জেমস হারকিন-সিরিয়ার বিরোধী দলের সতর্ক হওয়া উচিত
রবিবার দিন সিরিয়ার বিভিন্ন বিরোধী দলের পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। এতে আন্দোলনকারীদের অংশগ্রহণ ছিল বিশাল। বিশেষ করে, কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় তাদের অবস্থা খুবই শক্তিশালী। তবে সম্পূর্ণ এবং সঠিক তথ্য জানার ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা দেখা দিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে সেখানকার পুলিশি শাসন। এই যে জনগণের অংশগ্রহণ, এটা কি স্বতঃস্ফূর্ত নাকি তারা বাড়ি থেকে বের হতে বাধ্য হচ্ছে_এটাও দেখার বিষয়।
হোম নগরীর প্রান্তের কথা ধরা যাক, সেখানকার মানুষের সাধারণ ধর্মঘটের প্রয়োজনীয়তা সামান্যই। সেখানকার মানুষজন সাধারণত দিনের পুরোটাই ঘরে বসে কাটায়। কয়েক সপ্তাহ আগে আমি সেখানে দুদিন কাটিয়েছিলাম। নগরীর প্রধান কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করছিলাম আমি। সেখানে থেকে অবজারভার পত্রিকা এবং নিউজউইকের জন্য খবর সংগ্রহ করছিলাম। আর্মি যখন আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তার অল্প সময়ের মধ্যে নগরীর বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সহিংসতার রূপ যে কেমন ছিল, তা বোঝা যায় শবযাত্রার ওপরও গুলি হতে দেখে। শবমিছিল থেকেও বিক্ষোভে ফেটে পড়তে দেখা গেছে সেখানে। আমি কথা বলেছিলাম কিছু সুনি্ন মতাবলম্বীর সঙ্গে। তারা অকপটে জানিয়েছে, তাদের লোকজনকে সরকারের মদদপুষ্ট লোকরা ছিনতাই করে নিয়ে যায় এবং একসময় সেসব মানুষকে মেরে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এ কাজের নায়ক হচ্ছে সরকারের প্যারামিলিটারির সদস্যরাও।
গত শুক্রবার সেখানকার মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে। মানুষের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে সেখানে সৈন্যরা গোটা হোম নগরীকে ঘিরে ফেলছে। সৈন্যরা মানুষজনকে খুন করবে। ধরে নিয়ে যাবে। বলা হয়েছে, মানুষজন যদি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যার যার ঘরে ফিরে না যায়, তাহলে তাদের চূড়ান্ত পরিণতি ভোগ করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তারা যে আতঙ্কগ্রস্ত এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সোমবার দিন আমি একজন বিরোধী নেতা মোহাম্মদের কাছে যাই। বিরোধীদলীয় এই নেতা আল-বাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিকটবর্তী আলসামস এলাকায় লুকিয়েছিলেন। তিনি নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন না। যেমন অধিকাংশ বিরোধী নেতা কিংবা বিদ্রোহীই ব্যবহার করেন না। আর মোহাম্মদের মোবাইলটি ছিল আন্দোলনে মৃত্যুবরণকারী আরেক বিরোধীদলীয় কর্মীর। একজন অনুবাদক মাধ্যমে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর কাছ থেকে জানতে চাই। আর এমনসব তথ্য সেখানে পাওয়া গেল, যা রীতিমতো ভয়ংকর। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া জবাব ছিল আশ্চর্যজনকও বটে। তাঁর মতে, মিলিটারি যে চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে এর পেছনে আরো ভয়ংকর কোনো উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে। এই আন্দোলনকারীর মন্তব্য হচ্ছে হোম ছিল অত্যন্ত ছিমছাম একটি এলাকা। এখানে সামরিক বাহিনী দখলদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ একটি পরিসংখ্যান জানিয়েছে সেখানকার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই তথ্য প্রমাণ করা সত্যিই কঠিন। বলতে পারে সিরিয়ার সরকার এদিকে সেখানে বিদেশি কোনো সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি বিদেশি কোনো পর্যটককেও সেখানে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ন্যাভি পিল্লের মতে, সেখানে সরকারের তরফ থেকে যা বলা হচ্ছে, তার অধিকাংশই মনে হয় চূড়ান্ত হুমকি। শুধু তা-ই নয়, সেখানে সামরিক বাহিনীর নির্যাতনও শুরু হয়ে গেছে।
বিরোধীদের অনেক নেতাই আবার নির্বাসনে আছেন। তারাও কিন্তু বসে নেই। তবে এটা ঠিক যে সেনাবাহিনী সেখানে হোম নগরের বিক্ষোভ দমনের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়টিই এখানে মুখ্য নয়। আর সরকার যেভাবে দমনের চিন্তা করছে, তাদেরও ভেবে দেখা দরকার যে হোমই পুরো সিরিয়া নয়। দেশের বাকি অংশের বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে। এখানকার অনেক বিরোধী দলের নেতাই বিশ্বসভায় সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন। এখন সিরিয়ায় যা চলছে, তাকে গণহত্যা না বলে বলা উচিত গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে চলেছে দেশটি। সেখানে মানুষের স্বাধীনতার জন্য একদল মানুষ লড়াই করছে। তাদের প্রতিপক্ষ সেখানকার সরকার।
