চরাচর-নিশ্চিহ্ন গয়াল
বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও একসময় দেশটি প্রাকৃতিকভাবে জীববৈচিত্র্যে খুবই সমৃদ্ধ ছিল। বাংলাদেশের আবহাওয়া বিশেষ করে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুর চাপ, ঋতুচক্র, পানি ও মাটির উপাদান বন্য প্রাণীর জীবনধারণের উপযোগী হওয়ায় বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছিল এ দেশের অরণ্য। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, ব্যাপক হারে বন উজাড়, নদীর নাব্য হ্রাস, পরিবেশদূষণ, বেপরোয়া শিকার, খাদ্যাভাব, জনসচেতনতার অভাব ইত্যাদি নানা কারণে
সেই সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের প্রধান অংশ বন্য প্রাণী আজ হুমকির মুখে। ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশের (ডাবি্লউটিবি) দেওয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ৯০৩ প্রজাতির বন্য প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫টি উভচর প্রজাতি, ১২৬টি সরীসৃপ প্রজাতি, ৬৫০টি পাখি প্রজাতি এবং ১১৩টি স্তন্যপায়ী প্রাণী প্রজাতি রয়েছে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ইতিমধ্যেই ১০ প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটেছে, ৪৩ প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে রয়েছে। যে ৪৩টি প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে রয়েছে, এর মধ্যে একটি হচ্ছে গয়াল বা বনগরু। মাত্র কয়েক দশক আগেও পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট এবং গারো পাহাড়সংলগ্ন ময়মনসিংহের বনাঞ্চলে প্রচুর গয়াল বা বনগরু ছিল। এদের বেশির ভাগই প্রাণ দিয়েছে শিকারির গুলি কিংবা তীর-ধনুকে। ক্রমাগত শিকার, পাহাড় ও বনাঞ্চল ধ্বংস করে নতুন নতুন জনবসতি গড়ে ওঠায় বাংলাদেশ আজ প্রায় গয়ালশূন্য।
আমাদের গৃহপালিত প্রাণী গরুর মতোই দেখতে গয়াল। এ জন্য এদের বনগরু বলা হয়। বিরাট আকৃতির এই প্রাণীটির ওজন হয়ে থাকে ৪০০ থেকে ৬০০ কেজি পর্যন্ত। উচ্চতা দুই-তিন মিটার। গায়ের রং কালো। বাচ্চা গয়ালের রং সামান্য বাদামি। পূর্ণবয়স্ক ও মাদি গয়ালের রং লালচে হয়ে থাকে। এদের হাঁটুর নিচ থেকে ক্ষুরা পর্যন্ত সাদা লোমে আবৃত। মনে হয়, সাদা মোজা পরানো। গয়ালের মাথার ওপরের কিছু অংশ এবং কপালেও রয়েছে সাদা লোম। কপালের দুই পাশে বিশাল দুটি শিং এদের চেহারাকে করে তুলেছে অতি ভয়ংকর। গরুর কাঁধে সাধারণত একখণ্ড উঁচু মাংসপিণ্ড থাকে, কিন্তু গয়ালের সেই মাংসপিণ্ড এত বড় যে তার অবস্থান কাঁধ থেকে পিঠের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিস্তৃত। গয়াল বছরে একবার একটি বাচ্চা দেয়। গয়াল শুধু বাংলাদেশেরই নয়, প্রকৃতিরও এক অমূল্য সম্পদ। বিশালতার দিক দিয়ে হাতির পরে যার স্থান, শক্তির দিক দিয়ে বাঘের সমতুল্য আর হিংস্রতায় কখনো কখনো চিতার চেয়েও ভয়ংকর_সেই গয়াল আজ প্রায় বিলুপ্ত। শোনা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন ও দুর্গম অরণ্যে এখনো কিছু গয়ালের অস্তিত্ব রয়েছে। সেখানেও চোরা শিকারিদের বন্দুকের নল প্রতিনিয়ত এদের তাড়া করে ফিরছে। চোরা শিকারিদের যদি এখনই নিবৃত্ত করা না যায়, তাহলে অচিরেই বাংলাদেশ থেকে গয়াল চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
আজিজুর রহমান
আমাদের গৃহপালিত প্রাণী গরুর মতোই দেখতে গয়াল। এ জন্য এদের বনগরু বলা হয়। বিরাট আকৃতির এই প্রাণীটির ওজন হয়ে থাকে ৪০০ থেকে ৬০০ কেজি পর্যন্ত। উচ্চতা দুই-তিন মিটার। গায়ের রং কালো। বাচ্চা গয়ালের রং সামান্য বাদামি। পূর্ণবয়স্ক ও মাদি গয়ালের রং লালচে হয়ে থাকে। এদের হাঁটুর নিচ থেকে ক্ষুরা পর্যন্ত সাদা লোমে আবৃত। মনে হয়, সাদা মোজা পরানো। গয়ালের মাথার ওপরের কিছু অংশ এবং কপালেও রয়েছে সাদা লোম। কপালের দুই পাশে বিশাল দুটি শিং এদের চেহারাকে করে তুলেছে অতি ভয়ংকর। গরুর কাঁধে সাধারণত একখণ্ড উঁচু মাংসপিণ্ড থাকে, কিন্তু গয়ালের সেই মাংসপিণ্ড এত বড় যে তার অবস্থান কাঁধ থেকে পিঠের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিস্তৃত। গয়াল বছরে একবার একটি বাচ্চা দেয়। গয়াল শুধু বাংলাদেশেরই নয়, প্রকৃতিরও এক অমূল্য সম্পদ। বিশালতার দিক দিয়ে হাতির পরে যার স্থান, শক্তির দিক দিয়ে বাঘের সমতুল্য আর হিংস্রতায় কখনো কখনো চিতার চেয়েও ভয়ংকর_সেই গয়াল আজ প্রায় বিলুপ্ত। শোনা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন ও দুর্গম অরণ্যে এখনো কিছু গয়ালের অস্তিত্ব রয়েছে। সেখানেও চোরা শিকারিদের বন্দুকের নল প্রতিনিয়ত এদের তাড়া করে ফিরছে। চোরা শিকারিদের যদি এখনই নিবৃত্ত করা না যায়, তাহলে অচিরেই বাংলাদেশ থেকে গয়াল চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
আজিজুর রহমান
No comments