এবিসি রেডিও-প্রথম আলো জবস ‘হতে চাই পেতে চাই’-বিদেশে এ পেশার চাহিদা ব্যাপক...

বিসি রেডিওর স্টুডিওতে প্রথম আলো জবস ‘হতে চাই পেতে চাই’ অনুষ্ঠানে গত ২৯ নভেম্বর এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মো. নাসিরউদ্দিন মুন্সী। কথা বলেছেন কথাবন্ধু ব্রতীর সঙ্গে। গ্রন্থাগার বিষয়ে পড়াশোনা এবং এ পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেনকথাবন্ধু: এ বিষয়টিকে কেন গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বলা হচ্ছে? এটি কি আসলেই বিজ্ঞান?


অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন মুন্সী: এটি অবশ্যই বিজ্ঞান। শুরুতেই এর নাম ছিল লাইব্রেরি সায়েন্স। কারণ, এখানে মানববিজ্ঞানসহ বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া হয়। এর মধ্যে হচ্ছে, ক্ল্যাসিফিকেশন প্রাকটিক্যাল এবং প্রাকটিক্যাল ক্যাটলগিন। ক্ল্যাসিফিকেশন প্রাকটিক্যাল প্রক্রিয়া বা পদ্ধতিতে মানববিজ্ঞানের যত জ্ঞান আছে, সবকিছুই এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৫৯ সালে ডিপ্লোমা কোর্স দিয়ে যাত্রা শুরু করে গ্রন্থাগার বিজ্ঞান। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে প্রিলিমিনারি এবং মাস্টার্স কোর্স খোলা হয়। ১৯৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ বিষয়টির ওপর অনার্স চালু হয়।
কথাবন্ধু: গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে পড়তে কি কোনো বিশেষ বিভাগ থাকতে হয়? কলা, বাণিজ্য বিভাগ নিয়েও কি এ বিষয়ে পড়াশোনা করা যায়?
অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন মুন্সী: এ বিষয়টি কলা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত। গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে পড়াশোনার জন্য আপনি যেকোনো বিভাগ থেকে আসতে পারেন। তবে এ জন্য খ ইউনিটের মাধ্যমেই ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আসার সুযোগ থাকে। এ ছাড়া ঘ ইউনিটের মাধ্যমে যেকোনো বিভাগের শিক্ষার্থীরা আসতে পারেন। পরীক্ষা দিয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই আপনাকে আসতে হবে।
কথাবন্ধু: বিশ্বব্যাপী এই বিষয়টির সম্ভাবনা সম্পর্কে কিছু বলুন? একজন শিক্ষার্থী কোন সম্ভাবনার আলোকে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানকে পেশা হিসেবে বেছে নেবে?
অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন মুন্সী: বাংলাদেশে এ পেশার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বিদেশেও গ্রন্থাগারগুলোর চাহিদা ব্যাপক। তাদের পাঠকের সংখ্যাও অনেক। আমাদের দেশের তুলনায় ইংল্যান্ড, জাপান এমনকি ভারতেও লাইব্রেরির সংখ্যা এবং পাঠকের সংখ্যা বেশি। তবে বাংলাদেশের পাঠকেরা খুব কৌতূহলী। তাঁরা তাঁদের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার জন্য সব সময় লাইব্রেরিতে আসেন এবং এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
কথাবন্ধু: এ বিষয়ে পেশাগত ডিপ্লোমা অর্জনের সুযোগ কি বাংলাদেশে আছে?
অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন মুন্সী: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বিষয়ে এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স আছে। সারা দেশে প্রায় ১০ থেকে ১১টি এবং ঢাকায় দুই থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ দিচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেশাজীবীদের জন্য এ বিষয়ে একটি এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স (ইভিনিং প্রোগ্রাম) আছে। এখানে যোগ্যতার মাপকাঠিতেই ফরম দেওয়া হয় এবং পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করা হয়।
শ্রোতাবন্ধু মুকুল (খুদেবার্তা থেকে): গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে পড়াশোনা করে এ বিষয়ে বাংলাদেশে সরকারি চাকরির সুযোগ কেমন?
অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন মুন্সী: সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানেই চাকরির ব্যবস্থা আছে। এর মধ্যে রয়েছে পাবলিক লাইব্রেরি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কলেজ ও মেডিকেল কলেজের লাইব্রেরি। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরেও কাজের সুযোগ রয়েছে।
