অনিয়মের তরঙ্গায়িত উত্তাল সমুদ্রকে শান্ত রাখুন আমরা নিয়মের ছোট ছোট দ্বীপ গড়ে তুলবো by মাহবুব কামাল
ইউরোপ-আমেরিকার যেসব নাস্তিক এদেশে আসেন,
তারা এক মহা ধন্দে পড়ে যান। তারা দেখতে পান, সড়ক দুর্ঘটনায় হাজার হাজার
মানুষ মারা যাচ্ছে বটে, তবে সড়ক-মহাসড়কের চরম বিশৃংখলা ও ট্রাফিক আইন না
মানার সর্বব্যাপী প্রবণতার মধ্যে নিশ্চয়ই কেউ একজন পরম মমতায় বাঁচিয়ে
রেখেছেন কোটি কোটি প্রাণ। হ্যাঁ, আজও হয়তো আমরা আসতে পেরেছি এ গোলটেবিলে
তারই করুণায়। আবার অন্যভাবে যদি দেখি, জনসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে,
তাতে ম্যালথাসের তত্ত্ব সঠিক প্রমাণ করতে প্রকৃতিই হয়তো ভারসাম্য রক্ষার
স্বার্থে মৃত্যুর হার বাড়ানোর দায়িত্ব নিয়ে তা অর্পণ করেছে অযোগ্য চালকের
হাতে।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তথ্য-উপাত্ত বেশি দেব না আমরা। মন্ত্রী মহোদয় হয়তো সেক্ষেত্রে বলবেন- আরে, প্লেইন লাই, ড্যাম লাইয়ের মতো স্ট্যাটিস্টিক্সও তো এক ধরনের মিথ্যা। আমরাও স্বীকার করি, পরিসংখ্যানগুলোর মধ্যে গরমিল থাকে। ধরে নিলাম, জাতিসংঘের পরিসংখ্যানে অতিরঞ্জন আছে; কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যানেই তো সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে তিন সহস্রাধিক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। আর এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। আবার আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, চ্যালেঞ্জ করলে চালকরা তাদের মানিব্যাগ বা পলিথিনের ভেতর থেকে লাইসেন্স নামের যে কাগজটি দেখায়, সেগুলোর ৯২ শতাংশই ঘুষ দিয়ে নেয়া। প্রশ্ন উঠতেই পারে, আমাদের এই নিয়তি কে ঠিক করে দিল যে, অপ্রশিক্ষিত চালকদের হাতে সঁপে দিতে হবে জীবন? অথবা আমাদের কোন্ দোষে সরকারকে নিয়মিত কর প্রদান করার পরও খানাখন্দে ভরা, এবড়োখেবড়ো পথে চলবে আমাদের গাড়ি? কিংবা কার পাপে দেশের চিহ্নিত দুর্ঘটনাপ্রবণ ৫৫ কিলোমিটার রাস্তা ও দুই শতাধিক ব্ল্যাকস্পটে গাড়ি প্রবেশ করলে কাঁপে আমাদের বুক? ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী, তারেক মাসুদ অথবা ধরুন কাদের ভাইয়ের দলেরই নেতা ইফতেখার শামীম নিহত হওয়ার পর আমরা চিৎকার করে করে বলেছি- থামান এই অকালমৃত্যু। থামেনি। থামার কোনো কারণ নেই। ব্যাপারটা তো এমন নয় যে, হও বলিলেই তা তৎক্ষণাৎ হইয়া যাইবে। মন্ত্রী মহোদয় ছোটাছুটি করেন, সেই দৃশ্য টেলিভিশনে দেখে বোকারা আশ্বস্ত হয় এই ভেবে যে, অকালমৃত্যুর দিন বুঝি শেষ হয়ে এলো। কিন্তু আমরা বুদ্ধিমানরা বলি, দুর্ঘটনাকবলিত বাস বা ট্রাকটির ভগ্নদশা দেখে কী লাভ? লাভ হবে যদি বিআরটিএর দুর্নীতি বন্ধ করা যায়। মন্ত্রী মহোদয় কি পারবেন তা? দুর্নীতি এখন এক প্রতিষ্ঠিত অরাজকতা। সরকারের উচ্চমহল থেকেও শোনা যায়, ছোটখাটো দুর্নীতি কী এমন অন্যায়! বিআরটিএকে ঘুষ-দুর্নীতির অবাধ চারণক্ষেত্র হিসেবে ফেলে রেখে দেশের ২১ হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক পরিদর্শন করলে কোনো লাভ হবে না মাননীয় মন্ত্রী। নির্মলেন্দু গুণ কবিতা লিখেছেন- না, না, রোকেয়া হলকে অরক্ষিত রেখে আমি কোথাও যাব না। কাদের ভাইকে বলি- বিআরটিএকে অরক্ষিত রেখে আপনি কোথাও যাবেন না।
