'সাংবাদিকদের এত মাথাব্যথা কেন?'
রাজশাহীর তানোরের কলমা ইউনিয়নের দরগাডাঙ্গা হাটের শতাধিক ব্যবসায়ীকে কৌশলে উচ্ছেদ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অবৈধভাবে ওই জায়গা দখল করে ৫৪টি দোকানঘরের নির্মাণকাজ শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে দোকানঘর বরাদ্দের নামে তাঁরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। উচ্ছেদ নোটিশ অমান্য করে দোকানঘর নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ বলেন, 'সাংবাদিকদের এত মাথাব্যথা কেন?' আবার কেউ বলেন, 'সাংবাদিকদের মাথা না ঘামানোই ভালো।'
গত ১৫ অক্টোবর এ বিষয়ে কালের কণ্ঠে 'তানোরের দরগাডাঙ্গা হাটে অবৈধ মার্কেট : আওয়ামী লীগের নেতারাই দখলবাজির হোতা' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবর প্রকাশের পর অবৈধভাবে দোকানঘর নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে তানোরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্বাক্ষরিত উচ্ছেদ নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশ পাওয়ার পর মাস খানেক মার্কেটের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকে। কিন্তু ভূমি অফিসের জারি করা উচ্ছেদ নোটিশ অমান্য করে আবারও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু করেছেন।
দরগাডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান জানান, 'হাটের পাশ দিয়ে স্কুলে যাওয়ার রাস্তা রয়েছে। মার্কেট নির্মাণের সময় রফিকুল মেম্বারকে অনুরোধ করেছিলাম ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যাওয়ার রাস্তার কিছু দূর থেকে মার্কেট নির্মাণ করতে। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি।' এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল মেম্বার বলেন, 'ভূমি অফিস থেকে উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েছে। আমরাও আবেদন করেছি সরকারি নিয়ম মাফিক মার্কেট নির্মাণের জন্য। তারা অনুমতি না দিলে আমরা কি লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে মার্কেট নির্মাণের কাজ ফেলে রেখে বসে থাকব? সাংবাদিকদের এত মাথাব্যথা কিসের?'
কলমা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও দরগাডাঙ্গা হাট কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, 'উপজেলার অনেক স্থানে এভাবে মার্কেট নির্মিত হয়েছে। আমরাও করছি। মার্কেটের বিষয়ে সাংবাদিকদের মাথা না ঘামানোই ভালো।' তানোর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মুণ্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী বলেন, 'দরগাডাঙ্গা হাটের মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। ওখানকার বড় বড় নেতা আছেন। তাঁরা হয়তো বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন।'
তানোরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমিও খবর পেয়েছি, উচ্ছেদ নোটিশ অমান্য করে বেআইনিভাবে দরগাডাঙ্গা হাটের সরকারি জায়গায় স্থানীয় নেতারা আবার মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। উচ্ছেদ নোটিশ দেওয়ার পর তাঁরা আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসকের অনুমতি সাপেক্ষে সরকারি সম্পত্তি লিজ না নিয়ে কেউ কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারে না। আবেদনগুলো জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠাতে পারিনি। তার পরও তাঁরা জোর করে সেখানে স্থাপনা গড়ে তুলছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ট্রেনিংয়ে আছেন। তিনি এলে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
No comments