টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল-চিকিৎসক হাসপাতালের বাইরে রোগীরা কক্ষের সামনে by রফিকুল ইসলাম

নিবার সকাল পৌনে আটটা। শীত উপেক্ষা করে টঙ্গী হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও টিকিট কাউন্টারে নারী-পুরুষ ও শিশুদের ভিড়। টিকিট হাতে অনেকে উঁকি দিচ্ছে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের (আরএমও) কক্ষে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভিড় বাড়তে থাকে। সকাল আটটার আগে হাসপাতালে উপস্থিত হন আরএমও ইসমাইল হোসেন সিরাজী, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) রোকসানা পারভীন ও করণিক নাজমুল আলমসহ আরও


কয়েকজন কর্মচারী। আটটা ২৫ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছান জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া) এ কে এম নূরুজ্জামান, এরপর পৌঁছান আরেক জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) মাহবুবুর রহমান। সাড়ে ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালের সার্জারি কনসালট্যান্ট আহমেদ-উজ-জামান, ডেন্টাল সার্জন মমতাজুর রহমান, মেডিকেল অফিসার আইরিন হোসেন ও শরিফুন্নাহার কর্মস্থলে পৌঁছাননি।
এটা শুধু এক দিনের ঘটনা নয়। ১৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। সেদিনও দুপুর ১২টা পর্যন্ত আহমেদ-উজ-জামান ও আইরিন হোসেন অনুপস্থিত ছিলেন। পারভেজ হোসেন উপস্থিত থাকলেও রোগীরা তাঁর দেখা পাচ্ছিল না। জরুরি বিভাগেও কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। এ কারণে কক্ষের সামনে রোগীর ভিড় ছিল।
টঙ্গী, উত্তরখান, দক্ষিণখান, উত্তরা, তুরাগ, বিমানবন্দর থানা এবং পুবাইল, বাসন, গাছা ও হরিরামপুর ইউনিয়নের দরিদ্র মানুষের ভরসা টঙ্গী স্টেশন রোডের ৫০ শয্যার সরকারি এ হাসপাতাল। এখানে একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, সাতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, তিনজন মেডিকেল অফিসারসহ বিভিন্ন পদে ৮৩ জনের জনবল কাঠামো রয়েছে। একজন চিকিৎসকসহ চারটি পদ শূন্য।
গত শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় আহমেদ-উজ-জামানের কক্ষের সামনে কয়েকজন রোগীকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তাদের একজন টঙ্গীর ফকির মার্কেট এলাকার বাসিন্দা নাসরিন আক্তার চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে অসুস্থ ছোট ভাই নাইমকে (১২) নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। জানালেন, আগে একদিন এসেও চিকিৎকের দেখা পাননি। ভাইয়ের হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার দরকার।
চিকিৎসক না থাকায় টঙ্গীর গাজীপুরার বাসিন্দা বদিউজ্জামানকেও (১৮) ফিরে যেতে হয়। তাঁরও অস্ত্রোপচার দরকার, তবে সমস্যা ভিন্ন।
চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি সম্পর্কে ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রথম আলোকে জানান, দুজন ডাক্তার ছুটিতে আছেন। আহমেদ-উজ-জামান অসুস্থ বলে তাঁকে জানিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, আহমেদ-উজ-জামান প্রতি বৃহস্পতিবার উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করে যশোরে যান। সেখানে কুইন্স হাসপাতালে রোগী দেখেন। শনি বা রোববার কর্মস্থলে ফেরেন। ১৭ ডিসেম্বর শনিবার দুপুর পর্যন্ত তাঁকে পাওয়া যায়নি। ১৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ১১টায় গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে আহমেদ-উজ-জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অফিস সময়ের বাইরে আমি অন্য হাসপাতালে রোগী দেখি। ছুটি নিয়ে কর্মস্থলের বাইরে যাই। এতে হাসপাতালে রোগীদের সমস্যা হয় না।’
আহমেদ-উজ-জামানের বিষয়ে গাজীপুর সিভিল সার্জন সৈয়দ মো. হাবিবউল্লাহ প্রথম আলোকে জানান, আহমেদ-উজ-জামানের বিষয়টি লিখিতভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, অন্যদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

No comments

Powered by Blogger.