কেজরিওয়ালের ক্যারিশমার নেপথ্যে by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়
বুথ
ফেরত সমীক্ষায় সব সংস্থাই আম আদমি পার্টির (এএপি) জয় নিশ্চিত করেছিল।
কিন্তু এইভাবে কংগ্রেসকে নিশ্চিহ্ন করে এবং বিজেপিকে চরম অপদস্থ করে ৭০-এর
মধ্যে ৬৬-৬৭ আসন এএপি ছেঁকে তুলে নেবে, এই ধারণা কারও ছিল না। এমনকি এএপি
নেতারাও এত আসনের স্বপ্ন দেখেননি। কী করে এএপি সম্ভব করল এই অসাধ্য সাধন
এবং কেনই বা বিজেপির এই ভরাডুবি, রাজধানীতে দিনভর চলছে তারই তল্লাশি।
এক বছর আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এএপির উত্থান ঘটলেও তারা বিজেপির চেয়ে তিনটি আসন কম পেয়েছিল। কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়লেও হঠকারিতা করে ৪৯ দিনের মাথায় সব ছেড়েছুড়ে দিয়েছিলেন। সেটা যে মারাত্মক রাজনৈতিক ভুল ছিল, অরবিন্দ কেজরিওয়াল পরে তা শুধু স্বীকারই করেননি, অবলীলায় জনতার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন।
রাজনীতিতে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনার নজির এ দেশে খুব একটা নেই। দিল্লির মানুষ অরবিন্দ ও তাঁর দলকে শুধু যে ক্ষমাই করলেন তা নয়, তাঁর ওপরে দ্বিগুণ আস্থা রাখলেন। ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনে এমন ফল আগে কখনো ঘটেনি।
প্রশ্ন, কী করে এবং কেন এমন হলো? বিস্ময়ের দুটি দিক। একটি, যে বিজেপিকে মাত্র নয় মাস আগে লোকসভা ভোটে দিল্লিবাসী এমন উজাড় করে সমর্থন দিল, সাতটির মধ্যে সাতটি আসনই তাদের হাতে তুলে দিল, সেই বিজেপিকে বিধানসভায় কেন এমন প্রত্যাখ্যান? অন্যটি, কেজরিওয়াল ও তাঁর দলের প্রতি এমন অন্ধ সমর্থনের কারণ কী? এই সঙ্গেই যে প্রশ্নটি অবধারিতভাবে উঠে আসছে, তার কেন্দ্রে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তবে কি মোদি-হাওয়া শেষ? তবে কি এত দ্রুত মোদির প্রতি ভারতবাসীর মোহভঙ্গ হলো?
বিজেপিকে বর্জন ও এএপিকে গ্রহণ দুটি প্রশ্নই কিন্তু একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বিজেপিকে বর্জনের একটা কারণ, দিল্লির নেতৃত্ব। গোটা রাজধানীতে তাদের এমন একজনও নেতা নেই যিনি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ‘ক্যারিশমা’-র সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম ছিলেন। তার ওপর এই নেতাদের এক অন্যের সঙ্গে সদ্ভাবের অভাবও ছিল প্রবল। এই অভাব ঘোচাতে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ জুটি এমন একজনকে উড়িয়ে আনলেন, যিনি এক বছর আগেও মোদিকে কুকথা বলেছেন, তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন। এতে হিতে বিপরীত ঘটল। দিল্লির নেতারা কিরণ বেদীকে গ্রহণ তো করলেনই না, বরং তাঁকে সফল না হতে দিয়ে তাঁরা হাত মিলিয়ে নিলেন। এটা তাঁদের কাছে ছিল ভবিষ্যতে মরা-বাঁচার প্রশ্ন। কৃষ্ণনগরে কিরণ বেদী শেষ পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার ভোটে হেরে গেলেন।
