বিশেষ সাক্ষাৎকার : শাইখ সিরাজ-কৃষির উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু কৃষকের উন্নতি হয়নি
শাইখ সিরাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং চ্যানেল আইয়ের একজন পরিচালক ও বার্তাপ্রধান। তিনি কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে মাঠপর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন, নানাভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন। দেশের কৃষি ও কৃষকের সার্বিক অবস্থা নিয়ে তিনি সম্প্রতি কথা বলেছেন কালের কণ্ঠের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু
কালের কণ্ঠ : আপনি দীর্ঘদিন ধরে কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন, গবেষণা করছেন। দেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় আমাদের কৃষির ভবিষ্যৎ কী?
কালের কণ্ঠ : আপনি দীর্ঘদিন ধরে কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন, গবেষণা করছেন। দেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় আমাদের কৃষির ভবিষ্যৎ কী?
শাইখ সিরাজ : জলবায়ুগত কারণে কৃষির ভবিষ্যৎ খুব ভালো নয়। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বর্তমান সময় অবধি কৃষির অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তবে কৃষকের উন্নয়ন হয়নি। যদি চার দশকের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যাবে, এই সময়ে ধানের উৎপাদন আড়াই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। এ উৎপাদন বৃদ্ধি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকায় ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। একদিকে দানাদার কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে, শাকসবজি জাতীয় ফসলের আবাদ হচ্ছে। কৃষক শুধু এখন আর ধান-পাট চাষের মধ্যেই কৃষিকাজ সীমাবদ্ধ রাখেননি। বাড়ির আঙিনায় মাছের চাষ করছেন, হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন, গবাদিপশু পালনের ক্ষেত্র বিস্তৃত করেছেন। আগে শুধু আমরা শীতকালের অপেক্ষা করতাম শাকসবজি পাওয়ার জন্য। এখন তা নয়, বছরব্যাপীই এসব মেলে।
কালের কণ্ঠ : এ দেশে কৃষিনির্ভর পৃথক শিল্প খাত গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে নতুন কিছু কি ভাবা যায়?
শাইখ সিরাজ : কৃষিপ্রধান একটি দেশে যেখানে এখনো প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেখানে কৃষিকে গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া ভিন্ন পথ কী? ভর্তুকি বন্ধ করতে দাতা গোষ্ঠীর চাপ আছে, এও অসত্য নয়। ভর্তুকি দিতেই হবে যদি উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে হয় কিংবা অধিকতর গতিশীল করতে হয়। ভর্তুকি না দিলে ফসল মার খাবে। সার, জ্বালানি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃষকের দুর্বল অবস্থার কারণেই ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে। উৎপাদন কমে যাওয়া মানেই খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেওয়া। আর ঘাটতি মানেই বিদেশের কাছে খাদ্য সাহায্যের জন্য হাত পাতা। অর্থ থাকলেও একদিন বাইরে থেকে খাদ্য কিনে আনা যাবে না। কারণ সবাই নিজস্ব খাদ্য বলয় সৃষ্টি করছে। জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের কারণে কেউ খাদ্য বিক্রি করতে চাইবে না। সংকট তো শুধু আমাদের একার নয়, আরো অনেকেরই দেখা দেবে। কৃষিভিত্তিক শিল্প খাত গড়ে তোলার বিষয়টি অনেক আগে থেকেই ভাবা উচিত ছিল। তা হয়নি। আমরা অনেক সময় ব্যয় করেছি, এখন আর এ ব্যাপারে কালক্ষেপণ করা একদম ঠিক হবে না। কৃষি কিংবা কৃষিসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যদি বিনিয়োগ হতো, তাহলে আমরা এর অনেক ইতিবাচক ফল পেতাম। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বিস্তৃত হতো, আমদানি পণ্য তালিকা ছোট হয়ে আসত। আমরা রপ্তানিও করতে পারতাম, অর্থনৈতিক নানামুখী সাশ্রয় ও লাভ হতো। কৃষকের কাছ থেকে যদি সরাসরি পণ্য নিয়ে আসা যেত, তাহলে ফড়িয়া কিংবা মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত গুটিয়ে যেত, কৃষক ন্যায্যমূল্য পেত। কাজেই এ-সংশ্লিষ্ট শিল্প গড়ে উঠলে বহুমুখী লাভ দৃশ্যমান হতো। কৃষকের পণ্য বিক্রির পথ প্রশস্ত হতো এবং তার আগ্রহ বাড়ত, অর্থনীতির চাকাটাও গতিশীল হতো। কৃষকের হাতে টাকা যাওয়া মানে তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়া এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়া মানে অন্য শিল্প খাতে এবং বাজারে আলো ছড়িয়ে পড়া। নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যাঁরা আছেন, তাঁরা দেশের ব্যবসায়ীদের উপলব্ধিতে বিষয়টা আনতে পারেননি। যেমন সরকার যদি বলত, আমরা কোনো সস আমদানি করব না, শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া হলো। তখন আমাদের সস খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। নিজস্ব চাহিদার কারণে সরকার তখন প্রণোদনার কথা ভাবতে পারে।
