কুয়াকাটা-কলাপাড়া-আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুব by রাশেদ মেহেদী,
সমকালের সরেজমিন অনুসন্ধানেদেশের বিভিন্ন এলাকার সাংসদদের প্রত্যক্ষও পরোক্ষ দুর্নীতির চমকপ্রদ নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। ধারাবাহিক এই আয়োজনে আজরয়েছে সরকারদলীয় সাংসদ অ্যাডভোকেটমাহবুবুর রহমানের নির্বাচনী এলাকার চিত্রনির্বাচনের আগে এলাকাবাসীর চোখে তিনি ছিলেন সজ্জন রাজনীতিবিদ। অর্থ-সম্পদের বাহার তার ছিল না। বোধকরি লোভও ছিল না।
২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর বিএনপির সন্ত্রাসীরা যখন তার ওপর হামলা করে, সে সময় এলাকার হাজার হাজার মানুষ মানববর্ম তৈরি করে তাকে রক্ষা
করেছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর প্রায় পৌনে তিন বছরের ব্যবধানে তিনিই এখন এলাকায় আর নন্দিত নন। রীতিমতো নিন্দিত। তিনি হলেন এলাকায় মাহবুব মিয়া, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা পর্যন্ত ভূমি দখল, টেন্ডারবাজি আর সন্ত্রাসের জন্য এই নামটিই এখন অনেকের মুখে মুখে। এসব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন প্রতিমন্ত্রী। সমকালকে তিনি বলেন, জমি দখল, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজির অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। বিএনপি এবং কিছু ব্যক্তি যারা সন্ত্রাসে মদদ দেয়, অনিয়ম করতে চায়, তারাই এই অপপ্রচার করছেন। এতে কলাপাড়ার মানুষ বিভ্রান্ত হবেন না। কারণ তারা জানেন, তিনি উন্নয়নের জন্য কাজ করেন, কোনো অন্যায় করেন না, প্রশ্রয়ও দেন না। প্রতিমন্ত্রী অভিযোগ করেন, কুয়াকাটা এখন মাফিয়াদের নজরে পড়েছে। ভূমিদস্যু, মাফিয়ারা এখন কুয়াকাটায় কাঁচা টাকার সন্ধানে ছুটছে। মাফিয়া তৎপরতায় কুয়াকাটাকে ঘিরে দেখা দিচ্ছে নানা জটিলতা।
বিএনপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী আড়াই বছরে কলাপাড়া-কুয়াকাটা এলাকায় মাহবুবুর রহমান তালুকদারের অনুগত বাহিনী ৫৭৩টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। একটি দায়িত্বশীল সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৬১টি হামলার ঘটনায় স্থানীয় থানায় অভিযোগ করা হলেও অধিকাংশই রেকর্ডভুক্ত হয়নি। স্থানীয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত আড়াই বছরে প্রায় ১৫০ একর জমি নিজের নামে দখল করে দলিল করে নিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। এর মধ্যে সাবরেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে চারটি দলিল ও তিনটি বায়নাপত্রে প্রায় ১৪ একর জমি দখলের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সমকালের হাতে এসেছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, কুয়াকাটায় নামে-বেনামে অনেক জমি দখল করছেন প্রতিমন্ত্রী। জমির মালিক এমন অসংখ্য পরিবার পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গঙ্গামতি এন্টারপ্রাইজ এবং আন্ধারমানিক কনস্ট্রাকশনের নিয়ন্ত্রণে পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজ। এদিকে সন্ত্রাসী বাহিনী থাকার অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৯ সাল থেকে তার বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। তিনি কলাপাড়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন ১৯৭২-৭৩ সালে। তার রাজনীতি করার জন্য ক্যাডার বা বাহিনীর প্রয়োজন হয় না। জনগণই শক্তি।