এর আগেই অবশ্য বিজেপি আরো একটা মারাত্মক ভুল করে বসে। লোকসভার ভোটে জেতার পরেও তারা দিল্লির ভোট নিয়ে গড়িমসি করতে থাকে। এই বিলম্ব এএপিকে সংগঠিত হতে সাহায্য করে। বিজেপি যদি ক্যাডার-ভিত্তিক পার্টি হয়ে থাকে, এএপি তা হলে ভল্যান্টিয়ার-ভিত্তিক দল। ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে নিঃশব্দে তাদের সমর্থকেরা গোটা দিল্লিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং কাজ শুরু করে দেয়। তিন মাস আগে তারা যখন নিশ্চিত হয়, তাদের জাল সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে, তখনই তারা ভোট চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়। বিজেপি তখনো বেসামাল। দিল্লিতে তারা এই বার্তাটা ছড়িয়ে দিল যে, ভোটের জন্য তারা প্রস্তুত অথচ ভোটে না গিয়ে বিজেপি পেছনের দরজা দিয়ে সরকার গড়তে আগ্রহী। বিজেপির এই ভূমিকা দিল্লিবাসী ভাল মনে নেয়নি।
নেয়নি যারা, তারাই কিন্তু দিল্লির আম আদমি। ৪৯ দিনের আমলে তাঁদের বিজলি-পানির বিল কম হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির শাসনে তা ফের আগের জায়গায় ফিরে যাওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা ভুগছিলেন। কেজরিওয়ালের শাসনে দুর্নীতির মাত্রা কিছুটা হলেও কমেছিল। সরকারি অফিসে, পুরসভার কার্যালয়ে, পরিবহন দফতরে ঘুষের প্রবণতায় কিছুটা হলেও রাশ টেনেছিল সরকার। পুলিশের ‘অত্যাচার’-এর হাত থেকেও মুক্ত হয়েছিলেন দিল্লির লক্ষাধিক অটো ও রিকশাচালকেরা এবং সাধারণ হকারেরা। ‘দিন-আনি দিন-খাই’ মানুষেরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সেই দিনগুলো ফের ফিরে পেতে চেয়েছেন আন্তরিকভাবে। তাঁরা নিজেরাই যে শুধু এএপিকে ভোট দেওয়ার সঙ্কল্প নিয়েছিলেন তা নয়, আশপাশের মানুষদেরও উদ্বুদ্ধ করেছেন ঝাড়ুতে ভোট দিতে। বিজেপি ক্যাডারদের হতাশা ও ক্ষোভের পাশে এএপির স্বেচ্ছাসেবীদের বাড়তি উদ্যোগ অতিরিক্ত পার্থক্যটুকু গড়ে দেয়।
পানি-বিজলির বিল কমানোর প্রতিশ্রুতি, ঘুষ বন্ধের অঙ্গীকার, বিজলি কোম্পানিগুলির অডিট করানোর সিদ্ধান্ত, মূল্যবৃদ্ধি রুখে আম জনতাকে সুরাহা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ এবং বিজেপির অসন্তোষ ও অগোছালোভাব এই ফলের মূল কারণগুলির অন্যতম। কিন্তু সেটাই সব নয়। যে দলটি টানা পনেরো বছর একার ক্ষমতায় দক্ষতার সঙ্গে এই আধা রাজ্যটি সাফল্যের সঙ্গে শাসন করে গেছে, সেই কংগ্রেস এই ভোটে একটি আসনও পায়নি। এই প্রথম। কেজরিওয়ালেরা তাঁদের এই সাফল্যের জন্য কংগ্রেসের চিরায়ত ভোটারদের কাছে ঋণী থাকবেন। মুসলমান ও তফসিল ভোটারেরা দিল্লিতে কখনো কংগ্রেসকে বঞ্চিত করেননি। এবার সেই ভোটারেরা একজোটে এএপিকে ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে রুখতে। বিজেপির সর্বনাশের একটা বড় কারণ চিরায়ত কংগ্রেস সমর্থকদের ঝাড়ু বেছে নেওয়া।
তবে এই ফল নরেন্দ্র মোদির প্রতি দেশবাসীর অনাস্থা বললে তা অবশ্যই অতিরঞ্জিত হবে। লোকসভা ও বিধানসভার ভোট চরিত্রগতভাবে আলাদা। এটা ঠিক লোকসভা ভোটে জেতার পরেও বিজেপি মহারাষ্ট্র, হরিয়াণা ও ঝাড়খন্ডে জিতেছে। কিন্তু দিল্লির সাক্ষরতার হার ৮৬ শতাংশ। এই রাজ্যে বিত্তশালী ও রাজনীতিকদের চাপে সাধারণ মানুষ বরাবরই হাঁসফাঁস করে। তাদের দৈনন্দিন অসুবিধা ও অভিযোগের সুরাহা কীভাবে হবে, বিজেপি তা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারেনি।
