অবরোধ-হরতালে ক্ষতি ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা -সংসদে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে ক্ষমতায় আরোহণের চেষ্টা কোন
রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ হতে পারে না। শুধু নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থেই বিএনপি
নেত্রী হরতাল দিচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াত পরস্পরের দোসর। তাদের নাশকতার একটাই
উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং দুর্নীতির মামলায় সাজা থেকে খালেদা
জিয়াকে রক্ষা করা। জনসম্পৃক্ততাবিহীন এই কার্যক্রমে নিজেদের অস্তিত্ব
টিকিয়ে রাখতেই নাশকতা চালানো হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের হরতালের নামে নাশকতা ও
ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানি ও অন্যান্যভাবে দেশের ১ লাখ ২০
হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ১০১ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ সকল
কার্যক্রম দেশের প্রচলিত আইনে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার উপযোগী অপরাধ। বুধবার
সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সংসদ
সদস্য মনিরুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। টেবিলে উত্থাপিত
প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৫ই জানুয়ারি হতে টানা ৫২ দিন ধরে
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট হরতাল-অবরোধের নামে দেশে এক চরম নৈরাজ্যের
সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতার লিপ্সায় অন্ধ হয়ে তারা দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ,
দেশের নিরপরাধ সাধারণ নারী পুরুষ এমনকি নিষ্পাপ শিশুদেরকেও আগুনে পুড়িয়ে
হত্যা করছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম প্রক্রিয়া হলো আগুনে পুড়িয়ে
মানুষ মারা। আর সেই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা আরোহণের চেষ্টা কোন রাজনৈতিক দলের
মতাদর্শ হতে পারে না। পেটের তাগিদে কাজ করতে বেরিয়ে বিগত ৫২ দিনে ১০১ জন
মানুষ মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছে যার অধিকাংশ আগুনে পুড়ে মারা গেছে।
পেট্রলবোমাসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কাজে সহস্রাধিক ব্যক্তি মারাত্মকভাবে
আহত হয়েছেন। এক হাজার ১৭৩টি যানবাহন আগুনে পুড়ে গেছে ও ভাঙচুর করা হয়েছে।
৬টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, ২৫ দফায় ট্রেনে নাশকতা করা হয়েছে। তিনি
প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন বিএনপি-জামায়াত জোট এই নাশকতা করছে? তারা জানে ২০১৪
সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ৫ বছর। কিন্তু তা
সত্ত্বেও কেন এই নাশকতা? কেউ কেউ এই কার্যক্রমকে রাজনৈতিক কার্যক্রম বলতে
চায়। কিন্তু আসল কারণটা অন্য। সংসদ নেতা বলেন, বিএনপি-জামায়াত পরস্পরের
দোসর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ পর্যন্ত ১৪ জনের
মৃত্যুদণ্ড, ২ জনকে আমৃত্যু কারাবাস, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া
হয়েছে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি সম্পূর্ণ অনুসরণ করে এই বিচার সম্পন্ন হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের মধ্যে মাত্র একজনের রায় কার্যকর করা হয়েছে।
বাদবাকিদের রায় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কার্যকর করা হবে। এই রায়গুলোর
বাস্তবায়ন বন্ধ করা বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার অন্যতম কারণ। তিনি বলেন,
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার পুত্রের দুর্নীতির ৯টি
মামলা আদালতে বিচারাধীন। শুধু জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ
৭১ হাজার টাকা আত্মসাতের বিচার চলছে। এই মামলা বিলম্বিত করার জন্য নানারকম
কারণ দেখিয়ে মামলায় বারবার সময় নেয়া হয়েছে। এই মামলার সাজা থেকে বাঁচার
উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট নাশকতার কাজ করছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার
দুর্নীতির অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে আরও অনেক মামলা বিএনপি জোটের নেতাদের
বিরুদ্ধে রয়েছে। এই মামলাগুলো থেকে বাঁচার জন্য তারা পেট্রলবোমা মেরে মানুষ
মারছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী সম্প্রতি আন্দোলনে ৭ দফা দাবি
দিয়েছেন। এর মধ্যে জনগণের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য কোন দাবি নেই, সব দাবি
ব্যক্তিস্বার্থের দাবি। আর এ কারণেই জনগণ তার সঙ্গে নেই। তিনি বলেন, বিএনপি
৫২ দিন ধরে অবরোধ দিয়েছে। প্রায় সব কার্যদিবসে হরতাল দিয়েছে। কিন্তু
বাস্তব অবস্থা হচ্ছে দেশব্যাপী যানবাহন চলছে, ঢাকা শহরে হরতাল-অবরোধেও
যানজট হচ্ছে, শুধু দূরপাল্লার যানবাহন কম চলছে। জনসম্পৃক্ততাবিহীন এই
কার্যক্রমে তাই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জামায়াত-শিবিরের কর্মী,
বিএনপির বিপথগামী কিছু লোক এবং সন্ত্রাসীদের দিয়ে এই নাশকতা চালানো হচ্ছে।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের
মানুষ অত্যন্ত বুদ্ধিমান। তারা আপনার ব্যক্তি স্বার্থের আন্দোলনে নেই।
আপনার নেতাকর্মীরা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। যদি নাশকতা এবং হত্যা
বন্ধ না হয় সরকার সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ
করবে। তাই আমার অনুরোধ বন্ধ করুন এই হত্যাকাণ্ড, বন্ধ করুন এই সন্ত্রাস।
তিনি বলেন, দেশের বিকাশমান অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এ আন্দোলন কার
স্বার্থে করা হচ্ছে-এটি আজ সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাসা। দেশের প্রায় ১৫ লাখ
এসএসসি পরীক্ষার্থীর ভাগ্য নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। নিজের নাতি-নাতনি সন্তানের
শিক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সাধারণ নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুদের
শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার এ প্রক্রিয়া আর চলতে দেয়া যায় না। এ জন্য
জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের আইনশৃঙ্খলা
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ডে
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠী, অর্থায়নকারী বা পরিকল্পনাকারীদের কর্মকাণ্ড
সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে
যাচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা
গ্রহণসহ গ্রেপ্তার করছে। তাদের এ ধরনের অপরাধ মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার উপযোগী।
অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির মালিকদের সহায়তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী
বিরোধী জোটের অবরোধ-হরতাল চলাকালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেড় শতাধিক গাড়ির মালিককে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মালিকদের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেন তিনি। প্রথম পর্যায়ে এদিন ১৫৬টি গাড়ির ১৪৬ মালিককে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তার চেক হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। মোট চার কোটি ২০ লাখ টাকা এদিন সহায়তা হিসেবে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, চলমান অবরোধ-হরতালে ১৮০০ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের জন্য আবেদন করেছেন ৮২৩ গাড়ির মালিক। যার মধ্যে আগুনে পুড়েছে ২৮৭টি এবং ভাঙচুরের শিকার ৫৩৬ গাড়ি। ওবায়দুল কাদের বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী প্রথম পর্যায়ের অনুদান দিলেন। অন্য যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পর্যায়ক্রমে তারাও অনুদান পাবেন। ড্রাইভার-হেলপার যারা অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন তারাও প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পাবেন। এ সময় গাড়ির মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর যে সহানুভূতি রয়েছে তারই বহিঃপ্রকাশ এটি। অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির মালিকদের সহায়তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী
বিরোধী জোটের অবরোধ-হরতাল চলাকালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেড় শতাধিক গাড়ির মালিককে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মালিকদের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেন তিনি। প্রথম পর্যায়ে এদিন ১৫৬টি গাড়ির ১৪৬ মালিককে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তার চেক হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। মোট চার কোটি ২০ লাখ টাকা এদিন সহায়তা হিসেবে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, চলমান অবরোধ-হরতালে ১৮০০ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের জন্য আবেদন করেছেন ৮২৩ গাড়ির মালিক। যার মধ্যে আগুনে পুড়েছে ২৮৭টি এবং ভাঙচুরের শিকার ৫৩৬ গাড়ি। ওবায়দুল কাদের বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী প্রথম পর্যায়ের অনুদান দিলেন। অন্য যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পর্যায়ক্রমে তারাও অনুদান পাবেন। ড্রাইভার-হেলপার যারা অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন তারাও প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পাবেন। এ সময় গাড়ির মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর যে সহানুভূতি রয়েছে তারই বহিঃপ্রকাশ এটি। অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
No comments