ঢাকার চারপাশে ২৫০ গাড়ি আটকে দিল পুলিশ
মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনাকে উপলক্ষ করে গতকাল রোববার রাজধানীতে প্রবেশের পথে আশপাশের জেলার বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে আটকে দিয়েছে পুলিশ। আটক করা হয় অন্তত ৩০ জনকে। বিভিন্ন স্থান থেকে আড়াই শতাধিক বাস, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানে করে গত শনিবার রাতে ও গতকাল ভোর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীসহ মুক্তিযোদ্ধারা। এ ধরনের কর্মসূচিতে যোগদানের বিষয়টি অতীতে স্থানীয়
বিএনপির নেতারা আগে পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানালেও গতকালের কর্মসূচি জানাননি। এমনকি তাঁদের বহনকারীবাস,মাইক্রোবাসসহ অন্য যানবাহনগুলোতে কোনো ব্যানার, ফেস্টুনও ছিল না।
ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ঢাকাকে অচল করে দেওয়াসহ বড় ধরনের ধংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে—এমন তথ্যের কারণে পুলিশ সকাল থেকে ঢাকায় প্রবেশের পথগুলোতে তৎপর ছিল। আগ্নেয়াস্ত্র বা কোনো ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে যাতে কেউ রাজধানীতে ঢুকতে না পারে সেজন্য মহাসড়কে তল্লাশির ব্যবস্থা করা হয়। গাবতলীতে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। এসব তৎপরতার কারণে গতকাল রাজধানীতে বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
সাভার ও মানিকগঞ্জ: স্থানীয় বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ঢাকার ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. তমিজ উদ্দিনের বাসায় বৈঠক হয়। বৈঠকে ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা-কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী গতকাল সকাল সাতটার দিকে ধামরাই থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী শতাধিক বাস ও মাইক্রোবাসে করে রাজধানীতে যান। শাহবাগ এলাকায় পৌছানোর পর পুলিশ নেতা-কর্মীসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি আটক করে।
অবশ্য তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকার কর্মসূচি সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। নেতা-কর্মীরা ঢাকায় গেছেন কি না, তাও জানি না।’
ঢাকার আশুলিয়া থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রকিব দেওয়ান বলেন, সকাল ১০টার দিকে ছয়টি মাইক্রোবাস নিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু গাবতলীতে পুলিশের ব্যারিকেডের কথা শুনে তাঁরা সাভার থেকেই ফিরে আসেন।
মানিকগঞ্জের সাবেক সাংসদ হারুনুর রশিদ খানের সমর্থক বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী সকাল সাতটার দিকে ২০টি বাসে করে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকা যান। সকাল ১০টার দিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হলে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া করে। এ সময় ছাত্রদলের কর্মী রনিকে আটক করে পুলিশ।
বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের সমর্থক সাত শতাধিক নেতা-কর্মী ৩০টি বাসে সকাল আটটার দিকে ঢাকায় যান। বেলা ১১টার দিকে পল্টন এলাকায় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে মানিকগঞ্জে ফিরে আসেন।
মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতা ও জেলা আইনজীবী সমিতির গ্রন্থাগারবিষয়ক সম্পাদক মহিউদ্দিন দাবি করেন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ পাঁচটি বাসে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে শনিবার রাতেই ঢাকায় যান। তাঁরা ফকিরাপুলের একটি হোটেলে রাতে ছিলেন। সকালে হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় মাসুদসহ ২১ নেতা-কর্মীকে আটক করে পল্টন থানার পুলিশ।
জেলা বিএনপির আরেক পক্ষের নেতা তোজাম্মেল হক বলেন, তাঁরা ২৫টি বাসে ছয় শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে ঢাকায় যান। বেলা ১১টার দিকে ফকিরাপুল বাজারের কাছে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পুলিশ তাঁদের চার কর্মীকে আটক করে।
মানিকগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোতালেব হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন বলে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদেরও ঢাকায় তলব করা হয়। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকারও পরিকল্পনা ছিল।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর): গাজীপুর জেলা বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভোর পাঁচটার দিকে কালিয়াকৈর বাজার থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে ১০-১২টি বাস ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। একই সময়ে গাজীপুর শহর, কালীগঞ্জ ও টঙ্গী থেকে ৩০টি বাস নেতা-কর্মীদের নিয়ে যায়। কিন্তু ঢাকার শান্তিনগরে পৌঁছালে পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা ও ধাওয়া করে ফেরত পাঠায়। গাজীপুরের বরমী এলাকার সোহাগ, কালীগঞ্জের আবদুস সালামসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ।
গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম বলেন, তাঁরা নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথে পুলিশের বাধায় ফিরে আসেন।
জেলা পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন বলেন, ‘সংগঠিত হয়ে ঢাকায় যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপির নেতারা আমাদের কিছু জানাননি।’
