উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম স্থবির, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ নয়
সংসদের বাইরে থাকা বিরোধীদলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালে এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহল যখন সরব, তখন নীরবে-নিভৃতে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত একগুচ্ছ প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাচ্ছে, হাতেগোনা দু'একটি বাদে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, দেশের প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দু'একটি বিভাগ ছাড়া সেশনজট নেই বললেই চলে। কিন্তু কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা অব্যাহত থাকলে হবে না। সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট, মাইক্রোবায়োলজি, ইতিহাস, আরবি বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে প্রায় অর্ধশত পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে। আগে থেকে সেশনজটের খপ্পরে পড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই বন্ধ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও কমপক্ষে এক বছরের সেশনজট চলছে। অবরোধের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম যখন স্থবির, তখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এসেছে সেখানকার বিএনপি-জামায়তপন্থি শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যদিও 'শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত' রাখার দাবি করছেন; মূলত অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পরিবহন বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসে যেতে পারছেন না। অবরোধ চলাকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনেও হামলা হয়েছিল, আমাদের মনে আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধে ক্লাস-পরীক্ষা চললেও হরতালের উল্লেখযোগ্য বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। সেশনজট ও অস্থিতিশীলতার কারণে অনেক অভিভাবক শিক্ষার্থীদের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেন। অবরোধের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্লাস-পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও অভিভাবকদের অনুরোধেই বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা আশঙ্কা করছি, বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এর বিরূপ প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। বেড়ে যেতে পারে সেশনজট। চলতি শিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে পাস করে যেতে না পারলে নতুন ভর্তি হওয়াদের জন্যও ক্লাসরুম ও শিক্ষকের সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা আশা করি, এর গুরুত্ব সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলো বুঝবে। বুঝতে হবে সরকার ও প্রশাসনকেও। কড়া নিরাপত্তায় এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের মতো করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যায় কি-না ভেবে দেখতে বলি। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আমরা বলে থাকি। সেই মেরুদণ্ড যেন ভেঙে না যায় এই আবেদন ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল_ সবার কাছে।
No comments