অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা ২০১৩ সাল থেকে by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু হচ্ছে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে। এর ফলে বদলে যাবে দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা। তবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ ও মেরামত, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, বিদ্যালয়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির সুরাহা, শিক্ষার্থীর স্থানান্তরপ্রক্রিয়া, বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়, আসবাবপত্র ও শিক্ষা উপকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ধাপে ধাপে। প্রথম বছর প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত হবে শুধু কারিকুলামে। অবকাঠামো না বাড়ানো পর্যন্ত মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম তিনটি শ্রেণী (ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম) প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত হবে।


বিশ্লেষকদের মতে, একসঙ্গে সব বাস্তবায়ন করতে গেলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। এতে গোটা প্রক্রিয়াই ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর শিক্ষকদের মান-মর্যাদা নির্ধারণ করার জন্য 'প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত কমিটি' গঠন করতে হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠন করা এ-সংক্রান্ত উপকমিটি এই সুপারিশ দিয়েছে। কমিটির প্রধান এবং প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. খলিলুর রহমান এই সুপারিশ গতকাল মঙ্গলবার একই মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদারের কাছে জমা দেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে। একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে আরেকটি উপকমিটি গঠন করা হয়। এই উপকমিটি গতকাল প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনটির ওপর ভিত্তি করে আজ বুধবার বিকেলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত মূল উপকমিটি বৈঠক বসছে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. খলিলুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, শিক্ষানীতি অনেক ভালো, কিন্তু বাস্তবায়ন করা কঠিন। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করার বিষয়ে অনেক সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা নির্ধারণ করে নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্য বই বিতরণ করা। নতুন কারিকুলামের মাধ্যমে বর্তমান ব্যবস্থাপনায়ই প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করার কথা। এ ক্ষেত্রে মাধ্যমিক বা নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কিভাবে প্রাথমিক স্তরে সংযুক্ত করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এসব শিক্ষকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন। এ জন্য তাঁদের বিষয়ে 'প্রশাসনিক পুনার্বিন্যাসসংক্রান্ত কমিটি' গঠনের কথা বলেছি। এ কমিটিই নির্ধারণ করে দেবে নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকদের মান-মর্যাদা কিভাবে নির্ধারণ করা হবে।"
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করতে অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠন করা এ-সংক্রান্ত উপকমিটি কয়েক দিন ধরেই একের পর এক বৈঠক করে যাচ্ছে। বৈঠক সূত্র জানায়, গত ১০ অক্টোবর এ কমিটি সর্বশেষ বৈঠক করে। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু হবে ২০১৩ সালে।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, শিক্ষানীতির আলোকে নতুন কারিকুলাম প্রণয়নের কাজ শেষ হবে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে। এই কারিকুলামে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার বর্ণনা দেওয়া হবে। ২০১৩ সালে এই কারিকুলামে ছাপা হওয়া পাঠ্য বই শিক্ষার্থীদের হাতে যাবে।
আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, নতুন কারিকুলামে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্তরে আসবে। এ ক্ষেত্রে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান প্রাথমিক বিদ্যালয়েই হবে। অন্যদিকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হলেও তারা প্রাথমিক স্তরের আওতাভুক্ত হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাথমিক স্তরে স্থানান্তরিত হয়ে যাবে।
এ অবস্থায় শিক্ষকদের নিয়ে বড় ধরনের জটিলতার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এ তিন শ্রেণীর শিক্ষকরা কর্মশূন্য হয়ে পড়বেন। অন্যদিকে বর্তমানে প্রচলিত নিম্ন মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় একীভূত করা হলে শিক্ষকদের মধ্যে সমন্বয় করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এ অবস্থায় দুই ধরনের শিক্ষক একই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত থাকলে উভয়ের মধ্যে মনস্তাত্তি্বক দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের কী হবে? তাঁরা কি চাকরিচ্যুত হবেন, না প্রাথমিক স্তরে যুক্ত হবেন_এমন প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, কোনো শিক্ষককেই চাকরিচ্যুত করা সরকারের লক্ষ্য নয়। তাঁদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা ঠিক করবে 'প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত কমিটি'।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত হবে শুধু কারিকুলামভিত্তিক। এর বাইরে বছরভিত্তিক একটি করে নতুন শ্রেণী চালুকরণের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণী চালু করা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে একটি করে অতিরিক্ত শ্রেণী চালু করে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। তবে মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকরা প্রাথমিক স্তরে যোগ দিলে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে না। এ ক্ষেত্রে শুধু শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করা বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা হবে ১২ জন। এর মধ্যে ছয়জন হবেন মহিলা।

No comments

Powered by Blogger.