তেল গ্যাস বিদ্যুৎ_দাম বাড়ছে সবার মুক্তি পেতে পায়ে ধরে 'কেউ না' এক বাবার by রোহিত হাসান কিছলু

ফুর উদ্দিন সাহেবের মনে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। উত্তেজনার চোটে গফুর উদ্দিন সাহেব তার লুঙ্গির টাইট করে বাঁধা গিট্টুই বারবার খুলে ঢিলা করে তা আবার টাইট করছেন! এটা গফুর উদ্দিন সাহেবের একটা মুদ্রাদোষ। অনেকে মুদ্রাদোষে মাথার চুল টানে, আবার অনেকে দাঁতে নখ খোঁটে! কিন্তু গফুর উদ্দিন সাহেবের মুদ্রাদোষ সম্পূর্ণ আলাদা! তিনি উত্তেজনায় বারবার লুঙ্গির গিট্টু ঢিলা করে তা আবার কষে বাঁধেন!


গফুর উদ্দিন সাহেবের উত্তেজনার কারণ তার সামনে 'কেউ না' বাবা বসে আছেন। এই 'কেউ না' বাবাকে গফুর উদ্দিন সাহেব আজ সকালে তাদের গলির মোড়ে আবিষ্কার করেছেন। এরপর থেকেই তিনি তাকে বাসায় এনে আপ্যায়ন করা শুরু করে দিয়েছেন। ঘটনাটা এ রকম, সকালে যখন গফুর উদ্দিন সাহেব বাজারে যাচ্ছিলেন তখন তার সামনে এক ব্যক্তি টারজানের পোশাকপরা অবস্থায় এসে লম্ফঝম্ফ করতে থাকেন। চমকে গফুর উদ্দিন সাহেব বললেন, 'আপনি কে জনাব?' লোকটা লাফাতে লাফাতে বললেন, 'আমি কেউ না!' গফুর উদ্দিন বললেন, 'তা আপনি কোথা থেকে এসেছেন?' লোকটা এবার জবাব না দিয়ে একটা হাত ওপরের দিকে তুলে দেখালেন। সঙ্গে সঙ্গে গফুর উদ্দিন সাহেব বাবা বলে তার পায়ে পড়ে গেলেন। সেই টারজানের পোশাকপরা লোকটাই গফুর উদ্দিন সাহেবের 'কেউ না' বাবা! গফুর উদ্দিন সাহেবের ধারণা, এই 'কেউ না' বাবা ওপর থেকে এসেছেন। তাই তো কোথায় থাকেন বলতেই ওপরের দিকে আঙুল তুলে দেখালেন। এই বাবা সাধারণ মানুষ না! এর কাছেই তাই সব মুশকিলের আসান পাওয়া যাবে।
গফুর উদ্দিন সাহেব 'কেউ না' বাবার সামনে প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বললেন, 'বাবা, বাঁচান! এই দেশে তো আর টিকতে পারছি না। বাসা থেকে রাস্তায় বের হলেই জ্যাম আর জ্যাম! এই জ্যাম থেকে আমাদের বাঁচান বাবা! এর থেকে মুক্তির উপায় বলেন।' কেউ না বাবা কতক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে বললেন, 'জ্যাম নিয়ে এত টেনশনের কী আছে! সব জ্যাম পাউরুটি মাখিয়ে খেয়ে ফেললেই হয়!' কেউ না বাবার জবাব শুনে গফুর উদ্দিন সাহেব মনে মনে একটু আহত হলেন। এটা আবার কেমন জবাব! গফুর উদ্দিন সাহেব বলছেন একটা আর তিনি জবাব দিচ্ছেন আরেকটা! গফুর উদ্দিন ভাবলেন, এমনও হতে পারে বাবা তো সাধারণ মানুষ না! অনেক উঁচু লেভেলের মানুষ! তাই যা বলছেন সবকিছু উঁচু দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে! গফুর উদ্দিনের মতো নাদান তা ধরতে পারবে কেন! গফুর উদ্দিন তাই দ্বিগুণ উৎসাহের সঙ্গে 'কেউ না' বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'বাবা, এই দেশে দ্রব্যমূল্য তো দিন দিন ওপরের দিকে উঠছেই! আমরা তো এর নাগাল পাচ্ছি না! দ্রব্যমূল্যের নাগাল পেতে হলে কী করব বাবা?' কেউ না বাবা আয়েশ করে বসে পায়ের ওপর পা তুলে বললেন, 'আরে, দ্রব্যমূল্য ওপরের দিকে উঠে গেলে তোরা বসে আছিস কেন! তোরাও ওপরের দিকে উঠে যা! তাহলেই তো নাগাল পাবি!' গফুর উদ্দিন সাহেব অবাক হয়ে বললেন, 'বাবা, দ্রব্যমূল্যের ওপরে কী করে উঠব!' কেউ না বাবা এবার জবাব দিলেন, 'ওরে গাধা, ওপরে কী করে উঠবি এটাও আমাকে বলে দিতে হবে! একটা পেল্গন দিয়ে ডাইরেক্ট ওপরে উঠে যাবি! ভেরি সিম্পল ব্যাপার!' কেউ না বাবার কথা শুনে গফুর উদ্দিন সাহেব বেশ বড়সড় একটা টাশকি খেলেন। বাবা দেখি সব কথাই বেলাইনে বলছেন!
