পর্যটনেরও কপাল পুড়ছে! by বারেক কায়সার ও জিয়াউর রহমান চৌধুরী
বাঙালি
নাকি খুব বেশিদিন ঘরে বসে থাকতে পারে না। সময়-সুযোগ পেলেই তারা ঘুরতে বের
হয়ে পড়ে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ সদলবলে। ঠিক এর উল্টো চিত্রও আছে,
বিশেষ সময়ে আবার তাদের সহনশীলতার পরিচয়ও পাওয়া যায় বেশ। মাঝে মধ্যে বিপদে
পড়ে গেলে অথবা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়লে তারা একটানা অনেক দিন ঘরে বদ্ধ
অবস্থায় থাকতে পারে। দেশের ভেতরের ঘোরাঘুরিতে দেশের অর্থনীতির চাকাটা বেশ
সচল হয়। যেখানে ঘুরতে যাওয়া হয় সেখানকার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর যেমন জীবিকার
বন্দোবস্ত হয়, তেমনি দৃঢ় হয় স্থানীয় অর্থনীতি ও উন্নয়ন। নাগরিকরা ঘুরতে
গিয়ে খেতে-ঘুরতে-চলতে কিংবা থাকতে যে টাকা ব্যয় করেন তার অনেকটা অংশ ওই
অঞ্চলের উন্নয়নের কাজে লাগে। অভ্যন্তরীণ পর্যটন বা দেশের ভেতরের ভ্রমণে
স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিদিনকার জীবনে এর চেয়ে বেশি সরাসরি প্রভাব বিদ্যমান।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকাগুলোতে মানুষের জীবিকার ধরন সে এলাকার ওপর
নির্ভর করে। এই যেমন জলবেষ্টিত এলাকায় লোকজনের জীবন-জীবিকা অনেকটা নদ-নদীর
ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। সেখাকার মানুষের মাছ ধরা, নৌকায় করে মানুষ ও
মালামাল বহন সব জলকেন্দ্রিক নানা কাজে পারঙ্গম হয়ে ওঠে, এর বাইরে আর বিশেষ
কোনো কাজ পারেন না তারা।
ধরা যাক পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানের কথা। পর্যটকদের কেন্দ্র করে রোজগার করা টাকায় যাদের প্রতিদিনের আহার জুটত তাদের এখন রুটিরুজি বন্ধ। বান্দরবানের এমন এক মাঝারি হোটেল ব্যবসায়ী জানান তার কষ্টের কথা। স্নাতকোত্তর পর্বের পড়াশোনা শেষ করে ছোট গড়নের একটা রিসোর্ট দিয়েছেন বান্দরবানে। ব্যবসাপাতি ভালোই চলছিল। এর মাঝেই এসএমই ঋণ নিয়ে রিসোর্টের পরিসর বাড়ান তিনি। বছর শুরু আর শীতের মৌসুম ভাবনায় রেখে যে বিনিয়োগ করেছেন তার পুরোটাই জলে গেছে। আয়-রোজগার দূরের কথা, এখন ঋণের টাকা পরিশোধই দায় হয়ে পড়েছে। সম্ভাবনাময় ব্যবসায়ী এখন হয়ে যাবেন ঋণখেলাপি। এ হলো অবরোধ-হরতালের ফল। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীও খাঁড়ার মুখে। কারণ এখানে পর্যটন প্রায় পুরোপুরি প্রাকৃতিক। বান্দরবানের পাহাড়ের পথে পথে যারা আনারস, পেয়ারা, লেবুসহ নানা পাহাড়ি ফল-পণ্য নিয়ে পর্যটকদের আশায় বসে থাকতেন তাদের এখন অলস সময়। এসব বিক্রি করে যা দু'চার পয়সা পেতেন, তারও পথ বন্ধ। বান্দরবানের রুমা বাজারের ধারে যে আদিবাসী নারী পাহাড়ি ফল আর হস্তশিল্পের বাহার নিয়ে বসে থাকতেন ক্রেতার আশায়, তার চোখেও এখন আবছা অন্ধকার। বিক্রি না হলে যে খাবার মিলবে না। বান্দরবানে পর্যটকদের দেখভাল, পথ দেখানোর মতো গাইডের কাজ করেন শ'খানেক উঠতি যুবক। এতে করে তারা পড়াশোনার খরচটাও তুলতে পারেন আবার পরিবারেও কিছু অর্থ দিতে পারেন। অথচ পর্যটনের মৌসুমে এমন খরায় তাদেরও দুর্দিন। একজন মাইশা তার বাবাসহ আগুনে পুড়ে মরেছে। এমন অনেক মাইশাই তো আতঙ্কে ঘর ছাড়ছে না। নিজের জীবন উপেক্ষা করে তো আর বিনোদন উপভোগের দুঃসাহস করা যায় না। এ কারণে শুধু বান্দরবান নয়, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কুয়াকাটা, সিলেট, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনাসহ প্রায় সব জায়গাতেই এমন হতাশা। ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, হোটেল মালিক, রেস্তোরাঁ মালিক-কর্মী, গাড়িচালক থেকে শুরু করে পর্যটক গাইড সবার মাঝেই হতাশা। ব্যবসা না হওয়া, রুটিরুজির ব্যবস্থা না হওয়ার দায় কাদের? জাতীয় রাজনীতির এমন দাম্ভিক আচরণে স্থানীয় পর্যটনের যে কপাল পুড়ল তার কী হবে?
