নেই, তারা নেই! by লবী রহমান
'নেই তারা চলে গেছে ছেড়ে এ ভুবন/ফিরে আসবে না তারা কোন দিন/
কিছু স্মৃতি কোন দিনও হবে না বিলীন/নেই! তারা নেই!
হয়তো সুধী পাঠক ভাববেন, সবার কাছে এটা অনুযোগ, অভিযোগ, অভিমান নয়_ এ বিয়োগ আমার কেবলই অনুভূতি। আমি বড়ই ক্লান্ত। জীবনযুদ্ধের রাস্তা যে এত লম্বা, যা ছিল কল্পনাতীত। ধরণীকে বলব না স্বার্থপর, বিবেকহীন আর কোলমেঘা বিচারক কেবলই বলব নিয়তির নির্মম পরিহাস। আর বাস্তবতার শিকল পরা পায়ে সেই জীবনযুদ্ধের সীমাহীন রাস্তায় পথিকের বেশে বলব, পার্থিক জীবনে যা কিছু ঘটে তাই-ই জীবনের অংশ। আর যারা আমাদের ৫৭টি পরিবারের মতো স্বজনহারার একবুক ব্যথা নিয়ে বয়ে চলেছেন সেই পাঠকদের উদ্দেশে বলব, বছরের প্রতিটি দিনই আমাদের জন্য কষ্টের, বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাসটা কেন জানি সহ্য হয় না_ মনে হয় ফেব্রুয়ারি শব্দটা না শুনি... এ মাসে মানুষ ফাগুনের আনন্দে উল্লসিত হয়ে মনের সমস্ত সুখ ও আনন্দ দিয়ে ভালোবাসা দিবসে মাতোয়ারা হয় আর আমরা? মাসের প্রথম থেকেই শুরু দুঃখ-কষ্ট-বেদনার হাহাকার সেই ভয়ানক আর্তনাদযুক্ত কঠিন স্মৃতি, যা ইতিহাসে বিরল ক্যানভাসে তুলে ধরতে গেলেও বুক কেঁপে উঠবে। একি হলো আমাদের? কেন হলো এ নির্মম পরিহাস? তা জানার সৌভাগ্য এখনও হাতছানি দেয়নি। অনেক কিছুই লিখতে ইচ্ছা করে অনুভব, অনুভূতি কিন্তু নই আমি কবি, নই আমি লেখক! বুকের ভেতর চাপা কষ্টগুলোকে শব্দে রূপান্তর করে তুলে ধরতে পারি না। শুধু পারি নীরবে-নিরালায় সুখের দিনগুলোর কথা ভাবতে, যা আজ কেবলই স্মৃতি, যা সুখ-দুঃখ দুই-ই মিলিয়ে বাসা বাঁধে, আজ কেবল তারই প্রতিচ্ছবি। নারী জাতির তিন চরিত্রে বেষ্টিত জীবনে প্রথম মেয়ে, তারপর কারও ঘরনি আর শেষাংশে মা। কোনো না কোনোভাবে এটা সবাইকে স্পর্শ করবে... আমিও তার ব্যতিক্রম কিছু পাইনি। তবুও বেদনাগুলো কেন জানি, প্রত্যেক পরতে পরতেই খোঁচা দেয় অন্তরালে। হয়তো সবাইকে এভাবেই দেয় আর এটাই স্বাভাবিক। প্রথম প্রথম বিশ্বাস হতো না যে, আমার জীবন-প্রতিচ্ছবির মানুষটি না-ফেরার দেশে চলে গেছে। সন্ধ্যা হলেই মনে হয় কলিংবেলের সেই ব্যতিক্রমী আওয়াজ বেজে উঠবে, যা শুধু আমিই বুঝতাম এটাই আগমনী বার্তা।
আজও ভোর হয়, কাক ডাকে, কর্মতৎপরতার বিরামহীন বেশ তেমনই আছে, রীতিমতো গোধূলিও স্পর্শ করে, সেই নিবিড় রাত সেও আসতে ভুল করে না, কেবলই ফিরে আসে না সেই মানুষটি, তাকে ঘিরে ছিল সব আশা। এখন কল্পনার পাত্রে ধরেছে মরীচিকা, আশার আলোয় ধরেছে বিরামহীন ঘুণ আর অধিকার, সেটা মনে পড়ে না। কেবলই অবাক দৃষ্টি আর দীর্ঘশ্বাস হাতছানি দিয়ে ডাকে, সে সঙ্গে স্বপ্নবিহীন নিশ্ছিদ্র কালো চাদর, যা বেষ্টনী দিয়ে রেখেছে জীবনকে। গান আর শুনতে ভালো লাগে না। জীবন-জড়ের গতি এত বেশি যে, স্মৃতির পাতাগুলোও কেন জানি উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে কালের অন্ধকারে। জীবন অনেকটা দিশাহীন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বিরামহীন সুখের গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে করেছিলাম দিনাতিপাত। তাই হয়তো দুঃখকে আলিঙ্গন করার জন্যই পড়তাম উপন্যাস, আজ তা আর আমার পড়তে হয় না। কারণ আমি নিজেই যে একজন 'ডানা ভাঙা পাখির মতো যন্ত্রণায় আচ্ছন্ন উপন্যাস', যার শুরু আছে, শেষ সেটা অজানা অস্তিত্ব।
শহীদ কর্নেল ইলাহীর স্ত্রী
কিছু স্মৃতি কোন দিনও হবে না বিলীন/নেই! তারা নেই!
