৪ বছর ২৮ দিন পর by নোমান মোহাম্মদ
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য চতুর্থ জয়টি বড় 'খতরনাখ'। প্রথম তিন জয়ের পর কেটে যায় দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী। প্রতীক্ষার প্রহর বাড়তে বাড়তে পেঁৗছে যায় প্রায় অনন্তে। কিন্তু জয় তখন যেন হয়ে ওঠে সোনার হরিণ। কিছুতেই ধরা দিতে চায় না। আর তা তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই। সেটি টেস্ট বলুন কিংবা ওয়ানডে অথবা টোয়েন্টি টোয়েন্টি!কিছুটা কাকতালীয় মনে হতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের গ্রাফটা আপনাকে এই বিস্ময়কর চিত্রই দেবে।
১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে পথচলা শুরু বাংলাদেশের। প্রথম জয় পায় ১৯৯৮ সালের ১৭ মে, কেনিয়ার বিপক্ষে। পরের বছর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে আবার জয়ের উন্মাতাল আনন্দে ভাসে সারা দেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই তৃতীয় জয়টি ১৯৯৯ সালের ৩১ মে। সোনার হরফে লেখা ওই দিনটির পর আবার জয়ের মুখ কত দিন পর দেখেছিল বাংলাদেশ জানেন? বেশি না, চার বছর ৯ মাস ১০ দিন পর মাত্র! ২০০৪ সালের ১০ মার্চ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ পেয়েছিল ওয়ানডেতে চতুর্থ জয়ের দেখা।
টেস্টের গল্পও প্রায় অভিন্ন। প্রথম ওয়ানডে জয়ের জন্য এক যুগ অপেক্ষা করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম টেস্ট জয়ের জন্য চার বছরের কিছু বেশি। এক হিসেবে তো উন্নতিই, নাকি? ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের পর টেস্টে দ্বিতীয় ও তৃতীয় জয় আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ২০০৯ সালের জুলাইতে। এরপর ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে দিন-মাস-বছর করে সময় কেবল গড়িয়েই চলেছে। চতুর্থ জয় এখনো অধরা।
ওয়ানডে-টেস্টে যেমন প্রথম জয়ই মরীচিকা হয়ে ছিল অনেকটা সময়, টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে আবার তেমন নয়। ধুমধাড়াক্কার ক্রিকেটের ফিতে কেটেছিল বাংলাদেশ জয় দিয়েই। ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকেই জিতেছিল তারা। পরের বছর দ্বিতীয় ও তৃতীয় জয় পেয়ে যায় কেনিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ছিল এই তৃতীয় জয়। এরপর যথারীতি অপেক্ষা। চার বছর ২৮ দিন পর অবশেষে গতকাল এল সেই মহার্ঘ চতুর্থ টোয়েন্টি টোয়েন্টি জয়।
কুড়ি-বিশের এই ক্রিকেটে চতুর্থ জয়ের ক্ষেত্রটা কাল দারুণভাবে তৈরি করে দিয়েছিলেন বোলাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাত্র ১৩২ রানে আটকে দিয়ে। হ্যাঁ, মিরপুরের এই উইকেট ধীরগতির, নিচু বাউন্সের। ক্যারিবিয়ান সহজাত স্ট্রোকমেকারদের জন্য সেখানে খেলা কঠিনই। তবে এমন তো কতই হয়েছে, বোলারদের এলোমেলো অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সেই কঠিন হয়ে যায় জলবৎ তরলং। কাল আর সেটি হতে দেয়নি মুশফিকুর রহিমের শিষ্যরা। মাপা লাইন-লেন্থে বোলিং করে চেপে রেখেছিলেন প্রতিপক্ষকে, আর সেটিও পুরো ২০ ওভার ধরে। বিস্ময়কর বৈ কি!
বিস্ময়কর, কারণ এই ফরম্যাটের দাবি হচ্ছে প্রতি বলে বলে চার-ছক্কা। বোলারদের খাবি খাওয়া দেখতেই তাই অভ্যস্ত দর্শকচোখ। সেখানে কাল মিরপুর স্টেডিয়ামের হাজার বিশেক সমর্থক দেখলেন কী? বয়সের তুলনায় পরিণত মস্তিষ্কে শফিউল ইসলামের (২/১৯) বোলিং। সাকিব আল হাসান (২/২৫) দেখালেন, অধিনায়কত্ব হারালেও বোলিং সামর্থ্য হারাননি। অভিজ্ঞতার সঙ্গে বুদ্ধির মিশেলে আবদুর রাজ্জাক (২/২৭) প্রমাণ করেছেন তাঁর অপরিহার্যতা। নাঈম ইসলাম (১/২৩) তাঁর অবহেলিত অফস্পিনের ঘূর্ণিজাদুর প্রকাশ দেখালেন। কেবল রুবেল হোসেনই (১/৩২) খানিকটা বিভ্রান্ত ছিলেন কখনো-সখনো। তার পরও টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে এক উইকেট খারাপ কী!
