আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা সচিব কমিটিতে by আশরাফুল হক রাজীব
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামসহ আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রশাসন উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি 'লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং কর্মকর্তা (আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়) নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৯৮'-এর আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। সুপারিশ অনুযায়ী ড্রাফটিংয়ের সহকারী সচিব থেকে যুগ্ম সচিব পর্যন্ত বিশেষায়িত-টেকনিক্যাল পদের ২৫ ভাগে নিয়োগ পাবেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এমনকি ড্রাফটিংয়ের অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদটিও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ পদগুলো এখন পর্যন্ত কেবল ড্রাফটিংয়ের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত।
শুরুতে আইন মন্ত্রণালয় লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ নিয়োগ বিধিমালার কর্মকর্তা তফসিলে শুধু সচিব পদটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সচিব কমিটির কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। সেখানে ড্রাফটিংয়ের ২৫ ভাগ পদ প্রশাসন ক্যাডারের জন্য সংরক্ষণ বা অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের কোনো কথা ছিল না। অথচ সচিব কমিটি বিধিমালায় আমূল পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে। এতে ক্ষুব্ধ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন ক্যাডারকে বাড়তি সুবিধা দিতে চাইছে সচিব কমিটি। প্রশাসন ছাড়া অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারাও আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অভিযোগ সমর্থন করছেন।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বিদেশ থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে গত ৩ জুলাই একটি বৈঠক হয়। মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। আইন প্রতিমন্ত্রী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সচিব কমিটি যে সুপারিশ করেছে, তা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। যে কাজ ড্রাফটিং কর্মকর্তাদের দিয়ে হবে, তা কখনোই অন্য ক্যাডার দিয়ে হতে পারে না। ড্রাফটিংয়ের কাজ হচ্ছে আইনের ভেটিং করা, খসড়া তৈরি করা। এ ধরনের কাজে যথেষ্ট এঙ্পার্টিজ থাকতে হয়। যাই হোক বিষয়টি অনেক দূর গড়িয়েছে। এখন সুপারিশ যাতে কোনোভাবেই বাস্তবায়ন না হয় সে চেষ্টাই করা হবে।'
সরকার ২০০৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইন ও বিচার বিভাগ এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ নামের আলাদা দুটি বিভাগ গঠন করে। এর আগে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগটি আইন মন্ত্রণালয়ে একটি শাখা হিসেবে ছিল। ওই শাখায় সর্বোচ্চ পদ ছিল অতিরিক্ত সচিব (ড্রাফটিং)। বিভাগ হওয়ার পর সচিবের পদ সৃষ্টি করা হয়। সচিবের পদটি নিয়োগ বিধিমালার তফসিলভুক্ত করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রশাসন উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে প্রস্তাব পাঠায়।
এর আগে একই প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-পরীক্ষণ উপকমিটিতে পাঠানো হয়। উপকমিটি আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করলেও সচিব কমিটি বেঁকে বসে। অভিযোগ রয়েছে, সচিব কমিটি প্রশাসন ক্যাডারকে বাড়তি সুবিধা দিতে তাদের জন্য ২৫ ভাগ পদ সংরক্ষণ করাসহ সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য উন্মুক্ত করার সুপারিশ করে।
প্রশাসন উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠক হয় গত ১ জুন। কমিটির সুপারিশের খবর জানাজানি হলে আইন মন্ত্রণালয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের গত ৩ জুলাইয়ের সমন্বয় সভায় তোলা হয়। সেখানে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের উপস্থিতিতে কর্মকর্তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, শফিক আহমেদ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের কর্মকর্তা তফসিলে শুধু সচিব পদটি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব সচিব কমিটির কাছে আবার উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। আইনমন্ত্রীর নির্দেশনার পর বিষয়টি নিয়ে গত ২৪ আগস্ট বৈঠকে বসে সচিব কমিটি। কিন্তু বৈঠকে আগের অবস্থানেই অনড় থাকেন কমিটির সদস্যরা। কমিটি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে 'লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং কর্মকর্তা (আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়) নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৯৮' সরকারি কর্ম কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করে চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
জানা গেছে, লেজিসলেটিভ বিভাগের প্রধান কাজ হচ্ছে বিভিন্ন আইনের খসড়া তৈরি করা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা দপ্তর থেকে আসা আইনসংক্রান্ত বিষয়ে মতামত দেওয়া এবং আইনি বিধি-বিধান তৈরি করা। এ ক্যাডারের এন্ট্রি পদ হচ্ছে 'সহকারী সচিব (ড্রাফটিং)'। এ পদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আইন বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর সম্মান ও স্নাতকোত্তর। আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের আইনসংশ্লিষ্ট পদে সাধারণ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন না।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গুণগত মানসম্পন্ন আইন প্রণয়নের জন্য লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ সৃষ্টি করা হয়। নির্বাহী বিভাগের আইন প্রণয়নসংক্রান্ত সামর্থ্য বাড়াতে বিভাগটি সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। সংসদীয় ব্যবস্থাকে আরো কার্যকর করাও এর লক্ষ্য। উদ্দেশ্যগুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং কর্মকর্তা (আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়) নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৯৮ প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালায় সরাসরি নিয়োগ বা ড্রাফটিংয়ের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের বিধান রাখা হয়। অন্য কোনো ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগের বিধান লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিমালা সমর্থন করে না।
