ইমিগ্রেশন বিতর্ক এবং বৈষম্য-ব্যবসা-ব্রিটেন by ফারুক যোশী
শুধু ব্রিটেন নয়, গ্রিস-ইতালিসহ সারা ইউরোপই যেন এক সংকটময় সময় পরিক্রমণ করছে এখন। এই সংকট অর্থ সংকট। এ সংকট মোকাবেলা করতেই চাকরিতে চলছে ছাঁটাই। এই ছাঁটাইয়ের কারণেই স্টাফ সংকট এবং বোর্ডার শৈথিল্য। কারণ তারা চেয়েছিলেন যাচাই-বাছাই না করেই ইউরোপীয়দের পার করিয়ে দিয়ে ইমিগ্রেশনের লম্বা লাইন ছোট করে আনতে। সে জন্যই ইউরোপীয় পাসপোর্টধারীদের নজরদারিতেও ছিল শিথিলতা
মাত্র ক'বছর আগেও ব্রিটেনে ছিল বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের এক নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য জায়গা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিশেষত এশিয়া কিংবা আফ্রিকার দেশগুলোর প্রকৃত মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা একসময় ব্রিটেনে পড়তে আসত এবং যেভাবেই হোক তাদের অনেকেই নিজেকে অভিবাসিত করে ফেলত। সেই সুযোগে আশির দশকের শেষদিকে একসময় ব্রিটেনে আসে হাজারো ছাত্রছাত্রী এমনকি বাংলাদেশ থেকেও। মাঝখানে সে স্রোত থেমে যায়। কড়াকড়ি থাকে এবং সত্যিকার অর্থে ছাত্রছাত্রীরা ব্রিটেনে আসতে থাকে পড়াশোনার উদ্দেশ্য নিয়ে ওই সময়ে।
কিন্তু গত কয়েক বছরে যেন ব্রিটেনের দ্বার খুলে যায়। ছাত্ররা আসতে থাকে। অছাত্র আসে ছাত্রের নাম নিয়ে। ছাত্রের কোনো যোগ্যতা ছাড়াই অসংখ্য ছাত্রছাত্রী এখন লন্ডন-বার্মিংহাম-ম্যানচেস্টার বিশেষত সংখ্যালঘিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর এলাকাতে দেখা যায়। এসব এলাকায় গজিয়ে উঠেছিল শত-সহস্র কলেজ। বাঙালি-পাকিস্তানি সামান্য টাকাওয়ালারাও কলেজ ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করে। কলেজে কলেজে সয়লাব হয়ে যায় এসব এলাকা। একটা বড় ধরনের লাভজনক ব্যবসা হিসেবে এ কলেজগুলো গজিয়ে ওঠে। আবাসিক এলাকা, ব্যবসায়িক এলাকা_ কোনো বাছবিছার ছাড়াই এ কলেজগুলো সাইনবোর্ড টানায়। যে যেভাবে পারে অর্থ কামায়। ব্রিটেন একটি উন্নত সমাজব্যবস্থা হিসেবে খ্যাত। ব্রিটেনের স্কুল-কলেজগুলোর সুনাম বিশ্বব্যাপী। অথচ ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে গজিয়ে উঠেছে এসব কলেজ। অভ্যন্তরীণ শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো এক কূটচালে হয়তো, নিশ্চিত করে বলা যায় বিদেশি ছাত্রছাত্রী দ্বারা একটি বড় ধরনের ফান্ড গঠনের প্রয়োজনেই ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেয়। মূলধারার কলেজগুলোর বাইরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠে কলেজ। শাড়ি, গ্রসারি ও ফার্মেসির উপরে; ওয়ার হাউসের পাশের কয়েকটি কক্ষ নিয়ে কিংবা কোনো আবাসিক এলাকায় হয়তো তিন-চার কক্ষের একটি দালান। এখানে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে সুন্দর বাহারি নামের। সত্যিকার অর্থে যেসব ছাত্রছাত্রী পড়তে এসেছিল, তারা ধাক্কা খায়। কোথায় ক্লাসরুম, কোথায় শিক্ষা উপকরণ, কে-ইবা তাদের শিক্ষক! একজন শিক্ষক হয়তো বাংলা কিংবা উর্দু বলতে পারেন; ভালো ইংরেজিও জানেন না। তিনি এই কলেজের শিক্ষক। কী তার যোগ্যতা? ছাত্রছাত্রীদের হাসাহাসিতে তা-ই প্রমাণিত হয়। যদিও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে মূলধারার দু'একজন শিক্ষককে