মুশফিকুর রহিম এই পাঁচ বোলারকে দিয়েই করিয়েছেন ৪ ওভার করে। অধিনায়কত্বের প্রথম ম্যাচে বোলিং পরিবর্তনেও ছিল মুন্সিয়ানা আর দূরদর্শিতার ছাপ। প্রথম ওভারে রাজ্জাকের হাতে বল তুলে দিয়ে খানিকটা হলেও ভড়কে দিতে পেরেছিলেন ক্যারিবীয়দের। মাত্র ২ রান দিয়েছিলেন দলের অভিজ্ঞতম বোলার। রুবেলের করা ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারেই কেবল বাংলাদেশের ওপর চেপে বসতে পেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিয়েছিল ১৭ রান। এ ছাড়া রাজ্জাকের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ১০ এবং সাকিবের করা ১৯তম ওভার থেকে ১৩ রান নিয়েছিল তারা। বাকি ১৭টি ওভারেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান এক অঙ্ক ছাপিয়ে যেতে পারেনি।
১২০ বলের ইনিংসে মাত্র ১৫টি বলকেই সীমানাছাড়া করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বোঝাই যায় যে বোলারদের কাছ থেকে সেরাটি বের করে এনেছেন মুশফিক। একই কথা যায় ফিল্ডিং সম্পর্কেও। থ্রো সরাসরি স্ট্যাম্পে লাগাতে পারলে কয়েকটি রান আউট হতো। নইলে মোটের ওপর ফিল্ডিং মন্দ ছিল না। ফিল্ডিংয়ে অনেক সময়ই যাঁর অলসতা দেখা যায়, সেই তামিম ইকবাল পর্যন্ত ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচিয়েছেন বাউন্ডারি।
ভবিষ্যতে যখন এই ম্যাচের স্মৃতিচারণা হবে, মুশফিকুর রহিমের বীরত্বের ছবিটাই আঁকা থাকবে সেখানে। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচে তাঁর ওই ছক্কাটিই হয়ে থাকবে বাংলাদেশ ক্রিকেট রূপকথার চিরন্তন অংশ। সবই ঠিক আছে। তবে মহাকাঙ্ক্ষিত মহাআরাধ্য এই চতুর্থ টোয়েন্টি টোয়েন্টি জয়ের ভিত্তি ছিল কিন্তু বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিংয়ের ওই অদম্য রূপ। অধিনায়ক হিসেবে সেই কৃতিত্বটাও কিন্তু দিতে হবে মুশফিককেই।
* রাজ্জাক : নতুন বলে শুরু করে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং। উইকেটও পেয়েছেন দুটি।
* সাকিব : বল করতে এসেই উইকেট। আউট করেছেন ত্রাস স্যামুয়েলসকে। দুই উইকেট।
* শফিউল : শেষ ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান আটকে রাখেন।
* আশরাফুল : ২৫ বলে ২৪ রান করে শুরুর পথটা তৈরি করেন।
* নাসির : সংকটময় মুহূর্তে ১৫ বলে ১৮ রানের কার্যকর ইনিংস। মুশফিককে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন।
স্কোরকার্ড
টেস্টের গল্পও প্রায় অভিন্ন। প্রথম ওয়ানডে জয়ের জন্য এক যুগ অপেক্ষা করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম টেস্ট জয়ের জন্য চার বছরের কিছু বেশি। এক হিসেবে তো উন্নতিই, নাকি? ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের পর টেস্টে দ্বিতীয় ও তৃতীয় জয় আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ২০০৯ সালের জুলাইতে। এরপর ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে দিন-মাস-বছর করে সময় কেবল গড়িয়েই চলেছে। চতুর্থ জয় এখনো অধরা।
ওয়ানডে-টেস্টে যেমন প্রথম জয়ই মরীচিকা হয়ে ছিল অনেকটা সময়, টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে আবার তেমন নয়। ধুমধাড়াক্কার ক্রিকেটের ফিতে কেটেছিল বাংলাদেশ জয় দিয়েই। ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকেই জিতেছিল তারা। পরের বছর দ্বিতীয় ও তৃতীয় জয় পেয়ে যায় কেনিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ছিল এই তৃতীয় জয়। এরপর যথারীতি অপেক্ষা। চার বছর ২৮ দিন পর অবশেষে গতকাল এল সেই মহার্ঘ চতুর্থ টোয়েন্টি টোয়েন্টি জয়।
কুড়ি-বিশের এই ক্রিকেটে চতুর্থ জয়ের ক্ষেত্রটা কাল দারুণভাবে তৈরি করে দিয়েছিলেন বোলাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাত্র ১৩২ রানে আটকে দিয়ে। হ্যাঁ, মিরপুরের এই উইকেট ধীরগতির, নিচু বাউন্সের। ক্যারিবিয়ান সহজাত স্ট্রোকমেকারদের জন্য সেখানে খেলা কঠিনই। তবে এমন তো কতই হয়েছে, বোলারদের এলোমেলো অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সেই কঠিন হয়ে যায় জলবৎ তরলং। কাল আর সেটি হতে দেয়নি মুশফিকুর রহিমের শিষ্যরা। মাপা লাইন-লেন্থে বোলিং করে চেপে রেখেছিলেন প্রতিপক্ষকে, আর সেটিও পুরো ২০ ওভার ধরে। বিস্ময়কর বৈ কি!
