মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে: অ্যামনেস্টি
লন্ডনভিত্তিক
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে
বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ডজনেরও বেশি মানুষকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে।
সাংবাদিক ও মানবাধিকার রক্ষায় নিয়োজিতরা অব্যাহত হামলা ও নির্যাতনের শিকার
হচ্ছেন। নারী ও তরুণীদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় বড় ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীসমূহ দায়মুক্তির সুযোগ নিয়ে নির্যাতন
চালাচ্ছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করেই কারখানার শ্রমিকরা
বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশে কাজ করে যাচ্ছেন। আপিলের কোন সুযোগ না
দিয়ে অন্তত একজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। বিশ্বের ১৬০টি দেশের
মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় গতকাল প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে। ২০১৪
সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এটি তৈরি করা হয়। ২০১৩
সালের কিছু মানবাধিকার ইস্যুও তুলে ধরা হয়েছে এতে। জোরপূর্বক গুম ও হত্যা,
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নারীর ওপর সহিংসতা, নির্যাতন ও অন্যান্য নিপীড়ন,
শ্রমিক অধিকার, মৃত্যুদন্ডের মতো ৬টি বিষয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার
পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।
ওই প্রতিবেদনে কতোজনকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে সে সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। কোন কোন পরিসংখ্যান বলছে, জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন ৮০ জনেরও বেশি মানুষ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে থাকা তথ্য-প্রমাণ অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ২০ জনকে গুম করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ৬ জন তাদের পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছেন। তারা কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত বন্দি ছিলেন। মুক্তি পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাদের কোন হদিস মেলেনি। বাকি ৫ জনের ভাগ্যে কি ঘটেছিল, সে সম্পর্কে কোন তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।
গত এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জে ৭ জনকে গুম ও হত্যার পর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ৩ কর্মকর্তাকে আটক করা হয় এবং অপহরণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালিত হয়। বছর শেষে সন্দেহভাজন র্যাব কর্মকর্তার তালিকায় যুক্ত হয় ১৭ র্যাব কর্মকর্তার নাম। ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের পর ছিল এ ধরনের প্রথম ঘটনা। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিল অ্যামনেস্টি। তবে দেশের সাধারণ মানুষের চাপ কমলে, সরকার অভিযুক্ত র্যাব কর্মকর্তাদের বিচার প্রক্রিয়ায় আনার প্রক্রিয়া থামিয়ে দিতে পারে, এমন উদ্বেগও আছে। এ ঘটনাটি ছাড়া আর কোন ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের সুস্পষ্ট কোন লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা ব্যবহার করে সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ব্যাপকভাবে খর্ব করছে। এই ধারার আওতায় যারা আইন লঙ্ঘন করবেন, তাদের সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। ২০১৩ সালের ৬ই অক্টোবরের পূর্বে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে, এ শাস্তি পেতে হবে আইন অমান্যকারীদের। এ সময় সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ১৪ বছর নির্ধারণ করা হয়। সেই সঙ্গে সর্বনিম্ন কারাদন্ডের মেয়াদ ৭ বছর নির্ধারণ করা হয়। ২০১৩-১৪ সালে এ আইনে কমপক্ষে ৪ ব্লগার বা ব্লগ-লেখক, ২ ফেইসবুক ব্যবহারকারীকে ও একটি মানবাধিকার সংগঠনের ২ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়।
সাংবাদিকসহ ডজনেরও বেশি গণমাধ্যম কর্মী অভিযোগে বলেছেন, কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করায় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে তারা হুমকি পেয়েছেন। এগুলো ফোন কল, মেসেজের মাধ্যমে তাদের সম্পাদকদের কাছে সরাসরি পাঠানো হয়েছে। বহু সাংবাদিক ও টক-শো’তে অংশ নেয়া ব্যক্তিত্ব বলেছেন, এসব কারণে তারা নিজেদের অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে মতামত প্রকাশে নিজেরাই সেন্সরশিপের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
ওই প্রতিবেদনে নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও স্থান পেয়েছে। শুধু ২০১৪ সালের অক্টোবরে কমপক্ষে ৪২৩ মহিলা ও তরুণী নানামুখী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এ পরিসংখ্যান দিয়েছে।
