এর নাম মতপ্রকাশের স্বাধীনতা? by এম সাগর
১৫
জানুয়ারি টিভিতে দেখছিলাম ফরাসি ব্যঙ্গ পত্রিকা ‘শার্লি এবদুর’
প্রচারসংখ্যা এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, তা হাজারের কোঠা পার করে রাতারাতি লাখ
ছাড়িয়েছে। ইউরোপের কোনো এক শহরে এক লোক নাকি প্রচণ্ড শীতেও দুই ঘণ্টা লাইনে
দাঁড়িয়ে রয়েছে পত্রিকাটি কেনার জন্য। বাণিজ্যিক বিচারে পত্রিকাটি সফল এবং
যতটা সে আশা করেছিল, সম্ভবত তার চেয়েও বেশি সফলতা পেয়েছে। সন্ত্রাসী হামলার
পর ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমর্থন এবং তাদের শার্লি এবদুর পাশে থাকার
ঘোষণায় মনে হচ্ছে তারা অতিরিক্ত শক্তি অর্জন করেছে। নব শক্তিতে বলীয়ান হয়ে
পত্রিকাটির নতুন পরিচালক ঘোষণা করলেন ‘লড়াই’ তারা চালিয়ে যাবেন এবং ‘আরো
বেশি উদ্যমেই’ তা করবেন। তাদের ঘোষণার ফলে ভেতরের পাতার ছোটখাটো কার্টুন
নয়, বরং মহানবী সা:-এর ব্যঙ্গচিত্র দিয়ে তারা প্রচ্ছদ রচনা করলেন।
পত্রিকাটি ফোকাসে এসেছে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সব থেকে স্পর্শকাতর জায়গাটাকে ব্যঙ্গ করে। বোঝা যায় না, এই বিষয়ের ওপর দেয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের হেতু। তিনি বললেন, ‘মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশের লড়াইকে তিনি সমর্থন করেন।’ তা হলে এটা কি বোঝানো হয় না, শার্লি এবদু অতীতে যা করেছে এবং বর্তমানে যা করছে, তার সবই মতপ্রকাশের অধিকারের মধ্যে পড়ে? স্বাধীনতা মানে, আমরা যা ইচ্ছা সেটাই করাকে না বুঝে, অন্যের সমস্যা সৃষ্টি না করে স্বাধীনভাবে চলাকে বুঝেছি। একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় আর তাদের প্রধান ধর্মীয় পুরুষকে নিয়ে অরুচিকর মন্তব্য এবং ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ছাপিয়ে যাওয়াটাকে মানুষের ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ হিসেবে দেখা হবে কেন? কোন যুক্তিতে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা শত শত কোটি মানুষের মনে তীব্র আঘাত সৃষ্টি করা যায়, তাদের সব চেয়ে ভালোবাসার জায়গায় পদাঘাত করা সম্ভব, তা ইউরোপীয় মহামহাপণ্ডিতেরা বলবেন কি?
পৃথিবীর শত কোটি মুসলিম ধর্মাবলম্বীকে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে। তাদের সব ধরনের অন্যায় এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপকর্মগুলোকে ধরে নেয়া হচ্ছে সব মুসলমানের অপরাধ হিসেবে। মুসলমান বলতেই ভেবে নেয়া হচ্ছে, তালেবান আর লাদেন টাইপের একটা সম্প্রদায়। সারা পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসাধারণ, রাষ্ট্র বা তাদের সরকার বলছেÑ আমরা জঙ্গি নই, মানুষ হত্যা দূরে থাক কোনো ধরনের সন্ত্রাস ইসলাম অনুমোদন করে না, কোনো ধরনের কথিত জঙ্গিকর্মকাণ্ডের সাথে সহিংস নৈরাজ্য প্রকৃত মুসলিমরা জড়িত নয়। এত কিছুর পরেও কিন্তু তাদেরকে দেখা হচ্ছে জঙ্গি, প্রচণ্ড ধরনের অপরাধপ্রবণ, গোঁড়া ও চরমপন্থী হিসেবেই। তার কারণ বোধগম্য নয় মোটেও। ফ্রান্সে ম্যাগাজিন অফিসে সন্ত্রাসী হামলায় গুটিকয়েক জঙ্গিই কেবল অংশ নিয়েছিল; অথচ প্রায় ষাট লাখ মুসলিম ফ্রান্সে বাস করছেন। গুটিকয়েক সন্ত্রাসীর অপকর্মের জেরে ষাট লাখ মুসলিমের জীবনে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা এবং এমন একধরনের পরিবেশ, যা স্বাভাবিক