চিরনিদ্রায় শায়িত শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী
শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা |
দেশের বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী আজিমপুর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। বিকেল পৌনে পাঁচটায় তাঁকে শ্বশুর খান সাহেব বদরুদ্দীন আহমেদের কবরে দাফন করা হয়। বিকেল পৌনে চারটার দিকে তাঁর মরদেহ আজিমপুরের বাসভবন থেকে ছাপড়া মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত উচ্চাঙ্গসংগীতের চতুর্থ দিনে উদ্বোধনী পর্বে মাইকের সামনে ঢলে পড়েন কাইয়ুম চৌধুরী। দ্রুত তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই চিরতরে চলে যান তিনি। চিকিৎসক জানিয়েছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। রাতে তাঁর মরদেহ স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। সেখান থেকে আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে কাইয়ুম চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কর্মীরা এই শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে কাইয়ুম চৌধুরীরর ছেলেকে সান্ত্বনা দেন শিল্পী মুস্তফা মনোয়ার। এরপর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদীন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল–আলম লেনিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ও দলের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম ও আনিসুল হক, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ প্রমুখ শ্রদ্ধা জানান। এরপর একে একে বিভিন্ন সংগঠন ও দেশের সর্বস্তরের মানুষ কাইয়ুম চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর পরই জানাজার জন্য তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নেওয়া হয়। সেখানে জানাজায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রমুখ। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় আজিমপুরে তাঁর বাসায়।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর জন্ম ১৯৩২ সালের ৯ মার্চ ফেনীতে। বাবা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সহকারী রেজিস্ট্রার ছিলেন। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে ঘুরেছেন দেশের বহু জায়গা। সব সময় শিল্পী বলতেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মনের মধ্যে ছবি আঁকার ইচ্ছেটা তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমৃত্যু ইচ্ছেটাকে লালন করে গেছেন, দারুণভাবে তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। ১৯৬০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ২৯ বার তিনি শিল্পকলা একাডেমী অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
বাংলাদেশের বইয়ের প্রচ্ছদের পালাবদলের অন্যতম রূপকার তিনি। ১৯৭৫ সালে ন্যাশনাল বুক সেন্টার আয়োজিত প্রচ্ছদ প্রদর্শনীতে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে প্রথম চিত্রকর্মের প্রদর্শনী করেন। এক সাক্ষাৎকারে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ছেলেবেলায় নিজের লাইব্রেরির যেসব বইয়ের প্রচ্ছদ নষ্ট হয়ে যেত, সেগুলো নতুন করে করতেন তিনি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম প্রচ্ছদ করেছেন ১৯৫৩-তে। ১৯৫৪ সালে গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস থেকে তিনি ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছবি আঁকতে ভালোবাসতেন তিনি। সবচেয়ে ভালোবাসতেন লুঙ্গি পরা মাথায় গামছা বাঁধা অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি আঁকতে। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে কৃষক-শ্রমিকসহ সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ তাঁকে বারবার আন্দোলিত করেছে। অবসরে গান শুনতেন, ধ্রুপদি গানের একনিষ্ঠ শ্রোতা ছিলেন। শুনতেন অতুল প্রসাদ। গুনগুন করে প্রায়ই গাইতেন কাজী নজরুল ইসলামের গান, ‘হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে/ কুড়াই ঝরা ফুল একেলা আমি।’
প্রথম আলোর সঙ্গে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর ছিল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। পত্রিকার মাস্টহেডও তাঁর করা। প্রথম আলোর প্রথম দিন থেকে আমৃত্যু নিবিড় ছিল এই যোগাযোগ। সারা জীবন কাজ করেছেন, একনিষ্ঠভাবে করেছেন শিল্পসাধনা। পেয়েছেন যশ, খ্যাতি আর অগুনতি মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা। কাজপাগল মানুষ ছিলেন তিনি। তাই বুঝি কাজ করতে করতেই চলে গেলেন। তবু জীবনের শেষ কথাটি আর বলা হলো না তাঁর।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, সুফিয়া কামাল পদক, শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর জন্ম ১৯৩২ সালের ৯ মার্চ ফেনীতে। বাবা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সহকারী রেজিস্ট্রার ছিলেন। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে ঘুরেছেন দেশের বহু জায়গা। সব সময় শিল্পী বলতেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মনের মধ্যে ছবি আঁকার ইচ্ছেটা তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমৃত্যু ইচ্ছেটাকে লালন করে গেছেন, দারুণভাবে তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। ১৯৬০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ২৯ বার তিনি শিল্পকলা একাডেমী অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
বাংলাদেশের বইয়ের প্রচ্ছদের পালাবদলের অন্যতম রূপকার তিনি। ১৯৭৫ সালে ন্যাশনাল বুক সেন্টার আয়োজিত প্রচ্ছদ প্রদর্শনীতে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে প্রথম চিত্রকর্মের প্রদর্শনী করেন। এক সাক্ষাৎকারে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ছেলেবেলায় নিজের লাইব্রেরির যেসব বইয়ের প্রচ্ছদ নষ্ট হয়ে যেত, সেগুলো নতুন করে করতেন তিনি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম প্রচ্ছদ করেছেন ১৯৫৩-তে। ১৯৫৪ সালে গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস থেকে তিনি ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছবি আঁকতে ভালোবাসতেন তিনি। সবচেয়ে ভালোবাসতেন লুঙ্গি পরা মাথায় গামছা বাঁধা অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি আঁকতে। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে কৃষক-শ্রমিকসহ সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ তাঁকে বারবার আন্দোলিত করেছে। অবসরে গান শুনতেন, ধ্রুপদি গানের একনিষ্ঠ শ্রোতা ছিলেন। শুনতেন অতুল প্রসাদ। গুনগুন করে প্রায়ই গাইতেন কাজী নজরুল ইসলামের গান, ‘হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে/ কুড়াই ঝরা ফুল একেলা আমি।’
প্রথম আলোর সঙ্গে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর ছিল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। পত্রিকার মাস্টহেডও তাঁর করা। প্রথম আলোর প্রথম দিন থেকে আমৃত্যু নিবিড় ছিল এই যোগাযোগ। সারা জীবন কাজ করেছেন, একনিষ্ঠভাবে করেছেন শিল্পসাধনা। পেয়েছেন যশ, খ্যাতি আর অগুনতি মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা। কাজপাগল মানুষ ছিলেন তিনি। তাই বুঝি কাজ করতে করতেই চলে গেলেন। তবু জীবনের শেষ কথাটি আর বলা হলো না তাঁর।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, সুফিয়া কামাল পদক, শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন।
No comments