বিলবোর্ড-মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে
বিজ্ঞাপনে মুখ ঢেকে যাওয়ার কথা বলে কবি তার অস্বস্তি জানালেও বিজ্ঞাপনকে অনিবার্য বলেই মেনে নিয়েছে বাজারশাসিত সময়। বাণিজ্যে লক্ষ্মীর বসতি, আর বাণিজ্যের বসতি বিজ্ঞাপনে। পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে পারলে সে পণ্য বাজারে নেই বলেই ধরে নেওয়া হয়। প্রতিদিন রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্রে যে পণ্যের বিজ্ঞাপন যত সুলভ সে পণ্যের পসারও তত ভালো।
ফলে উৎপাদক ও বিক্রেতাদের নজর বিজ্ঞাপনের দিকে থাকে। সকলেই চায় তার পণ্যটির বিজ্ঞাপন প্রচারিত হোক, সবার নজরে পড়ূক। আর এটি করতে গিয়ে রাস্তাঘাট, ফুটপাত, ভবন সবকিছু বিজ্ঞাপনে মোড়ানো হচ্ছে। চলতি পথে বাহারি বিজ্ঞাপন থেকে নজর বাঁচিয়ে চলার উপায়ই নেই। কোথাও দৃষ্টিপথকে বাধা দিয়ে বিজ্ঞাপন তার অস্তিত্ব জাহির করছে। কেউই হয়তো চাইবেন না রাস্তাঘাট বিজ্ঞাপনমুক্ত হোক, চাইলেও সেটি বাস্তবায়ন করা কঠিন। কিন্তু তাই বলে বিজ্ঞাপনের দাপটে পথচলাতেই বাধা পড়বে তা কি মানা যায়? চলতি পথে অনেক সময় এমনভাবে বিলবোর্ড স্থাপন করা হয় যে, তাতে গাড়ির চালকরা পথ দেখতে পারেন না। অনেক বিজ্ঞাপন মহাসড়কে বিভ্রম তৈরি করে। তাতে দুর্ঘটনা বাড়ে, মানুষের জানমালের ক্ষতি হয়। আবার অনেক সময় রাস্তার ওপর, ভবনের ছাদে এমন নাজুক অবস্থায় বিলবোর্ড বসানো হয় যে, সে বিলবোর্ড খসে পড়ে পথচারীদের প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা দেখা দেয়। বিলবোর্ডে চাপা পড়ে রাজধানী শহরে আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এবার নোয়াখালীতে বিজ্ঞাপনের দাপুটে বিস্তৃতির খবর মিলল। সেখানে রীতিমতো বিজ্ঞাপনের দৌরাত্ম্য চলছে। রাস্তায়, মোড়ে, চৌরাস্তায় বিপজ্জনকভাবে বিলবোর্ড স্থাপন করে রাস্তাকে রীতিমতো আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে সেখানে। ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। প্রশ্ন হলো, এভাবে পথচারীদের অসুবিধা সৃষ্টি করে বিলবোর্ড স্থাপন কি আইন সমর্থিত? তা নয়। কিন্তু বিজ্ঞাপনের দৌরাত্ম্য কমাতে আইনি উদ্যোগের স্বল্পতা আছে। তাই এলাকাবাসী অযাচিত বিজ্ঞাপনের অপসারণ চান। যথাস্থানে অল্প বিজ্ঞাপনই শ্রেয় কিন্তু সর্বত্র সকলের অসুবিধা সৃষ্টি করে বেশি বিজ্ঞাপন ক্ষতিকর। এ বিষয়টি মাথায় রেখে বিলবোর্ড কমানোর উদ্যোগ নিলে তা মঙ্গলজনক বলেই বিবেচিত হবে।
No comments