কালের কণ্ঠ : কৃষি খাতে ভর্তুকি আরো বৃদ্ধির কথা নানা মহল থেকে বলা হচ্ছে। কিন্তু ভর্তুকির যথাযথ ব্যবহার নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক প্রশ্নও আছে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
শাইখ সিরাজ : ভর্তুকির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি, তা অসত্য নয়। যেমন সারের ভর্তুকির কথা যদি ধরি, তাহলে দেখা যায়, ১২০০ টাকার সারে সরকার ছয়-সাত শ টাকা ভর্তুকি দেয়। কৃষক সার কিনছে এবং ভর্তুকির টাকাটা এর মধ্যে ঢুকে আছে। কিন্তু যেসব ভর্তুকি দেখা যায় না, সেগুলো তছরুপ হয়। এসব ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে দরকার সুশাসন এবং স্থানীয় প্রশাসনের স্বচ্ছ অবস্থান। দাতা গোষ্ঠীর আপত্তি সত্ত্বেও ভর্তুকি আমাদের বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে অব্যাহত রাখা দরকার। যেমন বিদ্যুৎচালিত সেচকাজে সরকার ২০ শতাংশ রেয়াত দিচ্ছে। সেচযন্ত্রের মালিক কখনো কৃষক, কখনো ব্যবসায়ী। ১০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল হলে সরকার নিচ্ছে আট হাজার টাকা। অর্থাৎ সেচযন্ত্রের মালিক পাচ্ছে দুই হাজার টাকা রেয়াত। কিন্তু তার অধীনে যারা সেচ নিয়ে উৎপাদন করছে তারা এই সুযোগটুকু পাচ্ছে না, অর্থাৎ কৃষক তা জানেই না। ২০ শতাংশ রেয়াত সুবিধা মালিক খেয়ে নিচ্ছে; অথচ সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে কৃষককে। মাঠপর্যায়ে এই না জানা কিংবা অজ্ঞতা_এর জন্য কৃষক সুফল পাচ্ছে না। আমরা দীর্ঘদিন থেকে জেনে আসছি, সরকার মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কেনে। কিন্তু আমি ২৮ বছরে শুনিনি সরকার কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কিনেছে। সরকার কিনছে চাতালমালিক কিংবা আড়তদারের কাছ থেকে। মধ্যস্বত্বভোগীরা উভয় দিক থেকেই লাভবান হচ্ছে, কৃষক বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে। এখানেও তো ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। যেমন সরকার ধানের ক্রয়মূল্য ১৭ টাকা কেজি নির্ধারণ করল, সরকার হিসাব করে দেখল, কৃষকের উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৪ টাকা। তিন টাকা তাকে লাভ দিয়ে ধান কিনল। কিন্তু কোনো কৃষক কি সে লাভটা পাচ্ছে? সব যাচ্ছে চাতালমালিক কিংবা অন্য সুবিধাভোগী শ্রেণীর হাতে।
কালের কণ্ঠ : জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আমাদের কৃষিখাত ভবিষ্যতে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। আমরা রয়েছি ঝুঁকির মুখে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা কিভাবে করা সম্ভব?
শাইখ সিরাজ : অবশ্যই প্রযুক্তির মাধ্যমে, অন্য কোনো পথ সহজ নয়। যেমন ধরুন, দক্ষিণাঞ্চলের কিছু কিছু অঞ্চলে পানি জমে গেছে এবং সেই পানি হচ্ছে নোনা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, সমতলে পানি ঢুকে পড়ছে। এটাও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব। এসব অঞ্চলে আগে ধান হতো, যা স্বাভাবিক ধান। কিন্তু এই ধান চাষ এখন সেখানে সম্ভব নয়। নোনা পানিসহিষ্ণু ধান উদ্ভাবন করে সেসব অঞ্চলে এর চাষ করতে হবে। এটা একটা প্রযুক্তিগত ফল। সরকার যে এ নিয়ে ভাবছে না কিংবা কাজ করছে না তা নয়, কিন্তু গতি খুব মন্থর। এটা ত্বরিতগতিতে হওয়া দরকার। সময় ক্ষেপণের আর কোনো অবকাশ নেই। উত্তরাঞ্চল খরাপ্রবণ হয়ে গেছে। সেচের জন্য পানি মিলছে না। আগে যেসব ধান উত্তরাঞ্চলে হতো, সেসব ধান চাষ সেখানে আর হবে না। হলেও ফলন কমে যাবে। কারণ আগেরটা ওই জলবায়ুসহিষ্ণু করে উদ্ভাবন করা হয়েছিল। সেখানে এখন বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী ধানের দরকার। আমন-আউশ অঞ্চলগুলোতে পানিসহিষ্ণু নতুন জাতের ধান দরকার। তা আমাদের আছে, কিন্তু এর বর্ধিতকরণ দরকার। একই সঙ্গে নানা ধরনের এ রকম ধান উদ্ভাবনের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের ফসল উৎপাদনের রাস্তা বের করা দরকার।
কালের কণ্ঠ : ধান আমাদের প্রধান কৃষিপণ্য। আমাদের দেশের সিংহভাগ এলাকা শুধুই ধান-চাষনির্ভর। কৃষির সার্বিক বিকাশে অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদনের বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং এর সম্ভাবনাই বা কতটুকু?