সুজন-সজল-জিয়া ক্যাডার বাহিনীর দখল অভিযান : স্থানীয় সাবরেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে পাওয়া চারটি দলিল এবং তিনটি বায়নাপত্রে দেখা যায় কুয়াকাটায় জমির ক্রেতা হিসেবে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব তালুকদারের নাম। দলিল নং-৪৩৮৪/২০০৯, ৪৭৮০/২০০৯, ৫১৩৯/০৯, ৪৪৭৪/০৯, এবং তিনটি বায়নানামায় প্রায় ১৪ একর জমি মাত্র ৩৯ লাখ টাকায় কিনে নিয়েছেন। অথচ এ এলাকায় এখন এক শতাংশ জমির দাম দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। দখল হওয়া একটি পরিবারের দুই সদস্য জানান, ২০০৯ সালে তাদের প্রায় ৪ একর জমি দখল করে প্রথমে পিলার পুঁতে দেয় প্রতিমন্ত্রীর অনুগত সজলের নেতৃত্বে এক ক্যাডার বাহিনী। পরে ৫ একর জমি মাত্র ১১ লাখ টাকায় দলিল করে দিতে বাধ্য করা হয়। ওই পরিবারটি পরে মামলার প্রস্তুতি নিলে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রতিমন্ত্রী শুধু নিজের নামেই এখন পর্যন্ত দলিল ও বায়নানামার মাধ্যমে প্রায় ৮১ একর জমি দখলে নিয়েছেন। আরও প্রায় ৭৫ একর জমি দখলের জন্য সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন বেনামে। এই দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া আদর্শ পল্লী এবং গঙ্গামতি সৈকতের কাছে প্রায় ৫৫ একর সরকারি খাস জমি দখল করে নিয়েছে কয়েকটি হাউজিং কোম্পানি। এসব হাউজিং কোম্পানির দখল বুঝিয়ে দিতেও নেতৃত্ব দিয়েছে প্রতিমন্ত্রীর অনুগত সুজন-সজল-জিয়া ক্যাডার বাহিনী। এর সঙ্গে আছেন স্থানীয় জমির দালাল হিসেবে পরিচিত বারেক মোল্লা। একটি সূত্র জানায়, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নিজেই 'ওশান গ্রুপ' নামে একটি হাউজিং কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ছিলেন। এই কোম্পানি বর্তমান সরকারের আমলেই আদর্শ পল্লী হিসেবে পরিচিত সরকারি খাস জমি দখল করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তোলপাড় হওয়ার কারণে এখনও এখানে উন্নয়ন কাজ শুরু করেনি তারা। সমকালের সঙ্গে আলাপে ওশান গ্রুপের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করেছেন প্রতিমন্ত্রী।
গত ১ অক্টোবর প্রতিমন্ত্রীর ক্যাডাররা কুয়াকাটায় সর্বশেষ দখল অভিযান চালায়। স্থানীয় যুবলীগ ক্যাডার জিয়াউর রহমান জিয়ার নেতৃত্বে ২৫ ক্যাডারের মোটরসাইকেল বাহিনী দখল করে এলাকার পাঞ্জুপাড়া গ্রামের শাহজাহান হাওলাদারের বসতবাড়িসহ ৬৬ শতাংশ জায়গা। একই দিনে সরকারি খাস খতিয়ানের শত বছরের পুরনো পুকুরটিও দখল করে বাঁশের খুঁটি পুঁতে দেওয়া হয়। ২ অক্টোবর কুয়াকাটার পাঞ্জুপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, দখল করা জমিতে বড় সাইনবোর্ড। পাঁচ দখলদারের মধ্যে দ্বিতীয় নামটি দখলে নেতৃত্ব দেওয়া জিয়াউর রহমানের। এলাকাবাসী জানায়, আড়াই বছর ধরে এই বাহিনী কুয়াকাটা থেকে লতাচাপলী, গঙ্গামতি পর্যন্ত প্রায় দেড়শ' একর জমিতে বিভিন্ন নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে জমি দখল করছে। সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদেরও নানাভাবে নাজেহাল করছে এই মোটরসাইকেল বাহিনী। এলাকার রাখাইন মার্কেটের একাধিক দোকান মালিক জানান, লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে এখানে পর্যটক কমে গেছে। তিন মাসে ছয় পর্যটক প্রতিমন্ত্রীর স্থানীয় ক্যাডার সজল বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়। এই বাহিনীর আতঙ্কে ইকোপার্কেও কোনো পর্যটক যান না।