হয়তো সুধী পাঠক ভাববেন, সবার কাছে এটা অনুযোগ, অভিযোগ, অভিমান নয়_ এ বিয়োগ আমার কেবলই অনুভূতি। আমি বড়ই ক্লান্ত। জীবনযুদ্ধের রাস্তা যে এত লম্বা, যা ছিল কল্পনাতীত। ধরণীকে বলব না স্বার্থপর, বিবেকহীন আর কোলমেঘা বিচারক কেবলই বলব নিয়তির নির্মম পরিহাস। আর বাস্তবতার শিকল পরা পায়ে সেই জীবনযুদ্ধের সীমাহীন রাস্তায় পথিকের বেশে বলব, পার্থিক জীবনে যা কিছু ঘটে তাই-ই জীবনের অংশ। আর যারা আমাদের ৫৭টি পরিবারের মতো স্বজনহারার একবুক ব্যথা নিয়ে বয়ে চলেছেন সেই পাঠকদের উদ্দেশে বলব, বছরের প্রতিটি দিনই আমাদের জন্য কষ্টের, বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাসটা কেন জানি সহ্য হয় না_ মনে হয় ফেব্রুয়ারি শব্দটা না শুনি... এ মাসে মানুষ ফাগুনের আনন্দে উল্লসিত হয়ে মনের সমস্ত সুখ ও আনন্দ দিয়ে ভালোবাসা দিবসে মাতোয়ারা হয় আর আমরা? মাসের প্রথম থেকেই শুরু দুঃখ-কষ্ট-বেদনার হাহাকার সেই ভয়ানক আর্তনাদযুক্ত কঠিন স্মৃতি, যা ইতিহাসে বিরল ক্যানভাসে তুলে ধরতে গেলেও বুক কেঁপে উঠবে। একি হলো আমাদের? কেন হলো এ নির্মম পরিহাস? তা জানার সৌভাগ্য এখনও হাতছানি দেয়নি। অনেক কিছুই লিখতে ইচ্ছা করে অনুভব, অনুভূতি কিন্তু নই আমি কবি, নই আমি লেখক! বুকের ভেতর চাপা কষ্টগুলোকে শব্দে রূপান্তর করে তুলে ধরতে পারি না। শুধু পারি নীরবে-নিরালায় সুখের দিনগুলোর কথা ভাবতে, যা আজ কেবলই স্মৃতি, যা সুখ-দুঃখ দুই-ই মিলিয়ে বাসা বাঁধে, আজ কেবল তারই প্রতিচ্ছবি। নারী জাতির তিন চরিত্রে বেষ্টিত জীবনে প্রথম মেয়ে, তারপর কারও ঘরনি আর শেষাংশে মা। কোনো না কোনোভাবে এটা সবাইকে স্পর্শ করবে... আমিও তার ব্যতিক্রম কিছু পাইনি। তবুও বেদনাগুলো কেন জানি, প্রত্যেক পরতে পরতেই খোঁচা দেয় অন্তরালে। হয়তো সবাইকে এভাবেই দেয় আর এটাই স্বাভাবিক। প্রথম প্রথম বিশ্বাস হতো না যে, আমার জীবন-প্রতিচ্ছবির মানুষটি না-ফেরার দেশে চলে গেছে। সন্ধ্যা হলেই মনে হয় কলিংবেলের সেই ব্যতিক্রমী আওয়াজ বেজে উঠবে, যা শুধু আমিই বুঝতাম এটাই আগমনী বার্তা।
আজও ভোর হয়, কাক ডাকে, কর্মতৎপরতার বিরামহীন বেশ তেমনই আছে, রীতিমতো গোধূলিও স্পর্শ করে, সেই নিবিড় রাত সেও আসতে ভুল করে না, কেবলই ফিরে আসে না সেই মানুষটি, তাকে ঘিরে ছিল সব আশা। এখন কল্পনার পাত্রে ধরেছে মরীচিকা, আশার আলোয় ধরেছে বিরামহীন ঘুণ আর অধিকার, সেটা মনে পড়ে না। কেবলই অবাক দৃষ্টি আর দীর্ঘশ্বাস হাতছানি দিয়ে ডাকে, সে সঙ্গে স্বপ্নবিহীন নিশ্ছিদ্র কালো চাদর, যা বেষ্টনী দিয়ে রেখেছে জীবনকে। গান আর শুনতে ভালো লাগে না। জীবন-জড়ের গতি এত বেশি যে, স্মৃতির পাতাগুলোও কেন জানি উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে কালের অন্ধকারে। জীবন অনেকটা দিশাহীন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বিরামহীন সুখের গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে করেছিলাম দিনাতিপাত। তাই হয়তো দুঃখকে আলিঙ্গন করার জন্যই পড়তাম উপন্যাস, আজ তা আর আমার পড়তে হয় না। কারণ আমি নিজেই যে একজন 'ডানা ভাঙা পাখির মতো যন্ত্রণায় আচ্ছন্ন উপন্যাস', যার শুরু আছে, শেষ সেটা অজানা অস্তিত্ব।
শহীদ কর্নেল ইলাহীর স্ত্রী
No comments