শাইখ সিরাজ : অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভাবনাও ব্যাপক। ৮০'র দশকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমরা অপেক্ষা করতাম যে ওই সবজিটা তখন খাব। কিন্তু এখন তা নয়, বছরব্যাপী প্রায় সব সবজিই পাওয়া যায়। আগে হাট সপ্তাহে এক বা দু-দিন বসত। এখন অসংখ্য হাট, সেখানে মানুষের উপস্থিতি প্রায় নিত্য। যেদিকে তাকাবেন, চোখে পড়বে হাট এবং এই হাটগুলোতে প্রচুর শাকসবজিসহ ফলমূল আসছে। এগুলো তো এ দেশের কৃষকেরই উৎপাদিত এবং দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত। শস্যের বহুমুখীকরণ হয়েছে এবং বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। কৃষক এখন অনেক পরিবর্তিত জ্ঞান-গরিমায় পুষ্ট। কৃষক নানা রকম ফসল ফলাচ্ছে এবং এগুলো বাজারে যাচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ মূল্য পাচ্ছে না। মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত প্রসারিত। এখনো যেটুকু মূল্য কৃষক পাচ্ছে, তাও যদি হ্রাস পায়, তবে সে এদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং ক্ষতিটা হবে আমাদের সার্বিক ক্ষতি। কৃষকের নিজস্ব একটা অর্থনীতি আছে। সে এই অর্থনীতি অনুসরণ করে। এর জন্য দরকার ছিল কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ এবং একই সঙ্গে এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন। আমি চীনে দেখেছি এক চাল দিয়ে কত রকম খাদ্যদ্রব্য তৈরি হচ্ছে। আর আমরা শুধু চাল দিয়ে ভাতই খাই বা শখ করে পিঠা খাই। চালের কত রকম বেকারি প্রডাক্ট হতে পারে এসব আমরা ভাবিইনি। এটা তো একটা মাত্র দৃষ্টান্ত। এমন অনেক পণ্য রয়েছে। আমাদের এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের যে পরিমাণ আম, আনারস, টমেটো ইত্যাদি নষ্ট হয়, মফস্বলে পড়ে থাকে, সেসব দিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্র আরো বিস্তৃত করা সহজ হতো। কৃষক উৎপাদন করছে, কিন্তু তাঁকে শক্তি জোগানো হচ্ছে না, অধিক উৎপাদনে উৎসাহিত করা হচ্ছে না। কৃষিক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি প্রচুর বিনিয়োগের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা হচ্ছে না। আমি মালয়েশিয়াতে দেখেছি, শুধু আনারস থেকে তারা কত কিছু তৈরি করছে। আবার কাঁচা আনারস রপ্তানি করছে, বিশেষ করে দুবাইয়ে।
কালের কণ্ঠ : ইতিমধ্যে ডিজেলসহ জ্বালানির মূল্য আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যও পুনর্বার ৭৬ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব কৃষি খাতে কতটা পড়তে পারে? কৃষি খাতকে চাপমুক্ত রেখে উৎপাদনের পথ মসৃণ রাখা কিভাবে সম্ভব?
শাইখ সিরাজ : ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। উৎপাদন ব্যয় নিয়ে কৃষকের এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে। শুধু জ্বালানি কেন সব ধরনের কৃষি উপকরণের মূল্যও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সরকার কৃষি খাতে যেসব প্রণোদনা অব্যাহত রেখেছে, তা আরো বাড়ানো দরকার। বিশেষ করে যদি ধান উৎপাদন ধরে রাখতে হয়, এর কেনো বিকল্প নেই। সার্ভে করলে দেখতে পাবেন, যেমন আগে যে কৃষক তার পাঁচ বিঘা ধান চাষ উপযোগী জমিতে ধান ফলাত ক্রমান্বয়ে সে তা কমিয়ে ফেলেছে। অন্যান্য ফসলের দিকে ঝুঁকছে। উপায় নেই তার। তা ছাড়া বীজ নিয়ে কেলেঙ্কারি কম হয়নি। অনেক কৃষক বেসরকারি পর্যায় থেকে বীজ সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এসব সচেতন মহল মাত্রেরই জানা। নানা কারণেই কৃষক ধান চাষ কমিয়ে দিচ্ছে। যদি গোটা দেশের চিত্রটা এ রকম হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কতটা কণ্টকাকীর্ণ হতে পারে, তা খুব সহজেই অনুমেয়। এখন আমরা একটা নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আছি, কিন্তু ভবিষ্যতে কী হবে? এসব বিষয় আমলে রেখে কৃষি খাতকে চাপমুক্ত রাখতে ভর্তুকি, প্রণোদনাসহ নানা রকম সহযোগিতা অব্যাহত রাখা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের নায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
কালের কণ্ঠ : ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের কল্যাণে আপনি একজন কৃষি গবেষক হিসেবে কী প্রস্তাব রাখবেন? ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের ব্যাপকভাবে কৃষিকাজে কিভাবে সম্পৃক্ত করা সম্ভব?
