নিত্যজাতম্-নিত্যজাতম্ by মহসীন হাবিব
১৬ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস স্টাডি ফ্যাকাল্টির আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত বলেছেন, 'অনেক বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও গত ৪০ বছরে বাংলাদেশ অন্য অনেক দেশের তুলনায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে।' ১৬ ডিসেম্বর বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ইমপ্যাক্ট প্রোগ্রামে বাংলাদেশের ৪০ বছর পূর্তির ওপর একটি নাতিদীর্ঘ রিপোর্ট প্রকাশ করে।
সেখানেও এএমএ মুহিতের একটি বক্তব্য তুলে ধরা হয়। তিনি বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শুধু বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী নয়, ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার দিল্লী ইকোনোমিকস কনক্লেইভে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, '�The tragedy is that not only china, but even Bangladesh is now doing better on almost every one of these social indicators than India is doing...�
খুবই ভালো কথা। ইতিবাচক সংবাদগুলো শুনতেও ভালো লাগে। মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা দেশবাসীকে বারবার নিশ্চিত করছেন, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। এক-দেড় বছরে জাতীয় গ্রিডে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হয়েছে। এ সরকারের সময়েই আরো দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে। আর বিদ্যুতের তথা জ্বালানি নিশ্চয়তা দেওয়া গেলে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ে সরকার মোটামুটি সন্তুষ্ট বলেই মনে হয়। দেশে এ বছর ১২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসছে বলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ১২ বিলিয়ন ডলার কিন্তু কম কথা নয়। কিন্তু এসব ইতিবাচক কথা আপাতত সত্য হলেও বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনীতির জন্য রয়েছে বড় অশনি সংকেত। বাস্তবতা হলো, বর্তমান সরকার অর্থনীতির জন্য যে পলিসি গ্রহণ করেছে, তাকে জাতীয় অর্থনীতির পরিকল্পনা না বলে বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অর্থনীতি বলাই শ্রেয়। বাংলাদেশের সরকার এত বেশি খাতে, এত পরিমাণ ভর্তুকি দিচ্ছে, যা কোনো উদার গণতান্ত্রিক এবং অপেক্ষাকৃত ভালো অর্থনৈতিক অবস্থার দেশ দেয় না। অবিশ্বাস্য সে ভর্তুকি। দু-একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি অনুমান করা যেতে পারে। যেমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার বিশাল অঙ্কের জ্বালানি ভুর্তকি দিয়ে থাকে। আবার এসব প্রতিষ্ঠান থেকেই সরকার বিদ্যুৎ ক্রয় করছে উচ্চমূল্যে। একদিকে সরকার দেশের বিশাল জনসংখ্যাকে বর্ণনা করছে জনশক্তি হিসেবে, অন্যদিকে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের খাদ্যভর্তুকি দিচ্ছে। তাহলে জনশক্তি কী কাজে লাগছে? এখন প্রশ্ন হলো, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যে ভর্তুকি দেবে সরকার, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু এই জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করার সরকারের পরিকল্পনাটা কী? অবকাঠামো উন্নয়ন অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখলেও এ উন্নয়নকে সরাসরি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অংশ বলা যায় না। সুতরাং অবকাঠামো উন্নয়নের কথা বাদ দিলে সরকারের বর্তমান নেওয়া এমন কোনো পরিকল্পনা আছে কি, যার ফল ১০ বা ২০ বছর পর পাওয়া যাবে? তাহলে কত সময় চলবে এই ভর্তুকি এবং এভাবে সরকারের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে কবে? এসব করতে গিয়ে সরকার অস্বাভাবিকভাবে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। বাজারে ছাড়ছে নতুন টাকা। আর অবধারিতভাবে হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। অনুমেয়, জনগণকে আপাতত শান্ত রাখা এবং উন্নয়নের গল্প বলার জন্যই অর্থ মন্ত্রণালয় তথা সরকারের এ নীতি। এই বৈশিষ্ট্য দেশকে কোনোক্রমেই ভবিষ্যতের ভালো ফল এনে দিতে পারে না। বরং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ একটি ঝুঁকির দিকে এগোচ্ছে। অর্থনীতির ক খ গ না বুঝেও উপরের কথাগুলো বলার একটি বিশেষ কারণ আছে। কিছু বিষয় বুঝতে অর্থনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বর্তমান বিশ্বে আয় ও সমৃদ্ধি অর্জনের যে বৈশিষ্ট্য, সেখানে নিয়ম হলো আপনাকে সম্ভাবনাময় সব সেক্টরে হাত বাড়াতে হবে এবং কিছু কিছু সেক্টরকে অপরিহার্য করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের জন্য কমন কিছু আয়ের উৎস থাকে, যাকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই এবং অবহেলা করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা এখনকার দিনে কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। যেমন তার একটি হলো পর্যটন শিল্প। ধরুন ভারতীয় একজন ট্যুরিস্ট অস্ট্রেলিয়া বা ফ্রান্সে যাচ্ছে, আবার ওই দেশ থেকে পর্যটক ভারতে আসছে। এ ক্ষেত্রে দুটি দেশই পর্যটন আয় দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ এ খাতে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশ। এমনকি ছোট অর্থনীতির মালদ্বীপ ও নেপালের তুলনায় বাংলাদেশের পর্যটন আয় অনেক পিছিয়ে। অর্থাৎ পর্যটন থেকে বৈদেশিক আয় বাংলাদেশের নেই বললেই চলে। অথচ রেমিট্যান্স বদৌলতে গার্মেন্ট শিল্প-জাহাজ শিল্পের শ্রমে দেশে যে অর্থ প্রবেশ করছে, তারই একটি বড় অংশ এ দেশ থেকে বের হয়ে যাচ্ছে স্থানীয় জনগণের বিদেশ ভ্রমণের ভেতর দিয়ে। এ শিল্পকে শক্তিশালী করে তুললে দেশ একটি দীর্ঘমেয়াদি আয়ের উৎস খুঁজে পেত। পর্যটনকে আকর্ষণীয় করতে সুন্দরবনকে একটি ভোট দেওয়া ছাড়া আর কী করা হয়েছে? দীর্ঘমেয়াদি কী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এ শিল্পকে আকর্ষণীয় করতে? বর্তমান বিশ্বে প্রতিটি সেবাখাতের সঙ্গে অর্থনীতির একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যেমন স্বাস্থ্য খাত। শুধু স্বাস্থ্যসেবার মান না থাকায় এবং এ সেবা সুনিশ্চিত না হওয়ায় প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ভারত, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ডে যে পরিমাণ অর্থ বের হয়ে যাচ্ছে, তা অবিশ্বাস্য। প্রদর্শিত অর্থের বাইরে কালো পথে কোটি কোটি টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। এ নিয়েও তো অর্থ মন্ত্রণালয়েরই সবচেয়ে বেশি ভাবা উচিত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে অর্থ চলে যাওয়া ঠেকাতে একটি পরিকল্পনা থাকা উচিত নয়?
যেকোনো দেশের স্থানীয় বাজারও এখন আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হাত বাড়িয়ে সেখান থেকে অর্থ টেনে আনার সবচেয়ে বড় মাধ্যম এখন প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি যতটুকু আছে এবং ধীরে যতটা অগ্রসর হচ্ছে সেটাও ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। ভারতের বেঙালুরু, দিল্লী, মুম্বাই ও চেন্নাইতে যুবসমাজ ইন্টারনেট-প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোটি কোটি ডলার নিয়ে দেশে নিয়ে আসছে। অর্থনীতির পরিকল্পনায় এটিও এখন অপরিহার্য একটি বিষয়।
সর্বোপরি আইনশৃংখলা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখন যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের বড় শর্ত। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ভয়ানকভাবে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, এটি বহুল উচ্চারিত সত্য।