আমরা প্রসঙ্গান্তরে যাব না। আজকের বিষয়- সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দায়িত্ব কার? এ প্রশ্নের একটা হাস্যরসাত্মক উত্তর হতে পারে- ইলিয়াস কাঞ্চনের। তিনি বছরের পর বছর ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তবে, পরিহাস এই যে, এতে স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসাই প্রকাশ পায়, সড়ক দুর্ঘটনা কমে না বরং বাড়ে। বাংলাদেশে একটা বিষয় লক্ষ করার মতো। কোনো বিষয়ে দাবি উঠলে কিংবা আন্দোলন হলে দাবি তো আদায় হয়ই না, উল্টো পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে লেখালেখি হলে তার কিছু হয় না, সে বরং পত্রিকার খবর ও ছবি দেখিয়ে চাঁদার হার বাড়ায়। আমাদের একেকবার মনে হয়, পরমত সহিষ্ণুতা নিয়ে লেখালেখি করি বলেই বোধহয় রাজনীতিটা এতটা সাংঘর্ষিক। না লেখালেখি করলে হয়তো সমাজটা আরও সহিষ্ণু থাকত।
তো নিসচা কী করবে? ইলিয়াস কাঞ্চনই বা কী করবেন? তিনি বড়জোর পারবেন সচেতনতা বৃদ্ধি করতে, পারবেন মানুষকে ট্রাফিক আইন বোঝাতে; কিন্তু ওই রাস্তাটা ভালো করবে কে? লাইসেন্স দেয়ার আগে যোগ্যতাটা পরীক্ষা করবে কে? গাড়িটা রাস্তায় নামানো যাবে কি-না, সেই সিদ্ধান্ত দেবে কে? উপদেশ দিয়ে এ দেশে কোনো কিছুই যে হওয়ার নয়, এটাও আমরা বুঝে গেছি ইতিমধ্যে। সুতরাং প্রচারাভিযান, অ্যাডভোকেসি প্রোগ্রাম- এসবের তেমন গুরুত্ব নেই। সরকার তথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কংক্রিট সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়নে কংক্রিট প্রতিজ্ঞা করছে কি-না, সেটাই বড় কথা। হ্যাঁ, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দায়িত্বটা মূলত সরকারেরই।
প্রথমে মাননীয় মন্ত্রীকে কয়েকটি প্রশ্ন করা যেতে পারে।
এক. ২০১১ সালে জাতিসংঘ তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোয় ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেয়ার কথা বলেছিল, যার সঙ্গে বাংলাদেশও সংহতি প্রকাশ করেছে- সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কী ধরনের পরিকল্পনা বা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে?
দুই. জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল কি কার্যকর রয়েছে? কয়টি উপজেলায় এর শাখা আছে? আমরা তো জানি, এই কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয় না, হলেও কদাচিৎ হয়।
তিন. সড়ক পরিবহন ও চলাচল আইনের খসড়াটি এখন কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছে?
চার. ১৯৮৩ সালে সংশোধিত মোটরযান আইনটি মূলত ১৯১৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। মানুষের ইকোনমিক অ্যাক্টিভিটি বেড়েছে, গাড়ি বেড়েছে, বেড়েছে মানুষ- এই আইন কি যুগোপযোগী করা হয়েছে?