শাইখ সিরাজ : অত্যন্ত ভালো এবং সময়োপযোগী প্রশ্ন। প্রশ্নটির উত্তরে শুধু বলব, এর কোনো বিকল্প নেই। অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, বাংলাদেশে দুই কোটি বিঘা খাস জমি এবং জলা রয়েছে। বাংলাদেশে ভূমিহীন কৃষক পরিবারের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। দুই বিঘা জমি ও জলা যথেষ্ট একটি কৃষক পরিবারের জীবনযাপনের জন্য। এখানেই ভূমি সংস্কারের প্রসঙ্গটি সামনে আসে, যা খুব দরকার। কৃষক তো ক্রমান্বয়ে দরিদ্র হচ্ছে। প্রকৃতির বৈরী আচরণও তাকে বিপদে ফেলছে। ফসল ঘরে তুলবে তখন সব চলে যাচ্ছে, আবার ফসল পাচ্ছে তো, যথাযথ মূল্য পাচ্ছে না। কৃষক নানা কারণে তার জমি হারাচ্ছে। সরকারের যে এত জমিজমা পড়ে আছে, তা কৃষকের মধ্যে বিলি-বণ্টন করে যদি উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়, তাহলে চিত্র পাল্টে যেতে বাধ্য। ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক চাষিরাও ব্যাপকভাবে উপকৃত হতো। তারা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারত। কিন্তু আমাদের দেশে যেকোনো সরকারই ভূমি সংস্কারের ব্যাপারে এগোতে চায় না।
কালের কণ্ঠ : দেশে উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার নিয়ে কোনো কোনো মহলের আপত্তি রয়েছে। জমিতে ব্যাপক হারে অজৈব সার ও কীটনাশকের ব্যবহার নিয়েও নানা রকম উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্তসহ মাটির উর্বরা শক্তি হ্রাসের প্রসঙ্গটিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
শাইখ সিরাজ : বুঝে তর্ক করা, না বুঝে তর্ক করা কিংবা তর্কের খাতিরে তর্ক করা_এসবের মধ্যে পার্থক্য আছে। ষাটের দশকে ভাবা হলো, মানুষ বাড়ছে কিন্তু জমি তো বাড়ছে না। এই বাড়তি মানুষের জন্য খাদ্য প্রয়োজন। নির্দিষ্ট জমিতেই বাড়তি মানুষের খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। উচ্চ ফলনশীল দানাদার খাদ্যদ্রব্য বীজ উদ্ভাবন হলো এবং এর ফলে কল্যাণ হলো মানুষেরই। প্রথমে গম নিয়ে গবেষণা হলো, তারপর ধান এবং উভয় ক্ষেত্রেই সুফল মিলল। সারা বিশ্বের বাড়তি জনসংখ্যা সামাল দেওয়ার জন্য এর কোনো বিকল্প ছিল না। তখনো কিন্তু কোনো কোনো মহলের আপত্তি ছিল। হ্যাঁ, ক্ষতি কিছুটা হয়েছে এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছি না; কিন্তু এর বিকল্প তো তখন কিছু ছিল না। এ বিষয়টি আবার এসেছে এবং অত্যন্ত প্রয়োজনের তাগিদেই। হ্যাঁ, অজৈব সার, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহারে আরো সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে। জৈব সারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে। বিজ্ঞানকে এড়িয়ে চলা যাবে না।
কালের কণ্ঠ : খসড়া কৃষিনীতিসহ ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৌশল হিসেবে আউশ ও আমন ধানের চাষ উৎসাহিত করার বিষয়টি চিহ্নিত করা হয়েছে। আপনি বিষয়টিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
শাইখ সিরাজ : এটা বিদ্যমান বাস্তবতা এবং প্রয়োজনের তাগিদেই হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলকে এখন গুরুত্ব দিতেই হবে। উত্তরাঞ্চলে পানির চরম সংকট রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে পানির প্রাচুর্য রয়েছে। এই পানিসম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। লোনা পানিসহিষ্ণু ধান উদ্ভাবন করতে হবে। আমাদের কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কথা আমি বিশেষভাবে বলব। তিনি কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে ব্যাপক কাজ করছেন। এর ইতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রখর জ্ঞানসম্পন্ন একজন পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান ব্যক্তি। খুব দূরদর্শীও। উত্তরাঞ্চলে যে কৃষি উৎপাদন ক্রমেই খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে, এটা তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন আরো আগেই। তিনি সংগত কারণেই দক্ষিণাঞ্চলের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন এবং সে অঞ্চলের উপযোগী ধানের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যদি হাইড্রোলিক অ্যাগ্রিকালচারাল পদ্ধতিতে যাওয়া যায়, এর উপযুক্ত স্থান হলো দক্ষিণাঞ্চল। পানির ওপরে কৃত্রিম জমি তৈরি করে ভাসমান চাষাবাদ করা দক্ষিণাঞ্চলে সম্ভব। একটা পদ্ধতি ও কাঠামোর মধ্য দিয়ে তা করা কঠিন নয়। আমি বলব, দক্ষিণাঞ্চল অর্গানিক কৃষির জন্যও তীর্থভূমি।
কালের কণ্ঠ : ১৪ নভেম্বর কালের কণ্ঠের শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশ কৃষিবিজ্ঞানী হারাচ্ছে। সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
শাইখ সিরাজ : এই উদ্বেগ আমি ব্যক্তিগতভাবে অতীতে বহুবার প্রকাশ করেছি, দায়িত্বশীল অনেককেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। আজ বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্রে যে সাফল্য অর্জন করেছে, এটা কৃষিবিজ্ঞানীদের অবদান। গবেষণা কিংবা বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া আধুনিক কৃষির বিকাশ কিংবা উৎকর্ষ সম্ভব নয়। শস্যের বহুমুখীকরণের পেছনেও তাঁদের অবদান স্মরণযোগ্য। সরকার বিষয়টি দ্রুত আমলে নিলেই মঙ্গল।
কালের কণ্ঠ : এক সময়ের সোনালি আঁশ পাটের আজ দৈন্যদশা। অথচ বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ব্যাপক। আমরা আমাদের সম্ভাবনার হৃতচিত্র পুনর্বার উজ্জ্বল করতে পারি কিভাবে?