এককথায়, দিল্লির সাধারণ মানুষজনের নাড়ির স্পন্দনটুকু বিজেপি বুঝতে পারেনি। তারা নরেন্দ্র মোদির আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠাকে যত বড় করে তুলে ধরেছে, যত বড় করে মেলে ধরেছে মোদির উন্নয়নের ছবি, সেই তুলনায় ঝুগ্গি-ঝুপড়ির নিকাশি ব্যবস্থা, রাস্তার আলো না জ্বলা, পানি মাফিয়াদের দৌরাত্ম বন্ধ, পুলিশরাজ ও দুর্নীতির অবসান ঘটানো নিয়ে একটি বাক্যও উচ্চারণ করেনি। মোদিকেই তারা প্রচারের মূল হিসেবে তুলে ধরলেও এটা বোঝেনি যে মোদি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হতে আসছেন না। সেই জায়গাটাই কেজরিওয়াল পূরণ করেছেন সাধারণের পাশে দাঁড়িয়ে, সাধারণের একজন হয়ে। তিনি সাধারণ বলেই তাঁকে প্রজাতন্ত্র দিবসে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, এটা কেজরিওয়ালেরা প্রচার করতে পেরেছেন সফলভাবে। এটাও তাঁরা বুঝেছেন, মোদি মুখ্যমন্ত্রী হবেন না। জিতলে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করবেন অজ্ঞাত অচেনা ও অজানা কিরণ বেদী। কেজরিওয়াল এই আম আদমিদের চেনা মানুষ। সেই মানুষকেই তাঁরা আঁকড়ে ধরলেন এমনভাবে যা ইতিহাস সৃষ্টি করল।
স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সূচনা করে নরেন্দ্র মোদি অজান্তেই হয়তো ‘ঝাড়ু’র প্রচারে সহায়তা করেছেন। সে যাই হোক, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের প্রকৃত পরীক্ষা শুরু হলো আজ থেকেই। অতীতের ভুল শুধরে এবার তাঁকে প্রতি পদে কৃতজ্ঞতাবোধের প্রমান দিতে হবে। আজ পর্যন্ত তিনি গ্রহীতা। ১৪ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণের পর থেকে তাঁকে দাতা হতে হবে।
এক বছর আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এএপির উত্থান ঘটলেও তারা বিজেপির চেয়ে তিনটি আসন কম পেয়েছিল। কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়লেও হঠকারিতা করে ৪৯ দিনের মাথায় সব ছেড়েছুড়ে দিয়েছিলেন। সেটা যে মারাত্মক রাজনৈতিক ভুল ছিল, অরবিন্দ কেজরিওয়াল পরে তা শুধু স্বীকারই করেননি, অবলীলায় জনতার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন।
রাজনীতিতে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনার নজির এ দেশে খুব একটা নেই। দিল্লির মানুষ অরবিন্দ ও তাঁর দলকে শুধু যে ক্ষমাই করলেন তা নয়, তাঁর ওপরে দ্বিগুণ আস্থা রাখলেন। ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনে এমন ফল আগে কখনো ঘটেনি।
প্রশ্ন, কী করে এবং কেন এমন হলো? বিস্ময়ের দুটি দিক। একটি, যে বিজেপিকে মাত্র নয় মাস আগে লোকসভা ভোটে দিল্লিবাসী এমন উজাড় করে সমর্থন দিল, সাতটির মধ্যে সাতটি আসনই তাদের হাতে তুলে দিল, সেই বিজেপিকে বিধানসভায় কেন এমন প্রত্যাখ্যান? অন্যটি, কেজরিওয়াল ও তাঁর দলের প্রতি এমন অন্ধ সমর্থনের কারণ কী? এই সঙ্গেই যে প্রশ্নটি অবধারিতভাবে উঠে আসছে, তার কেন্দ্রে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তবে কি মোদি-হাওয়া শেষ? তবে কি এত দ্রুত মোদির প্রতি ভারতবাসীর মোহভঙ্গ হলো?