বিস্ময়কর, কারণ এই ফরম্যাটের দাবি হচ্ছে প্রতি বলে বলে চার-ছক্কা। বোলারদের খাবি খাওয়া দেখতেই তাই অভ্যস্ত দর্শকচোখ। সেখানে কাল মিরপুর স্টেডিয়ামের হাজার বিশেক সমর্থক দেখলেন কী? বয়সের তুলনায় পরিণত মস্তিষ্কে শফিউল ইসলামের (২/১৯) বোলিং। সাকিব আল হাসান (২/২৫) দেখালেন, অধিনায়কত্ব হারালেও বোলিং সামর্থ্য হারাননি। অভিজ্ঞতার সঙ্গে বুদ্ধির মিশেলে আবদুর রাজ্জাক (২/২৭) প্রমাণ করেছেন তাঁর অপরিহার্যতা। নাঈম ইসলাম (১/২৩) তাঁর অবহেলিত অফস্পিনের ঘূর্ণিজাদুর প্রকাশ দেখালেন। কেবল রুবেল হোসেনই (১/৩২) খানিকটা বিভ্রান্ত ছিলেন কখনো-সখনো। তার পরও টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে এক উইকেট খারাপ কী!
মুশফিকুর রহিম এই পাঁচ বোলারকে দিয়েই করিয়েছেন ৪ ওভার করে। অধিনায়কত্বের প্রথম ম্যাচে বোলিং পরিবর্তনেও ছিল মুন্সিয়ানা আর দূরদর্শিতার ছাপ। প্রথম ওভারে রাজ্জাকের হাতে বল তুলে দিয়ে খানিকটা হলেও ভড়কে দিতে পেরেছিলেন ক্যারিবীয়দের। মাত্র ২ রান দিয়েছিলেন দলের অভিজ্ঞতম বোলার। রুবেলের করা ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারেই কেবল বাংলাদেশের ওপর চেপে বসতে পেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিয়েছিল ১৭ রান। এ ছাড়া রাজ্জাকের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ১০ এবং সাকিবের করা ১৯তম ওভার থেকে ১৩ রান নিয়েছিল তারা। বাকি ১৭টি ওভারেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান এক অঙ্ক ছাপিয়ে যেতে পারেনি।
১২০ বলের ইনিংসে মাত্র ১৫টি বলকেই সীমানাছাড়া করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বোঝাই যায় যে বোলারদের কাছ থেকে সেরাটি বের করে এনেছেন মুশফিক। একই কথা যায় ফিল্ডিং সম্পর্কেও। থ্রো সরাসরি স্ট্যাম্পে লাগাতে পারলে কয়েকটি রান আউট হতো। নইলে মোটের ওপর ফিল্ডিং মন্দ ছিল না। ফিল্ডিংয়ে অনেক সময়ই যাঁর অলসতা দেখা যায়, সেই তামিম ইকবাল পর্যন্ত ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচিয়েছেন বাউন্ডারি।
ভবিষ্যতে যখন এই ম্যাচের স্মৃতিচারণা হবে, মুশফিকুর রহিমের বীরত্বের ছবিটাই আঁকা থাকবে সেখানে। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচে তাঁর ওই ছক্কাটিই হয়ে থাকবে বাংলাদেশ ক্রিকেট রূপকথার চিরন্তন অংশ। সবই ঠিক আছে। তবে মহাকাঙ্ক্ষিত মহাআরাধ্য এই চতুর্থ টোয়েন্টি টোয়েন্টি জয়ের ভিত্তি ছিল কিন্তু বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিংয়ের ওই অদম্য রূপ। অধিনায়ক হিসেবে সেই কৃতিত্বটাও কিন্তু দিতে হবে মুশফিককেই।
* রাজ্জাক : নতুন বলে শুরু করে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং। উইকেটও পেয়েছেন দুটি।
* সাকিব : বল করতে এসেই উইকেট। আউট করেছেন ত্রাস স্যামুয়েলসকে। দুই উইকেট।
* শফিউল : শেষ ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান আটকে রাখেন।
* আশরাফুল : ২৫ বলে ২৪ রান করে শুরুর পথটা তৈরি করেন।
* নাসির : সংকটময় মুহূর্তে ১৫ বলে ১৮ রানের কার্যকর ইনিংস। মুশফিককে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন।
স্কোরকার্ড
No comments