শাইখ সিরাজ : পাটের জীবনরহস্য উদ্ভাবন একটা অনেক বড় কাজ এবং কৃতিত্ব। এর ফলে আমরা পুরো বিষয়টি জেনে গেলাম। কতভাবে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে তাও বোঝা গেল। এ সরকার এ ক্ষেত্রে বিশাল সাফল্য দেখিয়েছে। জেনোম উদ্ভাবনে যে গবেষণা হয়েছে এবং সাফল্য এসেছে, এর সুফল আমাদের জন্য কত ব্যাপক হতে পারে, তা সাধারণ মানুষকে সহজে বোঝানো কঠিন। এখানেও সর্বাগ্রে বেগম মতিয়া চৌধুরী ও কৃষি গবেষকদের অভিনন্দন জানাতে হয়। দেশের পাট খাতের হৃতচিত্র ফিরতে শুরু করেছে বলা যায়। এ সরকার বেশ কয়েকটি বন্ধ পাটকল চালু করেছে। পাটের ন্যায্যমূল্য কৃষক প্রতিবছর পাচ্ছে না। এটা নিশ্চিত করা চাই। বিশ্বব্যাপী পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার যেহেতু বেড়েছে, সেহেতু আমাদের নতুন পরিকল্পনার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বাজারে ঢুকতে হবে। পাটের জেনোম উদ্ভাবনের সুফল পেতে আরো তিন-চার বছর সময় লাগবে। এর মধ্যে বাকি অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করে ফেলতে হবে। পাট পুনর্বার আমাদের জন্য অন্যতম অর্থকরী ফসল হতে পারে, রপ্তানি তালিকার বড় অংশজুড়ে থাকতে পারে, যদি সংশ্লিষ্টরা যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
শাইখ সিরাজ : আপনাকেও ধন্যবাদ।
কালের কণ্ঠ : এ দেশে কৃষিনির্ভর পৃথক শিল্প খাত গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে নতুন কিছু কি ভাবা যায়?
শাইখ সিরাজ : কৃষিপ্রধান একটি দেশে যেখানে এখনো প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেখানে কৃষিকে গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া ভিন্ন পথ কী? ভর্তুকি বন্ধ করতে দাতা গোষ্ঠীর চাপ আছে, এও অসত্য নয়। ভর্তুকি দিতেই হবে যদি উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে হয় কিংবা অধিকতর গতিশীল করতে হয়। ভর্তুকি না দিলে ফসল মার খাবে। সার, জ্বালানি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃষকের দুর্বল অবস্থার কারণেই ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে। উৎপাদন কমে যাওয়া মানেই খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেওয়া। আর ঘাটতি মানেই বিদেশের কাছে খাদ্য সাহায্যের জন্য হাত পাতা। অর্থ থাকলেও একদিন বাইরে থেকে খাদ্য কিনে আনা যাবে না। কারণ সবাই নিজস্ব খাদ্য বলয় সৃষ্টি করছে। জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের কারণে কেউ খাদ্য বিক্রি করতে চাইবে না। সংকট তো শুধু আমাদের একার নয়, আরো অনেকেরই দেখা দেবে। কৃষিভিত্তিক শিল্প খাত গড়ে তোলার বিষয়টি অনেক আগে থেকেই ভাবা উচিত ছিল। তা হয়নি। আমরা অনেক সময় ব্যয় করেছি, এখন আর এ ব্যাপারে কালক্ষেপণ করা একদম ঠিক হবে না। কৃষি কিংবা কৃষিসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যদি বিনিয়োগ হতো, তাহলে আমরা এর অনেক ইতিবাচক ফল পেতাম। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বিস্তৃত হতো, আমদানি পণ্য তালিকা ছোট হয়ে আসত। আমরা রপ্তানিও করতে পারতাম, অর্থনৈতিক নানামুখী সাশ্রয় ও লাভ হতো। কৃষকের কাছ থেকে যদি সরাসরি পণ্য নিয়ে আসা যেত, তাহলে ফড়িয়া কিংবা মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত গুটিয়ে যেত, কৃষক ন্যায্যমূল্য পেত। কাজেই এ-সংশ্লিষ্ট শিল্প গড়ে উঠলে বহুমুখী লাভ দৃশ্যমান হতো। কৃষকের পণ্য বিক্রির পথ প্রশস্ত হতো এবং তার আগ্রহ বাড়ত, অর্থনীতির চাকাটাও গতিশীল হতো। কৃষকের হাতে টাকা যাওয়া মানে তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়া এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়া মানে অন্য শিল্প খাতে এবং বাজারে আলো ছড়িয়ে পড়া। নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যাঁরা আছেন, তাঁরা দেশের ব্যবসায়ীদের উপলব্ধিতে বিষয়টা আনতে পারেননি। যেমন সরকার যদি বলত, আমরা কোনো সস আমদানি করব না, শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া হলো। তখন আমাদের সস খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। নিজস্ব চাহিদার কারণে সরকার তখন প্রণোদনার কথা ভাবতে পারে।
কালের কণ্ঠ : কৃষি খাতে ভর্তুকি আরো বৃদ্ধির কথা নানা মহল থেকে বলা হচ্ছে। কিন্তু ভর্তুকির যথাযথ ব্যবহার নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক প্রশ্নও আছে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
শাইখ সিরাজ : ভর্তুকির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি, তা অসত্য নয়। যেমন সারের ভর্তুকির কথা যদি ধরি, তাহলে দেখা যায়, ১২০০ টাকার সারে সরকার ছয়-সাত শ টাকা ভর্তুকি দেয়। কৃষক সার কিনছে এবং ভর্তুকির টাকাটা এর মধ্যে ঢুকে আছে। কিন্তু যেসব ভর্তুকি দেখা যায় না, সেগুলো তছরুপ হয়। এসব ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে দরকার সুশাসন এবং স্থানীয় প্রশাসনের স্বচ্ছ অবস্থান। দাতা গোষ্ঠীর আপত্তি সত্ত্বেও ভর্তুকি আমাদের বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে অব্যাহত রাখা দরকার। যেমন বিদ্যুৎচালিত সেচকাজে সরকার ২০ শতাংশ রেয়াত দিচ্ছে। সেচযন্ত্রের মালিক কখনো কৃষক, কখনো ব্যবসায়ী। ১০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল হলে সরকার নিচ্ছে আট হাজার টাকা। অর্থাৎ সেচযন্ত্রের মালিক পাচ্ছে দুই হাজার টাকা রেয়াত। কিন্তু তার অধীনে যারা সেচ নিয়ে উৎপাদন করছে তারা এই সুযোগটুকু পাচ্ছে না, অর্থাৎ কৃষক তা জানেই না। ২০ শতাংশ রেয়াত সুবিধা মালিক খেয়ে নিচ্ছে; অথচ সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে কৃষককে। মাঠপর্যায়ে এই না জানা কিংবা অজ্ঞতা_এর জন্য কৃষক সুফল পাচ্ছে না। আমরা দীর্ঘদিন থেকে জেনে আসছি, সরকার মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কেনে। কিন্তু আমি ২৮ বছরে শুনিনি সরকার কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কিনেছে। সরকার কিনছে চাতালমালিক কিংবা আড়তদারের কাছ থেকে। মধ্যস্বত্বভোগীরা উভয় দিক থেকেই লাভবান হচ্ছে, কৃষক বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে। এখানেও তো ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। যেমন সরকার ধানের ক্রয়মূল্য ১৭ টাকা কেজি নির্ধারণ করল, সরকার হিসাব করে দেখল, কৃষকের উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৪ টাকা। তিন টাকা তাকে লাভ দিয়ে ধান কিনল। কিন্তু কোনো কৃষক কি সে লাভটা পাচ্ছে? সব যাচ্ছে চাতালমালিক কিংবা অন্য সুবিধাভোগী শ্রেণীর হাতে।
কালের কণ্ঠ : জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আমাদের কৃষিখাত ভবিষ্যতে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। আমরা রয়েছি ঝুঁকির মুখে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা কিভাবে করা সম্ভব?
