কাদাপানিতে নাকাল রাজধানীবাসী
বর্ষা মৌসুমে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ২ বছর একযোগে ড্রেনেজ উন্নয়ন কাজ করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা। এরপরও বৃষ্টি হলেই জলজট ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে; কাদাপানিতে নাকাল হচ্ছেন নগরবাসী। কিছুদিন পরই পুরোদমে শুরু হবে বর্ষা। রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের বর্তমান চিত্র বলে দিচ্ছে, সেই সময় জলজট ও জলাবদ্ধতা ভয়াবহরূপ ধারণ করবে। গত কয়েকদিন রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এতে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ওইসব এলাকার বাসিন্দারা চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পুরান ঢাকার হাজারীবাগের কোম্পানীঘাট থেকে হাজারীবাগ পার্ক পর্যন্ত সড়ক এখন হাঁটুপানির নিচে। প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে ওই সড়কের করুণ অবস্থার কারণে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পুরান ঢাকার কামালবাগ থেকে চকবাজার পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সড়কও বেহাল। ইট, খোয়া, বালু, পাথর উঠে মাটি বেরিয়ে পড়া সড়কে বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান কাদাপানি জমছে। যাত্রাবাড়ী এলাকার সড়কগুলো সামান্য বৃষ্টিতে পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। একই চিত্র শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, আরামবাগ, পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড ও জুরাইনে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করলেও মহাখালী থেকে এয়ারপোর্ট সড়কের নিকুঞ্জ হয়ে কাকলী পর্যন্ত একাংশ পানির নিচে ডুবে যাচ্ছে। ব্যস্ততম এ সড়কে চলাচল করা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়ছে। আর পানি জমে থাকায় সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। মিরপুর থেকে এয়ারপোর্ট রোডে চলাচলের লুপের গোড়ায় হাঁটু সমান পানি জমে থাকায় ফ্লাইওভারে উঠে পড়ছে সংশ্লিষ্টরা। দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ও বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, ভোগান্তি যাত্রাবাড়ী এলাকার মানুষের পিছু ছাড়ছে না। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের সময় দীর্ঘ সময় আমরা ভোগান্তির শিকার হয়েছি। এখন নতুন করে যোগ হয়েছে জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টি হলে প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে জলজট ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। আমরা এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই। জানা গেছে, মিরপুরের কালশি, ধানমণ্ডি-২৭ নম্বরের শেষাংশ, ৩২ নম্বর সড়ক, মধুবাগ, লালবাগের শহীদনগর, কুড়িল প্রগতি সরণি সড়ক, রোকেয়া সরণি, বাড্ডা এলাকায় বৃষ্টি হলেই জলজট ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, সামান্য বৃষ্টির কারণে মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, আরামবাগ এলাকার সড়কগুলোয় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ইট, খোয়া উঠে মাটি বেরিয়ে পড়া এসব সড়ক গ্রামের মেঠোপথের রূপ ধারণ করেছে।
অসতর্ক চলাচলে পা পিছলে কর্দমাক্ত হচ্ছেন পথচারীরা। মোটর বাইক, রিকশা, সিএনজি, মাইক্রোবাস সড়কের গর্ত থেকে ঠেলে, টেনে উঠাতে দেখা গেছে শুক্র ও শনিবার। যমুনা ফিউচার পার্কের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আহমদ আলী যুগান্তরকে বলেন, বৃষ্টি হলেই রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে পানি জমে যাচ্ছে। এসব জলাবদ্ধ সড়কে গাড়িতে চলাচল করাও কষ্টকর। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নগরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি। বর্ষা মৌসুমে এত খোঁড়াখুঁড়ি হলে নগরবাসীর ভোগান্তির অন্ত থাকবে না। এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর আবদুর রাজ্জাক যুগান্তরকে বলেন, বৃষ্টিতে ডিএনসিসি অংশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে না। তবে বেশি বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনে কিছুটা সময় লাগছে। তিনি আরও বলেন, মহাখালী-এয়ারপোর্ট রোডের নিকুঞ্জ থেকে কাকলী পর্যন্ত সড়কের একাংশে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে; এর কারণ, পাশের জলাধার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের কারণে ভরাট করা হয়েছে। ওই সড়কের পানি নিষ্কাশনের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। সেটা নিয়ে এখনই চিন্তা-ভাবনা করতে হবে, হয়তো ভবিষ্যতে সেখানে ড্রেনেজ সিস্টেম তৈরি করা লাগবে। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্যব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করা হয়েছে। এই টিমের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে একযোগে কাজ করছি আমরা। পুরান ঢাকার কিছু এলাকা, আরামবাগ ও শান্তিনগর এলাকায় অল্প পরিসরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সেটা নিরসনেও জোর তৎপরতা চলছে। এর বাইরে অন্য কোনো এলাকায় বড় ধরনের কোনো জলাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী কামরুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, এখনকার বৃষ্টিতে কোথাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে না। কিছু কিছু এলাকায় জলজট সৃষ্টি হলেও সেসব ২-৩ ঘণ্টার ব্যবধানে নিষ্কাশন করা সম্ভব হচ্ছে। তারপরও ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে পানি নিষ্কাশন পাম্পগুলো পরীক্ষা করে ঠিকঠাক করা হয়েছে। প্রয়োজন দেখা দিলে পাম্পিং করে জলাবদ্ধতা দূর করা হবে।
No comments