বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধার : গ্রেফতার হয়নি কেউ
ঝিনাইদহের পোড়াহাটি গ্রামের জঙ্গি আস্তানায় চালানো অপারেশন সাউথ প (দক্ষিণের থাবা) সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হলেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। শনিবার বিকালে ঘটনাস্থলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটি জানান খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মো. দিদার আহম্মেদ। ডিআইজি বলেন, জেএমবির সদস্য নওমুসলিম আবদুল্লাহ ওরফে প্রভাতের বাড়ি থেকে ২০টি রাসায়নিক কনটেইনার, ৩টি সুইসাইড ভেস্ট, ১০টি মাইনসদৃশ বোমা, প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রিক সার্কিট, ১০০ প্যাকেট লোহার বল, ১৫টি জিহাদি বই, ১টি পিস্তল, ৭ রাউন্ড গুলি, ১টি প্রেসার কুকার বোম্ব, ১টি চাপাতি এবং বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ৩টি সুইসাইড ভেস্ট, ৫টি মাইন ও কয়েকটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ওই বাড়িতে আবদুল্লাহ ছাড়াও ৫-৬ জন প্রথম সারির জঙ্গির আসা-যাওয়া ছিল। বাড়িটি তাদের আস্তানা ছিল। আস্তানাটি বিস্ফোরক তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহার হতো। তিনি বলেন, এখানে বিভাগীয় পর্যায়ের জঙ্গিরা অবস্থান করত। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলবে।
এ মুহূর্তে এ জেলায় আর কোনো জঙ্গি আস্তানা নেই। দিদার আহম্মেদ আরও বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ঘিরে রাখা ঠনঠনে পাড়ার টিনশেড বাড়িটিতে শনিবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযান শুরু হয়। ঢাকা থেকে আসা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয় দলের ৭ সদস্য বাড়িতে ঢোকেন। সঙ্গে ছিলেন পুলিশের ৪ শতাধিক সদস্য। অভিযানের সময় এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ করে রাখা হয়। ঝিনাইদহ দমকল বাহিনীর একটি ইউনিট সারাক্ষণ সতর্ক অবস্থায় ছিল। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ডিআইজি খুলনা রেঞ্জ মো. দিদার আহম্মেদ। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান, ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব আলম তালুকদার, জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুর রউফ মণ্ডল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কোটচাঁদপুর সার্কেল রেজাউল ইসলাম। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে একটি এবং কিছু সময় পরে আরও ৪টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। অভিযানে আবদুল্লাহর বাড়িটি সম্পূর্ণ ধসে যায়। শুক্রবার রাত ৮টা থেকে জারি করা ১৪৪ ধারা শনিবার বিকাল ৩টার দিকে প্রত্যাহার করা হয়। এলাকায় করা হয় বিদ্যুৎ সরবরাহ। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হিরন বলেছেন, আবদুল্লাহ ৪ বছর আগে মুসলমান হয়েছে।
এর পর সে তার আগের স্ত্রী ও ২ ছেলেকে ত্যাগ করে পাশের ধানহাড়িয়া গ্রামের আবদুল লতিফের মেয়েকে বিয়ে করে। সেখানেও তার একটি সন্তান হয়। সে বেশ কিছুদিন ধরে পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গাতে বসবাস করছে। মাঝে মধ্যে তাকে এলাকায় দেখা গেছে। মেম্বার শওকত আলী বলেন, নওমুসলিম আবদুল্লাহ এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এমনটি তারা ধারণা করতে পারেননি। সে আহলে হাদিসের অনুসারী ছিল। গ্রামবাসী জানান, তার স্ত্রী প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতেন না। বিশেষ দরকারে বাড়ির বাইরে এলে তার চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যেত না। প্রতিবেশী আকরাম হোসেন বলেন, সে কখনও কখনও ছোট ছোট ব্যবসা করেছে। আবার কখনও নসিমন চালাত। পাম্পেও কাজ করেছে। তিন থেকে চার মাস হল তাকে একটি মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এ মুহূর্তে সে ও তার পরিবার কোথায় আছে তা কেউ জানে না।
No comments