শাইখ সিরাজ : অবশ্যই প্রযুক্তির মাধ্যমে, অন্য কোনো পথ সহজ নয়। যেমন ধরুন, দক্ষিণাঞ্চলের কিছু কিছু অঞ্চলে পানি জমে গেছে এবং সেই পানি হচ্ছে নোনা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, সমতলে পানি ঢুকে পড়ছে। এটাও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব। এসব অঞ্চলে আগে ধান হতো, যা স্বাভাবিক ধান। কিন্তু এই ধান চাষ এখন সেখানে সম্ভব নয়। নোনা পানিসহিষ্ণু ধান উদ্ভাবন করে সেসব অঞ্চলে এর চাষ করতে হবে। এটা একটা প্রযুক্তিগত ফল। সরকার যে এ নিয়ে ভাবছে না কিংবা কাজ করছে না তা নয়, কিন্তু গতি খুব মন্থর। এটা ত্বরিতগতিতে হওয়া দরকার। সময় ক্ষেপণের আর কোনো অবকাশ নেই। উত্তরাঞ্চল খরাপ্রবণ হয়ে গেছে। সেচের জন্য পানি মিলছে না। আগে যেসব ধান উত্তরাঞ্চলে হতো, সেসব ধান চাষ সেখানে আর হবে না। হলেও ফলন কমে যাবে। কারণ আগেরটা ওই জলবায়ুসহিষ্ণু করে উদ্ভাবন করা হয়েছিল। সেখানে এখন বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী ধানের দরকার। আমন-আউশ অঞ্চলগুলোতে পানিসহিষ্ণু নতুন জাতের ধান দরকার। তা আমাদের আছে, কিন্তু এর বর্ধিতকরণ দরকার। একই সঙ্গে নানা ধরনের এ রকম ধান উদ্ভাবনের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের ফসল উৎপাদনের রাস্তা বের করা দরকার।
কালের কণ্ঠ : ধান আমাদের প্রধান কৃষিপণ্য। আমাদের দেশের সিংহভাগ এলাকা শুধুই ধান-চাষনির্ভর। কৃষির সার্বিক বিকাশে অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদনের বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং এর সম্ভাবনাই বা কতটুকু?
শাইখ সিরাজ : অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভাবনাও ব্যাপক। ৮০'র দশকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমরা অপেক্ষা করতাম যে ওই সবজিটা তখন খাব। কিন্তু এখন তা নয়, বছরব্যাপী প্রায় সব সবজিই পাওয়া যায়। আগে হাট সপ্তাহে এক বা দু-দিন বসত। এখন অসংখ্য হাট, সেখানে মানুষের উপস্থিতি প্রায় নিত্য। যেদিকে তাকাবেন, চোখে পড়বে হাট এবং এই হাটগুলোতে প্রচুর শাকসবজিসহ ফলমূল আসছে। এগুলো তো এ দেশের কৃষকেরই উৎপাদিত এবং দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত। শস্যের বহুমুখীকরণ হয়েছে এবং বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। কৃষক এখন অনেক পরিবর্তিত জ্ঞান-গরিমায় পুষ্ট। কৃষক নানা রকম ফসল ফলাচ্ছে এবং এগুলো বাজারে যাচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ মূল্য পাচ্ছে না। মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত প্রসারিত। এখনো যেটুকু মূল্য কৃষক পাচ্ছে, তাও যদি হ্রাস পায়, তবে সে এদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং ক্ষতিটা হবে আমাদের সার্বিক ক্ষতি। কৃষকের নিজস্ব একটা অর্থনীতি আছে। সে এই অর্থনীতি অনুসরণ করে। এর জন্য দরকার ছিল কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ এবং একই সঙ্গে এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন। আমি চীনে দেখেছি এক চাল দিয়ে কত রকম খাদ্যদ্রব্য তৈরি হচ্ছে। আর আমরা শুধু চাল দিয়ে ভাতই খাই বা শখ করে পিঠা খাই। চালের কত রকম বেকারি প্রডাক্ট হতে পারে এসব আমরা ভাবিইনি। এটা তো একটা মাত্র দৃষ্টান্ত। এমন অনেক পণ্য রয়েছে। আমাদের এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের যে পরিমাণ আম, আনারস, টমেটো ইত্যাদি নষ্ট হয়, মফস্বলে পড়ে থাকে, সেসব দিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্র আরো বিস্তৃত করা সহজ হতো। কৃষক উৎপাদন করছে, কিন্তু তাঁকে শক্তি জোগানো হচ্ছে না, অধিক উৎপাদনে উৎসাহিত করা হচ্ছে না। কৃষিক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি প্রচুর বিনিয়োগের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা হচ্ছে না। আমি মালয়েশিয়াতে দেখেছি, শুধু আনারস থেকে তারা কত কিছু তৈরি করছে। আবার কাঁচা আনারস রপ্তানি করছে, বিশেষ করে দুবাইয়ে।
কালের কণ্ঠ : ইতিমধ্যে ডিজেলসহ জ্বালানির মূল্য আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যও পুনর্বার ৭৬ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব কৃষি খাতে কতটা পড়তে পারে? কৃষি খাতকে চাপমুক্ত রেখে উৎপাদনের পথ মসৃণ রাখা কিভাবে সম্ভব?