মোদ্দাকথা, যদি সব ইতিবাচক সংবাদের সঙ্গে উল্লেখিত খাতগুলোতে জোর দেওয়া হয় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রশমন করা যায়, তাহলে এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে যে, পৃথিবী অবাক হয়ে লাফিয়ে উপরে ওঠা শক্তিশালী অর্থনীতির একটি দেশ দেখতে পাবে। আর যদি বর্তমান ধারায় চলতে থাকে, তাহলে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটাই বড়জোর কপালে জুটতে পারে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, পর্যটন, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে ঝাঁপিয়ে পড়ুন, বিরোধী দল কী বলল, তা সারাক্ষণ মাথায় রাখার দরকার নেই। দেশ যতটুকু এগোচ্ছে সেটা যেমন মানুষ দেখতে পাচ্ছে, তেমনি দুর্বলতাগুলোও দেখতে পাচ্ছে। সুতরাং উন্নয়নে মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে তা বৃথা যাবে না। বিরোধী দল কী করেছিল, সেসব কথা বারবার উল্লেখ করার প্রয়োজন পড়বে না।
লেখক : সাংবাদিক
mohshinhabib@yahoo.com
খুবই ভালো কথা। ইতিবাচক সংবাদগুলো শুনতেও ভালো লাগে। মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা দেশবাসীকে বারবার নিশ্চিত করছেন, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। এক-দেড় বছরে জাতীয় গ্রিডে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হয়েছে। এ সরকারের সময়েই আরো দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে। আর বিদ্যুতের তথা জ্বালানি নিশ্চয়তা দেওয়া গেলে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ে সরকার মোটামুটি সন্তুষ্ট বলেই মনে হয়। দেশে এ বছর ১২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসছে বলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ১২ বিলিয়ন ডলার কিন্তু কম কথা নয়। কিন্তু এসব ইতিবাচক কথা আপাতত সত্য হলেও বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনীতির জন্য রয়েছে বড় অশনি সংকেত। বাস্তবতা হলো, বর্তমান সরকার অর্থনীতির জন্য যে পলিসি গ্রহণ করেছে, তাকে জাতীয় অর্থনীতির পরিকল্পনা না বলে বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অর্থনীতি বলাই শ্রেয়। বাংলাদেশের সরকার এত বেশি খাতে, এত পরিমাণ ভর্তুকি দিচ্ছে, যা কোনো উদার গণতান্ত্রিক এবং অপেক্ষাকৃত ভালো অর্থনৈতিক অবস্থার দেশ দেয় না। অবিশ্বাস্য সে ভর্তুকি। দু-একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি অনুমান করা যেতে পারে। যেমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার বিশাল অঙ্কের জ্বালানি ভুর্তকি দিয়ে থাকে। আবার এসব প্রতিষ্ঠান থেকেই সরকার বিদ্যুৎ ক্রয় করছে উচ্চমূল্যে। একদিকে সরকার দেশের বিশাল জনসংখ্যাকে বর্ণনা করছে জনশক্তি হিসেবে, অন্যদিকে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের খাদ্যভর্তুকি দিচ্ছে। তাহলে জনশক্তি কী কাজে লাগছে? এখন প্রশ্ন হলো, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যে ভর্তুকি দেবে সরকার, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু এই জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করার সরকারের পরিকল্পনাটা কী? অবকাঠামো উন্নয়ন অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখলেও এ উন্নয়নকে সরাসরি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অংশ বলা যায় না। সুতরাং অবকাঠামো উন্নয়নের কথা বাদ দিলে সরকারের বর্তমান নেওয়া এমন কোনো পরিকল্পনা আছে কি, যার ফল ১০ বা ২০ বছর পর পাওয়া যাবে? তাহলে কত সময় চলবে এই ভর্তুকি এবং এভাবে সরকারের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে কবে? এসব করতে গিয়ে সরকার অস্বাভাবিকভাবে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। বাজারে ছাড়ছে নতুন টাকা। আর অবধারিতভাবে হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। অনুমেয়, জনগণকে আপাতত শান্ত রাখা এবং উন্নয়নের গল্প বলার জন্যই অর্থ মন্ত্রণালয় তথা সরকারের এ নীতি। এই বৈশিষ্ট্য দেশকে কোনোক্রমেই ভবিষ্যতের ভালো ফল এনে দিতে পারে না। বরং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ একটি ঝুঁকির দিকে এগোচ্ছে। অর্থনীতির ক খ গ না বুঝেও উপরের কথাগুলো বলার একটি বিশেষ কারণ আছে। কিছু বিষয় বুঝতে অর্থনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বর্তমান বিশ্বে আয় ও সমৃদ্ধি অর্জনের যে বৈশিষ্ট্য, সেখানে নিয়ম হলো আপনাকে সম্ভাবনাময় সব সেক্টরে হাত বাড়াতে হবে এবং কিছু কিছু সেক্টরকে অপরিহার্য করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের জন্য কমন কিছু আয়ের উৎস থাকে, যাকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই এবং অবহেলা করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা এখনকার দিনে কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। যেমন তার একটি হলো পর্যটন শিল্প। ধরুন ভারতীয় একজন ট্যুরিস্ট অস্ট্রেলিয়া বা ফ্রান্সে যাচ্ছে, আবার ওই দেশ থেকে পর্যটক ভারতে আসছে। এ ক্ষেত্রে দুটি দেশই পর্যটন আয় দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ এ খাতে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশ। এমনকি ছোট অর্থনীতির মালদ্বীপ ও নেপালের তুলনায় বাংলাদেশের পর্যটন আয় অনেক পিছিয়ে। অর্থাৎ পর্যটন থেকে বৈদেশিক আয় বাংলাদেশের নেই বললেই চলে। অথচ রেমিট্যান্স বদৌলতে গার্মেন্ট শিল্প-জাহাজ শিল্পের শ্রমে দেশে যে অর্থ প্রবেশ করছে, তারই একটি বড় অংশ এ দেশ থেকে বের হয়ে যাচ্ছে স্থানীয় জনগণের বিদেশ ভ্রমণের ভেতর দিয়ে। এ শিল্পকে শক্তিশালী করে তুললে দেশ একটি দীর্ঘমেয়াদি আয়ের উৎস খুঁজে পেত। পর্যটনকে আকর্ষণীয় করতে সুন্দরবনকে একটি ভোট দেওয়া ছাড়া আর কী করা হয়েছে? দীর্ঘমেয়াদি কী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এ শিল্পকে আকর্ষণীয় করতে? বর্তমান বিশ্বে প্রতিটি সেবাখাতের সঙ্গে অর্থনীতির একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যেমন স্বাস্থ্য খাত। শুধু স্বাস্থ্যসেবার মান না থাকায় এবং এ সেবা সুনিশ্চিত না হওয়ায় প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ভারত, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ডে যে পরিমাণ অর্থ বের হয়ে যাচ্ছে, তা অবিশ্বাস্য। প্রদর্শিত অর্থের বাইরে কালো পথে কোটি কোটি টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। এ নিয়েও তো অর্থ মন্ত্রণালয়েরই সবচেয়ে বেশি ভাবা উচিত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে অর্থ চলে যাওয়া ঠেকাতে একটি পরিকল্পনা থাকা উচিত নয়?
যেকোনো দেশের স্থানীয় বাজারও এখন আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হাত বাড়িয়ে সেখান থেকে অর্থ টেনে আনার সবচেয়ে বড় মাধ্যম এখন প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি যতটুকু আছে এবং ধীরে যতটা অগ্রসর হচ্ছে সেটাও ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। ভারতের বেঙালুরু, দিল্লী, মুম্বাই ও চেন্নাইতে যুবসমাজ ইন্টারনেট-প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোটি কোটি ডলার নিয়ে দেশে নিয়ে আসছে। অর্থনীতির পরিকল্পনায় এটিও এখন অপরিহার্য একটি বিষয়।
সর্বোপরি আইনশৃংখলা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখন যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের বড় শর্ত। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ভয়ানকভাবে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, এটি বহুল উচ্চারিত সত্য।
মোদ্দাকথা, যদি সব ইতিবাচক সংবাদের সঙ্গে উল্লেখিত খাতগুলোতে জোর দেওয়া হয় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রশমন করা যায়, তাহলে এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে যে, পৃথিবী অবাক হয়ে লাফিয়ে উপরে ওঠা শক্তিশালী অর্থনীতির একটি দেশ দেখতে পাবে। আর যদি বর্তমান ধারায় চলতে থাকে, তাহলে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটাই বড়জোর কপালে জুটতে পারে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, পর্যটন, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে ঝাঁপিয়ে পড়ুন, বিরোধী দল কী বলল, তা সারাক্ষণ মাথায় রাখার দরকার নেই। দেশ যতটুকু এগোচ্ছে সেটা যেমন মানুষ দেখতে পাচ্ছে, তেমনি দুর্বলতাগুলোও দেখতে পাচ্ছে। সুতরাং উন্নয়নে মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে তা বৃথা যাবে না। বিরোধী দল কী করেছিল, সেসব কথা বারবার উল্লেখ করার প্রয়োজন পড়বে না।
লেখক : সাংবাদিক
mohshinhabib@yahoo.com
No comments