জ্বলছে বাংলাদেশ by কে. আনিস আহমেদ
গত
মাস থেকে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১০০’র বেশি বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। এর বেশির
ভাগ মারা গেছে বাসে, সিএনজিতে পেট্রলবোমা হামলায়। ক্ষমতার বাইরে থাকা
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ডাকা দেশব্যাপী অবরোধ চলাকালে এসব হামলা হয়েছে।
বিএনপি ও তাদের ইসলামপন্থি মিত্র জামায়াতে ইসলামীর দাবি তারা গণতান্ত্রিক
অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের কর্মপদ্ধতি
অস্বস্তিকরভাবে সহিংস। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পুলিশের হাতে ধরা পড়া
অভিযুক্ত দোষীদের বেশির ভাগ বিএনপি বা জামায়াতের কর্মী। প্রধান একটি দলের
এমন বিদ্রোহী সহিংসতার আশ্রয় নেয়া এ অঞ্চলে রাজনৈতিক প্রতিবাদের রীতি থেকে
বিস্ময়কর প্রস্থান। অতীতে বাংলাদেশী রাজনৈতিক সহিংসতাগুলো হতো রাজনৈতিক
কর্মসূচির নির্ধারিত সময় ও স্থানে- উদাহরণস্বরূপ বড় মিছিল বা সভায়। আর
সহিংসতার শিকার বেশির ভাগ ব্যক্তি হতো রাজনৈতিক ক্যাডার বা পুলিশ। বেসামরিক
মানুষদের লক্ষ্য করে হত্যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভয়ঙ্কর নতুন এক রীতি।
বিএনপি সমর্থকদের যুক্তি, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কঠোর নীতি তাদেরকে এতো
চরম পদ্ধতিতে যেতে বাধ্য করেছে। বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ
জড়ো করা হয়েছে আর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ব্যাপকহারে দায়মুক্তি উপভোগ করেছে।
জানুয়ারি থেকে গণগ্রেপ্তার হাজার ছুঁয়েছে। আরও আতঙ্কের বিষয় হলো,
বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা সাত সপ্তাহ আগে তাদের কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে
আনুমানিক তিন ডজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। বিএনপির যাবতীয়
যৌক্তিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে, দলটির কর্মকাণ্ড গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার
আকাঙ্ক্ষা থেকে পুরোপুরি অনুপ্রাণিত নয়। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার
নির্বাসিত পুত্র, তারেক রহমান যথাক্রমে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের গুরুতর
অভিযোগের মুখোমুখি। রায় হলে তা তাদেরকে আগামী নির্বাচনে অযোগ্য বলে ঘোষণা
করবে। বিএনপি ও জামায়াত এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে
উদ্বিগ্ন যা ’৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ১৩ জনের
মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। অভিযুক্তদের বেশির ভাগই জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর
জামায়াত আশা করছে ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা সরকারকে উচ্ছেদ করলে বিচার
প্রক্রিয়া বানচাল হতে পারে।
২০১৪’র জানুয়ারিতে, বিএনপি ও জামায়াতের সহিংস বিরোধিতা আর বর্জন সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন সম্পন্ন করে। আওয়ামী লীগ সঠিক যুক্তিই দেখিয়েছিল যে, বিতর্কিত ওই নির্বাচন অনুষ্ঠান ছিল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। কিন্তু জনগণের দৃষ্টিতে, যে নির্বাচনে ৩০০ সংসদ সদস্যের ১৫৩ জন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া আসন অর্জন করে তাতে প্রকৃত ম্যান্ডেট অর্জিত হয় না। (উল্লেখ্য: ওই ১৫৩ আওয়ামী সংসদ সদস্যের একজন আমার ভাই)। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বর্তমান সঙ্কটের নিশ্চিত উত্তর বলে মনে হতে পারে। কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতি তার থেকেও অনেক বেশি জটিল। বিএনপি চাইবে অতীতে যারা নির্বাচন তদারকি করেছেন তাদের মতো অনির্বাচিত কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’-এর তত্ত্বাবধানে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। তবে, সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার সামরিক বাহিনীর সমর্থনে তাদের বৈধ মেয়াদ অতিক্রম করে প্রায় দু’বছর বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল। একারণে আওয়ামী লীগ ওই ধারা বাতিল করেছে। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির কথা শুনতে না চাইলেও, জনগণ এখনও দাবি করছে যে, দলগুলো এমন একটি পদ্ধতিতে উপনীত হোক যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে এবং যা সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। অনেক ভোটার বিএনপির সহিংস কৌশল ঘৃণা করতে পারে কিন্তু আওয়ামী লীগ যত বেশি কর্কশভাবে নতুন নির্বাচনে বিএনপির দাবি প্রত্যাখ্যান করছে, তারা ততটাই জনগণের যুক্তিসম্মত উদ্বেগ উপেক্ষা করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
