ্রামের মো. আল আমিন। জন্মের ছয় মাস পর তাঁর বাবা মারা যান। স্বামীর মৃত্যুশোক সইতে না পেরে মা হয়ে পড়েন মানসিক প্রতিবন্ধী। খুব ছোটবেলাতেই যার জীবনে নেমে এসেছে এত বড় আঘাত, অনায়াসেই তার জীবনটা হতে পারত ব্যর্থতার উপাখ্যান। হয়নি কেবল আল আমিন ‘অদম্য’ বলেই! বহু কষ্টে নিম্ন মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোল আল আমিন। কিন্তু এরপর যেন ঘোর অনিশ্চয়তা। স্কুলের বেতন ৪৫ টাকা, প্রতি মাসে এ টাকা কোথা থেকে জুটবে—সে প্রশ্নের উত্তরে আল আমিনের চোখে-মুখে গাঢ় অন্ধকার। তার পরও শিক্ষকদের সহায়তায় খুলনার কে কে কে বি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছে আল আমিন, এখন পড়ছে খুলনার সরকারি এমএম সিটি কলেজে। প্রথম আলো ট্রাস্টের সহায়তা পেয়ে এখন আল আমিন স্বপ্ন দেখে, ‘বড় হয়ে একজন আদর্শ ডাক্তার হব। মায়ের দুঃখ দূর করব।’
মেধাবীদের কথা শুনে মুগ্ধ প্রথম আলোর উপসম্পাদক আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘তোমরা তো শুধু মেধাবী নও, তোমরা কথার জাদুকর। এত মানুষের সামনে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বললে, তোমাদের ভয় করল না? আমারই তো পা কাঁপছে। ডায়াসের পেছনে দাঁড়িয়ে আছি বলে দেখা যাচ্ছে না!’ আনিসুল হকের রসিকতায় অদম্যরা হেসে ফেলল। ভবিষ্যতের চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সরকারি কর্মকর্তা আর বিভিন্ন সফল পেশাজীবী যখন কথা বলবে, তাদের পা কাঁপবে কেন? ভবিষ্যতেও তারা সফল হবে—এমনটা ভাবতে ‘খুব বেশি আশাবাদী’ হওয়ার দরকার পড়ে না। নামের সঙ্গে এরই মধ্যে জুড়ে যাওয়া ‘অদম্য’ শব্দটাই সে আশার সাহস জোগায়!
এক বাদাম বিক্রেতার গল্প
বাবা সন্তোষচন্দ্র সাহা, স্কুল-কলেজ, হাটবাজারসহ এলাকার বিভিন্ন স্থানে বাদাম বিক্রি করেন। এই বাদাম বেচেই তাঁর সংসার চলে। তাঁকে সহযোগিতা করে বড় ছেলে রিপন সাহা। ছোট ভাই সুমন কুমার সাহার ইচ্ছে পড়াশোনা করার। কিন্তু বাদাম বেচে সংসার চালানোই যেখানে দায়, সেখানে পড়াশোনা তো আকাশকুসুম কল্পনা। তাই বড় ভাইয়ের পড়াশোনা বন্ধ। ছোট ভাই সুমন কুমার সাহা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিজে বাদাম বিক্রি করে হলেও পড়াশোনা করবেই। চেষ্টায় সুফল মেলে, তারই জ্বলন্ত প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায় বগুড়ার ধুনট থানার পীরহাটি গ্রামের সুমন কুমার সাহার এসএসসির ফল। ২০১১ সালের অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় মুলতানি পারভিন শাহজাহান তালুকদার উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পায় সে। বর্তমানে প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগিতায় বগুড়ার আযিযুল হক কলেজে পড়াশোনা করছে সুমন কুমার সাহা।
যে মেয়েটি স্বপ্ন দেখতে জানে
সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় তৃতীয়বারের মতো বাবা আইয়ুব আলীর হার্ট অ্যাটাক হয়। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় পঞ্চম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া আবিদা জান্নাতের। ডাকনাম নিপা। অর্থের অভাবে বইখাতা-কলম কেনাও হয়ে ওঠে না। অথচ এই মেয়েটি এখন স্বপ্ন দেখে ব্যাংকার হওয়ার। কারণ, তার নামের আগে এখন যুক্ত হয়েছে অদম্য মেধাবী। আর সাহস বলতে আছে নিজের চেষ্টা, প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংক। ২০১১ সালে নিপা পটুয়াখালী সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বর্তমানে পটুয়াখালী সদরের আবদুল করিম মৃধা কলেজে পড়াশোনা করছে সে। মায়ের সেলাইয়ের কাজ, নিজের ছাত্র পড়ানো আর প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগিতায় উচ্ছল এ মেয়েটির ইচ্ছে এইচএসসিতেও একই ফল করার।
অদম্য ভাইবোন