লেজিসলেটিভ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, প্রশাসন উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশ লেজিসলেটিভ বিভাগ গঠনের উদ্দেশ্যর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। লেজিসলেটিভ কর্মকর্তা ছাড়া এ বিভাগের বিশেষায়িত পদে দায়িত্ব পালন করা অন্য কোনো ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। অতীতে একমাত্র বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ছাড়া এ বিভাগে (উইং) আগে কেউ প্রেষণে কর্মরত ছিলেন না। পদোন্নতির যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও প্রেষণে নিয়োগের জন্য পদ সংরক্ষণ সরাসরি পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ ব্যাহত করে। পদোন্নতির যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের লেজিসলেটিভ (ড্রাফটিং) পদে প্রেষণে নিয়োগের প্রচলন আছে। তাই সাধারণ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়োগের সুপারিশ একেবারেই অবাস্তব।
আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হিসেবে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের বাইরে গিয়ে বিধিমালায় সংশোধন আনার সুপারিশ করে সচিব কমিটি রাষ্ট্রপতির কর্তৃত্বে আঘাত করেছে। কারণ রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে বিধিমালা জারি করেন। আর আইন মন্ত্রণালয় কোনো বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলে রীতি অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতেই সমস্যার সুরাহা করা হয়। অথচ সচিব কমিটি আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি উপেক্ষা করায় জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ওই কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, বিশেষায়িত ক্যাডারগুলোর সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারের একটা দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টা বর্তমান সরকারের শুরু থেকেই চলছে। এটা সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য হতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি গত বছর দুই বিচারকের বরখাস্ত এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের চাকরিতে ফিরিয়ে আনার ঘটনা উল্লেখ করেন।
সূত্রে জানা যায়, আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নিয়োগ বিধিমালায় পরিবর্তন আনার সুপারিশ করায় সচিব কমিটির বিরুদ্ধে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে। জনস্বার্থে একজন আইনজীবী গত ২৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, অর্থসচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ সচিব, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে (বিধি) লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। নোটিশের জবাব দেওয়ার জন্য ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রশাসন উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কালের কণ্ঠ যোগাযোগ করলেও কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বিদেশ থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে গত ৩ জুলাই একটি বৈঠক হয়। মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। আইন প্রতিমন্ত্রী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সচিব কমিটি যে সুপারিশ করেছে, তা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। যে কাজ ড্রাফটিং কর্মকর্তাদের দিয়ে হবে, তা কখনোই অন্য ক্যাডার দিয়ে হতে পারে না। ড্রাফটিংয়ের কাজ হচ্ছে আইনের ভেটিং করা, খসড়া তৈরি করা। এ ধরনের কাজে যথেষ্ট এঙ্পার্টিজ থাকতে হয়। যাই হোক বিষয়টি অনেক দূর গড়িয়েছে। এখন সুপারিশ যাতে কোনোভাবেই বাস্তবায়ন না হয় সে চেষ্টাই করা হবে।'
সরকার ২০০৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইন ও বিচার বিভাগ এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ নামের আলাদা দুটি বিভাগ গঠন করে। এর আগে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগটি আইন মন্ত্রণালয়ে একটি শাখা হিসেবে ছিল। ওই শাখায় সর্বোচ্চ পদ ছিল অতিরিক্ত সচিব (ড্রাফটিং)। বিভাগ হওয়ার পর সচিবের পদ সৃষ্টি করা হয়। সচিবের পদটি নিয়োগ বিধিমালার তফসিলভুক্ত করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রশাসন উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে প্রস্তাব পাঠায়।
এর আগে একই প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-পরীক্ষণ উপকমিটিতে পাঠানো হয়। উপকমিটি আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করলেও সচিব কমিটি বেঁকে বসে। অভিযোগ রয়েছে, সচিব কমিটি প্রশাসন ক্যাডারকে বাড়তি সুবিধা দিতে তাদের জন্য ২৫ ভাগ পদ সংরক্ষণ করাসহ সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য উন্মুক্ত করার সুপারিশ করে।
