ভেনিজুয়েলায় ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ বিক্ষোভে গুলিতে নিহত ২২
সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা। বৃহস্পতিবার দেশটির রাজধানী কারাকাসে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের রাতভর সংঘর্ষে আরও অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার ভেনিজুয়েলার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংঘর্ষে আরও অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। এর ফলে শুক্রবার পর্যন্ত গত তিন সপ্তাহের বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা ২২ জনে দাঁড়িয়েছে। বিক্ষোভের ফলে আইন-শৃঙ্খলারও চরম অবনতি হয়েছে। শুরু হয়েছে লুটপাট। খবর সিএনএন ও আল জাজিরার। দীর্ঘদিন ধরে চলা অর্থনৈতিক সংকটের জেরে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে গত তিন সপ্তাহ ধরে এই বিক্ষোভ চলছে। ২০১৪ সালের পরে এটাকে সবচেয়ে বড় মাদুরোবিরোধী বিশাল জনসমাগম বলে বলা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে মলোটোভ ককটেল বা পেট্রুল বোমা নিক্ষেপ করছেন। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা বাহিনীও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। শুক্রবার কারাকাস ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে চলমান চরম অর্থনৈতিক সংকট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাবের জেরে ১৯ এপ্রিল বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পদত্যাগ দাবি করেন। প্রথম দিনই বিক্ষোভের জেরে নিহত হন দুই শিক্ষার্থী ও এক পুলিশ সদস্য। বিক্ষোভের মাঝেই খবর আসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে ৫০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে ভেনিজুয়েলা। দেশটির রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির মার্কিন সাবসিডিয়ারি শিটগো পেট্রোলিয়ামের তহবিল থেকে এ অর্থ দেয়া হয়, যা প্রকারান্তরে দেশটির জনগণের অর্থ। এ অনুদানের তথ্য চলমান বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালে। যে সরকার দেশের জনগণের নিত্যদিনের চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে সেই সরকার বিদেশি রাষ্ট্রনেতার শপথ অনুষ্ঠানে মিলিয়ন ডলার অনুদান দেবে, এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি বিক্ষোভকারীরা। সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ভিন্ন মাত্রা পায়। রাজধানী কারাকাস ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। লাখো মানুষ পথে নেমে মিছিল করেন। মাদুরোর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। মাদুরোপন্থী ও তার বিরোধীদের মধ্যে কারাকাসসহ বেশ কয়েকটি শহরে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। চলে লুটপাট।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও বিক্ষোভ দমনে পুলিশও শক্তি প্রয়োগ করে। বিরোধী নেতারা অভিযোগ করছেন, সরকার ‘সশস্ত্র লুটেরাদের’ পাঠাচ্ছে তাদের সম্পদ লুট করার জন্য। বিরোধী নেতা কার্লোস ইয়েনেজ এ অবস্থাকে ‘যুদ্ধের মতো’ বলে উল্লেখ করেছেন। বিরোধী দলের মাদুরোকে ‘স্বৈরশাসক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। অপরদিকে মাদুরো বলছেন, বিরোধীরা শক্তি প্রয়োগ করে তার সরকারের পতন ঘটাতে চাইছে। ভেনিজুয়েলার ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক এল আয়সামি চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভকে ‘রীতিবিরুদ্ধ যুদ্ধ’ বলে মন্তব্য করেছেন। এর পেছনে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও অপরাধী চক্রগুলোর ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। চলমান বিক্ষোভের মাঝেই নতুন করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছেন বিরোধীরা। শনিবার ও সোমবার দেশব্যাপী এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। চলমান সংকট নিরসনে প্রেসিডেন্ট মাদুরোর সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ নেতা হেনরিকে ক্যাপরিলেস। প্রেসিডেন্ট মাদুরো মনে করছেন সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধন আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। ভেনিজুয়েলায় সমাজতন্ত্রের পতন চায়। তাই তার সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন ক্রমাগত ঘৃণা ছড়াচ্ছে। এর জেরেই মাদুরো দেশটিতে মার্কিন অটোমোবাইল জায়ান্ট জেনারেল মোটরসের (জিএম) কারখানাসহ সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
No comments