ছয় ভাইবোনের সবার ছোট ইউসুফ মোল্লা ও পারভীন সুলতানা। বাবা আবদুুল খালেক মোল্লা চুনারঘাট বাজারে চা বিক্রি করেন। বড় দুই ছেলে বাবার সহযোগী। তবে বড় ভাই মাঝেমধ্যে রিকশাও চালায়। জমিজমা বলতে বাজারের পাশে নিজেদের থাকার জায়গাটাই আছে। সংসারে টানাটানি অবস্থা। একবেলা খাবার জোটে তো আরেক বেলা উপোস। এরই মধ্যে পড়াশোনা করে ছোট দুই ভাইবোন। সংসারের চাকা ঘোরাতে গিয়ে তাদের পড়াশোনার চাকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তবু স্যারদের সহযোগিতা, পাড়া-প্রতিবেশীর সহযোগিতায় ইউসুফ মোল্লা ও পারভীন সুলতানা এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। গ্রামের বাড়ি থেকে সরাসরি সিএ ভবনে এসে দুই ভাইবোন আবেগে আপ্লুত হয়ে যায়। আর তাদের খারাপ লাগার তালিকায় যুক্ত হয় ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরও একজন অদম্য—মুসা ইব্রাহীম। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই মনে মনে বলি, আমি হব অদম্য। আমাকে পারতেই হবে—নিজের ভেতর এই জিদটা থাকতে হবে। ইচ্ছাটা কখনো মেরে ফেলবেন না।’ মুসা ইব্রাহীমের সাহস জোগানো কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিল সাতক্ষীরার লিমন হোসেন। মাধ্যমিক পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস পাওয়া লিমনের স্বপ্ন, বড় হয়ে আইনজীবী হবে। দুই বছর বয়সে বাবা মারা গেছেন। চার বোন, দুই ভাই আর মাকে নিয়ে অভাবের সংসারে কী করে লিমন এত ভালো ফল করল—জানতে চাইলে লিমন খুব বেশি কিছু বলতে চায় না। দৃষ্টি যখন দিগন্তে, তখন পেছন ফিরে তাকানোর সময় কোথায়!
তাই বলে নিজেদের অতীতের কষ্টের কথা যে একেবারেই ভুলে যাবে, তা নয়। কষ্টের দিনগুলোই যে তাদের ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হতে সাহায্য করবে, সে প্রতিজ্ঞাই শোনা গেল সুন্দরপুর গ্রামের লাইজু খাতুনের কণ্ঠে। লাইজুর বাবা পঙ্গু, একমাত্র ভাই দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। শিক্ষকদের সাহায্যে মাধ্যমিকে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে লাইজু। সে বলে, ‘প্রথম আলো ট্রাস্টের সহায়তায় আমি এখন বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। স্বপ্ন দেখছি, একসময় আমিও দরিদ্র মেধাবীদের সাহায্য করব।’ একই প্রত্যাশার কথা বলেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ‘আজকে যে মেধাবীরা এত কষ্ট করে এই অবস্থানে এসেছে, নিজেদের কষ্টের কথা মনে রেখে এরাই এক দিন দেশ গড়বে। এরাই তো দেশের ভবিষ্যৎ। আজকে তাদের কাছে আসতে পেরে, তাদের কথা শুনতে পেরে আমি আলোড়িত।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের সামনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বললেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কাগজিপাড়া গ্রামের মো. আল আমিন। জন্মের ছয় মাস পর তাঁর বাবা মারা যান। স্বামীর মৃত্যুশোক সইতে না পেরে মা হয়ে পড়েন মানসিক প্রতিবন্ধী। খুব ছোটবেলাতেই যার জীবনে নেমে এসেছে এত বড় আঘাত, অনায়াসেই তার জীবনটা হতে পারত ব্যর্থতার উপাখ্যান। হয়নি কেবল আল আমিন ‘অদম্য’ বলেই! বহু কষ্টে নিম্ন মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোল আল আমিন। কিন্তু এরপর যেন ঘোর অনিশ্চয়তা। স্কুলের বেতন ৪৫ টাকা, প্রতি মাসে এ টাকা কোথা থেকে জুটবে—সে প্রশ্নের উত্তরে আল আমিনের চোখে-মুখে গাঢ় অন্ধকার। তার পরও শিক্ষকদের সহায়তায় খুলনার কে কে কে বি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছে আল আমিন, এখন পড়ছে খুলনার সরকারি এমএম সিটি কলেজে। প্রথম আলো ট্রাস্টের সহায়তা পেয়ে এখন আল আমিন স্বপ্ন দেখে, ‘বড় হয়ে একজন আদর্শ ডাক্তার হব। মায়ের দুঃখ দূর করব।’
মেধাবীদের কথা শুনে মুগ্ধ প্রথম আলোর উপসম্পাদক আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘তোমরা তো শুধু মেধাবী নও, তোমরা কথার জাদুকর। এত মানুষের সামনে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বললে, তোমাদের ভয় করল না? আমারই তো পা কাঁপছে। ডায়াসের পেছনে দাঁড়িয়ে আছি বলে দেখা যাচ্ছে না!’ আনিসুল হকের রসিকতায় অদম্যরা হেসে ফেলল। ভবিষ্যতের চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সরকারি কর্মকর্তা আর বিভিন্ন সফল পেশাজীবী যখন কথা বলবে, তাদের পা কাঁপবে কেন? ভবিষ্যতেও তারা সফল হবে—এমনটা ভাবতে ‘খুব বেশি আশাবাদী’ হওয়ার দরকার পড়ে না। নামের সঙ্গে এরই মধ্যে জুড়ে যাওয়া ‘অদম্য’ শব্দটাই সে আশার সাহস জোগায়!
