গণতন্ত্রের একি ভয়াবহ রূপ by মোয়াজ্জেম হোসেন ভূইয়া
একটা
উন্নত দেশে গণতন্ত্রের মাঝে বসবাস করে পরিবার-পরিজন নিয়ে এর স্বাদ উপভোগ
করেছি গত তিন দশকের ওপর সময়। পরিণত বয়সে মাটির টানে আকর্ষণ মুছে ফেলা বেশ
কঠিন। দেশের টানে প্রবাসে থাকা অনেকেই জীবনের শেষ সময়টি কিছু হলেও মাটিতে
কাটাতে চায়। এ দেশ গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে আজ প্রায় তিন দশক। এরই মধ্যে
আর্থিক ও সামাজিকভাবে অনেক এগিয়ে গেছে এবং এর আবেদন আজ সব প্রবাসীর কাছেই
সমাদৃত। তাই প্রবাসী জীবন থেকে নিজেদের পরিবারকে মাটির সঙ্গে সম্পর্ক অটুট
রাখার প্রত্যয়ে প্রবাসীরা দেশে নিকট আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও
পাড়া-পড়শিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বিশেষ আগ্রহী। তার ওপর, বহুদিন
বিদেশ-বিভুঁই কেটে দেশের খাবারের প্রতি কারোরই-বা আগ্রহ না হয়। তাই বিশেষ
করে শীত মৌসুমে (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) প্রবাসীদের দেশে ফেরা এখন একটা
রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতা বয়ে এনেছে একটা ভয়াবহ স্মৃতি।
বাবা-মা থেকে শুরু করে ছেলেমেয়ে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই একটা
আতঙ্কে দিনযাপন করছে। এই যদি হয় প্রবাসীদের স্বল্পকালীন অভিজ্ঞতা, এখন ভেবে
দেখুন পাঠক, এই দেশে সর্বনাশা গণতন্ত্রের আবরণে যারা বসবাস করছেন বছরের পর
বছর তাদের অবস্থার কথা। যারা এই অপরাজনীতির পরিবেশে বসবাস করছেন
(রাজনীতিবিদ ব্যতীত) তাদের ধৈর্যের সীমা বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। সংবাদমাধ্যমে
পড়ছিলাম নারায়ণগঞ্জের এক চিকিৎসক দম্পতির পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে যাওয়া
আড়াই বছর বয়সের ছেলের যন্ত্রণা। তারা নিজেরাও দগ্ধ। কিন্তু কী ধৈর্য তাদের,
তেমন কিছু কারও কাছে চাওয়ার নেই। শুধু এইটুকুই নিবেদন করছেন
নেতা-নেত্রীদের কাছে, 'আপনারা এসব বন্ধ করুন।'
সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সেবা ছড়িয়ে পড়েছে গত দুই দশকে। যেমন অস্ট্রেলিয়ার বড় শহরগুলোতে জিপি হিসেবে সেবাকারীদের অভাব নেই। এমনকি বড় হাসপাতালগুলোয় বাঙালি ডাক্তাররা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ইচ্ছা করলেই নারায়ণগঞ্জের এই চিকিৎসক দম্পতি প্রবাসী জীবনে পা দিতে পারতেন। কিন্তু দেশের মায়া আর মাটির টানে তারা তা করেননি। দেশপ্রেমের উপহার যে এত ভয়ঙ্কর হতে পারে, এটা আমাদের নেতা-নেত্রীরা বুঝবেন কী করে। কী আশ্চর্য, মানুষ, দেশ ও জাতি জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন না। এটাই কি গণতন্ত্রের বড় উদাহরণ নয়? সাধারণ মানুষের কাছে গণতন্ত্র আজও অটুট আছে। কিন্তু সর্বনাশা গণতন্ত্রকে অপরাজনীতিই বারবার উস্কে দিচ্ছে রাজনীতিবিদদের ষোলোকলা পূরণের আশায়।
যেহেতু সবকিছু বাদ দিয়ে বাসায় বন্দি, তাই কাজ শুধু নাওয়া-খাওয়া, পত্রিকায় কে কী লিখল বা অপেক্ষায় থাকা কবে অবরোধ-হরতাল শেষ হবে, একটু সূর্যের আলো দেখা যাবে। প্রকৃতিও যেন বেঁকে বসেছে। এই মাঘের দিনেও মাঝে মধ্যে সূর্যের দেখা নেই। পত্রপত্রিকার প্রবন্ধগুলো পড়ে নিজেকে বেশ গর্বিত মনে করি বাঙালির ঘরে জন্ম নিয়েছি বলে। কী সুন্দর আর সাবলীল ভাষায় লেখক-লেখিকা ও সংবাদপত্রের প্রথম সারির সাংবাদিকরা বিভিন্নভাবে সমস্যার ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিচ্ছেন, আলোচনা, বিষয়বস্তু পাঠকের কাছে পরিষ্কার ভাষায় তুলে ধরছেন। এত বড় একটা গুণগত সমাজ ব্যবস্থায় আজকের রাজনীতির আগুন নিয়ে খেলা কোনো ক্রমেই মানানসই