এসব কলেজে খণ্ডকালীন হিসেবে রাখা হতো। এখনও আছে। খুব স্বাভাবিকভাবে এমনি হাজার হাজার কলেজ গড়ে ওঠে। ব্যবসায়ীরা খুব কম সময়েই অর্থবিত্তের মালিক হয়ে যান। ব্রিটেনের অর্থনীতিতে একটা বড় অঙ্কের অবদান রাখে এই কলেজগুলোতে আসা বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী কিংবা কথিত শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু ব্রিটেন বলে কথা। খুব বেশি দিন এসব চলতে দেওয়া যায় না। তাই তো শুরু হয় অভিযান। কলেজগুলোর দুর্নীতি ধরা পড়তে থাকে। কয়েক মাসের মধ্যে সহস্রাধিক কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ক্রমেই কলেজগুলোতে ইউকে বোর্ডার এজেন্সির লোকজন মনিটরিং শুরু করে। একটি-দুটি করে প্রতিনিয়তই বন্ধ করে দেওয়া হতে থাকে কলেজ। ছাত্ররা পড়ে যায় দুর্বিপাকে। নতুন আইনের খৰ নামে ছাত্রছাত্রীদের ওপর। এখন তারা আর কাজ করতে পারবে না। ১৮ ঘণ্টা, ১৬ ঘণ্টা, ১০ ঘণ্টা করে এখন কলেজ লেভেল এমনকি গ্র্যাজুয়েট লেভেলের ছাত্রছাত্রীদেরও কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে। এখন ওই ছাত্রছাত্রীরা থাকবে কোথায়, খাবে কী? ব্রিটেনে বৈধভাবে টিকে থাকার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কলেজে অ্যাডমিশন প্রয়োজন। ভর্তির জন্য প্রয়োজন অর্থ। সে অর্থের উৎস আর খোলা নেই। এর ওপর গত সপ্তাহে ৪৭৪টি কলেজের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। কালো তালিকাভুক্ত এই কলেজগুলোর সঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবেই কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীর টিকে থাকার প্রশ্ন জড়িত। এই হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর আর্থিক সংকট আরও বৃদ্ধি পেল। মানসিকভাবে এরা এখন বিপর্যস্ত। বন্ধ-খোলার মাঝ দিয়ে এই লাইসেন্সবিহীন কলেজগুলোও হাতিয়ে নিলো ছাত্রছাত্রীদের লাখ লাখ পাউন্ড। কারণ সবার টিউশন ফিস ইতিমধ্যে তারা তাদের করায়ত্ত করেছে। উল্লেখ্য, এই ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ বাংলাদেশের।
২. কিছু দিন আগে ইমিগ্রেশন বিতর্ক নিয়ে এক তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেল, যার রেশ এখনও শেষ হওয়ার নয়। ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা শিথিল করা সংক্রান্ত একটি পরীক্ষামূলক স্কিমের আওতায় গত গ্রীষ্মকালে ইউরোপীয় দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ ঢুকে পড়েছে ব্রিটেনে। এর প্রধান কারণই হলো, পাসপোর্ট পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শনের অনুমোদন দিয়েছিলেন হোম সেক্রেটারি তেরেসা মা এবং যা কি-না কার্যকর করেছিলেন ইউকে বোর্ডার এজেন্সির চিফ এক্সিকিউটিভ ব্রডি ক্লার্ক। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে উঠলে এর বলি হলেন ক্লার্ক। ১৩৫ হাজার পাউন্ডের বাৎসরিক বেতনের চাকরি তাকে খোয়াতে হয়। সঙ্গে আরও দু'জন। যদিও এ নিয়ে তিনি উচ্চ আদালতে বিচারপ্রার্থী হচ্ছেন; এমনকি বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী দল লেবার পার্টি কঠোর সমালোচনা করছে এবং ক্রমেই যেন হোম সেক্রেটারির পদত্যাগ দাবিটিও জোরালো হচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তেরেসা মের পক্ষ নিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, পরীক্ষামূলক স্কিমে এটা হতেই পারে।