আমরা মানি, ভোটের রাজনীতি, দলীয় রাজনীতি সৎ রাজনীতিককে অনেক কিছুই করতে বাধা দেয়। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা নিরাপদ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা থাকলেও সেগুলো যে নেয়া হচ্ছে না, তাতে কি রাজনীতি বাদ সেধেছে? ১৬৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেই ছয় বছর চলে গেছে, এই দীর্ঘসূত্রতার হেতু কী? আমরা তো জানি মন্ত্রণালয় ও সওজ বড় প্রকল্পের পেছনে ছোটে, যাতে নয়-ছয় করার সুযোগ থাকে, ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে আগ্রহ নেই কর্তাব্যক্তিদের। কিন্তু ১৬৫ কোটি টাকার প্রকল্পটি তো নেহায়েত ছোট নয়। তবু কেন এই বিলম্ব?
এটা স্পষ্ট যে, সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ চালকের অদক্ষতা ও খামখেয়ালিপনা। পকেটে ফেক লাইসেন্স, মাথায় দারিদ্র্যজনিত অস্থিরতা। এই অস্থিরতা তাকে ঝুঁকিপ্রবণ করে তোলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে তিনি গন্তব্যে দ্রুত পৌঁছাতে চান। তাহলে উপার্জিত টাকাটা দ্রুত হাতে আসে, বিশ্রামও নেয়া যায়। কোনো কোনো রুটে ফেরি-স্বল্পতার কারণে তিনি হয়ে ওঠেন অদম্য প্রতিযোগী, বেপরোয়া। বস্তুত তিনি চার ধরনের সিনড্রোমে ভোগেন। সিনড্রোমটির নাম ওভার। ওভারটেকিং, ওভারলোডিং, ওভারস্পিড ও ওভারকনফিডেন্স। এই সিনড্রোমের কারণে চোখের সামনে তিনি রাস্তা দেখেন না, মাইলফলক দেখেন, কখন পৌঁছাবেন গন্তব্যে, দেখেন দারিদ্র্যক্লিষ্ট পরিবারের ছবিও। তাই ড্রাইভারদের ফেক লাইসেন্স পরীক্ষা করে দেখলেই হবে না শুধু, তাদের মাথা থেকে দূর করতে হবে ঝুঁকিপ্রবণতা। সেখানে ঢোকাতে হবে মানবিক মূল্যবোধ। ড্রাইভারদের কাউন্সিলিংয়ের জন্য আছে কি কোনো কর্মসূচি? ড্রাইভাররা হলেন সাবজেক্ট, তাদের বানিয়ে ফেলেছি আমরা অবজেক্ট। তারা তো আমাদের প্রতিপক্ষ নন, স্বপক্ষ। আমাদের হয়েই তো সরকারকে তাদের বলার কথা- রাস্তা সারান, নতুবা এই রাস্তায় গাড়ি চালাব না; এই গাড়ি আনফিট, এর স্টিয়ারিংয়ে হাত দেব না। সড়ক পরিবহনের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার হচ্ছেন ড্রাইভার। তাকে শিক্ষিত করে তুলতে না পারি, মানবিক তো করা যায় খুব সহজে।
মন্ত্রী মহোদয়কে তাই বলি, সড়ক দুর্ঘটনায় মরতে রাজি আছি আমরা, তবে তা যেন হয় মানবিক ড্রাইভারের হাতে। ড্রাইভারের প্রশিক্ষণের জন্য ইন্সটিটিউট গঠন করে সেখানে তাদের মূল্যবোধ জাগাতে কাউন্সিলিংয়েরও ব্যবস্থা করুন। বাপে খেদানো, মায়ে তাড়ানো- ঘুমানোর জায়গা নেই বলে টার্মিনালে ঘুমায়, তারপর দায়িত্ব পায় গাড়ি মোছার, অতঃপর হেলপার এবং সবশেষে কোনো রকমে একটা লাইসেন্স জোগাড় করে স্টিয়ারিংয়ে হাত- এভাবে ড্রাইভার হিসেবে গড়ে উঠার প্রক্রিয়াটিও বন্ধ করতে হবে। অযোগ্যদের দায়িত্বপূর্ণ জায়গায় বসাবেন না, তার চেয়ে বরং বসিয়ে রেখে রাষ্ট্রের টাকায় তাদের ভরণপোষণ করা ভালো। তাতে রাষ্ট্রের ক্ষতির পরিমাণ কমবে, বৈ বাড়বে না।