জীবনযাপনের অনুকূল তো নয়-ই; বরং তা সাংঘাতিক প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হওয়ার আশঙ্কা যে, ফরাসি সরকার দশ হাজার সেনাসদস্যকে তলব করতে বাধ্য হয়েছে। শার্লিতে সন্ত্রাসী হামলার পর জানুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত শুধু ফ্রান্সেই তিরিশটির মতো মসজিদে হামলা করা হয়েছে। কোথাও কোথাও মসজিদের ভেতর ইসলামে নিষিদ্ধ পশু, শূকরের মাথা ছুড়ে দেয়া হয়েছে। এমন কি, মসজিদে গ্রেনেড হামলা চালানো হচ্ছে। মুসলিমদের কাছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আসছে হুমকি। তাদের সে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে। হিজাব পরিহিতা মুসলিম নারীদেরকে রাস্তাঘাটে অপমান আর বিদ্রƒপের মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইউরোপের প্রায় সব শহরেই মুসলিম পরিবারগুলো আতঙ্কের মধ্যে দিন যাপন করছে। সেসব শহরেও মসজিদগুলো হামলার শিকার। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ইউরোপের বেশ কিছু শহরের মসজিদে। ইউরোপের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যা কিছু হচ্ছে, তা স্বাভাবিক বা সমর্থনযোগ্য বলা যাবে কি? যদি মসজিদ পোড়ানো, ভয়ভীতি প্রদর্শন, মসজিদের ভেতর সেই সম্প্রদায়ের কাছে অপবিত্র প্রাণীর কাটা মুণ্ডু ফেলে আসার মতো কর্মকাণ্ড যুক্তিসঙ্গত না হয়ে থাকে, তাহলে এসব অপকর্ম যারা করছে তাদের ধর্মীয় উগ্রবাদী এবং এগুলোকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না বলে অন্য আর কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। এগুলো নিশ্চিতভাবেই জঘন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং যারা এসব সংঘটিত করছে তারা ইউরোপীয় সমাজের সর্বাধিক উগ্র প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। এর থেকে আরেকটি ব্যাপার সুনিশ্চিত হয়ে পড়ে তা হলো ধর্মীয় উগ্র প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী সব জায়গায়ই আছে; সেটা অনুন্নত দেশেই হোক কিংবা বিশ্বের সব চেয়ে উন্নত দেশগুলোতেই হোক। এসব উগ্র সন্ত্রাসবাদী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সদস্য হলেও এবং পরিবেশ, রাজনৈতিক অবস্থা, ভৌগোলিক ভিন্নতা সত্ত্বে¡ও মৌলিকভাবে তারা অভিন্ন। তাদের কর্মপদ্ধতিও অভিন্ন এবং এদের কাছ থেকে বিশ্বমানবতার ক্ষতি ছাড়া আর কোনো কিছু আশাই করতে পারে না।
এ তো গেল ইউরোপের ব্যাপার। এশিয়া বা আফ্রিকার সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষও আতঙ্কে দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। আফ্রিকার বেশ কিছু জায়গায় গির্জায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অনেকে আক্রমণের শিকার হয়েছেন। পৃথিবীব্যাপী বেড়ে চলছে এক ধর্মের মানুষের প্রতি আরেক ধর্মের মানুষের বিদ্বেষ। ছড়িয়ে পড়ছে দাঙ্গা। মানুষ গৃহহীন হচ্ছে, প্রাণ হারাচ্ছে, আতঙ্কে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এসব কিছুই হচ্ছে একটি ব্যঙ্গ পত্রিকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিতে গিয়ে। ব্যক্তিস্বাধীনতার খেসারত হিসেবে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে চাইছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। আরো কত চড়া মূল্য দিতে হবে একটি ব্যঙ্গ ম্যাগাজিনের যথেচ্ছাচার করার অধিকারের নামে?