নির্যাতন ও অন্যান্য নিপীড়ন বেড়ে গেছে। দায়মুক্তির সুযোগ নিয়ে পুলিশ নিয়মিত নিরাপত্তা হেফাজতে বন্দিদের নির্যাতন করছে। এতে বলা হয়, মারধর, সিলিং থেকে ঝুলিয়ে রাখা, গোপণাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেয়া এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বন্দিদের পায়ে গুলি করার মতো পদ্ধতিতে নির্যাতন চালাচ্ছে পুলিশ। জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত কমপক্ষে ৯ জন নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছে।
ওই প্রতিবেদনে একইভাবে উঠে এসেছে শ্রমিক অধিকার ও মৃত্যুদন্ড প্রসঙ্গ। অধিকাংশ কারখানায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন শ্রমিকরা। এদিকে আদালত মৃত্যুদন্ড দেয়া অব্যাহত রেখেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) ১১ জনকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট একটি মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে কতোজনকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে সে সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। কোন কোন পরিসংখ্যান বলছে, জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন ৮০ জনেরও বেশি মানুষ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে থাকা তথ্য-প্রমাণ অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ২০ জনকে গুম করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ৬ জন তাদের পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছেন। তারা কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত বন্দি ছিলেন। মুক্তি পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাদের কোন হদিস মেলেনি। বাকি ৫ জনের ভাগ্যে কি ঘটেছিল, সে সম্পর্কে কোন তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।
গত এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জে ৭ জনকে গুম ও হত্যার পর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ৩ কর্মকর্তাকে আটক করা হয় এবং অপহরণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালিত হয়। বছর শেষে সন্দেহভাজন র্যাব কর্মকর্তার তালিকায় যুক্ত হয় ১৭ র্যাব কর্মকর্তার নাম। ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের পর ছিল এ ধরনের প্রথম ঘটনা। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিল অ্যামনেস্টি। তবে দেশের সাধারণ মানুষের চাপ কমলে, সরকার অভিযুক্ত র্যাব কর্মকর্তাদের বিচার প্রক্রিয়ায় আনার প্রক্রিয়া থামিয়ে দিতে পারে, এমন উদ্বেগও আছে। এ ঘটনাটি ছাড়া আর কোন ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের সুস্পষ্ট কোন লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা ব্যবহার করে সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ব্যাপকভাবে খর্ব করছে। এই ধারার আওতায় যারা আইন লঙ্ঘন করবেন, তাদের সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। ২০১৩ সালের ৬ই অক্টোবরের পূর্বে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে, এ শাস্তি পেতে হবে আইন অমান্যকারীদের। এ সময় সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ১৪ বছর নির্ধারণ করা হয়। সেই সঙ্গে সর্বনিম্ন কারাদন্ডের মেয়াদ ৭ বছর নির্ধারণ করা হয়। ২০১৩-১৪ সালে এ আইনে কমপক্ষে ৪ ব্লগার বা ব্লগ-লেখক, ২ ফেইসবুক ব্যবহারকারীকে ও একটি মানবাধিকার সংগঠনের ২ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়।
সাংবাদিকসহ ডজনেরও বেশি গণমাধ্যম কর্মী অভিযোগে বলেছেন, কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করায় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে তারা হুমকি পেয়েছেন। এগুলো ফোন কল, মেসেজের মাধ্যমে তাদের সম্পাদকদের কাছে সরাসরি পাঠানো হয়েছে। বহু সাংবাদিক ও টক-শো’তে অংশ নেয়া ব্যক্তিত্ব বলেছেন, এসব কারণে তারা নিজেদের অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে মতামত প্রকাশে নিজেরাই সেন্সরশিপের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
ওই প্রতিবেদনে নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও স্থান পেয়েছে। শুধু ২০১৪ সালের অক্টোবরে কমপক্ষে ৪২৩ মহিলা ও তরুণী নানামুখী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এ পরিসংখ্যান দিয়েছে।
নির্যাতন ও অন্যান্য নিপীড়ন বেড়ে গেছে। দায়মুক্তির সুযোগ নিয়ে পুলিশ নিয়মিত নিরাপত্তা হেফাজতে বন্দিদের নির্যাতন করছে। এতে বলা হয়, মারধর, সিলিং থেকে ঝুলিয়ে রাখা, গোপণাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেয়া এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বন্দিদের পায়ে গুলি করার মতো পদ্ধতিতে নির্যাতন চালাচ্ছে পুলিশ। জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত কমপক্ষে ৯ জন নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছে।
ওই প্রতিবেদনে একইভাবে উঠে এসেছে শ্রমিক অধিকার ও মৃত্যুদন্ড প্রসঙ্গ। অধিকাংশ কারখানায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন শ্রমিকরা। এদিকে আদালত মৃত্যুদন্ড দেয়া অব্যাহত রেখেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) ১১ জনকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট একটি মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছে।
No comments