মাননীয় মন্ত্রী, আমেরিকায় একসময় বলা হতো, একজন আমেরিকানের জীবনের মূল্য এক হাজার ফ্যান্টম বিমানের মূল্যের চেয়ে বেশি। আমাদের এখানে একটি ঠেলাগাড়ির চেয়ে এক হাজার মানুষের মূল্য কম। একটি জীবনের পেছনে থাকে কত রহস্য, কত খেসারত- সেই জীবনকে হেলাফেলায় ধ্বংস করার অধিকার কেউ দেয়নি আমাদের। আল্লার মাল আল্লায় নিয়ে গেছে- এ ধরনের অর্বাচীনতা কাঠমোল্লারা দেখাক, রাজনীতির কাঠমিস্ত্রিরা দেখাক, আমরা দেখাতে পারি না।
কাদের ভাইয়ের মনে থাকার কথা। তিনি সম্ভবত সেভেন-এইটের ছাত্র তখন। ৬৫ সালে রাজধানীর বলদা গার্ডেনের কাছে সন্তানসহ মা নিহত হয়েছিলেন গাড়ি চাপায়। ইত্তেফাকে সেই খবর ছাপা হওয়ার পর থমথমে হয়ে পড়েছিল সমগ্র ঢাকা। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছিলেন বাবা; তার বগলে ইত্তেফাক, চেহারায় ধূসর বিষণ্নতা। শোকে-দুঃখে মা রান্না চাপাননি। এ এক অকল্পনীয় অভিজ্ঞতা। মানুষ, সে তো মরবে বাড়ির বিছানায় অথবা হাসপাতালে, বড়জোর যুদ্ধক্ষেত্রে। সে কেন মরবে রাস্তায়? মানুষের আয়ু দিয়েছেন আল্লাহ। মানুষ কেন ছোট করবে সেই আয়ু? আজ ৫০ বছর না পেরোতেই বিছানার চেয়ে রাস্তায় বেশি মরছে মানুষ, ভগবানের অবতার হয়ে মানুষই ছোট করে চলেছে মানুষের আয়ু।
কতোগুলো প্রস্তাব সুনির্দিষ্ট করে কান খাড়া করতে অনুরোধ করছি মাননীয় মন্ত্রীকে।
১. সড়ক-মহাসড়কের সংস্কারকাজ দলীয় ও অপেশাদার ঠিকাদারদের পাইয়ে দেবেন না। কাজের হিসাব নিন।
২. সড়ক-মহাসড়কগুলো প্রশস্ত করুন, প্রয়োজনে ডিভাইডার দিন।
৩. দুর্ঘটনাপ্রবণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো মেরামত করুন। বিপজ্জনক স্পিডব্রেকার সারান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো প্রশস্ত করুন।
৪. বিআরটিএকে দুর্নীতিমুক্ত রাখুন। লাইসেন্স ও ফিটনেস- এ দুবিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করুন।
৫. অবৈধ লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি জব্দ করুন।
৬. ড্রাইভারদের জন্য কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করুন।
৭. সড়ক দুর্ঘটনার প্রকারভেদে দোষীর শাস্তি বিধানের জন্য প্রচলিত আইন পর্যালোচনা সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য দণ্ডবিধি তৈরি করুন।
৮. প্রতিটি দুর্ঘটনার তদন্ত করুন এবং তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে সুপারিশ বাস্তবায়ন করুন।
৯. নসিমন-করিমন-ভটভটি ধরনের প্যারা-ট্রান্সপোর্ট মহাসড়ক থেকে তুলে দিন।
১০. মহাসড়কে ট্রমা সেন্টারের সংখ্যা বাড়ান ও সেগুলোকে অপারেটিভ করুন।
১১. রাজধানীর অর্ধশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করুন।
১২. গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ওভারব্রিজ-আন্ডারপাস নির্মাণ করুন।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদেরও দায়িত্ব আছে, তবে ইন্সপায়ার করতে হবে। আপনাদের কাজগুলো আপনারা করলেই আমাদের কাজগুলো আমরা ফেলে
রাখব না- ট্রাফিক আইন মেনে চলব, ফুটপাতে দোকান কিংবা মহাসড়কে হাটবাজার বসাব না, যত্রতত্র পার্ক করব না গাড়ি। পাবলিক অনিয়ম করে বৈকি। তরঙ্গায়িত উত্তাল সাগরে স্বপ্নের ছোট্ট দ্বীপ কে বানাতে চাইবে বলুন, ওটা যে