এত কিছুর পরেও শার্লি এবদু থেকে বলা হয়েছে, তাদের ‘ম্যাগাজিনে ঘৃণা ছড়ানোর মতো কিছু নেই।’ কিন্তু বাস্তব ঘটনা এর বিপরীত। ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ছে এবং তার পরিসর বেড়ে চলছে। শার্লির নিশ্চিতভাবেই জানা থাকার কথা, বক্তব্যের মাধ্যমে যতটা নয়, তার চেয়ে অনেক ব্যাপক ঘৃণা ছড়াচ্ছে হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর কল্পিত ব্যঙ্গ কার্টুন প্রদর্শনের পরিণামে। মুসলিম বিশ্বের কোথাও রাসূল সা:-এর প্রতিকৃতি খুঁজে পাওয়া দূরে থাক তাঁর প্রতিকৃতি কল্পনা করাও মুসলমানদের কাছে অপরাধের বিষয়। যখন কল্পিত মুহাম্মাদ সা:-এর প্রতিকৃতি কার্টুনের আকারে বিদ্বেষপূর্ণ লেখায় ভর্তি হয়ে তাদের সামনে আসছে, তখন তাদের মনে কতটা নিদারুণ আঘাত লাগছে, তা শার্লি ব্যবসায়িক লাভের জন্য না বুঝুক, অন্তত ফরাসি সরকারের সেটা বোধগম্য হওয়া উচিত। অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত শার্লি কর্তৃক ধর্মীয় বিভেদ আর ঘৃণা ছড়ানোর বিষয়কে। বোঝানোর চেষ্টা করা উচিত, ধর্ম ব্যতীত ব্যঙ্গ করার মতো আরো অনেক বিষয় জগতে রয়েছে।
পত্রিকাটি ফোকাসে এসেছে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সব থেকে স্পর্শকাতর জায়গাটাকে ব্যঙ্গ করে। বোঝা যায় না, এই বিষয়ের ওপর দেয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের হেতু। তিনি বললেন, ‘মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশের লড়াইকে তিনি সমর্থন করেন।’ তা হলে এটা কি বোঝানো হয় না, শার্লি এবদু অতীতে যা করেছে এবং বর্তমানে যা করছে, তার সবই মতপ্রকাশের অধিকারের মধ্যে পড়ে? স্বাধীনতা মানে, আমরা যা ইচ্ছা সেটাই করাকে না বুঝে, অন্যের সমস্যা সৃষ্টি না করে স্বাধীনভাবে চলাকে বুঝেছি। একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় আর তাদের প্রধান ধর্মীয় পুরুষকে নিয়ে অরুচিকর মন্তব্য এবং ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ছাপিয়ে যাওয়াটাকে মানুষের ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ হিসেবে দেখা হবে কেন? কোন যুক্তিতে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা শত শত কোটি মানুষের মনে তীব্র আঘাত সৃষ্টি করা যায়, তাদের সব চেয়ে ভালোবাসার জায়গায় পদাঘাত করা সম্ভব, তা ইউরোপীয় মহামহাপণ্ডিতেরা বলবেন কি?
পৃথিবীর শত কোটি মুসলিম ধর্মাবলম্বীকে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে। তাদের সব ধরনের অন্যায় এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপকর্মগুলোকে ধরে নেয়া হচ্ছে সব মুসলমানের অপরাধ হিসেবে। মুসলমান বলতেই ভেবে নেয়া হচ্ছে, তালেবান আর লাদেন টাইপের একটা সম্প্রদায়। সারা পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসাধারণ, রাষ্ট্র বা তাদের সরকার বলছেÑ আমরা জঙ্গি নই, মানুষ হত্যা দূরে থাক কোনো ধরনের সন্ত্রাস ইসলাম অনুমোদন করে না, কোনো ধরনের কথিত জঙ্গিকর্মকাণ্ডের সাথে সহিংস নৈরাজ্য প্রকৃত মুসলিমরা জড়িত নয়। এত কিছুর পরেও কিন্তু তাদেরকে দেখা হচ্ছে জঙ্গি, প্রচণ্ড ধরনের অপরাধপ্রবণ, গোঁড়া ও চরমপন্থী হিসেবেই। তার কারণ বোধগম্য নয় মোটেও। ফ্রান্সে ম্যাগাজিন অফিসে সন্ত্রাসী হামলায় গুটিকয়েক জঙ্গিই কেবল অংশ নিয়েছিল; অথচ প্রায় ষাট লাখ মুসলিম ফ্রান্সে বাস করছেন। গুটিকয়েক সন্ত্রাসীর অপকর্মের জেরে ষাট লাখ মুসলিমের জীবনে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা এবং এমন একধরনের পরিবেশ, যা স্বাভাবিক জীবনযাপনের অনুকূল তো নয়-ই; বরং তা সাংঘাতিক প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হওয়ার আশঙ্কা যে, ফরাসি সরকার দশ হাজার সেনাসদস্যকে তলব করতে বাধ্য হয়েছে। শার্লিতে সন্ত্রাসী হামলার পর জানুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত শুধু ফ্রান্সেই তিরিশটির মতো মসজিদে হামলা করা হয়েছে। কোথাও কোথাও মসজিদের ভেতর ইসলামে নিষিদ্ধ পশু, শূকরের মাথা ছুড়ে দেয়া হয়েছে। এমন কি, মসজিদে গ্রেনেড হামলা চালানো হচ্ছে। মুসলিমদের কাছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আসছে হুমকি। তাদের সে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে। হিজাব পরিহিতা মুসলিম নারীদেরকে রাস্তাঘাটে অপমান আর বিদ্রƒপের মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইউরোপের প্রায় সব শহরেই মুসলিম পরিবারগুলো আতঙ্কের মধ্যে দিন যাপন করছে। সেসব শহরেও মসজিদগুলো হামলার শিকার। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ইউরোপের বেশ কিছু শহরের মসজিদে। ইউরোপের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যা কিছু হচ্ছে, তা স্বাভাবিক বা সমর্থনযোগ্য বলা যাবে কি? যদি মসজিদ পোড়ানো, ভয়ভীতি প্রদর্শন, মসজিদের ভেতর সেই সম্প্রদায়ের কাছে অপবিত্র প্রাণীর কাটা মুণ্ডু ফেলে আসার মতো কর্মকাণ্ড যুক্তিসঙ্গত না হয়ে থাকে, তাহলে এসব অপকর্ম যারা করছে তাদের ধর্মীয় উগ্রবাদী এবং এগুলোকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না বলে অন্য আর কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। এগুলো নিশ্চিতভাবেই জঘন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং যারা এসব সংঘটিত করছে তারা ইউরোপীয় সমাজের সর্বাধিক উগ্র প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। এর থেকে আরেকটি ব্যাপার সুনিশ্চিত হয়ে পড়ে তা হলো ধর্মীয় উগ্র প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী সব জায়গায়ই আছে; সেটা অনুন্নত দেশেই হোক কিংবা বিশ্বের সব চেয়ে উন্নত দেশগুলোতেই হোক। এসব উগ্র সন্ত্রাসবাদী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সদস্য হলেও এবং পরিবেশ, রাজনৈতিক অবস্থা, ভৌগোলিক ভিন্নতা সত্ত্বে¡ও মৌলিকভাবে তারা অভিন্ন। তাদের কর্মপদ্ধতিও অভিন্ন এবং এদের কাছ থেকে বিশ্বমানবতার ক্ষতি ছাড়া আর কোনো কিছু আশাই করতে পারে না।
এ তো গেল ইউরোপের ব্যাপার। এশিয়া বা আফ্রিকার সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষও আতঙ্কে দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। আফ্রিকার বেশ কিছু জায়গায় গির্জায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অনেকে আক্রমণের শিকার হয়েছেন। পৃথিবীব্যাপী বেড়ে চলছে এক ধর্মের মানুষের প্রতি আরেক ধর্মের মানুষের বিদ্বেষ। ছড়িয়ে পড়ছে দাঙ্গা। মানুষ গৃহহীন হচ্ছে, প্রাণ হারাচ্ছে, আতঙ্কে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এসব কিছুই হচ্ছে একটি ব্যঙ্গ পত্রিকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিতে গিয়ে। ব্যক্তিস্বাধীনতার খেসারত হিসেবে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে চাইছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। আরো কত চড়া মূল্য দিতে হবে একটি ব্যঙ্গ ম্যাগাজিনের যথেচ্ছাচার করার অধিকারের নামে?
এত কিছুর পরেও শার্লি এবদু থেকে বলা হয়েছে, তাদের ‘ম্যাগাজিনে ঘৃণা ছড়ানোর মতো কিছু নেই।’ কিন্তু বাস্তব ঘটনা এর বিপরীত। ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ছে এবং তার পরিসর বেড়ে চলছে। শার্লির নিশ্চিতভাবেই জানা থাকার কথা, বক্তব্যের মাধ্যমে যতটা নয়, তার চেয়ে অনেক ব্যাপক ঘৃণা ছড়াচ্ছে হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর কল্পিত ব্যঙ্গ কার্টুন প্রদর্শনের পরিণামে। মুসলিম বিশ্বের কোথাও রাসূল সা:-এর প্রতিকৃতি খুঁজে পাওয়া দূরে থাক তাঁর প্রতিকৃতি কল্পনা করাও মুসলমানদের কাছে অপরাধের বিষয়। যখন কল্পিত মুহাম্মাদ সা:-এর প্রতিকৃতি কার্টুনের আকারে বিদ্বেষপূর্ণ লেখায় ভর্তি হয়ে তাদের সামনে আসছে, তখন তাদের মনে কতটা নিদারুণ আঘাত লাগছে, তা শার্লি ব্যবসায়িক লাভের জন্য না বুঝুক, অন্তত ফরাসি সরকারের সেটা বোধগম্য হওয়া উচিত। অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত শার্লি কর্তৃক ধর্মীয় বিভেদ আর ঘৃণা ছড়ানোর বিষয়কে। বোঝানোর চেষ্টা করা উচিত, ধর্ম ব্যতীত ব্যঙ্গ করার মতো আরো অনেক বিষয় জগতে রয়েছে।
No comments