নয়। সত্যিই আজকের সমাজ প্রাক্-স্বাধীনতার তুলনায় অনেক উন্নত। দুঃখ হয়, শুধু রাজনীতির বেলায় তা দাবি করা যায় না। তবে লক্ষ্য করেছি যে, সবাই সমস্যা উদ্ঘাটন ও এর সমাধানের জন্য বিশেষভাবে তৎপর, কিন্তু সমস্যার মূল উৎসবের বিশ্লেষণ তেমন চোখে পড়ে না। এটা পারিপাশবিকতা বা অনিচ্ছাকৃতও হতে পারে। দেশে এক মাসেরও অধিক অবস্থানের আলোকে এবং সংবাদমাধ্যমের সৌজন্য আজকের এই জ্বালাও-পোড়ানোর উৎস চিহ্নিত করতে সমস্যা হয় না। হয়তো পাঠকবৃন্দও এতে একমত হবেন। রাহাজানির মূল উৎস কিন্তু শুধু দেশের ভেতরে নয়, বাইরেও। কোনো সমাধানই খুঁজে পাওয়া যাবে না যদি না পশ্চিমাদের মতো সমস্যার মূল উৎস সঠিকভাবে চিহ্নিত করা না যায়।
আমি মনে করি, বাংলাদেশের আজকের সর্বনাশা গণতন্ত্রের রূপ দেওয়া হচ্ছে, গণতন্ত্রের মধ্যমণি দেশ যুক্তরাজ্য থেকে। সবকিছুর মূলে দুটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য :ব্রিটেনে জামায়াত-শিবিরের একটা বড় অংশ বহাল তবিয়তে বসবাস করছে বিভিন্ন শহর ও শহরতলিতে। তার ওপর সেখানে যোগ হয়েছে বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি। তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অভিন্ন। যুদ্বাপরাধীদের বিচার ব্যবস্থা ব্যাহত করা এবং তা শুধু সম্ভব হবে যদি না বর্তমান সরকারকে নামানো যায়। তাই ডেভিড ক্যামেরনকে সরাসরি এর বিহিত করার উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন। শুধু সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করলেই যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষা পাবে তা ঠিক নয়। ব্রিটেনে বসবাস এই দুই গোষ্ঠী এ দেশের গণতন্ত্রকে সর্বনাশা গণতন্ত্রে পরিণত করেছে। আশা করি ডেভিড ক্যামেরন বা ঢাকায় তার প্রতিনিধি উপলব্ধি করবেন_ এর বেশি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা কীভাবে রশি টেনে ধরবেন, সেটাও তাদের কাছে অজানা নয়। দিনের পর দিন যেভাবে সহিংসতা বেড়ে চলছে এর পেছনে অনেক অর্থের প্রয়োজন। এই অর্থ যে শুধু দেশের ভেতরেই জোগান দেওয়া হচ্ছে তা ভাবা ঠিক নয়। বিদেশেও অর্থের মূল উৎস। মধ্যপ্রাচ্য তাই আমাদের শিক্ষা দেয়। সুতরাং দয়া করে কিছু একটা করুন। এটাই বাঙালিদের আপনার কাছে আজকে প্রার্থনা। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠা করা যায় না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কোনো সমঝোতা চলে না, তা এ দেশের মানুষ পরিষ্কার করে বিশ্বকে অনেক আগেই জানিয়েছে। আজকের সহিংসতার উৎস ও এর পোড়া সমূলে তুলতে পারলেই এ দেশে সুস্থ রাজনীতি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে এবং অপরাজনীতি ও সর্বনাশা গণতন্ত্রের অবসান ঘটবে সর্বসময় ও সর্বকালের জন্য।
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী
সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সেবা ছড়িয়ে পড়েছে গত দুই দশকে। যেমন অস্ট্রেলিয়ার বড় শহরগুলোতে জিপি হিসেবে সেবাকারীদের অভাব নেই। এমনকি বড় হাসপাতালগুলোয় বাঙালি ডাক্তাররা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ইচ্ছা করলেই নারায়ণগঞ্জের এই চিকিৎসক দম্পতি প্রবাসী জীবনে পা দিতে পারতেন। কিন্তু দেশের মায়া আর মাটির টানে তারা তা করেননি। দেশপ্রেমের উপহার যে এত ভয়ঙ্কর হতে পারে, এটা আমাদের নেতা-নেত্রীরা বুঝবেন কী করে। কী আশ্চর্য, মানুষ, দেশ ও জাতি জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন না। এটাই কি গণতন্ত্রের বড় উদাহরণ নয়? সাধারণ মানুষের কাছে গণতন্ত্র আজও অটুট আছে। কিন্তু সর্বনাশা গণতন্ত্রকে অপরাজনীতিই বারবার উস্কে দিচ্ছে রাজনীতিবিদদের ষোলোকলা পূরণের আশায়।