প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার সমকালকে বলেন, তিনি কিংবা তার পরিবারের কেউ কুয়াকাটায় জমি কিনলে দোষ কোথায়? ঢাকার লোক গিয়ে কুয়াকাটায় জমির ব্যবসা করলে কলাপাড়ার মানুষ পারবে না কেন? তিনি চারটি দলিল সম্পর্কে বলেন, তার নামে তিনটি দলিল আছে। এর একটিও নিজের টাকা খরচ করে কেনা নয়। তিনি বলেন, কুয়াকাটার ৯৫ ভাগ জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ আছে। এখানে একটি জমির আট রকম দলিল থাকে। আমার কাছে অনেকেই বিরোধ মীমাংসা করতে আসেন। আমি দু'পক্ষের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা করে দেই। পরে তারা মীমাংসাকারী হিসেবে এক-দুই একর জমি আমার নামে দলিল করে দেন। তিনটি দলিলই সেভাবে হয়েছে। এসব দলিল আমার নামে হলেও এগুলোর একটিতেও আমার স্বাক্ষর নেই। অন্যান্য দখল সম্পর্কে বলেন, কারা কোথায় কীভাবে দখল করেছে আমি জানি না। সজল আমার বাড়িতে থাকে। সে অত্যন্ত ভদ্র ছেলে। সুজন ছাত্রলীগ নেতা, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ সঠিক নয়। অপর ক্যাডার জিয়াকে তিনি চেনেন না বলে জানান। সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দফতরে তার সঙ্গে আলাপের সময় সুজন মোল্লা তার সামনেই ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী জানান, এক সময় আমি ওশান গ্রুপের অনারারি চেয়ারম্যান ছিলাম।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের দখল নিয়ে পটুয়াখালী সদরের এমপি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে বিরোধ বাঁধে কলাপাড়া-কুয়াকাটার এমপি মাহবুব তালকুদারের। এ কারণে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর পটুয়াখালী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়কে দুই ভাগে ভাগ করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। পটুয়াখালীতে এখন দু'জন নির্বাহী প্রকৌশলী কাজ করছেন। একজনের অফিস পটুয়াখালী জেলা সদরে, অন্যজনের অফিস পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নিজের উপজেলা কলাপাড়ায়। দেড় বছর আগে কলাপাড়ায় নতুন নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতর নিয়ে আসা হয়।
জানা গেছে, আন্ধারমানিক ও গঙ্গামতি এন্টারপ্রাইজের নামে কলাপাড়া দফতরের কাজের ভাগাভাগি চলছে। এ দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গঙ্গামতি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী প্রীতি রহমান। আর আন্ধারমানিক কনস্ট্রাকশনের তত্ত্বাবধানে আছেন প্রতিমন্ত্রী নিজেই। এ দুটি প্রতিষ্ঠান এবং আরও দু-তিনটি বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে কলাপাড়া থেকে রাঙ্গাবালী পর্যন্ত পুরো এলাকার টেন্ডার প্রতিমন্ত্রী একাই নিয়ন্ত্রণ করছেন, এটি এখন ওপেন সিক্রেট। পটুয়াখালীর পুরনো ও বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আজাদ এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও এলাকায় সবাই জানেন। ওই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চলছে কোটি টাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ। চালিতাবুনিয়া, রাঙ্গাবালী, চরকাজল, চরআণ্ডায় অনিয়মের মধ্যে বেড়িবাঁধ নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।
সূত্র জানায়, জেলার আমতলীর মহিষকাটা বাজার সংলগ্ন খালের ওপর স্লুইস গেটটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত। ঢাকার ডন এন্টারপ্রাইজের নামে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার কাজটি নেন মন্ত্রীর পিএ সোহাগ। এ কাজটির মান নিয়েও এলাকাবাসীর ক্ষোভ রয়েছে। সাগরের বুকে জেগে ওঠা চরআণ্ডার চারদিকে ৪ কিলোমিটার আংশিক নতুন কাজ পায় পানি প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিটিএসএল (জেবি)। সূত্র আরও জানায়, চালিতাবুনিয়া নদীর ক্লোজারের কাজেও সুবিধা নিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। খুলনার শামীম এন্টারপ্রাইজের নামে খাপড়াভাঙ্গার নিজামপুর ও কোমরপুরের বল্গক পাইলিংসহ মাটির পরিবর্তে অধিকাংশই বালি দিয়ে বেড়িবাঁধের নামে চালিয়েছে লুটপাট। ওই কাজের অনুকূলে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেখানো হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী সমকালকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গঙ্গামতি এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে তার স্ত্রী সম্পৃক্ত। আন্ধারমানিক কনস্ট্রাকশন এলাকার কয়েকজন মিলে করেছেন। এর সঙ্গে তার নিজেরও সম্পৃক্ততা আছে। আজাদ এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে তার নিজের সম্পর্ক না থাকলেও একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, 'আমারও তো কিছু কাজ করা দরকার। না হলে আমার আয় আসবে কোত্থেকে। রাজনীতিবিদদেরও আয়ের পথ থাকতে হবে, না হলে চলবে কীভাবে।'
যতসব সন্ত্রাস : স্থানীয় বিএনপি সভাপতি এবিএম মোশাররফ অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ৫৭৩টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদারের ক্যাডাররা। তিনি বলেন, এসব ঘটনার রেকর্ড বিস্তারিতভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় যুবদল নেতা বশিরউদ্দিন হত্যা, লতাচাপলী এলাকার স্থানীয় বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলমের ওপর হামলা, লতাচাপলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ড. মিজানকে মারধর করে এলাকাছাড়া করা, স্থানীয় বিএনপি নেতা স্বপন বিশ্বাসের সম্পত্তি দখল অন্যতম। এবিএ মোশাররফ বলেন, প্রায় পাঁচশ' নেতাকর্মী প্রতিমন্ত্রীর ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। স্থানীয় যুবলীগ ক্যাডার আসলামের নেতৃত্বাধীন আসলাম গ্রুপ, মিজান গ্রুপ এসব সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এলাকার কয়েকজন যুবলীগ নেতা জানান, এলাকায় একাধিক চিংড়ি ঘের দখলসহ নানা সন্ত্রাসে আরেকজন জড়িত। তিনি প্রতিমন্ত্রীর চাচাত ভাই মজিবুর রহমান তালুকদার। আগে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এখন প্রতিমন্ত্রীর ডানহাত। প্রতিমন্ত্রী সমকালকে বলেন, মজিবুর রহমান তালকুদার মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার সময় শিবিরের সঙ্গে ছিল বলে শুনেছি। এখন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে এবং আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। সে আমার চাচাত ভাই। সে কোনোভাবেই সন্ত্রাস, দখলের সঙ্গে যুক্ত নয়।
করেছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর প্রায় পৌনে তিন বছরের ব্যবধানে তিনিই এখন এলাকায় আর নন্দিত নন। রীতিমতো নিন্দিত। তিনি হলেন এলাকায় মাহবুব মিয়া, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা পর্যন্ত ভূমি দখল, টেন্ডারবাজি আর সন্ত্রাসের জন্য এই নামটিই এখন অনেকের মুখে মুখে। এসব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন প্রতিমন্ত্রী। সমকালকে তিনি বলেন, জমি দখল, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজির অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। বিএনপি এবং কিছু ব্যক্তি যারা সন্ত্রাসে মদদ দেয়, অনিয়ম করতে চায়, তারাই এই অপপ্রচার করছেন। এতে কলাপাড়ার মানুষ বিভ্রান্ত হবেন না। কারণ তারা জানেন, তিনি উন্নয়নের জন্য কাজ করেন, কোনো অন্যায় করেন না, প্রশ্রয়ও দেন না। প্রতিমন্ত্রী অভিযোগ করেন, কুয়াকাটা এখন মাফিয়াদের নজরে পড়েছে। ভূমিদস্যু, মাফিয়ারা এখন কুয়াকাটায় কাঁচা টাকার সন্ধানে ছুটছে। মাফিয়া তৎপরতায় কুয়াকাটাকে ঘিরে দেখা দিচ্ছে নানা জটিলতা।
বিএনপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী আড়াই বছরে কলাপাড়া-কুয়াকাটা এলাকায় মাহবুবুর রহমান তালুকদারের অনুগত বাহিনী ৫৭৩টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। একটি দায়িত্বশীল সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৬১টি হামলার ঘটনায় স্থানীয় থানায় অভিযোগ করা হলেও অধিকাংশই রেকর্ডভুক্ত হয়নি। স্থানীয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত আড়াই বছরে প্রায় ১৫০ একর জমি নিজের নামে দখল করে দলিল করে নিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। এর মধ্যে সাবরেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে চারটি দলিল ও তিনটি বায়নাপত্রে প্রায় ১৪ একর জমি দখলের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সমকালের হাতে এসেছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, কুয়াকাটায় নামে-বেনামে অনেক জমি দখল করছেন প্রতিমন্ত্রী। জমির মালিক এমন অসংখ্য পরিবার পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গঙ্গামতি এন্টারপ্রাইজ এবং আন্ধারমানিক কনস্ট্রাকশনের নিয়ন্ত্রণে পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজ। এদিকে সন্ত্রাসী বাহিনী থাকার অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৯ সাল থেকে তার বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। তিনি কলাপাড়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন ১৯৭২-৭৩ সালে। তার রাজনীতি করার জন্য ক্যাডার বা বাহিনীর প্রয়োজন হয় না। জনগণই শক্তি।
সুজন-সজল-জিয়া ক্যাডার বাহিনীর দখল অভিযান : স্থানীয় সাবরেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে পাওয়া চারটি দলিল এবং তিনটি বায়নাপত্রে দেখা যায় কুয়াকাটায় জমির ক্রেতা হিসেবে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব তালুকদারের নাম। দলিল নং-৪৩৮৪/২০০৯, ৪৭৮০/২০০৯, ৫১৩৯/০৯, ৪৪৭৪/০৯, এবং তিনটি বায়নানামায় প্রায় ১৪ একর জমি মাত্র ৩৯ লাখ টাকায় কিনে নিয়েছেন। অথচ এ এলাকায় এখন এক শতাংশ জমির দাম দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। দখল হওয়া একটি পরিবারের দুই সদস্য জানান, ২০০৯ সালে তাদের প্রায় ৪ একর জমি দখল করে প্রথমে পিলার পুঁতে দেয় প্রতিমন্ত্রীর অনুগত সজলের নেতৃত্বে এক ক্যাডার বাহিনী। পরে ৫ একর জমি মাত্র ১১ লাখ টাকায় দলিল করে দিতে বাধ্য করা হয়। ওই পরিবারটি পরে মামলার প্রস্তুতি নিলে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রতিমন্ত্রী শুধু নিজের নামেই এখন পর্যন্ত দলিল ও বায়নানামার মাধ্যমে প্রায় ৮১ একর জমি দখলে নিয়েছেন। আরও প্রায় ৭৫ একর জমি দখলের জন্য সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন বেনামে। এই দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া আদর্শ পল্লী এবং গঙ্গামতি সৈকতের কাছে প্রায় ৫৫ একর সরকারি খাস জমি দখল করে নিয়েছে কয়েকটি হাউজিং কোম্পানি। এসব হাউজিং কোম্পানির দখল বুঝিয়ে দিতেও নেতৃত্ব দিয়েছে প্রতিমন্ত্রীর অনুগত সুজন-সজল-জিয়া ক্যাডার বাহিনী। এর সঙ্গে আছেন স্থানীয় জমির দালাল হিসেবে পরিচিত বারেক মোল্লা। একটি সূত্র জানায়, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নিজেই 'ওশান গ্রুপ' নামে একটি হাউজিং কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ছিলেন। এই কোম্পানি বর্তমান সরকারের আমলেই আদর্শ পল্লী হিসেবে পরিচিত সরকারি খাস জমি দখল করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তোলপাড় হওয়ার কারণে এখনও এখানে উন্নয়ন কাজ শুরু করেনি তারা। সমকালের সঙ্গে আলাপে ওশান গ্রুপের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করেছেন প্রতিমন্ত্রী।