এ অচলাবস্থা বাংলাদেশকে দুর্দশার মধ্যে নিমজ্জিত করেছে। বোমা হামলার শিকার ব্যক্তিরা সব থেকে কষ্টে আছে কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষও ভোগান্তির মধ্যে আছে। মাঠে নিজেদের শস্য পচতে দেখছে কৃষকরা। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না। সচল থাকার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত লোকসান দিতে হচ্ছে। ১৫ লাখেরও বেশি নবীন নিশ্চিন্তভাবে তাদের জাতীয় বোর্ড পরীক্ষা দিতে পারেনি। বিএনপি আর তাদের জোট শরিকরা যদি অব্যাহত বিদ্রোহী কৌশলে নিবেদিত থাকে তাহলে, দেশের কষ্টার্জিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সফলতা ধ্বংসের মুখে চলে যেতে পারে। আওয়ামী লীগ মনে করে বিদেশী পর্যবেক্ষক আর দেশের ভোটাররা বিএনপি সম্পৃক্ত সহিংসতা নিয়ে অতিরিক্ত ক্ষমাশীল। এর মধ্যে রয়েছে বিএনপি শেষবার ক্ষমতায় থাকাকালীন বোমা হামলার ঘটনা যেখানে শীর্ষ আওয়ামী নেতারা নিহত হয়েছিলেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ মনে করে, তাদের উন্নয়নের রেকর্ড বা ধর্মনিরপেক্ষতা ও সন্ত্রাস বিরোধিতার প্রতি তাদের সংকল্পের বিষয়ে তারা যথেষ্ট কৃতিত্ব পান না। আর বিএনপি যখন সন্ত্রাসী সহিংসতাকে সমর্থন বেছে নিয়েছে, আওয়ামী লীগ সত্যিই হতে পারে দুই দলের মধ্যে অপেক্ষাকৃত উত্তম। কিন্তু গণতন্ত্রে, ওই যুক্তিতে জয়ী হওয়ার জন্য শেষমেশ শুধুমাত্র একটাই পথ আছে তা হলো: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
লেখক: ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশক। ‘গুড নাইট, মি. কিসিঞ্জার’ ও ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন মাই হ্যান্ডস’ বইয়ের লেখক।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে ২৩শে ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ বার্নিং’ শীর্ষক লেখার অনুবাদ
২০১৪’র জানুয়ারিতে, বিএনপি ও জামায়াতের সহিংস বিরোধিতা আর বর্জন সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন সম্পন্ন করে। আওয়ামী লীগ সঠিক যুক্তিই দেখিয়েছিল যে, বিতর্কিত ওই নির্বাচন অনুষ্ঠান ছিল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। কিন্তু জনগণের দৃষ্টিতে, যে নির্বাচনে ৩০০ সংসদ সদস্যের ১৫৩ জন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া আসন অর্জন করে তাতে প্রকৃত ম্যান্ডেট অর্জিত হয় না। (উল্লেখ্য: ওই ১৫৩ আওয়ামী সংসদ সদস্যের একজন আমার ভাই)। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বর্তমান সঙ্কটের নিশ্চিত উত্তর বলে মনে হতে পারে। কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতি তার থেকেও অনেক বেশি জটিল। বিএনপি চাইবে অতীতে যারা নির্বাচন তদারকি করেছেন তাদের মতো অনির্বাচিত কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’-এর তত্ত্বাবধানে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। তবে, সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার সামরিক বাহিনীর সমর্থনে তাদের বৈধ মেয়াদ অতিক্রম করে প্রায় দু’বছর বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল। একারণে আওয়ামী লীগ ওই ধারা বাতিল করেছে। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির কথা শুনতে না চাইলেও, জনগণ এখনও দাবি করছে যে, দলগুলো এমন একটি পদ্ধতিতে উপনীত হোক যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে এবং যা সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। অনেক ভোটার বিএনপির সহিংস কৌশল ঘৃণা করতে পারে কিন্তু আওয়ামী লীগ যত বেশি কর্কশভাবে নতুন নির্বাচনে বিএনপির দাবি প্রত্যাখ্যান করছে, তারা ততটাই জনগণের যুক্তিসম্মত উদ্বেগ উপেক্ষা করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
এ অচলাবস্থা বাংলাদেশকে দুর্দশার মধ্যে নিমজ্জিত করেছে। বোমা হামলার শিকার ব্যক্তিরা সব থেকে কষ্টে আছে কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষও ভোগান্তির মধ্যে আছে। মাঠে নিজেদের শস্য পচতে দেখছে কৃষকরা। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না। সচল থাকার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত লোকসান দিতে হচ্ছে। ১৫ লাখেরও বেশি নবীন নিশ্চিন্তভাবে তাদের জাতীয় বোর্ড পরীক্ষা দিতে পারেনি। বিএনপি আর তাদের জোট শরিকরা যদি অব্যাহত বিদ্রোহী কৌশলে নিবেদিত থাকে তাহলে, দেশের কষ্টার্জিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সফলতা ধ্বংসের মুখে চলে যেতে পারে। আওয়ামী লীগ মনে করে বিদেশী পর্যবেক্ষক আর দেশের ভোটাররা বিএনপি সম্পৃক্ত সহিংসতা নিয়ে অতিরিক্ত ক্ষমাশীল। এর মধ্যে রয়েছে বিএনপি শেষবার ক্ষমতায় থাকাকালীন বোমা হামলার ঘটনা যেখানে শীর্ষ আওয়ামী নেতারা নিহত হয়েছিলেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ মনে করে, তাদের উন্নয়নের রেকর্ড বা ধর্মনিরপেক্ষতা ও সন্ত্রাস বিরোধিতার প্রতি তাদের সংকল্পের বিষয়ে তারা যথেষ্ট কৃতিত্ব পান না। আর বিএনপি যখন সন্ত্রাসী সহিংসতাকে সমর্থন বেছে নিয়েছে, আওয়ামী লীগ সত্যিই হতে পারে দুই দলের মধ্যে অপেক্ষাকৃত উত্তম। কিন্তু গণতন্ত্রে, ওই যুক্তিতে জয়ী হওয়ার জন্য শেষমেশ শুধুমাত্র একটাই পথ আছে তা হলো: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
লেখক: ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশক। ‘গুড নাইট, মি. কিসিঞ্জার’ ও ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন মাই হ্যান্ডস’ বইয়ের লেখক।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে ২৩শে ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ বার্নিং’ শীর্ষক লেখার অনুবাদ
No comments