গফুর উদ্দিন সাহেব হাল ছাড়লেন না! চরম উত্তেজনায় তার লুঙ্গির গিট্টুখানা ঢিলা করে তা আবার টাইট করে বাঁধতে বাঁধতে বললেন, 'কেউ না বাবা, জ্বালানি তেলের দাম আবার বেড়েছে! অথচ অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, সিএনজির দাম বাড়বে। কিন্তু বাড়ল তেলের দাম! দেশ যারা চালাচ্ছেন তারা এরকম উল্টাপাল্টা কথা বলছেন কেন! তাদের সমস্যা কোথায়!' কেউ না বাবা এবার একটু গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, 'দেশ তো চালাচ্ছে আমার লোকজন। কাজেই একটু উল্টাপাল্টা তো হবেই!' এবারও কেউ না বাবার জবাব গফুর উদ্দিনের মাথার ওপর দিয়ে সুড়ূত করে চলে গেল! তিনি ধরতে পারলেন না! গফুর উদ্দিন সাহেবের মন খারাপ হয়ে গেল! এই কেউ না বাবার সব কথাই তার কাছে অচেনা লাগছে! গফুর উদ্দিন মন খারাপ করে মনে মনে ভাবলেন, বাবাকে শেষ একটা প্রশ্ন করে দেখা যাক, বাবা কোনো মুশকিল আসান করে দিতে পারেন কি-না!
গফুর উদ্দিন সাহেব মন খারাপ ভাব নিয়ে বললেন, 'কেউ না বাবা, একাটা প্রশ্ন, বিরোধী দল হরতাল ডেকে বলে জনগণ হরতালে সমর্থন দিয়েছে! আবার সরকারি দল বলে জনগণ হরতাল বর্জন করেছে। তো কারা এই জনগণ? সে কেন দুই দিকেই যায়?' গফুর উদ্দিন সাহেবের এই কথায় কেউ না বাবা এবার উত্তেজিত হয়ে গেলেন! উত্তেজনায় বাবা তার পাশে থাকা বাঁশের লাঠিটা হাতে তুলে নিয়ে বললেন, 'জনগণ খুব খারাপ জিনিস! জনগণ পাইলেই আমি তারে ব্যাম্বো ডলা দিমু! কারণ জনগণ আমারে খালি ইট মারে! তুই তো নগণ্য! আজকে তোর খবর আছে! এই বলে কেউ না বাবা গফুর উদ্দিন সাহেবের দিকে অগ্রসর হতেই গফুর উদ্দিনের বাসার দরজা খুলে চার-পাঁচজন লোক প্রবেশ করল! তারা ঘরে ঢুকেই কেউ না বাবাকে বেঁধে নিয়ে যেতে থাকল! গফুর উদ্দিন বেশ বিস্মিত হয়ে বললেন, 'আপনারা কেউ না বাবাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?' সেই চার-পাঁচজনের মধ্য থেকে একজন জবাব দিল, 'আরে এটা একটা সিরিয়াস পাগল। গতকাল পাগলা গারদের দেয়াল টপকে পালিয়ে এসেছে। আমরা আবার তাকে পাগলা গারদে নিয়ে যাচ্ছি।'
গফুর উদ্দিন সাহেবের মনে আবার চরম উত্তেজনা এসে ভর করল! তিনি তার লুঙ্গির টাইট গিট্টু ঢিলা করে তা আবার টাইট করে বাঁধতে লাগলেন! তিনি ভাবতে লাগলেন, 'এতক্ষণ কি তাহলে তিনি একটা পাগলের সঙ্গে কথা বলছিলেন!' গফুর উদ্দিন সাহেব আবিষ্কার করলেন, এ দেশের সব মানুষের অবস্থা আসলে তার মতো! সবাই মানুষ চিনতে ভুল করে! আর তাই যারতার হাতে আমরা ক্ষমতা তুলে দিই!
গফুর উদ্দিন সাহেবের দ্বিতীয় আবিষ্কার হলো, কেউ না বাবার সব কথা ছিল উল্টাপাল্টা আর আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই কথাও উল্টাপাল্টা! তাহলে ওই কেউ না বাবার কথাই ঠিক! দেশটা কেউ না বাবার মতো লোকেরাই চালাচ্ছে! বিরাট চিন্তার বিষয়!
হঠাৎ পাশ থেকে গফুর উদ্দিন সাহেবের স্ত্রী বলে উঠলেন, 'একা একা কী বিড় বিড় করছ! পাগল হলে নাকি! গফুর উদ্দিন সাহেব তার লুঙ্গির গিট্টু ঢিলা করে তা আবার টাইট করে বাঁধতে বাঁধতে বললেন, 'এই পাগলের দেশে পাগল হলে ক্ষতি কী!'
ই-মেইল : ৎড়যরঃথশরংষঁ@ুধযড়ড়.পড়স

No comments

Powered by Blogger.