৩. এভাবে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সরকার বিশেষত তার নতুন ইমিগ্রেশন ইস্যু নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থার মধ্যেই আছে। শুধু ব্রিটেন নয়, গ্রিস-ইতালিসহ সারা ইউরোপই যেন এক সংকটময় সময় পরিক্রমণ করছে এখন। এই সংকট অর্থ সংকট। এ সংকট মোকাবেলা করতেই চাকরিতে চলছে ছাঁটাই। এই ছাঁটাইয়ের কারণেই স্টাফ সংকট এবং বোর্ডার শৈথিল্য। কারণ তারা চেয়েছিলেন যাচাই-বাছাই না করেই ইউরোপীয়দের পার করিয়ে দিয়ে ইমিগ্রেশনের লম্বা লাইন ছোট করে আনতে। সে জন্যই ইউরোপীয় পাসপোর্টধারীদের নজরদারিতেও ছিল শিথিলতা। ঠিক সেভাবেই হয়তো একটা বড় অঙ্কের অর্থ ব্রিটেনে প্রবেশ করানোর কারণেই শিক্ষা নিয়েও অতীতে চলেছে এ রকম বাণিজ্য। এখন এসব ছাত্রছাত্রীর প্রয়োজন নেই। তাই ওদের বের হতেই হবে। তাই তো এরা ফিরে যাচ্ছে নিজ নিজ দেশে কিংবা ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে। এসব করতে গিয়ে যদিও সরকার প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে, কিন্তু পাশাপাশি বেরিয়ে আসছে সরকারেরই এক ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ। ইউরোপীয় কমিউনিটির জন্য শৈথিল্য আবার এশিয়ান কমিউনিটি কিংবা আফ্রিকান দেশের মানুষের জন্য কড়াকড়ি; তাও আবার যুক্তরাজ্যের মতো বহু সংস্কৃতির দেশে কি মানায়_ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এ প্রসঙ্গে এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ভিন্ন এক প্রসঙ্গ। এ দেশে স্থায়ী হওয়ার একটি প্রধান শর্ত হলো সিটিজেনশিপ পরীক্ষা দেওয়া। এ দেশের রাজনীতি-সংস্কৃতির ধারণাসহ ইংরেজি জানার নূ্যনতম একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে পাস করতে হয় একটি পরীক্ষা। তারপরই করা যায় স্থায়ী হওয়ার আবেদন। সে ক্ষেত্রেও সেই একই বৈষম্য। ইউরোপীয় প্রায় সব ক'টি দেশেরই ভাষা ভিন্ন, এমনকি সংস্কৃতিও ভিন্ন। কিন্তু ওই দেশগুলোর জন্য এই টেস্ট কিংবা পরীক্ষায় পাসের কোনো নিয়মনীতি নেই। সুতরাং এখানেও স্বাভাবিকভাবেই আসতে পারে সেই একই অভিযোগ কিংবা অনুযোগ।
ফারুক যোশী :কলাম লেখক
faruk.joshi@gmail.com
কিন্তু গত কয়েক বছরে যেন ব্রিটেনের দ্বার খুলে যায়। ছাত্ররা আসতে থাকে। অছাত্র আসে ছাত্রের নাম নিয়ে। ছাত্রের কোনো যোগ্যতা ছাড়াই অসংখ্য ছাত্রছাত্রী এখন লন্ডন-বার্মিংহাম-ম্যানচেস্টার বিশেষত সংখ্যালঘিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর এলাকাতে দেখা যায়। এসব এলাকায় গজিয়ে উঠেছিল শত-সহস্র কলেজ। বাঙালি-পাকিস্তানি সামান্য টাকাওয়ালারাও কলেজ ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করে। কলেজে কলেজে সয়লাব হয়ে যায় এসব এলাকা। একটা বড় ধরনের লাভজনক ব্যবসা হিসেবে এ কলেজগুলো গজিয়ে ওঠে। আবাসিক এলাকা, ব্যবসায়িক এলাকা_ কোনো বাছবিছার ছাড়াই এ কলেজগুলো সাইনবোর্ড টানায়। যে যেভাবে পারে অর্থ কামায়। ব্রিটেন একটি উন্নত সমাজব্যবস্থা হিসেবে খ্যাত। ব্রিটেনের স্কুল-কলেজগুলোর সুনাম বিশ্বব্যাপী। অথচ ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে গজিয়ে উঠেছে এসব কলেজ। অভ্যন্তরীণ শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো এক কূটচালে হয়তো, নিশ্চিত করে বলা যায় বিদেশি ছাত্রছাত্রী দ্বারা একটি বড় ধরনের ফান্ড গঠনের প্রয়োজনেই ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেয়। মূলধারার কলেজগুলোর বাইরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠে কলেজ। শাড়ি, গ্রসারি ও ফার্মেসির উপরে; ওয়ার হাউসের পাশের কয়েকটি কক্ষ নিয়ে কিংবা কোনো আবাসিক এলাকায় হয়তো তিন-চার কক্ষের একটি দালান। এখানে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে সুন্দর বাহারি নামের। সত্যিকার অর্থে যেসব ছাত্রছাত্রী পড়তে এসেছিল, তারা ধাক্কা খায়। কোথায় ক্লাসরুম, কোথায় শিক্ষা উপকরণ, কে-ইবা তাদের শিক্ষক! একজন শিক্ষক হয়তো বাংলা কিংবা উর্দু বলতে পারেন; ভালো ইংরেজিও জানেন না। তিনি এই কলেজের শিক্ষক। কী তার যোগ্যতা? ছাত্রছাত্রীদের হাসাহাসিতে তা-ই প্রমাণিত হয়। যদিও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে মূলধারার দু'একজন শিক্ষককে এসব কলেজে খণ্ডকালীন হিসেবে রাখা হতো। এখনও আছে। খুব স্বাভাবিকভাবে এমনি হাজার হাজার কলেজ গড়ে ওঠে। ব্যবসায়ীরা খুব কম সময়েই অর্থবিত্তের মালিক হয়ে যান। ব্রিটেনের অর্থনীতিতে একটা বড় অঙ্কের অবদান রাখে এই কলেজগুলোতে আসা বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী কিংবা কথিত শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু ব্রিটেন বলে কথা। খুব বেশি দিন এসব চলতে দেওয়া যায় না। তাই তো শুরু হয় অভিযান। কলেজগুলোর দুর্নীতি ধরা পড়তে থাকে। কয়েক মাসের মধ্যে সহস্রাধিক কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ক্রমেই কলেজগুলোতে ইউকে বোর্ডার এজেন্সির লোকজন মনিটরিং শুরু করে। একটি-দুটি করে প্রতিনিয়তই বন্ধ করে দেওয়া হতে থাকে কলেজ। ছাত্ররা পড়ে যায় দুর্বিপাকে। নতুন আইনের খৰ নামে ছাত্রছাত্রীদের ওপর। এখন তারা আর কাজ করতে পারবে না। ১৮ ঘণ্টা, ১৬ ঘণ্টা, ১০ ঘণ্টা করে এখন কলেজ লেভেল এমনকি গ্র্যাজুয়েট লেভেলের ছাত্রছাত্রীদেরও কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে। এখন ওই ছাত্রছাত্রীরা থাকবে কোথায়, খাবে কী? ব্রিটেনে বৈধভাবে টিকে থাকার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কলেজে অ্যাডমিশন প্রয়োজন। ভর্তির জন্য প্রয়োজন অর্থ। সে অর্থের উৎস আর খোলা নেই। এর ওপর গত সপ্তাহে ৪৭৪টি কলেজের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। কালো তালিকাভুক্ত এই কলেজগুলোর সঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবেই কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীর টিকে থাকার প্রশ্ন জড়িত। এই হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর আর্থিক সংকট আরও বৃদ্ধি পেল। মানসিকভাবে এরা এখন বিপর্যস্ত। বন্ধ-খোলার মাঝ দিয়ে এই লাইসেন্সবিহীন কলেজগুলোও হাতিয়ে নিলো ছাত্রছাত্রীদের লাখ লাখ পাউন্ড। কারণ সবার টিউশন ফিস ইতিমধ্যে তারা তাদের করায়ত্ত করেছে। উল্লেখ্য, এই ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ বাংলাদেশের।