নবাবগঞ্জ (ঢাকা): উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সকালে ২০টি বাস ও ৩০টি গতিতে (হিউম্যান হলার) করে ঢাকায় যান। বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা বিএনপির (আশফাকের পক্ষ) যুগ্ম আহ্বায়ক ইফতেখার আল ফারুকী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনায় যোগ দিতে আমরা দুই-তিন হাজার নেতা-কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ঢাকায় যাই। সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিলে পুলিশের হামলায় ১৫ জন আহত হয়। একজনকে আটক করা হয়।’
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মান্নানের পক্ষের নেতা-কর্মীরা দুটি বাসে করে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন বলে জানিয়েছেন এ পক্ষের নবাবগঞ্জ উপজেলা সভাপতি আবেদ হোসেন।
এবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে ঢাকায় যাওয়ার আগে বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ ও সাংবাদিকদের না জানানো প্রসঙ্গে আবেদ বলেন, ‘বিএনপিপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেব বলে কাউকে জানাইনি।’
নবাবগঞ্জ থানার ওসি মাসুদ করিম বলেন, ‘নবাবগঞ্জ থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাস নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার ব্যাপারে কিছু জানি না। তাঁরা বিচ্ছিন্নভাবে যাত্রীবেশে গিয়ে থাকতে পারেন।’
ময়মনসিংহ: মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনায় যোগ দিতে আসা বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলার পাঁচ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে বহনকারী আটটি বাস ভালুকার হাজীর বাজারে আটকে দেয় ভালুকা মডেল থানার পুলিশ। এর প্রতিবাদে আটকে পড়া মুক্তিযোদ্ধারা দুপুরে ভালুকায় প্রতিবাদ সভা করেন এবং ময়মনসিংহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
নরসিংদী: বিএনপির সূত্র জানায়, সকালে শহরের ভেলানগরে জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে থেকে ১০টি মাইক্রোবাসে করে শতাধিক নেতা-কর্মী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। পথে নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। পরে তাঁরা নরসিংদী ফিরে আসেন। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির নেতারা নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে রাজি হননি।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত হালদার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।’
নোয়াখালী: নোয়াখালী থেকে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের শতাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থক শনিবার রাতে ও গতকাল ভোরে ঢাকায় পৌঁছান। সকালে মতিঝিল এলাকায় তাঁরা পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
টাঙ্গাইল: জেলা বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, কোনো ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা সকালে ১২টি বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তাঁরা মহাখালী টার্মিনালে বাস রেখে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের কর্মসূচিতে যোগ দেন। অনেকে গোলযোগের খবর পেয়ে মহাখালী থেকেই ফিরে আসেন।
এ ছাড়া ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা অর্ধশতাধিক যানে করে ঢাকায় আসেন।
ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ঢাকাকে অচল করে দেওয়াসহ বড় ধরনের ধংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে—এমন তথ্যের কারণে পুলিশ সকাল থেকে ঢাকায় প্রবেশের পথগুলোতে তৎপর ছিল। আগ্নেয়াস্ত্র বা কোনো ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে যাতে কেউ রাজধানীতে ঢুকতে না পারে সেজন্য মহাসড়কে তল্লাশির ব্যবস্থা করা হয়। গাবতলীতে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। এসব তৎপরতার কারণে গতকাল রাজধানীতে বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
সাভার ও মানিকগঞ্জ: স্থানীয় বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ঢাকার ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. তমিজ উদ্দিনের বাসায় বৈঠক হয়। বৈঠকে ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা-কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী গতকাল সকাল সাতটার দিকে ধামরাই থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী শতাধিক বাস ও মাইক্রোবাসে করে রাজধানীতে যান। শাহবাগ এলাকায় পৌছানোর পর পুলিশ নেতা-কর্মীসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি আটক করে।
অবশ্য তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকার কর্মসূচি সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। নেতা-কর্মীরা ঢাকায় গেছেন কি না, তাও জানি না।’
ঢাকার আশুলিয়া থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রকিব দেওয়ান বলেন, সকাল ১০টার দিকে ছয়টি মাইক্রোবাস নিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু গাবতলীতে পুলিশের ব্যারিকেডের কথা শুনে তাঁরা সাভার থেকেই ফিরে আসেন।
মানিকগঞ্জের সাবেক সাংসদ হারুনুর রশিদ খানের সমর্থক বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী সকাল সাতটার দিকে ২০টি বাসে করে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকা যান। সকাল ১০টার দিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হলে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া করে। এ সময় ছাত্রদলের কর্মী রনিকে আটক করে পুলিশ।
বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের সমর্থক সাত শতাধিক নেতা-কর্মী ৩০টি বাসে সকাল আটটার দিকে ঢাকায় যান। বেলা ১১টার দিকে পল্টন এলাকায় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে মানিকগঞ্জে ফিরে আসেন।
মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতা ও জেলা আইনজীবী সমিতির গ্রন্থাগারবিষয়ক সম্পাদক মহিউদ্দিন দাবি করেন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ পাঁচটি বাসে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে শনিবার রাতেই ঢাকায় যান। তাঁরা ফকিরাপুলের একটি হোটেলে রাতে ছিলেন। সকালে হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় মাসুদসহ ২১ নেতা-কর্মীকে আটক করে পল্টন থানার পুলিশ।
জেলা বিএনপির আরেক পক্ষের নেতা তোজাম্মেল হক বলেন, তাঁরা ২৫টি বাসে ছয় শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে ঢাকায় যান। বেলা ১১টার দিকে ফকিরাপুল বাজারের কাছে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পুলিশ তাঁদের চার কর্মীকে আটক করে।
মানিকগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোতালেব হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন বলে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদেরও ঢাকায় তলব করা হয়। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকারও পরিকল্পনা ছিল।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর): গাজীপুর জেলা বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভোর পাঁচটার দিকে কালিয়াকৈর বাজার থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে ১০-১২টি বাস ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। একই সময়ে গাজীপুর শহর, কালীগঞ্জ ও টঙ্গী থেকে ৩০টি বাস নেতা-কর্মীদের নিয়ে যায়। কিন্তু ঢাকার শান্তিনগরে পৌঁছালে পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা ও ধাওয়া করে ফেরত পাঠায়। গাজীপুরের বরমী এলাকার সোহাগ, কালীগঞ্জের আবদুস সালামসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ।
গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম বলেন, তাঁরা নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথে পুলিশের বাধায় ফিরে আসেন।
জেলা পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন বলেন, ‘সংগঠিত হয়ে ঢাকায় যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপির নেতারা আমাদের কিছু জানাননি।’
নবাবগঞ্জ (ঢাকা): উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সকালে ২০টি বাস ও ৩০টি গতিতে (হিউম্যান হলার) করে ঢাকায় যান। বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা বিএনপির (আশফাকের পক্ষ) যুগ্ম আহ্বায়ক ইফতেখার আল ফারুকী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনায় যোগ দিতে আমরা দুই-তিন হাজার নেতা-কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ঢাকায় যাই। সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিলে পুলিশের হামলায় ১৫ জন আহত হয়। একজনকে আটক করা হয়।’
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মান্নানের পক্ষের নেতা-কর্মীরা দুটি বাসে করে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন বলে জানিয়েছেন এ পক্ষের নবাবগঞ্জ উপজেলা সভাপতি আবেদ হোসেন।
এবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে ঢাকায় যাওয়ার আগে বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ ও সাংবাদিকদের না জানানো প্রসঙ্গে আবেদ বলেন, ‘বিএনপিপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেব বলে কাউকে জানাইনি।’
নবাবগঞ্জ থানার ওসি মাসুদ করিম বলেন, ‘নবাবগঞ্জ থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাস নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার ব্যাপারে কিছু জানি না। তাঁরা বিচ্ছিন্নভাবে যাত্রীবেশে গিয়ে থাকতে পারেন।’
ময়মনসিংহ: মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনায় যোগ দিতে আসা বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলার পাঁচ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে বহনকারী আটটি বাস ভালুকার হাজীর বাজারে আটকে দেয় ভালুকা মডেল থানার পুলিশ। এর প্রতিবাদে আটকে পড়া মুক্তিযোদ্ধারা দুপুরে ভালুকায় প্রতিবাদ সভা করেন এবং ময়মনসিংহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
নরসিংদী: বিএনপির সূত্র জানায়, সকালে শহরের ভেলানগরে জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে থেকে ১০টি মাইক্রোবাসে করে শতাধিক নেতা-কর্মী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। পথে নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। পরে তাঁরা নরসিংদী ফিরে আসেন। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির নেতারা নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে রাজি হননি।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত হালদার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।’
নোয়াখালী: নোয়াখালী থেকে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের শতাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থক শনিবার রাতে ও গতকাল ভোরে ঢাকায় পৌঁছান। সকালে মতিঝিল এলাকায় তাঁরা পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
টাঙ্গাইল: জেলা বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, কোনো ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা সকালে ১২টি বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তাঁরা মহাখালী টার্মিনালে বাস রেখে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের কর্মসূচিতে যোগ দেন। অনেকে গোলযোগের খবর পেয়ে মহাখালী থেকেই ফিরে আসেন।
এ ছাড়া ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা অর্ধশতাধিক যানে করে ঢাকায় আসেন।
No comments