প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যাবে। সর্বভারতীয় পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের পুঁজির জোয়ারে পশ্চিমবঙ্গে ভেসে গেছে আদর্শের ছোট্ট বামফ্রন্টীয় দ্বীপ। অনিয়মের সমুদ্রটাকে
শান্ত রাখুন তাই, এরপর আমরা নিশ্চয়ই নিয়মের ছোট ছোট দ্বীপ গড়ে তুলব, কথা দিলাম।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তথ্য-উপাত্ত বেশি দেব না আমরা। মন্ত্রী মহোদয় হয়তো সেক্ষেত্রে বলবেন- আরে, প্লেইন লাই, ড্যাম লাইয়ের মতো স্ট্যাটিস্টিক্সও তো এক ধরনের মিথ্যা। আমরাও স্বীকার করি, পরিসংখ্যানগুলোর মধ্যে গরমিল থাকে। ধরে নিলাম, জাতিসংঘের পরিসংখ্যানে অতিরঞ্জন আছে; কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যানেই তো সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে তিন সহস্রাধিক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। আর এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। আবার আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, চ্যালেঞ্জ করলে চালকরা তাদের মানিব্যাগ বা পলিথিনের ভেতর থেকে লাইসেন্স নামের যে কাগজটি দেখায়, সেগুলোর ৯২ শতাংশই ঘুষ দিয়ে নেয়া। প্রশ্ন উঠতেই পারে, আমাদের এই নিয়তি কে ঠিক করে দিল যে, অপ্রশিক্ষিত চালকদের হাতে সঁপে দিতে হবে জীবন? অথবা আমাদের কোন্ দোষে সরকারকে নিয়মিত কর প্রদান করার পরও খানাখন্দে ভরা, এবড়োখেবড়ো পথে চলবে আমাদের গাড়ি? কিংবা কার পাপে দেশের চিহ্নিত দুর্ঘটনাপ্রবণ ৫৫ কিলোমিটার রাস্তা ও দুই শতাধিক ব্ল্যাকস্পটে গাড়ি প্রবেশ করলে কাঁপে আমাদের বুক? ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী, তারেক মাসুদ অথবা ধরুন কাদের ভাইয়ের দলেরই নেতা ইফতেখার শামীম নিহত হওয়ার পর আমরা চিৎকার করে করে বলেছি- থামান এই অকালমৃত্যু। থামেনি। থামার কোনো কারণ নেই। ব্যাপারটা তো এমন নয় যে, হও বলিলেই তা তৎক্ষণাৎ হইয়া যাইবে। মন্ত্রী মহোদয় ছোটাছুটি করেন, সেই দৃশ্য টেলিভিশনে দেখে বোকারা আশ্বস্ত হয় এই ভেবে যে, অকালমৃত্যুর দিন বুঝি শেষ হয়ে এলো। কিন্তু আমরা বুদ্ধিমানরা বলি, দুর্ঘটনাকবলিত বাস বা ট্রাকটির ভগ্নদশা দেখে কী লাভ? লাভ হবে যদি বিআরটিএর দুর্নীতি বন্ধ করা যায়। মন্ত্রী মহোদয় কি পারবেন তা? দুর্নীতি এখন এক প্রতিষ্ঠিত অরাজকতা। সরকারের উচ্চমহল থেকেও শোনা যায়, ছোটখাটো দুর্নীতি কী এমন অন্যায়! বিআরটিএকে ঘুষ-দুর্নীতির অবাধ চারণক্ষেত্র হিসেবে ফেলে রেখে দেশের ২১ হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক পরিদর্শন করলে কোনো লাভ হবে না মাননীয় মন্ত্রী। নির্মলেন্দু গুণ কবিতা লিখেছেন- না, না, রোকেয়া হলকে অরক্ষিত রেখে আমি কোথাও যাব না। কাদের ভাইকে বলি- বিআরটিএকে অরক্ষিত রেখে আপনি কোথাও যাবেন না।