যেহেতু সবকিছু বাদ দিয়ে বাসায় বন্দি, তাই কাজ শুধু নাওয়া-খাওয়া, পত্রিকায় কে কী লিখল বা অপেক্ষায় থাকা কবে অবরোধ-হরতাল শেষ হবে, একটু সূর্যের আলো দেখা যাবে। প্রকৃতিও যেন বেঁকে বসেছে। এই মাঘের দিনেও মাঝে মধ্যে সূর্যের দেখা নেই। পত্রপত্রিকার প্রবন্ধগুলো পড়ে নিজেকে বেশ গর্বিত মনে করি বাঙালির ঘরে জন্ম নিয়েছি বলে। কী সুন্দর আর সাবলীল ভাষায় লেখক-লেখিকা ও সংবাদপত্রের প্রথম সারির সাংবাদিকরা বিভিন্নভাবে সমস্যার ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিচ্ছেন, আলোচনা, বিষয়বস্তু পাঠকের কাছে পরিষ্কার ভাষায় তুলে ধরছেন। এত বড় একটা গুণগত সমাজ ব্যবস্থায় আজকের রাজনীতির আগুন নিয়ে খেলা কোনো ক্রমেই মানানসই নয়। সত্যিই আজকের সমাজ প্রাক্-স্বাধীনতার তুলনায় অনেক উন্নত। দুঃখ হয়, শুধু রাজনীতির বেলায় তা দাবি করা যায় না। তবে লক্ষ্য করেছি যে, সবাই সমস্যা উদ্ঘাটন ও এর সমাধানের জন্য বিশেষভাবে তৎপর, কিন্তু সমস্যার মূল উৎসবের বিশ্লেষণ তেমন চোখে পড়ে না। এটা পারিপাশবিকতা বা অনিচ্ছাকৃতও হতে পারে। দেশে এক মাসেরও অধিক অবস্থানের আলোকে এবং সংবাদমাধ্যমের সৌজন্য আজকের এই জ্বালাও-পোড়ানোর উৎস চিহ্নিত করতে সমস্যা হয় না। হয়তো পাঠকবৃন্দও এতে একমত হবেন। রাহাজানির মূল উৎস কিন্তু শুধু দেশের ভেতরে নয়, বাইরেও। কোনো সমাধানই খুঁজে পাওয়া যাবে না যদি না পশ্চিমাদের মতো সমস্যার মূল উৎস সঠিকভাবে চিহ্নিত করা না যায়।
আমি মনে করি, বাংলাদেশের আজকের সর্বনাশা গণতন্ত্রের রূপ দেওয়া হচ্ছে, গণতন্ত্রের মধ্যমণি দেশ যুক্তরাজ্য থেকে। সবকিছুর মূলে দুটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য :ব্রিটেনে জামায়াত-শিবিরের একটা বড় অংশ বহাল তবিয়তে বসবাস করছে বিভিন্ন শহর ও শহরতলিতে। তার ওপর সেখানে যোগ হয়েছে বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি। তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অভিন্ন। যুদ্বাপরাধীদের বিচার ব্যবস্থা ব্যাহত করা এবং তা শুধু সম্ভব হবে যদি না বর্তমান সরকারকে নামানো যায়। তাই ডেভিড ক্যামেরনকে সরাসরি এর বিহিত করার উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন। শুধু সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করলেই যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষা পাবে তা ঠিক নয়। ব্রিটেনে বসবাস এই দুই গোষ্ঠী এ দেশের গণতন্ত্রকে সর্বনাশা গণতন্ত্রে পরিণত করেছে। আশা করি ডেভিড ক্যামেরন বা ঢাকায় তার প্রতিনিধি উপলব্ধি করবেন_ এর বেশি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা কীভাবে রশি টেনে ধরবেন, সেটাও তাদের কাছে অজানা নয়। দিনের পর দিন যেভাবে সহিংসতা বেড়ে চলছে এর পেছনে অনেক অর্থের প্রয়োজন। এই অর্থ যে শুধু দেশের ভেতরেই জোগান দেওয়া হচ্ছে তা ভাবা ঠিক নয়। বিদেশেও অর্থের মূল উৎস। মধ্যপ্রাচ্য তাই আমাদের শিক্ষা দেয়। সুতরাং দয়া করে কিছু একটা করুন। এটাই বাঙালিদের আপনার কাছে আজকে প্রার্থনা। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠা করা যায় না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কোনো সমঝোতা চলে না, তা এ দেশের মানুষ পরিষ্কার করে বিশ্বকে অনেক আগেই জানিয়েছে। আজকের সহিংসতার উৎস ও এর পোড়া সমূলে তুলতে পারলেই এ দেশে সুস্থ রাজনীতি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে এবং অপরাজনীতি ও সর্বনাশা গণতন্ত্রের অবসান ঘটবে সর্বসময় ও সর্বকালের জন্য।
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী
No comments