পরিবেশকর্মী
ধরা যাক পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানের কথা। পর্যটকদের কেন্দ্র করে রোজগার করা টাকায় যাদের প্রতিদিনের আহার জুটত তাদের এখন রুটিরুজি বন্ধ। বান্দরবানের এমন এক মাঝারি হোটেল ব্যবসায়ী জানান তার কষ্টের কথা। স্নাতকোত্তর পর্বের পড়াশোনা শেষ করে ছোট গড়নের একটা রিসোর্ট দিয়েছেন বান্দরবানে। ব্যবসাপাতি ভালোই চলছিল। এর মাঝেই এসএমই ঋণ নিয়ে রিসোর্টের পরিসর বাড়ান তিনি। বছর শুরু আর শীতের মৌসুম ভাবনায় রেখে যে বিনিয়োগ করেছেন তার পুরোটাই জলে গেছে। আয়-রোজগার দূরের কথা, এখন ঋণের টাকা পরিশোধই দায় হয়ে পড়েছে। সম্ভাবনাময় ব্যবসায়ী এখন হয়ে যাবেন ঋণখেলাপি। এ হলো অবরোধ-হরতালের ফল। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীও খাঁড়ার মুখে। কারণ এখানে পর্যটন প্রায় পুরোপুরি প্রাকৃতিক। বান্দরবানের পাহাড়ের পথে পথে যারা আনারস, পেয়ারা, লেবুসহ নানা পাহাড়ি ফল-পণ্য নিয়ে পর্যটকদের আশায় বসে থাকতেন তাদের এখন অলস সময়। এসব বিক্রি করে যা দু'চার পয়সা পেতেন, তারও পথ বন্ধ। বান্দরবানের রুমা বাজারের ধারে যে আদিবাসী নারী পাহাড়ি ফল আর হস্তশিল্পের বাহার নিয়ে বসে থাকতেন ক্রেতার আশায়, তার চোখেও এখন আবছা অন্ধকার। বিক্রি না হলে যে খাবার মিলবে না। বান্দরবানে পর্যটকদের দেখভাল, পথ দেখানোর মতো গাইডের কাজ করেন শ'খানেক উঠতি যুবক। এতে করে তারা পড়াশোনার খরচটাও তুলতে পারেন আবার পরিবারেও কিছু অর্থ দিতে পারেন। অথচ পর্যটনের মৌসুমে এমন খরায় তাদেরও দুর্দিন। একজন মাইশা তার বাবাসহ আগুনে পুড়ে মরেছে। এমন অনেক মাইশাই তো আতঙ্কে ঘর ছাড়ছে না। নিজের জীবন উপেক্ষা করে তো আর বিনোদন উপভোগের দুঃসাহস করা যায় না। এ কারণে শুধু বান্দরবান নয়, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কুয়াকাটা, সিলেট, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনাসহ প্রায় সব জায়গাতেই এমন হতাশা। ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, হোটেল মালিক, রেস্তোরাঁ মালিক-কর্মী, গাড়িচালক থেকে শুরু করে পর্যটক গাইড সবার মাঝেই হতাশা। ব্যবসা না হওয়া, রুটিরুজির ব্যবস্থা না হওয়ার দায় কাদের? জাতীয় রাজনীতির এমন দাম্ভিক আচরণে স্থানীয় পর্যটনের যে কপাল পুড়ল তার কী হবে?
পরিবেশকর্মী
No comments