ভোলায় সড়কের ইট সেতু ও গাছ লুটপাট

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কর্মী-সমর্থকেরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বিভিন্ন সড়কের ইট-সুরকি, সেতু ও গাছ লুটপাট করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সালে বোরহানউদ্দিনের উদয়পুর থেকে দৌলতখান উপজেলা শহর পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়। গত বছর সড়কটি মেঘনার ভাঙনের কবলে পড়ে।


নতুন করে বাঁধ নির্মাণের ফলে এ সড়কের বোরহানউদ্দিনের বড়মানিকা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাটামারা থেকে শুরু করে দৌলতখানের সৈয়দপুর ইউনিয়নের সরকারি দীঘির পাড় পর্যন্ত প্রায় নয় কিলোমিটার সড়ক বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে পড়েছে। ইতিমধ্যে বাঁধের বাইরের অংশের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। রাস্তার বাকি চার কিলোমিটার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় পড়েছে। এখানেই লুটপাটের ঘটনা ঘটছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বোরহানউদ্দিনের বড়মানিকা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড অংশে শ্রমিকেরা সড়ক খুঁড়ে খুঁঁড়ে ইটের খোয়া তুলে নৌকায় উঠাচ্ছেন। সড়কের কয়েকটি স্থানে জেলেরা জাল সেলাই করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক ব্যক্তি জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বর্তমানে যে তিন-চার কিলোমিটার সড়ক রয়েছে তার ইট-সুরকি ও সেতু ভেঙে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা সড়কের পাশে লাগানো দামি গাছও কেটে নিচ্ছেন। তাঁরা ইতিমধ্যে এ ওয়ার্ডের চারটি সেতু ভেঙে বিক্রি করে ফেলেছেন। এখনো চার-পাঁচটি সেতু আছে। সেগুলোও ভাঙার পাঁয়তারা করছে। রাস্তার ইটের খোয়াগুলো তুলে নৌকাযোগে নিয়ে হাকিমউদ্দিন-মির্জাকালু এলাকায় ১৪ টাকা ফুট দরে ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করছেন। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ এ কাজে জড়িত। এক পক্ষে নেতৃত্ব দেন মধ্য বাটামারার আবু ইউসুফ অন্য পক্ষে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম। সড়কটি বাঁধের বাইরে পড়ায় কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই।
ইউপি সদস্য (৫ নম্বর ওয়ার্ড) জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে যে সড়কটুকু বাঁধের বাইরে গেছে তা এখনো অক্ষত আছে। তবে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সড়ক ও সেতু সব লোপাট হয়ে গেছে। কীভাবে হয়েছে তা রফিক মেম্বার ভালো বলতে পারবেন।’
আবু ইউসুফ বলেন, ‘সড়কের সেতুগুলো রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে কিছু শ্রমিক অকেজো সড়ক থেকে ইটের খোয়া তুলে বিক্রি করছেন। এলাকার ছেলেপেলেকে তাঁরা চা খাওয়ার জন্য কিছু টাকা দিয়েছেন। এতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সামাজিক বনায়ন কমিটির মাধ্যমে সড়কের দুই পাশে গাছ লাগানো হয়েছে। ওই কমিটির সভাপতি আমার ছেলে মামুন। সেই ক্ষমতা বলে মামুন তিনটি মেহগনিগাছ কেটেছে, এটা অন্যায় নয়।’
ভোলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী প্রভাষ চন্দ্র বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাঁধের বাইরে পড়া সড়কের বেশ কিছু অংশের ইট ও সেতু কে বা কারা তুলে নিয়ে গেছে। রাস্তার বাকি অংশে মানুষ বসবাস করছে। ইচ্ছা করলেই নিলাম ডাকা যাচ্ছে না। তার পরও দেখছি কী করা যায়।’

No comments

Powered by Blogger.