ডিসিসি নির্বাচন- নির্বাচিত সংস্থা দায়িত্বে আসুক
ঢাকা সিটি করপোরেশন বা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে এবং নির্বাচিত মেয়র ও কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালের মে মাসে। সময়মতো নির্বাচনের আয়োজন না হওয়ায় সাড়ে চার বছরের বেশি বাড়তি দায়িত্ব পালন করে যান বিএনপি নেতা ও মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং কমিশনাররা। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর দেশব্যাপী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হতে থাকে। এমন পটভূমিতে অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করেছিল আওয়ামী লীগ। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল_ অচিরেই রাজধানীর নাগরিক সেবা পরিচালনার ভার নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের হাতে অর্পিত হবে। কিন্তু তার পরিবর্তে ২০১১ সালের নভেম্বর এই সিটি করপোরেশনকে উত্তর ও দক্ষিণ, এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। মেয়রের দায়িত্ব অর্পিত হতে থাকে একের পর এক প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের ওপর, যাদের জবাবদিহির বালাই নেই। মহাজোট সরকার বলেছিল, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্যই এই বিভাজন। তবে এ বিষয়ে নাগরিক সমাজে অভিন্ন মত ছিল না। বিভাজনের পর তিন বছরের বেশি অতিক্রান্ত হলেও রাজধানী অধিবাসীদের নাগরিক সুবিধাদির ক্ষেত্রে আগের সময়ের তুলনায় তেমন হেরফের হয়েছে, এমনটি প্রতীয়মান হয় না। এ সময়ে একাধিকবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা শোনা গেলেও কোনো না কোনো গেরোয় সেটা আটকা পড়ে গেছে। বিষয়টিকে নাগরিক সমাজ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। এখন নতুন করে নির্বাচনের কথা উঠেছে এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। দেশের অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজধানীর দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পেছনে ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্যোগকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট কীভাবে গ্রহণ করবে, সেটা বড় প্রশ্ন। তারা সরকার পতনে রাজপথে নেমেছে এবং প্রায় দুই মাস ধরে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। তিন সপ্তাহ ধরে চলছে শুক্র ও শনিবার বাদ দিয়ে টানা হরতাল। আন্দোলন সফল করায় জনগণের সক্রিয় ভূমিকা পরিলক্ষিত হয় না। এমনকি জোটের নেতাকর্মীদেরও রাজপথে দেখা মেলে না। তাদের একমাত্র ভরসা পেট্রোল বোমা ও ককটেল। এ আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটানো যাবে বলেও মনে হয় না। এখন 'আন্দোলন' ছেড়ে তারা কি স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অংশ নেবে? বিএনপি জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল। কিন্তু ওই নির্বাচনের পরপরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তারা অংশ নিয়ে বিপুল সংখ্যক আসনে জয়ী হয়। এখন তারা সরকার উৎখাতে মরিয়া। আগামী মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করার আগেই তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে, নাকি তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে_ সেটাই দেখার বিষয়। নির্বাচন কমিশন বলছে, তাদের প্রস্তুতি কাজ সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই শেষ হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে নতুন কোনো 'টেকনিক্যাল' সমস্যা সৃষ্টি হবে না, এটাই নগরবাসী প্রত্যাশা করে। নির্বাচিত কর্তৃপক্ষের হাতেই আসুক নাগরিক সেবার ভার। স্থানীয় সরকারের কোনো সংস্থার নির্বাচনই দলীয় ভিত্তিতে হয় না। কিন্তু এটা হচ্ছে কাগুজে বিষয়। বাস্তবে প্রতিটি স্তরেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং আরও কয়েকটি দল দলীয়ভাবে নির্বাচন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্বাভাবিক সময়ে অনুষ্ঠিত হলেও এমনটিই দেখা যেত। এখন বিএনপি এবং তাদের জোট কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, সেটাই দেখার বিষয়।
No comments