বিজেপিকে বর্জন ও এএপিকে গ্রহণ দুটি প্রশ্নই কিন্তু একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বিজেপিকে বর্জনের একটা কারণ, দিল্লির নেতৃত্ব। গোটা রাজধানীতে তাদের এমন একজনও নেতা নেই যিনি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ‘ক্যারিশমা’-র সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম ছিলেন। তার ওপর এই নেতাদের এক অন্যের সঙ্গে সদ্ভাবের অভাবও ছিল প্রবল। এই অভাব ঘোচাতে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ জুটি এমন একজনকে উড়িয়ে আনলেন, যিনি এক বছর আগেও মোদিকে কুকথা বলেছেন, তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন। এতে হিতে বিপরীত ঘটল। দিল্লির নেতারা কিরণ বেদীকে গ্রহণ তো করলেনই না, বরং তাঁকে সফল না হতে দিয়ে তাঁরা হাত মিলিয়ে নিলেন। এটা তাঁদের কাছে ছিল ভবিষ্যতে মরা-বাঁচার প্রশ্ন। কৃষ্ণনগরে কিরণ বেদী শেষ পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার ভোটে হেরে গেলেন।
এর আগেই অবশ্য বিজেপি আরো একটা মারাত্মক ভুল করে বসে। লোকসভার ভোটে জেতার পরেও তারা দিল্লির ভোট নিয়ে গড়িমসি করতে থাকে। এই বিলম্ব এএপিকে সংগঠিত হতে সাহায্য করে। বিজেপি যদি ক্যাডার-ভিত্তিক পার্টি হয়ে থাকে, এএপি তা হলে ভল্যান্টিয়ার-ভিত্তিক দল। ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে নিঃশব্দে তাদের সমর্থকেরা গোটা দিল্লিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং কাজ শুরু করে দেয়। তিন মাস আগে তারা যখন নিশ্চিত হয়, তাদের জাল সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে, তখনই তারা ভোট চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়। বিজেপি তখনো বেসামাল। দিল্লিতে তারা এই বার্তাটা ছড়িয়ে দিল যে, ভোটের জন্য তারা প্রস্তুত অথচ ভোটে না গিয়ে বিজেপি পেছনের দরজা দিয়ে সরকার গড়তে আগ্রহী। বিজেপির এই ভূমিকা দিল্লিবাসী ভাল মনে নেয়নি।
নেয়নি যারা, তারাই কিন্তু দিল্লির আম আদমি। ৪৯ দিনের আমলে তাঁদের বিজলি-পানির বিল কম হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির শাসনে তা ফের আগের জায়গায় ফিরে যাওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা ভুগছিলেন। কেজরিওয়ালের শাসনে দুর্নীতির মাত্রা কিছুটা হলেও কমেছিল। সরকারি অফিসে, পুরসভার কার্যালয়ে, পরিবহন দফতরে ঘুষের প্রবণতায় কিছুটা হলেও রাশ টেনেছিল সরকার। পুলিশের ‘অত্যাচার’-এর হাত থেকেও মুক্ত হয়েছিলেন দিল্লির লক্ষাধিক অটো ও রিকশাচালকেরা এবং সাধারণ হকারেরা। ‘দিন-আনি দিন-খাই’ মানুষেরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সেই দিনগুলো ফের ফিরে পেতে চেয়েছেন আন্তরিকভাবে। তাঁরা নিজেরাই যে শুধু এএপিকে ভোট দেওয়ার সঙ্কল্প নিয়েছিলেন তা নয়, আশপাশের মানুষদেরও উদ্বুদ্ধ করেছেন ঝাড়ুতে ভোট দিতে। বিজেপি ক্যাডারদের হতাশা ও ক্ষোভের পাশে এএপির স্বেচ্ছাসেবীদের বাড়তি উদ্যোগ অতিরিক্ত পার্থক্যটুকু গড়ে দেয়।
পানি-বিজলির বিল কমানোর প্রতিশ্রুতি, ঘুষ বন্ধের অঙ্গীকার, বিজলি কোম্পানিগুলির অডিট করানোর সিদ্ধান্ত, মূল্যবৃদ্ধি রুখে আম জনতাকে সুরাহা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ এবং বিজেপির অসন্তোষ ও অগোছালোভাব এই ফলের মূল কারণগুলির অন্যতম। কিন্তু সেটাই সব নয়। যে দলটি টানা পনেরো বছর একার ক্ষমতায় দক্ষতার সঙ্গে এই আধা রাজ্যটি সাফল্যের সঙ্গে শাসন করে গেছে, সেই কংগ্রেস এই ভোটে একটি আসনও পায়নি। এই প্রথম। কেজরিওয়ালেরা তাঁদের এই সাফল্যের জন্য কংগ্রেসের চিরায়ত ভোটারদের কাছে ঋণী থাকবেন। মুসলমান ও তফসিল ভোটারেরা দিল্লিতে কখনো কংগ্রেসকে বঞ্চিত করেননি। এবার সেই ভোটারেরা একজোটে এএপিকে ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে রুখতে। বিজেপির সর্বনাশের একটা বড় কারণ চিরায়ত কংগ্রেস সমর্থকদের ঝাড়ু বেছে নেওয়া।
তবে এই ফল নরেন্দ্র মোদির প্রতি দেশবাসীর অনাস্থা বললে তা অবশ্যই অতিরঞ্জিত হবে। লোকসভা ও বিধানসভার ভোট চরিত্রগতভাবে আলাদা। এটা ঠিক লোকসভা ভোটে জেতার পরেও বিজেপি মহারাষ্ট্র, হরিয়াণা ও ঝাড়খন্ডে জিতেছে। কিন্তু দিল্লির সাক্ষরতার হার ৮৬ শতাংশ। এই রাজ্যে বিত্তশালী ও রাজনীতিকদের চাপে সাধারণ মানুষ বরাবরই হাঁসফাঁস করে। তাদের দৈনন্দিন অসুবিধা ও অভিযোগের সুরাহা কীভাবে হবে, বিজেপি তা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারেনি।
এককথায়, দিল্লির সাধারণ মানুষজনের নাড়ির স্পন্দনটুকু বিজেপি বুঝতে পারেনি। তারা নরেন্দ্র মোদির আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠাকে যত বড় করে তুলে ধরেছে, যত বড় করে মেলে ধরেছে মোদির উন্নয়নের ছবি, সেই তুলনায় ঝুগ্গি-ঝুপড়ির নিকাশি ব্যবস্থা, রাস্তার আলো না জ্বলা, পানি মাফিয়াদের দৌরাত্ম বন্ধ, পুলিশরাজ ও দুর্নীতির অবসান ঘটানো নিয়ে একটি বাক্যও উচ্চারণ করেনি। মোদিকেই তারা প্রচারের মূল হিসেবে তুলে ধরলেও এটা বোঝেনি যে মোদি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হতে আসছেন না। সেই জায়গাটাই কেজরিওয়াল পূরণ করেছেন সাধারণের পাশে দাঁড়িয়ে, সাধারণের একজন হয়ে। তিনি সাধারণ বলেই তাঁকে প্রজাতন্ত্র দিবসে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, এটা কেজরিওয়ালেরা প্রচার করতে পেরেছেন সফলভাবে। এটাও তাঁরা বুঝেছেন, মোদি মুখ্যমন্ত্রী হবেন না। জিতলে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করবেন অজ্ঞাত অচেনা ও অজানা কিরণ বেদী। কেজরিওয়াল এই আম আদমিদের চেনা মানুষ। সেই মানুষকেই তাঁরা আঁকড়ে ধরলেন এমনভাবে যা ইতিহাস সৃষ্টি করল।
স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সূচনা করে নরেন্দ্র মোদি অজান্তেই হয়তো ‘ঝাড়ু’র প্রচারে সহায়তা করেছেন। সে যাই হোক, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের প্রকৃত পরীক্ষা শুরু হলো আজ থেকেই। অতীতের ভুল শুধরে এবার তাঁকে প্রতি পদে কৃতজ্ঞতাবোধের প্রমান দিতে হবে। আজ পর্যন্ত তিনি গ্রহীতা। ১৪ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণের পর থেকে তাঁকে দাতা হতে হবে।
No comments