আমরা প্রসঙ্গান্তরে যাব না। আজকের বিষয়- সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দায়িত্ব কার? এ প্রশ্নের একটা হাস্যরসাত্মক উত্তর হতে পারে- ইলিয়াস কাঞ্চনের। তিনি বছরের পর বছর ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তবে, পরিহাস এই যে, এতে স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসাই প্রকাশ পায়, সড়ক দুর্ঘটনা কমে না বরং বাড়ে। বাংলাদেশে একটা বিষয় লক্ষ করার মতো। কোনো বিষয়ে দাবি উঠলে কিংবা আন্দোলন হলে দাবি তো আদায় হয়ই না, উল্টো পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে লেখালেখি হলে তার কিছু হয় না, সে বরং পত্রিকার খবর ও ছবি দেখিয়ে চাঁদার হার বাড়ায়। আমাদের একেকবার মনে হয়, পরমত সহিষ্ণুতা নিয়ে লেখালেখি করি বলেই বোধহয় রাজনীতিটা এতটা সাংঘর্ষিক। না লেখালেখি করলে হয়তো সমাজটা আরও সহিষ্ণু থাকত।
তো নিসচা কী করবে? ইলিয়াস কাঞ্চনই বা কী করবেন? তিনি বড়জোর পারবেন সচেতনতা বৃদ্ধি করতে, পারবেন মানুষকে ট্রাফিক আইন বোঝাতে; কিন্তু ওই রাস্তাটা ভালো করবে কে? লাইসেন্স দেয়ার আগে যোগ্যতাটা পরীক্ষা করবে কে? গাড়িটা রাস্তায় নামানো যাবে কি-না, সেই সিদ্ধান্ত দেবে কে? উপদেশ দিয়ে এ দেশে কোনো কিছুই যে হওয়ার নয়, এটাও আমরা বুঝে গেছি ইতিমধ্যে। সুতরাং প্রচারাভিযান, অ্যাডভোকেসি প্রোগ্রাম- এসবের তেমন গুরুত্ব নেই। সরকার তথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কংক্রিট সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়নে কংক্রিট প্রতিজ্ঞা করছে কি-না, সেটাই বড় কথা। হ্যাঁ, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দায়িত্বটা মূলত সরকারেরই।
প্রথমে মাননীয় মন্ত্রীকে কয়েকটি প্রশ্ন করা যেতে পারে।
এক. ২০১১ সালে জাতিসংঘ তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোয় ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেয়ার কথা বলেছিল, যার সঙ্গে বাংলাদেশও সংহতি প্রকাশ করেছে- সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কী ধরনের পরিকল্পনা বা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে?
দুই. জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল কি কার্যকর রয়েছে? কয়টি উপজেলায় এর শাখা আছে? আমরা তো জানি, এই কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয় না, হলেও কদাচিৎ হয়।
তিন. সড়ক পরিবহন ও চলাচল আইনের খসড়াটি এখন কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছে?
চার. ১৯৮৩ সালে সংশোধিত মোটরযান আইনটি মূলত ১৯১৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। মানুষের ইকোনমিক অ্যাক্টিভিটি বেড়েছে, গাড়ি বেড়েছে, বেড়েছে মানুষ- এই আইন কি যুগোপযোগী করা হয়েছে?
আমরা মানি, ভোটের রাজনীতি, দলীয় রাজনীতি সৎ রাজনীতিককে অনেক কিছুই করতে বাধা দেয়। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা নিরাপদ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা থাকলেও সেগুলো যে নেয়া হচ্ছে না, তাতে কি রাজনীতি বাদ সেধেছে? ১৬৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেই ছয় বছর চলে গেছে, এই দীর্ঘসূত্রতার হেতু কী? আমরা তো জানি মন্ত্রণালয় ও সওজ বড় প্রকল্পের পেছনে ছোটে, যাতে নয়-ছয় করার সুযোগ থাকে, ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে আগ্রহ নেই কর্তাব্যক্তিদের। কিন্তু ১৬৫ কোটি টাকার প্রকল্পটি তো নেহায়েত ছোট নয়। তবু কেন এই বিলম্ব?
