ঋণের সুদাসল পরিশোধের পর বিদেশি সাহায্য প্রায় শূন্য!
বিদেশি সহায়তার প্রকৃত প্রাপ্তি কার্যত শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। যে পরিমাণ বিদেশি সহায়তা আসছে, তার প্রায় সমপরিমাণ অর্থ বিদেশি ঋণ হিসেবে গৃহীত সহায়তার সুদ ও আসল বাবদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের (জুলাই-নভেম্বর) মাসের বৈদেশিক সহায়তা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, আলোচ্য সময়ে ঋণ ও অনুদান মিলিয়ে ৪১ কোটি ৩৮ লাখ
ডলার বিদেশি সহায়তা এসেছে। আর এ সময়ে সুদ ও আসলসহ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রকৃত প্রাপ্তি হয়েছে ৪৫ লাখ ডলার বা ৩৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসাবে)।
সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়, গত অর্থবছরে একই সময়ের চেয়ে আলোচ্য সময়কালে অনেক কম অর্থ ছাড় করেছে দাতারা। গতবার জুলাই-নভেম্বর সময়কালে ৬১ কোটি ৮৩ লাখ ডলার ছাড় করা হয়েছিল। আর চলতি বছরের একই সময়ে প্রায় ২০ কোটি ডলার কম ছাড় হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত প্রথম আলোকে জানান, চলতি বছরের শুরু থেকেই আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সেই হারে রপ্তানি ও প্রবাসী-আয় বাড়ছে না। তাই আর্থিক ভারসাম্যের চাপ কমাতে বিদেশি সহায়তার অর্থ বেশি দরকার ছিল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে সেই বিদেশি সহায়তা আসেনি।
জায়েদ বখতের মতে, সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, এ বছরের প্রতিশ্রুত বিদেশি সহায়তা পুরোপুরি সমঝোতা (নেগোসিয়েট) করেই চুক্তি হয়েছিল। তাই নতুন সমঝোতার প্রয়োজন ছিল না। তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন। এ কমিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-নভেম্বর মাসে ঋণ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছে ২৬ কোটি ৪১ লাখ ডলার। গতবার একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪২ কোটি ৪২ লাখ ডলার।
এবার আলোচ্য সময়ে অনুদান হিসেবে এসেছে ১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গতবার এর পরিমাণ ছিল ১৯ কোটি ডলার।
এবার জুলাই-নভেম্বর সময়কালে প্রতিশ্রুতিও কমেছে। গতবার এ সময়ে প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ছিল ১৯৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর এবার তা কমে হয়েছে ১৮৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।
তবে গতবারের চেয়ে এবার বেশি সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে। এবার পরিশোধ করতে হয়েছে ৪০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। এর মধ্যে মূল ৩২ কোটি ৮০ লাখ ডলার আর সুদ আট কোটি ৫২ লাখ ডলার রয়েছে। গত বছর জুলাই-নভেম্বর মাসে ৩৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের সমপরিমাণ সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মধ্যে আসল ২৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার ও সুদ সাত কোটি ৫৬ লাখ ডলার রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিশ্বব্যাংক সবচেয়ে কম, ১১ কোটি ১৮ লাখ ডলার ছাড় করেছে। এ ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১০ কোটি ৭৯ লাখ ডলার, জাপান চার কোটি ডলার, ইউএনডিপি দুই কোটি ২৩ লাখ ডলার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেড় কোটি ডলার, ডেনমার্ক এক কোটি ডলার, জার্মানি এক কোটি ৩৪ লাখ ডলার ছাড় করেছে।
আলোচ্য সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ বিদেশি সহায়তার মাত্র ১৩ শতাংশ বা দুই হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো।
চলতি অর্থবছরে ৪৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের এডিপিতে মোট এক হাজার ৩৯টি প্রকল্প রয়েছে। দেশি উৎস থেকে ২৭ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা আর বিদেশি সহায়তার ১৮ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা রয়েছে।
No comments