কথাবন্ধু: গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে পড়ে বাংলাদেশে এর কতটুকু প্রয়োগ সম্ভব?
অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন মুন্সী: গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে পড়লে অবশ্যই ভালো গ্রন্থাগারিক হওয়া উচিত এবং ভালো গ্রন্থগারিক হওয়ার মানেই হচ্ছে তার গ্রন্থাগারটিকে সময়োপযোগী ও ব্যবহারোপযোগী করে পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া। সর্বাধুনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রয়োগ করে একজন ব্যবহারকারীকে অতি অল্প সময়ে একটি ভালো সেবা প্রদান করতে হবে। এ জন্য কাউন্সেলিং বা প্রচার প্রচারণা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।
কথাবন্ধু: বাংলাদেশে এ নিয়ে কি কোনো পেশাজীবী সংগঠন আছে?
অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন মুন্সী: বাংলাদেশের পেশাজীবীদের দুটি সংগঠন আছে। একটি হচ্ছে লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ—ল্যাব। আরেকটি হচ্ছে বেলিট। এ ছাড়া কলেজ গ্রন্থাগারিকদেরও একটি অ্যাসোশিয়েশন আছে, কলেজ লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনগুলোর মূল কাজ হচ্ছে, পেশাজীবীদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং তাদের মানোন্নয়ন করা। এ ছাড়া পেশাজীবীদের সুযোগ-সুবিধা এবং কোথায় কী ধরনের সমস্যা আছে, তা নিয়েও কথা বলা হয়।
শ্রোতাবন্ধু রেদওয়ান (খুদেবার্তা থেকে): গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য কী ধরনের সুযোগ আছে?
অধ্যাপক ড. মো. নাসিরউদ্দিন মুন্সী: অবশ্যই গবেষণার সুযোগ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাস্টার্সের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল, পিএইচডি ও ইভিনিং প্রোগ্রাম বা সান্ধ্যকালীন কর্মসূচি রয়েছে।
কথাবন্ধু: বাংলাদেশে যে সিলেবাসে গ্রন্থাগার বিজ্ঞান পড়ানো হয়, তা কি আন্তর্জাতিক মানসম্মত?
অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন মুন্সী: বাংলাদেশে যে সিলেবাস অনুসরণ করে গ্রন্থাগার বিজ্ঞান পড়ানো হয়, তা অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানসম্মত। আমরা সিলেবাস নিয়মিতভাবে দু-তিন বছর পরপর আপডেট করি। বর্তমানে যে সিলেবাসে পড়ানো হচ্ছে তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সিলেবাস দেখে, বাংলাদেশের সমসাময়িক দিক বিবেচনা করেই প্রণয়ন করা হয়েছে।
কথাবন্ধু: আর্কাইভ কি গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের বিষয়? এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলুন?
অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন মুন্সী: আর্কাইভ অবশ্যই গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের একটি বিষয়। শুধু তা-ই নয়, প্রত্যেক মানুষের আর্কাইভিং সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। আর্কাইভ হচ্ছে সেই সব দলিলপত্র, ডকুমেন্ট, যার তাৎক্ষণিক মূল্য যদি নাও থাকে কিন্তু ১০ বছর বা হাজার বছর পর ওই তথ্যটি বা ওই দলিলের মূল্য মানুষের কাছে অনেক গুণ বেশি থাকে। এ জাতীয় দলিল বা তথ্য সংরক্ষণে রাখাকেই আর্কাইভ বলা হয়।
কথাবন্ধু: গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে পড়াশোনা এবং এ পেশায় আসতে আপনার দিকনির্দেশনা কী হবে?
অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন মুন্সী: গ্রন্থাগার বিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ জন্য শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও এর গুরুত্ব অনেক বেশি। আমরা ভবিষ্যতে আরও বেশি এগিয়ে থাকব। সত্যিকার অর্থে যদি পেশাগত দক্ষতা এবং এ বিষয়ে যথাযথভাবে জ্ঞান অর্জন করা যায়, তাহলে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। তার জন্য সুন্দর আগামী অপেক্ষা করছে।
গ্রন্থনা: সুদীপ দে

No comments

Powered by Blogger.