এটা স্পষ্ট যে, সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ চালকের অদক্ষতা ও খামখেয়ালিপনা। পকেটে ফেক লাইসেন্স, মাথায় দারিদ্র্যজনিত অস্থিরতা। এই অস্থিরতা তাকে ঝুঁকিপ্রবণ করে তোলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে তিনি গন্তব্যে দ্রুত পৌঁছাতে চান। তাহলে উপার্জিত টাকাটা দ্রুত হাতে আসে, বিশ্রামও নেয়া যায়। কোনো কোনো রুটে ফেরি-স্বল্পতার কারণে তিনি হয়ে ওঠেন অদম্য প্রতিযোগী, বেপরোয়া। বস্তুত তিনি চার ধরনের সিনড্রোমে ভোগেন। সিনড্রোমটির নাম ওভার। ওভারটেকিং, ওভারলোডিং, ওভারস্পিড ও ওভারকনফিডেন্স। এই সিনড্রোমের কারণে চোখের সামনে তিনি রাস্তা দেখেন না, মাইলফলক দেখেন, কখন পৌঁছাবেন গন্তব্যে, দেখেন দারিদ্র্যক্লিষ্ট পরিবারের ছবিও। তাই ড্রাইভারদের ফেক লাইসেন্স পরীক্ষা করে দেখলেই হবে না শুধু, তাদের মাথা থেকে দূর করতে হবে ঝুঁকিপ্রবণতা। সেখানে ঢোকাতে হবে মানবিক মূল্যবোধ। ড্রাইভারদের কাউন্সিলিংয়ের জন্য আছে কি কোনো কর্মসূচি? ড্রাইভাররা হলেন সাবজেক্ট, তাদের বানিয়ে ফেলেছি আমরা অবজেক্ট। তারা তো আমাদের প্রতিপক্ষ নন, স্বপক্ষ। আমাদের হয়েই তো সরকারকে তাদের বলার কথা- রাস্তা সারান, নতুবা এই রাস্তায় গাড়ি চালাব না; এই গাড়ি আনফিট, এর স্টিয়ারিংয়ে হাত দেব না। সড়ক পরিবহনের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার হচ্ছেন ড্রাইভার। তাকে শিক্ষিত করে তুলতে না পারি, মানবিক তো করা যায় খুব সহজে।
মন্ত্রী মহোদয়কে তাই বলি, সড়ক দুর্ঘটনায় মরতে রাজি আছি আমরা, তবে তা যেন হয় মানবিক ড্রাইভারের হাতে। ড্রাইভারের প্রশিক্ষণের জন্য ইন্সটিটিউট গঠন করে সেখানে তাদের মূল্যবোধ জাগাতে কাউন্সিলিংয়েরও ব্যবস্থা করুন। বাপে খেদানো, মায়ে তাড়ানো- ঘুমানোর জায়গা নেই বলে টার্মিনালে ঘুমায়, তারপর দায়িত্ব পায় গাড়ি মোছার, অতঃপর হেলপার এবং সবশেষে কোনো রকমে একটা লাইসেন্স জোগাড় করে স্টিয়ারিংয়ে হাত- এভাবে ড্রাইভার হিসেবে গড়ে উঠার প্রক্রিয়াটিও বন্ধ করতে হবে। অযোগ্যদের দায়িত্বপূর্ণ জায়গায় বসাবেন না, তার চেয়ে বরং বসিয়ে রেখে রাষ্ট্রের টাকায় তাদের ভরণপোষণ করা ভালো। তাতে রাষ্ট্রের ক্ষতির পরিমাণ কমবে, বৈ বাড়বে না।
মাননীয় মন্ত্রী, আমেরিকায় একসময় বলা হতো, একজন আমেরিকানের জীবনের মূল্য এক হাজার ফ্যান্টম বিমানের মূল্যের চেয়ে বেশি। আমাদের এখানে একটি ঠেলাগাড়ির চেয়ে এক হাজার মানুষের মূল্য কম। একটি জীবনের পেছনে থাকে কত রহস্য, কত খেসারত- সেই জীবনকে হেলাফেলায় ধ্বংস করার অধিকার কেউ দেয়নি আমাদের। আল্লার মাল আল্লায় নিয়ে গেছে- এ ধরনের অর্বাচীনতা কাঠমোল্লারা দেখাক, রাজনীতির কাঠমিস্ত্রিরা দেখাক, আমরা দেখাতে পারি না।