গত ১ অক্টোবর প্রতিমন্ত্রীর ক্যাডাররা কুয়াকাটায় সর্বশেষ দখল অভিযান চালায়। স্থানীয় যুবলীগ ক্যাডার জিয়াউর রহমান জিয়ার নেতৃত্বে ২৫ ক্যাডারের মোটরসাইকেল বাহিনী দখল করে এলাকার পাঞ্জুপাড়া গ্রামের শাহজাহান হাওলাদারের বসতবাড়িসহ ৬৬ শতাংশ জায়গা। একই দিনে সরকারি খাস খতিয়ানের শত বছরের পুরনো পুকুরটিও দখল করে বাঁশের খুঁটি পুঁতে দেওয়া হয়। ২ অক্টোবর কুয়াকাটার পাঞ্জুপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, দখল করা জমিতে বড় সাইনবোর্ড। পাঁচ দখলদারের মধ্যে দ্বিতীয় নামটি দখলে নেতৃত্ব দেওয়া জিয়াউর রহমানের। এলাকাবাসী জানায়, আড়াই বছর ধরে এই বাহিনী কুয়াকাটা থেকে লতাচাপলী, গঙ্গামতি পর্যন্ত প্রায় দেড়শ' একর জমিতে বিভিন্ন নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে জমি দখল করছে। সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদেরও নানাভাবে নাজেহাল করছে এই মোটরসাইকেল বাহিনী। এলাকার রাখাইন মার্কেটের একাধিক দোকান মালিক জানান, লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে এখানে পর্যটক কমে গেছে। তিন মাসে ছয় পর্যটক প্রতিমন্ত্রীর স্থানীয় ক্যাডার সজল বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়। এই বাহিনীর আতঙ্কে ইকোপার্কেও কোনো পর্যটক যান না।
প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার সমকালকে বলেন, তিনি কিংবা তার পরিবারের কেউ কুয়াকাটায় জমি কিনলে দোষ কোথায়? ঢাকার লোক গিয়ে কুয়াকাটায় জমির ব্যবসা করলে কলাপাড়ার মানুষ পারবে না কেন? তিনি চারটি দলিল সম্পর্কে বলেন, তার নামে তিনটি দলিল আছে। এর একটিও নিজের টাকা খরচ করে কেনা নয়। তিনি বলেন, কুয়াকাটার ৯৫ ভাগ জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ আছে। এখানে একটি জমির আট রকম দলিল থাকে। আমার কাছে অনেকেই বিরোধ মীমাংসা করতে আসেন। আমি দু'পক্ষের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা করে দেই। পরে তারা মীমাংসাকারী হিসেবে এক-দুই একর জমি আমার নামে দলিল করে দেন। তিনটি দলিলই সেভাবে হয়েছে। এসব দলিল আমার নামে হলেও এগুলোর একটিতেও আমার স্বাক্ষর নেই। অন্যান্য দখল সম্পর্কে বলেন, কারা কোথায় কীভাবে দখল করেছে আমি জানি না। সজল আমার বাড়িতে থাকে। সে অত্যন্ত ভদ্র ছেলে। সুজন ছাত্রলীগ নেতা, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ সঠিক নয়। অপর ক্যাডার জিয়াকে তিনি চেনেন না বলে জানান। সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দফতরে তার সঙ্গে আলাপের সময় সুজন মোল্লা তার সামনেই ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী জানান, এক সময় আমি ওশান গ্রুপের অনারারি চেয়ারম্যান ছিলাম।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের দখল নিয়ে পটুয়াখালী সদরের এমপি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে বিরোধ বাঁধে কলাপাড়া-কুয়াকাটার এমপি মাহবুব তালকুদারের। এ কারণে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর পটুয়াখালী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়কে দুই ভাগে ভাগ করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। পটুয়াখালীতে এখন দু'জন নির্বাহী প্রকৌশলী কাজ করছেন। একজনের অফিস পটুয়াখালী জেলা সদরে, অন্যজনের অফিস পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নিজের উপজেলা কলাপাড়ায়। দেড় বছর আগে কলাপাড়ায় নতুন নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতর নিয়ে আসা হয়।
জানা গেছে, আন্ধারমানিক ও গঙ্গামতি এন্টারপ্রাইজের নামে কলাপাড়া দফতরের কাজের ভাগাভাগি চলছে। এ দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গঙ্গামতি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী প্রীতি রহমান। আর আন্ধারমানিক কনস্ট্রাকশনের তত্ত্বাবধানে আছেন প্রতিমন্ত্রী নিজেই। এ দুটি প্রতিষ্ঠান এবং আরও দু-তিনটি বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে কলাপাড়া থেকে রাঙ্গাবালী পর্যন্ত পুরো এলাকার টেন্ডার প্রতিমন্ত্রী একাই নিয়ন্ত্রণ করছেন, এটি এখন ওপেন সিক্রেট। পটুয়াখালীর পুরনো ও বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আজাদ এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও এলাকায় সবাই জানেন। ওই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চলছে কোটি টাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ। চালিতাবুনিয়া, রাঙ্গাবালী, চরকাজল, চরআণ্ডায় অনিয়মের মধ্যে বেড়িবাঁধ নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।