এক বাদাম বিক্রেতার গল্প
বাবা সন্তোষচন্দ্র সাহা, স্কুল-কলেজ, হাটবাজারসহ এলাকার বিভিন্ন স্থানে বাদাম বিক্রি করেন। এই বাদাম বেচেই তাঁর সংসার চলে। তাঁকে সহযোগিতা করে বড় ছেলে রিপন সাহা। ছোট ভাই সুমন কুমার সাহার ইচ্ছে পড়াশোনা করার। কিন্তু বাদাম বেচে সংসার চালানোই যেখানে দায়, সেখানে পড়াশোনা তো আকাশকুসুম কল্পনা। তাই বড় ভাইয়ের পড়াশোনা বন্ধ। ছোট ভাই সুমন কুমার সাহা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিজে বাদাম বিক্রি করে হলেও পড়াশোনা করবেই। চেষ্টায় সুফল মেলে, তারই জ্বলন্ত প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায় বগুড়ার ধুনট থানার পীরহাটি গ্রামের সুমন কুমার সাহার এসএসসির ফল। ২০১১ সালের অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় মুলতানি পারভিন শাহজাহান তালুকদার উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পায় সে। বর্তমানে প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগিতায় বগুড়ার আযিযুল হক কলেজে পড়াশোনা করছে সুমন কুমার সাহা।
যে মেয়েটি স্বপ্ন দেখতে জানে
সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় তৃতীয়বারের মতো বাবা আইয়ুব আলীর হার্ট অ্যাটাক হয়। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় পঞ্চম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া আবিদা জান্নাতের। ডাকনাম নিপা। অর্থের অভাবে বইখাতা-কলম কেনাও হয়ে ওঠে না। অথচ এই মেয়েটি এখন স্বপ্ন দেখে ব্যাংকার হওয়ার। কারণ, তার নামের আগে এখন যুক্ত হয়েছে অদম্য মেধাবী। আর সাহস বলতে আছে নিজের চেষ্টা, প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংক। ২০১১ সালে নিপা পটুয়াখালী সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বর্তমানে পটুয়াখালী সদরের আবদুল করিম মৃধা কলেজে পড়াশোনা করছে সে। মায়ের সেলাইয়ের কাজ, নিজের ছাত্র পড়ানো আর প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগিতায় উচ্ছল এ মেয়েটির ইচ্ছে এইচএসসিতেও একই ফল করার।
অদম্য ভাইবোন
ছয় ভাইবোনের সবার ছোট ইউসুফ মোল্লা ও পারভীন সুলতানা। বাবা আবদুুল খালেক মোল্লা চুনারঘাট বাজারে চা বিক্রি করেন। বড় দুই ছেলে বাবার সহযোগী। তবে বড় ভাই মাঝেমধ্যে রিকশাও চালায়। জমিজমা বলতে বাজারের পাশে নিজেদের থাকার জায়গাটাই আছে। সংসারে টানাটানি অবস্থা। একবেলা খাবার জোটে তো আরেক বেলা উপোস। এরই মধ্যে পড়াশোনা করে ছোট দুই ভাইবোন। সংসারের চাকা ঘোরাতে গিয়ে তাদের পড়াশোনার চাকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তবু স্যারদের সহযোগিতা, পাড়া-প্রতিবেশীর সহযোগিতায় ইউসুফ মোল্লা ও পারভীন সুলতানা এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। গ্রামের বাড়ি থেকে সরাসরি সিএ ভবনে এসে দুই ভাইবোন আবেগে আপ্লুত হয়ে যায়। আর তাদের খারাপ লাগার তালিকায় যুক্ত হয় ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম।
No comments