এখানেও ইরাকের মতো সুনি্ন ও শিয়ার সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বের সবাই এখন চেয়ে আছে আসাদ সরকারের কর্মকাণ্ডের দিকে। তুরস্ক আবার তাদের আঞ্চলিক সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে সিরিয়া নিয়ে রাজনৈতিক খেলা খেলতে পারে। তবে সেখানকার বিরোধী দলের আশা আছে, সেখানে তাদের জয় হবে।
লেখক : সাংবাদিক
গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন
গত শুক্রবার সেখানকার মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে। মানুষের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে সেখানে সৈন্যরা গোটা হোম নগরীকে ঘিরে ফেলছে। সৈন্যরা মানুষজনকে খুন করবে। ধরে নিয়ে যাবে। বলা হয়েছে, মানুষজন যদি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যার যার ঘরে ফিরে না যায়, তাহলে তাদের চূড়ান্ত পরিণতি ভোগ করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তারা যে আতঙ্কগ্রস্ত এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সোমবার দিন আমি একজন বিরোধী নেতা মোহাম্মদের কাছে যাই। বিরোধীদলীয় এই নেতা আল-বাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিকটবর্তী আলসামস এলাকায় লুকিয়েছিলেন। তিনি নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন না। যেমন অধিকাংশ বিরোধী নেতা কিংবা বিদ্রোহীই ব্যবহার করেন না। আর মোহাম্মদের মোবাইলটি ছিল আন্দোলনে মৃত্যুবরণকারী আরেক বিরোধীদলীয় কর্মীর। একজন অনুবাদক মাধ্যমে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর কাছ থেকে জানতে চাই। আর এমনসব তথ্য সেখানে পাওয়া গেল, যা রীতিমতো ভয়ংকর। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া জবাব ছিল আশ্চর্যজনকও বটে। তাঁর মতে, মিলিটারি যে চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে এর পেছনে আরো ভয়ংকর কোনো উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে। এই আন্দোলনকারীর মন্তব্য হচ্ছে হোম ছিল অত্যন্ত ছিমছাম একটি এলাকা। এখানে সামরিক বাহিনী দখলদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ একটি পরিসংখ্যান জানিয়েছে সেখানকার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই তথ্য প্রমাণ করা সত্যিই কঠিন। বলতে পারে সিরিয়ার সরকার এদিকে সেখানে বিদেশি কোনো সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি বিদেশি কোনো পর্যটককেও সেখানে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ন্যাভি পিল্লের মতে, সেখানে সরকারের তরফ থেকে যা বলা হচ্ছে, তার অধিকাংশই মনে হয় চূড়ান্ত হুমকি। শুধু তা-ই নয়, সেখানে সামরিক বাহিনীর নির্যাতনও শুরু হয়ে গেছে।
বিরোধীদের অনেক নেতাই আবার নির্বাসনে আছেন। তারাও কিন্তু বসে নেই। তবে এটা ঠিক যে সেনাবাহিনী সেখানে হোম নগরের বিক্ষোভ দমনের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়টিই এখানে মুখ্য নয়। আর সরকার যেভাবে দমনের চিন্তা করছে, তাদেরও ভেবে দেখা দরকার যে হোমই পুরো সিরিয়া নয়। দেশের বাকি অংশের বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে। এখানকার অনেক বিরোধী দলের নেতাই বিশ্বসভায় সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন। এখন সিরিয়ায় যা চলছে, তাকে গণহত্যা না বলে বলা উচিত গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে চলেছে দেশটি। সেখানে মানুষের স্বাধীনতার জন্য একদল মানুষ লড়াই করছে। তাদের প্রতিপক্ষ সেখানকার সরকার।
এখানেও ইরাকের মতো সুনি্ন ও শিয়ার সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বের সবাই এখন চেয়ে আছে আসাদ সরকারের কর্মকাণ্ডের দিকে। তুরস্ক আবার তাদের আঞ্চলিক সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে সিরিয়া নিয়ে রাজনৈতিক খেলা খেলতে পারে। তবে সেখানকার বিরোধী দলের আশা আছে, সেখানে তাদের জয় হবে।
লেখক : সাংবাদিক
গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন
No comments