সূত্র জানায়, জেলার আমতলীর মহিষকাটা বাজার সংলগ্ন খালের ওপর স্লুইস গেটটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত। ঢাকার ডন এন্টারপ্রাইজের নামে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার কাজটি নেন মন্ত্রীর পিএ সোহাগ। এ কাজটির মান নিয়েও এলাকাবাসীর ক্ষোভ রয়েছে। সাগরের বুকে জেগে ওঠা চরআণ্ডার চারদিকে ৪ কিলোমিটার আংশিক নতুন কাজ পায় পানি প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিটিএসএল (জেবি)। সূত্র আরও জানায়, চালিতাবুনিয়া নদীর ক্লোজারের কাজেও সুবিধা নিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। খুলনার শামীম এন্টারপ্রাইজের নামে খাপড়াভাঙ্গার নিজামপুর ও কোমরপুরের বল্গক পাইলিংসহ মাটির পরিবর্তে অধিকাংশই বালি দিয়ে বেড়িবাঁধের নামে চালিয়েছে লুটপাট। ওই কাজের অনুকূলে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেখানো হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী সমকালকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গঙ্গামতি এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে তার স্ত্রী সম্পৃক্ত। আন্ধারমানিক কনস্ট্রাকশন এলাকার কয়েকজন মিলে করেছেন। এর সঙ্গে তার নিজেরও সম্পৃক্ততা আছে। আজাদ এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে তার নিজের সম্পর্ক না থাকলেও একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, 'আমারও তো কিছু কাজ করা দরকার। না হলে আমার আয় আসবে কোত্থেকে। রাজনীতিবিদদেরও আয়ের পথ থাকতে হবে, না হলে চলবে কীভাবে।'
যতসব সন্ত্রাস : স্থানীয় বিএনপি সভাপতি এবিএম মোশাররফ অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ৫৭৩টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদারের ক্যাডাররা। তিনি বলেন, এসব ঘটনার রেকর্ড বিস্তারিতভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় যুবদল নেতা বশিরউদ্দিন হত্যা, লতাচাপলী এলাকার স্থানীয় বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলমের ওপর হামলা, লতাচাপলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ড. মিজানকে মারধর করে এলাকাছাড়া করা, স্থানীয় বিএনপি নেতা স্বপন বিশ্বাসের সম্পত্তি দখল অন্যতম। এবিএ মোশাররফ বলেন, প্রায় পাঁচশ' নেতাকর্মী প্রতিমন্ত্রীর ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। স্থানীয় যুবলীগ ক্যাডার আসলামের নেতৃত্বাধীন আসলাম গ্রুপ, মিজান গ্রুপ এসব সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এলাকার কয়েকজন যুবলীগ নেতা জানান, এলাকায় একাধিক চিংড়ি ঘের দখলসহ নানা সন্ত্রাসে আরেকজন জড়িত। তিনি প্রতিমন্ত্রীর চাচাত ভাই মজিবুর রহমান তালুকদার। আগে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এখন প্রতিমন্ত্রীর ডানহাত। প্রতিমন্ত্রী সমকালকে বলেন, মজিবুর রহমান তালকুদার মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার সময় শিবিরের সঙ্গে ছিল বলে শুনেছি। এখন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে এবং আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। সে আমার চাচাত ভাই। সে কোনোভাবেই সন্ত্রাস, দখলের সঙ্গে যুক্ত নয়।
No comments