২. কিছু দিন আগে ইমিগ্রেশন বিতর্ক নিয়ে এক তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেল, যার রেশ এখনও শেষ হওয়ার নয়। ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা শিথিল করা সংক্রান্ত একটি পরীক্ষামূলক স্কিমের আওতায় গত গ্রীষ্মকালে ইউরোপীয় দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ ঢুকে পড়েছে ব্রিটেনে। এর প্রধান কারণই হলো, পাসপোর্ট পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শনের অনুমোদন দিয়েছিলেন হোম সেক্রেটারি তেরেসা মা এবং যা কি-না কার্যকর করেছিলেন ইউকে বোর্ডার এজেন্সির চিফ এক্সিকিউটিভ ব্রডি ক্লার্ক। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে উঠলে এর বলি হলেন ক্লার্ক। ১৩৫ হাজার পাউন্ডের বাৎসরিক বেতনের চাকরি তাকে খোয়াতে হয়। সঙ্গে আরও দু'জন। যদিও এ নিয়ে তিনি উচ্চ আদালতে বিচারপ্রার্থী হচ্ছেন; এমনকি বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী দল লেবার পার্টি কঠোর সমালোচনা করছে এবং ক্রমেই যেন হোম সেক্রেটারির পদত্যাগ দাবিটিও জোরালো হচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তেরেসা মের পক্ষ নিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, পরীক্ষামূলক স্কিমে এটা হতেই পারে।
৩. এভাবে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সরকার বিশেষত তার নতুন ইমিগ্রেশন ইস্যু নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থার মধ্যেই আছে। শুধু ব্রিটেন নয়, গ্রিস-ইতালিসহ সারা ইউরোপই যেন এক সংকটময় সময় পরিক্রমণ করছে এখন। এই সংকট অর্থ সংকট। এ সংকট মোকাবেলা করতেই চাকরিতে চলছে ছাঁটাই। এই ছাঁটাইয়ের কারণেই স্টাফ সংকট এবং বোর্ডার শৈথিল্য। কারণ তারা চেয়েছিলেন যাচাই-বাছাই না করেই ইউরোপীয়দের পার করিয়ে দিয়ে ইমিগ্রেশনের লম্বা লাইন ছোট করে আনতে। সে জন্যই ইউরোপীয় পাসপোর্টধারীদের নজরদারিতেও ছিল শিথিলতা। ঠিক সেভাবেই হয়তো একটা বড় অঙ্কের অর্থ ব্রিটেনে প্রবেশ করানোর কারণেই শিক্ষা নিয়েও অতীতে চলেছে এ রকম বাণিজ্য। এখন এসব ছাত্রছাত্রীর প্রয়োজন নেই। তাই ওদের বের হতেই হবে। তাই তো এরা ফিরে যাচ্ছে নিজ নিজ দেশে কিংবা ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে। এসব করতে গিয়ে যদিও সরকার প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে, কিন্তু পাশাপাশি বেরিয়ে আসছে সরকারেরই এক ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ। ইউরোপীয় কমিউনিটির জন্য শৈথিল্য আবার এশিয়ান কমিউনিটি কিংবা আফ্রিকান দেশের মানুষের জন্য কড়াকড়ি; তাও আবার যুক্তরাজ্যের মতো বহু সংস্কৃতির দেশে কি মানায়_ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এ প্রসঙ্গে এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ভিন্ন এক প্রসঙ্গ। এ দেশে স্থায়ী হওয়ার একটি প্রধান শর্ত হলো সিটিজেনশিপ পরীক্ষা দেওয়া। এ দেশের রাজনীতি-সংস্কৃতির ধারণাসহ ইংরেজি জানার নূ্যনতম একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে পাস করতে হয় একটি পরীক্ষা। তারপরই করা যায় স্থায়ী হওয়ার আবেদন। সে ক্ষেত্রেও সেই একই বৈষম্য। ইউরোপীয় প্রায় সব ক'টি দেশেরই ভাষা ভিন্ন, এমনকি সংস্কৃতিও ভিন্ন। কিন্তু ওই দেশগুলোর জন্য এই টেস্ট কিংবা পরীক্ষায় পাসের কোনো নিয়মনীতি নেই। সুতরাং এখানেও স্বাভাবিকভাবেই আসতে পারে সেই একই অভিযোগ কিংবা অনুযোগ।
ফারুক যোশী :কলাম লেখক
faruk.joshi@gmail.com
No comments