কাদের ভাইয়ের মনে থাকার কথা। তিনি সম্ভবত সেভেন-এইটের ছাত্র তখন। ৬৫ সালে রাজধানীর বলদা গার্ডেনের কাছে সন্তানসহ মা নিহত হয়েছিলেন গাড়ি চাপায়। ইত্তেফাকে সেই খবর ছাপা হওয়ার পর থমথমে হয়ে পড়েছিল সমগ্র ঢাকা। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছিলেন বাবা; তার বগলে ইত্তেফাক, চেহারায় ধূসর বিষণ্নতা। শোকে-দুঃখে মা রান্না চাপাননি। এ এক অকল্পনীয় অভিজ্ঞতা। মানুষ, সে তো মরবে বাড়ির বিছানায় অথবা হাসপাতালে, বড়জোর যুদ্ধক্ষেত্রে। সে কেন মরবে রাস্তায়? মানুষের আয়ু দিয়েছেন আল্লাহ। মানুষ কেন ছোট করবে সেই আয়ু? আজ ৫০ বছর না পেরোতেই বিছানার চেয়ে রাস্তায় বেশি মরছে মানুষ, ভগবানের অবতার হয়ে মানুষই ছোট করে চলেছে মানুষের আয়ু।
কতোগুলো প্রস্তাব সুনির্দিষ্ট করে কান খাড়া করতে অনুরোধ করছি মাননীয় মন্ত্রীকে।
১. সড়ক-মহাসড়কের সংস্কারকাজ দলীয় ও অপেশাদার ঠিকাদারদের পাইয়ে দেবেন না। কাজের হিসাব নিন।
২. সড়ক-মহাসড়কগুলো প্রশস্ত করুন, প্রয়োজনে ডিভাইডার দিন।
৩. দুর্ঘটনাপ্রবণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো মেরামত করুন। বিপজ্জনক স্পিডব্রেকার সারান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো প্রশস্ত করুন।
৪. বিআরটিএকে দুর্নীতিমুক্ত রাখুন। লাইসেন্স ও ফিটনেস- এ দুবিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করুন।
৫. অবৈধ লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি জব্দ করুন।
৬. ড্রাইভারদের জন্য কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করুন।
৭. সড়ক দুর্ঘটনার প্রকারভেদে দোষীর শাস্তি বিধানের জন্য প্রচলিত আইন পর্যালোচনা সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য দণ্ডবিধি তৈরি করুন।
৮. প্রতিটি দুর্ঘটনার তদন্ত করুন এবং তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে সুপারিশ বাস্তবায়ন করুন।
৯. নসিমন-করিমন-ভটভটি ধরনের প্যারা-ট্রান্সপোর্ট মহাসড়ক থেকে তুলে দিন।
১০. মহাসড়কে ট্রমা সেন্টারের সংখ্যা বাড়ান ও সেগুলোকে অপারেটিভ করুন।
১১. রাজধানীর অর্ধশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করুন।
১২. গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ওভারব্রিজ-আন্ডারপাস নির্মাণ করুন।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদেরও দায়িত্ব আছে, তবে ইন্সপায়ার করতে হবে। আপনাদের কাজগুলো আপনারা করলেই আমাদের কাজগুলো আমরা ফেলে
রাখব না- ট্রাফিক আইন মেনে চলব, ফুটপাতে দোকান কিংবা মহাসড়কে হাটবাজার বসাব না, যত্রতত্র পার্ক করব না গাড়ি। পাবলিক অনিয়ম করে বৈকি। তরঙ্গায়িত উত্তাল সাগরে স্বপ্নের ছোট্ট দ্বীপ কে বানাতে চাইবে বলুন, ওটা যে
প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যাবে। সর্বভারতীয় পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের পুঁজির জোয়ারে পশ্চিমবঙ্গে ভেসে গেছে আদর্শের ছোট্ট বামফ্রন্টীয় দ্বীপ। অনিয়মের সমুদ্রটাকে
শান্ত রাখুন তাই, এরপর আমরা নিশ্চয়ই নিয়মের ছোট ছোট দ্বীপ গড়ে তুলব, কথা দিলাম।
No comments