শাইখ সিরাজ : ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। উৎপাদন ব্যয় নিয়ে কৃষকের এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে। শুধু জ্বালানি কেন সব ধরনের কৃষি উপকরণের মূল্যও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সরকার কৃষি খাতে যেসব প্রণোদনা অব্যাহত রেখেছে, তা আরো বাড়ানো দরকার। বিশেষ করে যদি ধান উৎপাদন ধরে রাখতে হয়, এর কেনো বিকল্প নেই। সার্ভে করলে দেখতে পাবেন, যেমন আগে যে কৃষক তার পাঁচ বিঘা ধান চাষ উপযোগী জমিতে ধান ফলাত ক্রমান্বয়ে সে তা কমিয়ে ফেলেছে। অন্যান্য ফসলের দিকে ঝুঁকছে। উপায় নেই তার। তা ছাড়া বীজ নিয়ে কেলেঙ্কারি কম হয়নি। অনেক কৃষক বেসরকারি পর্যায় থেকে বীজ সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এসব সচেতন মহল মাত্রেরই জানা। নানা কারণেই কৃষক ধান চাষ কমিয়ে দিচ্ছে। যদি গোটা দেশের চিত্রটা এ রকম হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কতটা কণ্টকাকীর্ণ হতে পারে, তা খুব সহজেই অনুমেয়। এখন আমরা একটা নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আছি, কিন্তু ভবিষ্যতে কী হবে? এসব বিষয় আমলে রেখে কৃষি খাতকে চাপমুক্ত রাখতে ভর্তুকি, প্রণোদনাসহ নানা রকম সহযোগিতা অব্যাহত রাখা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের নায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
কালের কণ্ঠ : ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের কল্যাণে আপনি একজন কৃষি গবেষক হিসেবে কী প্রস্তাব রাখবেন? ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের ব্যাপকভাবে কৃষিকাজে কিভাবে সম্পৃক্ত করা সম্ভব?
শাইখ সিরাজ : অত্যন্ত ভালো এবং সময়োপযোগী প্রশ্ন। প্রশ্নটির উত্তরে শুধু বলব, এর কোনো বিকল্প নেই। অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, বাংলাদেশে দুই কোটি বিঘা খাস জমি এবং জলা রয়েছে। বাংলাদেশে ভূমিহীন কৃষক পরিবারের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। দুই বিঘা জমি ও জলা যথেষ্ট একটি কৃষক পরিবারের জীবনযাপনের জন্য। এখানেই ভূমি সংস্কারের প্রসঙ্গটি সামনে আসে, যা খুব দরকার। কৃষক তো ক্রমান্বয়ে দরিদ্র হচ্ছে। প্রকৃতির বৈরী আচরণও তাকে বিপদে ফেলছে। ফসল ঘরে তুলবে তখন সব চলে যাচ্ছে, আবার ফসল পাচ্ছে তো, যথাযথ মূল্য পাচ্ছে না। কৃষক নানা কারণে তার জমি হারাচ্ছে। সরকারের যে এত জমিজমা পড়ে আছে, তা কৃষকের মধ্যে বিলি-বণ্টন করে যদি উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়, তাহলে চিত্র পাল্টে যেতে বাধ্য। ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক চাষিরাও ব্যাপকভাবে উপকৃত হতো। তারা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারত। কিন্তু আমাদের দেশে যেকোনো সরকারই ভূমি সংস্কারের ব্যাপারে এগোতে চায় না।
কালের কণ্ঠ : দেশে উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার নিয়ে কোনো কোনো মহলের আপত্তি রয়েছে। জমিতে ব্যাপক হারে অজৈব সার ও কীটনাশকের ব্যবহার নিয়েও নানা রকম উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্তসহ মাটির উর্বরা শক্তি হ্রাসের প্রসঙ্গটিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
শাইখ সিরাজ : বুঝে তর্ক করা, না বুঝে তর্ক করা কিংবা তর্কের খাতিরে তর্ক করা_এসবের মধ্যে পার্থক্য আছে। ষাটের দশকে ভাবা হলো, মানুষ বাড়ছে কিন্তু জমি তো বাড়ছে না। এই বাড়তি মানুষের জন্য খাদ্য প্রয়োজন। নির্দিষ্ট জমিতেই বাড়তি মানুষের খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। উচ্চ ফলনশীল দানাদার খাদ্যদ্রব্য বীজ উদ্ভাবন হলো এবং এর ফলে কল্যাণ হলো মানুষেরই। প্রথমে গম নিয়ে গবেষণা হলো, তারপর ধান এবং উভয় ক্ষেত্রেই সুফল মিলল। সারা বিশ্বের বাড়তি জনসংখ্যা সামাল দেওয়ার জন্য এর কোনো বিকল্প ছিল না। তখনো কিন্তু কোনো কোনো মহলের আপত্তি ছিল। হ্যাঁ, ক্ষতি কিছুটা হয়েছে এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছি না; কিন্তু এর বিকল্প তো তখন কিছু ছিল না। এ বিষয়টি আবার এসেছে এবং অত্যন্ত প্রয়োজনের তাগিদেই। হ্যাঁ, অজৈব সার, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহারে আরো সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে। জৈব সারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে। বিজ্ঞানকে এড়িয়ে চলা যাবে না।
