সঙ্কট উত্তরণের পথ- সংলাপ-সমঝোতাই রাজনৈতিক সমাধান
দেশের
বুদ্ধিজীবী, সুশীল ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণ
চিহ্নিত করতে পারলেও সরাসরি বক্তব্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে দ্বিধা করছেন।
এর পরও সংলাপের আওয়াজ এখন সুস্পষ্ট। তাই প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির অনড়
অবস্থানের মধ্যেই সঙ্কট নিরসনে একটি জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান
জানাচ্ছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। বর্তমান সঙ্ঘাতপূর্ণ অবস্থার উত্তরণ
ছাড়াও দেশে যাতে স্থায়ীভাবে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় থাকে, সব
দলের জন্য পালনীয় এমন একটি জাতীয় সনদ তৈরি করার কথাও এরা বলছেন। বিএনপির
সাথে কোনো আলোচনা হবে না বলে মতাসীন আওয়ামী লীগের প থেকে এমন চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত জানানোর পরপরই এক সামষ্টিক আলোচনায় এ ধরনের উদ্যোগের বিষয় অবশ্যই
গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্কটকে সামনে রেখে এ জাতীয় আলোচনার আয়োজন করে জাতীয়
ঐক্যপ্রক্রিয়া। সবাই স্বীকার করতে বাধ্য, পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে
যে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তার কারণ সৃষ্টি হয়েছে। এক প আরেক পকে
নিঃশেষ করে দিতে চাইছে। এর আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষত জাতিসঙ্ঘ,
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন
মহল সহিংসতা পরিহার ও আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট নিরসনের আহ্বান জানালেও তাতে
কোনো সাড়া দেয়নি সরকার; বরং শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতির অবনতি
ঘটিয়েছে। সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে নতুন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে
২০ দলীয় জোটের টানা কর্মসূচিতে প্রাণহানি যেমন অব্যাহত রয়েছে, সরকারও
বিষয়টিকে আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হিসেবে দেখিয়ে বল প্রয়োগের নীতি বাস্তবায়ন
করে চলেছে। দুই পরে অনড় অবস্থানে সঙ্ঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি আরো প্রকট হয়ে
উঠছে। শ্বাসরুদ্ধকর এই পরিস্থিতিতে নাগরিক সমাজের প থেকে দেশের কিছু
বিশিষ্ট নাগরিক জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার ফলে একধরনের আশাবাদ সৃষ্টি
হয়েছে। আমরা মনে করি, একটি ঘোষণা দিয়ে কিংবা আহ্বান জানিয়ে বসে থাকলে হবে
না। সঙ্কট নিরসনে নাগরিকদের প থেকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। কর্মসূচি দিতে
হবে, যাতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সঙ্কটের সমাধান সম্ভব হয়। সবাই একমত হবেন,
দেশের সামনে আজ এক বিশেষ চ্যালেঞ্জ। অথচ দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। রাজনীতির
আগুন তাদেরই জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মারছে। এমন পরিস্থিতি বেশি দিন চলতে দিলে
গণতন্ত্র, আইনের শাসনই শুধু নিঃশেষ হয়ে যাবে না; একধরনের নৈরাজ্যের কবলে
পড়ে দেশের সার্বভৌমত্বও বিপন্ন হতে পারে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও
গণগ্রেফতার একসময় ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই সব বিবেচনায়
রাজনৈতিক সঙ্কটের বিষয়টিকে নৃশংসতার চাদরে ঢেকে দিয়ে সত্য আড়াল করা ঠিক
হবে না। তাতে নৃশংসতা বাড়বে। সঙ্কট আরো ঘনীভূত হবে। তাই সংলাপের উদ্যোগ
নিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা সময়ের দাবি।
No comments