প্রশাসন উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠক হয় গত ১ জুন। কমিটির সুপারিশের খবর জানাজানি হলে আইন মন্ত্রণালয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের গত ৩ জুলাইয়ের সমন্বয় সভায় তোলা হয়। সেখানে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের উপস্থিতিতে কর্মকর্তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, শফিক আহমেদ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের কর্মকর্তা তফসিলে শুধু সচিব পদটি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব সচিব কমিটির কাছে আবার উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। আইনমন্ত্রীর নির্দেশনার পর বিষয়টি নিয়ে গত ২৪ আগস্ট বৈঠকে বসে সচিব কমিটি। কিন্তু বৈঠকে আগের অবস্থানেই অনড় থাকেন কমিটির সদস্যরা। কমিটি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে 'লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং কর্মকর্তা (আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়) নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৯৮' সরকারি কর্ম কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করে চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
জানা গেছে, লেজিসলেটিভ বিভাগের প্রধান কাজ হচ্ছে বিভিন্ন আইনের খসড়া তৈরি করা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা দপ্তর থেকে আসা আইনসংক্রান্ত বিষয়ে মতামত দেওয়া এবং আইনি বিধি-বিধান তৈরি করা। এ ক্যাডারের এন্ট্রি পদ হচ্ছে 'সহকারী সচিব (ড্রাফটিং)'। এ পদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আইন বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর সম্মান ও স্নাতকোত্তর। আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের আইনসংশ্লিষ্ট পদে সাধারণ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন না।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গুণগত মানসম্পন্ন আইন প্রণয়নের জন্য লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ সৃষ্টি করা হয়। নির্বাহী বিভাগের আইন প্রণয়নসংক্রান্ত সামর্থ্য বাড়াতে বিভাগটি সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। সংসদীয় ব্যবস্থাকে আরো কার্যকর করাও এর লক্ষ্য। উদ্দেশ্যগুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং কর্মকর্তা (আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়) নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৯৮ প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালায় সরাসরি নিয়োগ বা ড্রাফটিংয়ের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের বিধান রাখা হয়। অন্য কোনো ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগের বিধান লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিমালা সমর্থন করে না।
লেজিসলেটিভ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, প্রশাসন উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশ লেজিসলেটিভ বিভাগ গঠনের উদ্দেশ্যর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। লেজিসলেটিভ কর্মকর্তা ছাড়া এ বিভাগের বিশেষায়িত পদে দায়িত্ব পালন করা অন্য কোনো ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। অতীতে একমাত্র বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ছাড়া এ বিভাগে (উইং) আগে কেউ প্রেষণে কর্মরত ছিলেন না। পদোন্নতির যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও প্রেষণে নিয়োগের জন্য পদ সংরক্ষণ সরাসরি পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ ব্যাহত করে। পদোন্নতির যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের লেজিসলেটিভ (ড্রাফটিং) পদে প্রেষণে নিয়োগের প্রচলন আছে। তাই সাধারণ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়োগের সুপারিশ একেবারেই অবাস্তব।
আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হিসেবে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের বাইরে গিয়ে বিধিমালায় সংশোধন আনার সুপারিশ করে সচিব কমিটি রাষ্ট্রপতির কর্তৃত্বে আঘাত করেছে। কারণ রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে বিধিমালা জারি করেন। আর আইন মন্ত্রণালয় কোনো বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলে রীতি অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতেই সমস্যার সুরাহা করা হয়। অথচ সচিব কমিটি আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি উপেক্ষা করায় জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ওই কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, বিশেষায়িত ক্যাডারগুলোর সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারের একটা দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টা বর্তমান সরকারের শুরু থেকেই চলছে। এটা সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য হতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি গত বছর দুই বিচারকের বরখাস্ত এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের চাকরিতে ফিরিয়ে আনার ঘটনা উল্লেখ করেন।
সূত্রে জানা যায়, আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নিয়োগ বিধিমালায় পরিবর্তন আনার সুপারিশ করায় সচিব কমিটির বিরুদ্ধে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে। জনস্বার্থে একজন আইনজীবী গত ২৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, অর্থসচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ সচিব, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে (বিধি) লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। নোটিশের জবাব দেওয়ার জন্য ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রশাসন উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কালের কণ্ঠ যোগাযোগ করলেও কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
No comments