কালের কণ্ঠ : খসড়া কৃষিনীতিসহ ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৌশল হিসেবে আউশ ও আমন ধানের চাষ উৎসাহিত করার বিষয়টি চিহ্নিত করা হয়েছে। আপনি বিষয়টিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
শাইখ সিরাজ : এটা বিদ্যমান বাস্তবতা এবং প্রয়োজনের তাগিদেই হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলকে এখন গুরুত্ব দিতেই হবে। উত্তরাঞ্চলে পানির চরম সংকট রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে পানির প্রাচুর্য রয়েছে। এই পানিসম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। লোনা পানিসহিষ্ণু ধান উদ্ভাবন করতে হবে। আমাদের কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কথা আমি বিশেষভাবে বলব। তিনি কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে ব্যাপক কাজ করছেন। এর ইতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রখর জ্ঞানসম্পন্ন একজন পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান ব্যক্তি। খুব দূরদর্শীও। উত্তরাঞ্চলে যে কৃষি উৎপাদন ক্রমেই খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে, এটা তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন আরো আগেই। তিনি সংগত কারণেই দক্ষিণাঞ্চলের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন এবং সে অঞ্চলের উপযোগী ধানের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যদি হাইড্রোলিক অ্যাগ্রিকালচারাল পদ্ধতিতে যাওয়া যায়, এর উপযুক্ত স্থান হলো দক্ষিণাঞ্চল। পানির ওপরে কৃত্রিম জমি তৈরি করে ভাসমান চাষাবাদ করা দক্ষিণাঞ্চলে সম্ভব। একটা পদ্ধতি ও কাঠামোর মধ্য দিয়ে তা করা কঠিন নয়। আমি বলব, দক্ষিণাঞ্চল অর্গানিক কৃষির জন্যও তীর্থভূমি।
কালের কণ্ঠ : ১৪ নভেম্বর কালের কণ্ঠের শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশ কৃষিবিজ্ঞানী হারাচ্ছে। সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
শাইখ সিরাজ : এই উদ্বেগ আমি ব্যক্তিগতভাবে অতীতে বহুবার প্রকাশ করেছি, দায়িত্বশীল অনেককেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। আজ বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্রে যে সাফল্য অর্জন করেছে, এটা কৃষিবিজ্ঞানীদের অবদান। গবেষণা কিংবা বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া আধুনিক কৃষির বিকাশ কিংবা উৎকর্ষ সম্ভব নয়। শস্যের বহুমুখীকরণের পেছনেও তাঁদের অবদান স্মরণযোগ্য। সরকার বিষয়টি দ্রুত আমলে নিলেই মঙ্গল।
কালের কণ্ঠ : এক সময়ের সোনালি আঁশ পাটের আজ দৈন্যদশা। অথচ বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ব্যাপক। আমরা আমাদের সম্ভাবনার হৃতচিত্র পুনর্বার উজ্জ্বল করতে পারি কিভাবে?
শাইখ সিরাজ : পাটের জীবনরহস্য উদ্ভাবন একটা অনেক বড় কাজ এবং কৃতিত্ব। এর ফলে আমরা পুরো বিষয়টি জেনে গেলাম। কতভাবে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে তাও বোঝা গেল। এ সরকার এ ক্ষেত্রে বিশাল সাফল্য দেখিয়েছে। জেনোম উদ্ভাবনে যে গবেষণা হয়েছে এবং সাফল্য এসেছে, এর সুফল আমাদের জন্য কত ব্যাপক হতে পারে, তা সাধারণ মানুষকে সহজে বোঝানো কঠিন। এখানেও সর্বাগ্রে বেগম মতিয়া চৌধুরী ও কৃষি গবেষকদের অভিনন্দন জানাতে হয়। দেশের পাট খাতের হৃতচিত্র ফিরতে শুরু করেছে বলা যায়। এ সরকার বেশ কয়েকটি বন্ধ পাটকল চালু করেছে। পাটের ন্যায্যমূল্য কৃষক প্রতিবছর পাচ্ছে না। এটা নিশ্চিত করা চাই। বিশ্বব্যাপী পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার যেহেতু বেড়েছে, সেহেতু আমাদের নতুন পরিকল্পনার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বাজারে ঢুকতে হবে। পাটের জেনোম উদ্ভাবনের সুফল পেতে আরো তিন-চার বছর সময় লাগবে। এর মধ্যে বাকি অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করে ফেলতে হবে। পাট পুনর্বার আমাদের জন্য অন্যতম অর্থকরী ফসল হতে পারে, রপ্তানি তালিকার বড় অংশজুড়ে থাকতে পারে, যদি সংশ্লিষ্টরা যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
শাইখ সিরাজ : আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments