‘রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলন এক নয়’
রাজনীতিবিদরা
রাজনীতি করেন। বুদ্ধিজীবীরা রাজনীতি করেন না। তারা বুদ্ধি বিবেচনায় দ্বারা
স্বস্ব দল বা মতাদর্শকে সহায়তা করেন। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে এই বুদ্ধিজীবীদের
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। তখনকার দিনের স্বাধিকার আন্দোলনের শক্তি
আওয়ামী লীগকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক নামীদামী শিক্ষক বুদ্ধিবৃত্তিক
সহায়তা দিয়েছিলেন। আর সেজন্যই বিজয়ের পূর্বমুর্হুতে হানাদার বাহিনীর লক্ষ
হয়ে দাঁড়ায় জাতির বিবেক বুদ্ধিজীবীবৃন্দ। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীকালে অবশ্য
ক্রমে ক্রমে বুদ্ধিজীবীদের ‘বিবেক সুলভ ভূমিকা’ দলীয় পরিচয়ে
আবর্তিত-বিবর্তিত হতে থাকে। প্রাথমিক শাসক এলিটদের নিছক দলীয় মনোবৃত্তি,
একাংশের মতাদর্শিক অবস্থান এবং সামরিক শাসকদের হুকুমদারিতে আমাদের
বুদ্ধিবৃত্তিক পচন শুরু হয়। স্বৈরাচারের পতন পরবর্তী গণতান্ত্রিক শাসন আমলে
নাগরিক সাধারণ আশা করেছিল দেশের বুদ্ধিজীবীরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিক
নির্মাণে মূল্যবান ভূমিকা রাখবেন। জাতি একটি আলোকিত সমাজ উপহার পাবে।
কিন্তু তা না হয়ে বিভেদের দেয়াল আরও উচুঁ হয়ে দেখা দেয়। দেশ যত সংকট
সহিংসতা অতিক্রম করছে ততই বুদ্ধিজীবী শ্রেণীও বিবাদে জড়িয়ে যাচ্ছে। জাতি
বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে নিছক দলীয় ভূমিকা আশা করে না। তা আওয়ামী লীগের
পক্ষে হোক বা বিএনপির পক্ষে। সন্দেহ নেই ব্যক্তিগতভাবে আমরা কোন না কোন দল
বা মতাদর্শ ধারণ করি। কিন্তু তারও একটি সীমা রেখা আছে। বুদ্ধিজীবীদের
রাজনৈতিক কর্মীর মত কাজ করা সমীচীন নয়। শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষক ভিন্ন দলীয়
পরিচয় অন্যায় এবং অনাকাঙ্খিত। এইসব ক্ষেত্রে মর্যাদাপূর্ণ ভারসাম্যমূলক
এবং সংযমী আচরণে বিশ্বাসী একজন শিক্ষককে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমমাত্রায়
হুকুমের আসামী হতে দেখে নাগরিক সাধারণ বিস্মিত।
প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ এদেশের একজন শীর্ষ স্থানীয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর। এই জাতির প্রতিটি বাক পরিবর্তনে তিনি সব সময়েই সস্পৃক্ত ছিলেন। স্বাধিকার আন্দোলন থেকে গণতান্ত্রিক উত্তরণ পর্যন্ত- তার ছিল মননশীল ভূমিকা। জ্ঞান-গুণ-বিদ্যাবুদ্ধি, আচার-আচরণে যেসব প্রবীণ ব্যক্তি আমাদের অনুকরণীয়-অনুুসরণীয় তিনি তাদের একজন। সে নিরিখেই আমরা বলতে পারি একটি দল ও মতকে সমর্থন করলেও কিছুতেই কট্টর বা দলান্ধ লোক তিনি নন। সরকারের তরফ থেকে তাকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে প্রচার করা হলেও আদৌ তিনি বিএনপির কোন আনুষ্ঠানিক পদাধিকারী নন। সত্য বটে, বিএনপি চেয়ারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্কটময় সময়ে তিনি পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটা নিছক মানবিক অনুভূতি, রাজনীতি নয়। প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ বিএনপির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার কেউ নন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে যে নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গির কথা প্রকাশ করেছেন তা একান্তই ব্যক্তিগত বিবেচনা প্রসূত। তা বিএনপির মত নয়। জাতীয় সরকারের যে ধারণা তিনি ব্যক্ত করছেন- দেশের একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে সমঝোতার প্রয়াসে সংকট উত্তরণের লক্ষ্যেই বলছেন। এসব কিছুই প্রমাণ করে যে, তিনি রাজনৈতিক বলয়ের লোক নন। বরং তার সমস্ত কর্মকা- জাতীয় স্বার্থে নিবেদিত। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনকে লেখা তার পত্রও জাতীয় স্বার্থে বিবেচিত। ক্ষমতাসীন বুদ্ধিজীবীরা তার এই পদক্ষেপকে বাঁকা চোখে দেখলেও সঙ্কট সমাধানে ব্যাকুল জনগোষ্ঠী ব্যাপকভাবে তার উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছেন। দি ডেইলি স্টার পরিচালিত এক জনমত যাচাইয়ে দেখা যায়- দেশের শতকরা ৫৭ ভাগ মানুষ তার উদ্যোগের পক্ষে রয়েছেন (দি ডেইলি স্টার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫)।
আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এ ধরনের স্বাধীনচেতা মানুষকে পুরস্কৃত করে না। স্বাধীনতা যুদ্ধের দলীলপত্র প্রশ্নে যখন বিতর্ক দেখা দেয় তখন তিনি সত্যাশ্রয়ী মতামতই প্রধান করেছেন। দলীয় মত দ্বারা প্রভাবিত হননি। বিগত বিএনপি আমলে তিনি প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন এ রকম খবর বেরিয়েছিল, কিন্তু তা হয়নি। এমন কি কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি অধিষ্টিত হননি। তাকে একটি রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ দেয়া হলে পেশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে তিনি তা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করেছেন। এ কথার অর্থ এই নয় যে, তাকে জাতীয়তাবাদী ঘরানা থেকে দূরে দেখাতে চাই। বরং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে তার স্বকীয়তা, ব্যক্তিত্ব এবং মর্যাদাপূর্ণ স্বাতন্ত্র্য তুলে ধরা। এ ধরনের একজন সম্মানীয় ব্যক্তিকে ফৌজদারী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেখানো রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ। ক্ষমতাসীন সরকারকে বুঝতে হবে রাজনীতি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলন এক নয়। প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ-এর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে সরকার একটি দৃষ্টিকটু দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এদেশে দলমত নির্বিশেষে এমাজউদ্দিনের এক বিশাল ভক্ত-অনুরক্ত জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাই সরকারের কাছে বিনীত নিবেদন- তাকে মামলা এবং অহেতুক হয়রানি থেকে বিরত থাকুন।
লেখকগণ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর এম সলিমউল্লাহ খান (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ), প্রফেসর আবদুল লতিফ মাসুম (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ), প্রফেসর মো. শামছুল আলম (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ), প্রফেসর মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার (ফার্মেসী বিভাগ), প্রফেসর মো. শরিফউদ্দীন (গণিত বিভাগ)।
প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ এদেশের একজন শীর্ষ স্থানীয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর। এই জাতির প্রতিটি বাক পরিবর্তনে তিনি সব সময়েই সস্পৃক্ত ছিলেন। স্বাধিকার আন্দোলন থেকে গণতান্ত্রিক উত্তরণ পর্যন্ত- তার ছিল মননশীল ভূমিকা। জ্ঞান-গুণ-বিদ্যাবুদ্ধি, আচার-আচরণে যেসব প্রবীণ ব্যক্তি আমাদের অনুকরণীয়-অনুুসরণীয় তিনি তাদের একজন। সে নিরিখেই আমরা বলতে পারি একটি দল ও মতকে সমর্থন করলেও কিছুতেই কট্টর বা দলান্ধ লোক তিনি নন। সরকারের তরফ থেকে তাকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে প্রচার করা হলেও আদৌ তিনি বিএনপির কোন আনুষ্ঠানিক পদাধিকারী নন। সত্য বটে, বিএনপি চেয়ারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্কটময় সময়ে তিনি পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটা নিছক মানবিক অনুভূতি, রাজনীতি নয়। প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ বিএনপির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার কেউ নন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে যে নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গির কথা প্রকাশ করেছেন তা একান্তই ব্যক্তিগত বিবেচনা প্রসূত। তা বিএনপির মত নয়। জাতীয় সরকারের যে ধারণা তিনি ব্যক্ত করছেন- দেশের একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে সমঝোতার প্রয়াসে সংকট উত্তরণের লক্ষ্যেই বলছেন। এসব কিছুই প্রমাণ করে যে, তিনি রাজনৈতিক বলয়ের লোক নন। বরং তার সমস্ত কর্মকা- জাতীয় স্বার্থে নিবেদিত। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনকে লেখা তার পত্রও জাতীয় স্বার্থে বিবেচিত। ক্ষমতাসীন বুদ্ধিজীবীরা তার এই পদক্ষেপকে বাঁকা চোখে দেখলেও সঙ্কট সমাধানে ব্যাকুল জনগোষ্ঠী ব্যাপকভাবে তার উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছেন। দি ডেইলি স্টার পরিচালিত এক জনমত যাচাইয়ে দেখা যায়- দেশের শতকরা ৫৭ ভাগ মানুষ তার উদ্যোগের পক্ষে রয়েছেন (দি ডেইলি স্টার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫)।
আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এ ধরনের স্বাধীনচেতা মানুষকে পুরস্কৃত করে না। স্বাধীনতা যুদ্ধের দলীলপত্র প্রশ্নে যখন বিতর্ক দেখা দেয় তখন তিনি সত্যাশ্রয়ী মতামতই প্রধান করেছেন। দলীয় মত দ্বারা প্রভাবিত হননি। বিগত বিএনপি আমলে তিনি প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন এ রকম খবর বেরিয়েছিল, কিন্তু তা হয়নি। এমন কি কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি অধিষ্টিত হননি। তাকে একটি রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ দেয়া হলে পেশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে তিনি তা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করেছেন। এ কথার অর্থ এই নয় যে, তাকে জাতীয়তাবাদী ঘরানা থেকে দূরে দেখাতে চাই। বরং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে তার স্বকীয়তা, ব্যক্তিত্ব এবং মর্যাদাপূর্ণ স্বাতন্ত্র্য তুলে ধরা। এ ধরনের একজন সম্মানীয় ব্যক্তিকে ফৌজদারী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেখানো রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ। ক্ষমতাসীন সরকারকে বুঝতে হবে রাজনীতি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলন এক নয়। প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ-এর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে সরকার একটি দৃষ্টিকটু দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এদেশে দলমত নির্বিশেষে এমাজউদ্দিনের এক বিশাল ভক্ত-অনুরক্ত জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাই সরকারের কাছে বিনীত নিবেদন- তাকে মামলা এবং অহেতুক হয়রানি থেকে বিরত থাকুন।
লেখকগণ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর এম সলিমউল্লাহ খান (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ), প্রফেসর আবদুল লতিফ মাসুম (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ), প্রফেসর মো. শামছুল আলম (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ), প্রফেসর মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার (ফার্মেসী বিভাগ), প্রফেসর মো. শরিফউদ্দীন (গণিত বিভাগ)।
No comments